Ajker Patrika

রমনা পার্ক দখলে নিয়ে বিএনপি নেতার ব্যবসা

তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, ঢাকা 
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৫, ১১: ৫১
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর রাজধানীর রমনা পার্কের ভেতরে থাকা গণপূর্ত কর্তৃপক্ষের রেস্তোরাঁটির বৈধ ইজারাদারকে উৎখাত করে দখল করে নিয়েছেন বিএনপির সঙ্গে যুক্ত এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। নিজেকে তিনি রাজধানীর কোতোয়ালি থানার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী বলে দাবি করেছেন।

রাজধানীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে ৯ মাস ধরে ব্যবসা চালিয়ে মুনাফা করলেও সরকারি কোষাগারে একটি টাকাও জমা দেননি রেস্তোরাঁ দখলে নেওয়া মোল্লা ইউসুফ। এতে ইজারামূল্যের হিসাবে গণপূর্তের লোকসান হয়েছে কমবেশি ৫০ লাখ টাকা।

গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রমনা রেস্তোরাঁ ৫ বছরের জন্য ইজারা দিতে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে ছয় দরদাতা অংশ নেন। এর মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রেসপনসিভ’ হিসেবে বিবেচনা করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৭৬ লাখ ১৯ হাজার ৭৮০ টাকা দর প্রস্তাব করে হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনাল। তবে ইজারা পাওয়ার জন্য ইউরো এশিয়ানো নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে তৎপর হয় তৎকালীন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা সালমান এফ রহমানের কাছের লোকজন। ইউরো এশিয়ানো ৩ কোটি ৩ লাখ টাকা দর দেয়। গণপূর্ত দরের কাঙ্ক্ষিত চাহিদা দিয়েছিল ৪ কোটি ২১ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা। হাবিব হোটেল গণপূর্তের কাঙ্ক্ষিত চাহিদার চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি এবং ইউরো এশিয়ানো ২৮ শতাংশ কম দর দিয়েছিল। ইউরো এশিয়ানোর সঙ্গে ছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা জিল্লুর রহমান। তাঁদেরই ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা কম দরে রেস্তোরাঁটি ইজারা দেয় গণপূর্ত। এর পর থেকে ইউরো এশিয়ানো এটি পরিচালনা করে আসছিল। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্টের পর জিল্লুর রহমানকে উৎখাত করে এর দখল নেয় বিএনপির একটি পক্ষ।

এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (গণপূর্ত নগর বিভাগ) আবুল কালাম আজাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে কিছু লোক রমনা রেস্তোরাঁ দখল নিয়েছে। সেই সময় থেকে আমরা আর ভাড়া পাচ্ছি না। তাই বিস্তারিত উল্লেখ করে পূর্ত মন্ত্রণালয় এবং ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের জন্য ঢাকার জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই সেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার বলেন, ‘বিগত কয়েক মাস ধরে রমনা পার্কের রেস্তোরাঁটি একটি মহল দখল করে রেখেছে। এ জন্য আমরা নতুন করে দরপত্র আহ্বান করেছি। এটি চূড়ান্ত হলে দখলদারের উচ্ছেদ করা হবে।’

গত শনিবার রমনা রেস্তোরাঁয় গিয়ে দেখা যায়, সেটি আগের মতোই ব্যস্ত। আশপাশের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ম্যানেজারসহ রেস্তোরাঁটিতে মোট ৩৫ জন লোক কাজ করেন। তাঁরা জানান, অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকার কোতোয়ালি থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মোল্লা ইউসুফ এটি চালাচ্ছেন। তিনি এর আগে থানা বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। রমনা পার্কের লেকে দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য চলে কয়েকটি প্যাডেল বোট। এসব বোটে চড়তে প্রতি ৩০ মিনিটের জন্য গুনতে হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ টাকাও নিচ্ছেন দখলদারেরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানা বিএনপির নেতা মোল্লা ইউসুফ গত শনিবার বলেন, ‘এটির মালিক মূলত জিল্লু ভাই। আমি তাঁর কাছ থেকে লিখে নিছি। এখান থেকে যে টাকা আসে তা দলের অনেকেই পায়। কারণ ব্যবসা করে আমরা দলের পেছনে খরচ করি। কোনো প্রকার চাঁদাবাজি করি না। সরকারিভাবে টেন্ডার দিলে আমিই রেস্তোরাঁর ইজারা পাব।’

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। তাঁর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা জিল্লুর রহমানেরও হদিস নেই। কাজেই মোল্লা ইউসুফের তাঁর কাছ থেকে রেস্তোরাঁটির ব্যবসা ‘লিখে নেওয়া’র দাবি যাচাই করা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত