Ajker Patrika

চাকরির বয়স বৃদ্ধির আন্দোলনে পুলিশের লাঠিপেটা, সাংবাদিক লাঞ্ছিত

নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০: ৪০
চাকরির বয়স বৃদ্ধির আন্দোলনে পুলিশের লাঠিপেটা, সাংবাদিক লাঞ্ছিত

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে শাহবাগে অবরোধ করলে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এতে অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। একজনকে আটক করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটার ছবি তুলতে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে বাধা ও লাঞ্ছিত করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের ফটোসাংবাদিকেরা। 

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আন্দোলনকারীদের অবস্থানের ফলে চারপাশের রাস্তায় যানজট তৈরি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশও অবস্থান নেয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ লাঠিপেটা করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যায়। পরে তাঁরা বিচ্ছিন্নভাবে শাহবাগ থানা ও জাতীয় জাদুঘরের সামনে গিয়ে স্লোগান দেন। 

আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক সাজিদ সেতু বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিপেটা করে সাতজনকে আহত করেছে। সোনিয়া ও শাওন নামে দুজনের অবস্থা গুরুতর। কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। তবে তানজিদ নামে একজন ছাড়া সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে। তানজিদকে না ছাড়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান করব। আহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা হলেন, রেজোয়ানা বিন্দু, সোনিয়া হোসেন, মইনুল হাসান, শাওন সোমা, আলী হোসেন।’পুলিশের লাঠিপেটায় সড়ক বিভাজকের ওপর পড়ে যান এক আন্দোলনকারী।

চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্মের সদস্য তাসলিমা লিমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আহত সাতজনের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। একজনের কিডনি, আরেকজনের অণ্ডকোষ বরাবর আঘাত করা হয়েছে।’ 

এদিকে যখন আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হচ্ছিল তখন ঘটনার ছবি তুলতে গেলে রমনা জোনের এডিসি হারুনসহ দুজন পুলিশ সদস্য বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফটোসাংবাদিককে ছবি তুলতে বাধা দেন বলে অভিযোগ করেছেন উপস্থিত ফটোসাংবাদিকেরা। পেশাগত কাজে বাধার শিকার হন দৈনিক ইত্তেফাকের ফটোসাংবাদিক আব্দুল গনি। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ যখন আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করছিল তখন আমরা ছবি তুলতে যাই। এ সময় রমনা জোনের এডিসি হারুনসহ অন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমাদের ছবি তুলতে বাধা দেন। আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে চাইলে তাঁরা আমাদের ক্যামেরা বন্ধ রাখতে বলেন এবং ছবি তুলতে নিষেধ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা আমাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। আমিসহ ঢাকা ট্রিবিউনের ফটো সাংবাদিক অপু, প্রথম আলোর শুভ্র কান্তি দাস, দেশ রূপান্তরের মারুফ রহমান এবং ইউএনবির আবু সুফিয়ান জুয়েল ও রাকিবুল হাসানকে পুলিশ ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।’ 

এ বিষয়ে ইউএনবির ফটো সাংবাদিক রাকিবুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এডিসি হারুন বলছে যে, আমরা (ফটোসাংবাদিকেরা) নাকি রাস্তা ব্লক করে রাখছি। তাই সরতে বলছে।’ ইউএনবির আরেক ফটো সাংবাদিক আবু সুফিয়ান জুয়েল বলেন, ‘তারা আমাদের কয়েকজন সহকর্মীকে ছবি তুলতে বাধা দেয়, তখন আমরা কয়েকজন এক হয়ে এমন আচরণের প্রতিবাদ করি। সে সময় পুলিশ আমাদের ধাক্কা দেয় এবং দূরে চলে যেতে বলে।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা জোনের এডিসি হারুন আন্দোলনকারী ও ফটো সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা অন্যায়ভাবে রাস্তা অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেখান থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে।’ লাঠিপেটার পর কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ

সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়া এবং ছবি তুলতে নিষেধ করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে কেন হাতাহাতি হবে? তাঁরা তো এখানে কোনো সমস্যা তৈরি করেন নাই। যারা রাস্তা অবরোধ করেছিল, তাঁদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। সাংবাদিকদের কেন বাধা দেব, তাঁরা তো ফ্রি।’ 

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদূত হাওলাদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে তাঁরা (আন্দোলনকারীরা) রাস্তা বন্ধ করে দেন। তাই আমরা নিরাপত্তার জন্য তাঁদের সরিয়ে দিয়েছি। তবে কোনো ধরনের আহতের ঘটনা ঘটেনি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত