Ajker Patrika

ইরানের জন্য ইসরায়েলকে বিসর্জন দেবে রাশিয়া?

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৫, ২১: ০৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যকে এক নতুন অস্থিরতার মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বড় আঞ্চলিক শক্তিগুলোর ভূমিকাও হয়ে উঠেছে নজরকাড়া। এর মধ্যে রাশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু জটিল অবস্থানে রয়েছে। একদিকে তাদের ঐতিহাসিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ, অন্যদিকে বর্তমান সংঘাতে পক্ষ নির্ধারণের চাপ— সব মিলিয়ে রাশিয়া পড়েছে এক কঠিন ভারসাম্যের অগ্নিপরীক্ষায়।

মস্কো স্টেট ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনের সহকারী অধ্যাপক নিকোলাই সুরকভ আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘রাশিয়ার অবস্থান বরাবরই ছিল যে এটি তাদের যুদ্ধ নয়। রাশিয়ার নেতৃত্ব এখনো সেই অবস্থানই বজায় রাখছে।’ তবে সংঘাত যাতে আরও বিস্তৃত না হয়, রাশিয়া সে লক্ষ্যে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালাবে বলে তিনি মনে করেন।

রুশ বিশ্লেষক আরও বলেন, ইরান যদি সংঘাতের ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে বা অস্থিতিশীল হয়, তবে সেটি রাশিয়ার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে বড় ধরনের কৌশলগত ক্ষতি হবে। কারণ, ইরান শুধু ব্রিকস বা সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) অংশীদারই নয়, বরং বহুপক্ষীয় বিশ্বব্যবস্থার ধারক হিসেবে রাশিয়ার কৌশলগত পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

ইরানের প্রতি কৌশলগত ঝোঁক থাকা সত্ত্বেও রাশিয়া চাইছে না, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হোক। গত এক দশকে দুই দেশের মধ্যে বিশেষ করে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত খাতে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সিরিয়ায় উভয় দেশের সামরিক তৎপরতা নিয়েও রয়েছে পারস্পরিক সমঝোতা। সুরকভ বলেন, ‘এই ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই কঠিন। রাশিয়া একদিকে ইরানকে হারাতে চায় না, আবার ইসরায়েলকেও দূরে ঠেলে দিতে চায় না।’

রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো সামরিক পদক্ষেপ না নিয়ে কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তারা সংঘাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাবও দেবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এই কৌশলেই স্পষ্ট হয় যে রাশিয়া যুদ্ধের পক্ষে নয়; বরং সংঘাত নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে থাকা রাশিয়ার পক্ষে এখন আরেকটি বড় ধরনের সামরিক সংঘাতে সম্পৃক্ত হওয়া কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত। তাই ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে তারা কৌশলী নীরবতা ও ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যত বাড়ছে, রাশিয়ার ওপর সেই চাপ ততই বেড়ে চলেছে। তাদের কূটনৈতিক ভারসাম্য ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক রক্ষা করা এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন এক সময়ে যখন বিশ্বব্যবস্থা দ্বিধাবিভক্ত, তখন রাশিয়ার জন্য এই সংঘাত হয়ে উঠেছে এক অনিবার্য কৌশলগত পরীক্ষাক্ষেত্র। ভবিষ্যতের ভূরাজনৈতিক সমীকরণে তাদের অবস্থান অনেকটাই নির্ধারিত হবে এই সংকটে তারা কীভাবে নিজেদের ভূমিকা নির্ধারণ করে তার ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত