অনলাইন ডেস্ক
গত এপ্রিলে ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণা দিয়ে বিশ্বজুড়ে শুল্ক আরোপ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এশিয়ার অর্থনীতি। দীর্ঘদিনের পুরোনো মার্কিন মিত্র জাপান থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ান জোটের দেশগুলোসহ যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল, তাদের অর্থনীতি অস্থির হয়ে উঠেছিল। তারপর ১ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে মরিয়া হয়ে ওঠে দেশগুলো। অবশেষে ১ আগস্ট এসেছে এবং ট্রাম্পের সর্বশেষ ঘোষণায় কোন দেশ কী পেল এবং কোন কোন দেশের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ল, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
এশিয়ায় মার্কিন মিত্র: দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান ও অস্ট্রেলিয়া
এশিয়া অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান ও অস্ট্রেলিয়া শুল্কহারের হিসাবে তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার তৈরি গাড়ি ও সেমিকন্ডাক্টর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সম্পর্কও বজায় রাখে। তা সত্ত্বেও গত এপ্রিলে এই দুই দেশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।
তবে উভয় দেশই জুলাইয়ের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে চুক্তি চূড়ান্ত করার মাধ্যমে শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামাতে সক্ষম হয়েছে।
গত ২২ জুলাই (মার্কিন সময় অনুযায়ী) ট্রাম্প জাপানের সঙ্গে চুক্তিকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য চুক্তি’ বলে ঘোষণা দেন। আর দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয় গত বুধবার (৩০ জুলাই)।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুতকারী দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র তাইওয়ানের ওপর শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশ হয়েছে। তবে তাদের চিপশিল্পকে আলাদাভাবে খাতভিত্তিক শুল্কের মুখে পড়তে হবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। আজ শুক্রবার তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-টে বলেন, বর্তমান শুল্কহার ‘অস্থায়ী’, কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা এখনো চলছে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়া এপ্রিল মাসে ১০ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়লেও আপাতত সে হার আর বাড়েনি।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ডের ওপর শুল্ক বেড়ে ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় নিউজিল্যান্ডের বাণিজ্যমন্ত্রী টড ম্যাকক্লে বলেন, তাঁর দেশ ‘অন্যায়ভাবে শাস্তি পেয়েছে’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও বাণিজ্য আলোচক জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে একটি ফোনালাপ করতে চেয়েছেন, যাতে কম শুল্কের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা যায়।
এশিয়ার পরাশক্তি চীন ও ভারত পড়েছে রোষানলে
চীনের নাম আজকের ঘোষিত শুল্ক তালিকায় না থাকলেও সবার দৃষ্টি তার দিকেই। বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনেক বেড়েছে।
বিবিসির এশিয়া বিজনেস করেসপনডেন্ট সংবাদদাতা সুরঞ্জনা তেওয়ারির মতে, চীন সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপ্রযুক্তি, বিশেষ করে, সেমিকন্ডাক্টর সম্পর্কিত রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ স্থগিত রাখার দাবিতে আলোচনায় বসেছে। এর বদলে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে বিরল খনিজের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর চাপ দিচ্ছে ফেন্টানিল উৎপাদন কমানো, মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য চীনের বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়ানো, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পরিমাণে পণ্য ও কৃষিপণ্য কিনে নেওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে চীনা বিনিয়োগে উৎসাহিত করার বিষয়ে।
বর্তমানে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ১২ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দেশই তা ৯০ দিন বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
এদিকে ভারতকে ট্রাম্প বারবার ‘ভালো বন্ধু’ বলে সম্বোধন করলেও দেশটি এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কের শিকার হয়েছে। গত এপ্রিলে ভারতের ওপর প্রস্তাবিত ২৭ শতাংশ শুল্ক থেকে এটি কিছুটা কমেছে, তবে পরে সেটি সাময়িকভাবে স্থগিতও করা হয়েছিল। পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার কারণে ভারতের ওপর ‘জরিমানা’ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, মস্কোর সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক এখনো ভারত-মার্কিন সম্পর্কে ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আসিয়ান দেশগুলোতে শুল্কের আঘাত
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ঘোষণার পর একেবারেই ভিন্ন ধরনের পরিণতির মুখে পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। গত ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আকস্মিকভাবে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছিল এই অঞ্চলেই। কারণ, এই অঞ্চলের পুরো অর্থনৈতিক কাঠামো টিকে রয়েছে রপ্তানির ওপর।
প্রাথমিকভাবে কিছু দেশের ওপর শুল্কহার ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত ছিল, যা থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের ইলেকট্রনিকস নির্মাণশিল্প, মালয়েশিয়ার চিপশিল্প ও কম্বোডিয়ার পোশাকশিল্পকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের ১০টি দেশের মধ্যে ভিয়েতনামই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসে এবং প্রথম চুক্তি করে। এ চুক্তির ফলে তাদের ওপর মার্কিন শুল্কহার কমে ৪৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে আসে।
যদিও কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যানয় ট্রাম্পের উপস্থাপিত পরিসংখ্যানের সঙ্গে একমত নয়, তবুও ভিয়েতনাম কার্যত পুরো অঞ্চলের জন্য একটি মানদণ্ড (বেঞ্চমার্ক) স্থাপন করেছে।
আজ আরোপিত পাল্টা শুল্ক তালিকায় দেখা যায়, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম এখন ১৯ থেকে ২০ শতাংশ হারে শুল্কের মুখে পড়েছে। তাদের মধ্যে ব্রুনেই কিছুটা ব্যতিক্রম, যেখানে শুল্কহার ২৫ শতাংশ।
তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে লাওস ও মিয়ানমার। এই দুই দেশের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে কেন এই দুই দেশের ওপর এত উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে হেনরিখ ফাউন্ডেশনের বাণিজ্যনীতি বিভাগের প্রধান ড. ডেবোরা এল্মস মনে করছেন, এই দেশগুলোর সীমিত বাজার প্রবেশাধিকার, কম ক্রয়ক্ষমতা ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়তো হোয়াইট হাউসের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের শুল্কহার অপরিবর্তিত রয়েছে ১০ শতাংশ। এই নগররাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে যতটা আমদানি করে, তারচেয়ে কম রপ্তানি করে।
এশিয়ার অন্য দেশগুলোর অবস্থা যেমন
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শুল্কহার দেশভেদে ভিন্ন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম শুল্কহার পেয়েছে পাকিস্তান। দেশটির ওপর মাত্র ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উষ্ণ হয়ে উঠেছে। এমনকি গত জুন মাসে পাকিস্তান ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নও দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তুলনামূলক কম শুল্কহার পাকিস্তানের বস্ত্রশিল্পের (টেক্সটাইল) জন্য বিশেষ সুবিধা এনে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের মোট রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশই বস্ত্রশিল্প, যার একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রমুখী। অন্যদিকে একই খাতে পাকিস্তানের মূল প্রতিযোগী ভারত, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। তাদের ওপর বেশি শুল্কের চাপ পড়েছে।
অন্যদিকে আফগানিস্তান, ফিজি, নাউরু ও পাপুয়া নিউগিনি এখন ১৫ শতাংশ শুল্কের আওতায় রয়েছে। আর কাজাখস্তান পেয়েছে ২৫ শতাংশ হার।
তবে এ শুল্ক যে চূড়ান্ত নয়, তা আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন হেনরিখ ফাউন্ডেশনের ড. ডেবোরা এল্মস। তিনি বলেন, নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কিংবা পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট যেকোনো সময় এই হার পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারেন। সুতরাং প্রথমত, প্রেসিডেন্ট যা খুশি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, তিনি তাঁর অধীনস্থ সংস্থাগুলোকে বাণিজ্য বাধা মোকাবিলায় ব্যাপক স্বাধীনতা দিয়েছেন।
গত এপ্রিলে ‘লিবারেশন ডে’ ঘোষণা দিয়ে বিশ্বজুড়ে শুল্ক আরোপ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এশিয়ার অর্থনীতি। দীর্ঘদিনের পুরোনো মার্কিন মিত্র জাপান থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ান জোটের দেশগুলোসহ যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল, তাদের অর্থনীতি অস্থির হয়ে উঠেছিল। তারপর ১ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে মরিয়া হয়ে ওঠে দেশগুলো। অবশেষে ১ আগস্ট এসেছে এবং ট্রাম্পের সর্বশেষ ঘোষণায় কোন দেশ কী পেল এবং কোন কোন দেশের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ল, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
এশিয়ায় মার্কিন মিত্র: দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান ও অস্ট্রেলিয়া
এশিয়া অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান ও অস্ট্রেলিয়া শুল্কহারের হিসাবে তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার তৈরি গাড়ি ও সেমিকন্ডাক্টর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সম্পর্কও বজায় রাখে। তা সত্ত্বেও গত এপ্রিলে এই দুই দেশের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।
তবে উভয় দেশই জুলাইয়ের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে চুক্তি চূড়ান্ত করার মাধ্যমে শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামাতে সক্ষম হয়েছে।
গত ২২ জুলাই (মার্কিন সময় অনুযায়ী) ট্রাম্প জাপানের সঙ্গে চুক্তিকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য চুক্তি’ বলে ঘোষণা দেন। আর দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয় গত বুধবার (৩০ জুলাই)।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুতকারী দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র তাইওয়ানের ওপর শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশ হয়েছে। তবে তাদের চিপশিল্পকে আলাদাভাবে খাতভিত্তিক শুল্কের মুখে পড়তে হবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। আজ শুক্রবার তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-টে বলেন, বর্তমান শুল্কহার ‘অস্থায়ী’, কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা এখনো চলছে।
এদিকে অস্ট্রেলিয়া এপ্রিল মাসে ১০ শতাংশ শুল্কের মুখে পড়লেও আপাতত সে হার আর বাড়েনি।
অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ডের ওপর শুল্ক বেড়ে ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় নিউজিল্যান্ডের বাণিজ্যমন্ত্রী টড ম্যাকক্লে বলেন, তাঁর দেশ ‘অন্যায়ভাবে শাস্তি পেয়েছে’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও বাণিজ্য আলোচক জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে একটি ফোনালাপ করতে চেয়েছেন, যাতে কম শুল্কের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা যায়।
এশিয়ার পরাশক্তি চীন ও ভারত পড়েছে রোষানলে
চীনের নাম আজকের ঘোষিত শুল্ক তালিকায় না থাকলেও সবার দৃষ্টি তার দিকেই। বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অনেক বেড়েছে।
বিবিসির এশিয়া বিজনেস করেসপনডেন্ট সংবাদদাতা সুরঞ্জনা তেওয়ারির মতে, চীন সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপ্রযুক্তি, বিশেষ করে, সেমিকন্ডাক্টর সম্পর্কিত রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ স্থগিত রাখার দাবিতে আলোচনায় বসেছে। এর বদলে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে বিরল খনিজের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায়।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর চাপ দিচ্ছে ফেন্টানিল উৎপাদন কমানো, মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য চীনের বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়ানো, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পরিমাণে পণ্য ও কৃষিপণ্য কিনে নেওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে চীনা বিনিয়োগে উৎসাহিত করার বিষয়ে।
বর্তমানে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ১২ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দেশই তা ৯০ দিন বাড়ানোর ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
এদিকে ভারতকে ট্রাম্প বারবার ‘ভালো বন্ধু’ বলে সম্বোধন করলেও দেশটি এবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্কের শিকার হয়েছে। গত এপ্রিলে ভারতের ওপর প্রস্তাবিত ২৭ শতাংশ শুল্ক থেকে এটি কিছুটা কমেছে, তবে পরে সেটি সাময়িকভাবে স্থগিতও করা হয়েছিল। পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার কারণে ভারতের ওপর ‘জরিমানা’ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, মস্কোর সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক এখনো ভারত-মার্কিন সম্পর্কে ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আসিয়ান দেশগুলোতে শুল্কের আঘাত
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ঘোষণার পর একেবারেই ভিন্ন ধরনের পরিণতির মুখে পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো। গত ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আকস্মিকভাবে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছিল এই অঞ্চলেই। কারণ, এই অঞ্চলের পুরো অর্থনৈতিক কাঠামো টিকে রয়েছে রপ্তানির ওপর।
প্রাথমিকভাবে কিছু দেশের ওপর শুল্কহার ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত ছিল, যা থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের ইলেকট্রনিকস নির্মাণশিল্প, মালয়েশিয়ার চিপশিল্প ও কম্বোডিয়ার পোশাকশিল্পকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের ১০টি দেশের মধ্যে ভিয়েতনামই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসে এবং প্রথম চুক্তি করে। এ চুক্তির ফলে তাদের ওপর মার্কিন শুল্কহার কমে ৪৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে আসে।
যদিও কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যানয় ট্রাম্পের উপস্থাপিত পরিসংখ্যানের সঙ্গে একমত নয়, তবুও ভিয়েতনাম কার্যত পুরো অঞ্চলের জন্য একটি মানদণ্ড (বেঞ্চমার্ক) স্থাপন করেছে।
আজ আরোপিত পাল্টা শুল্ক তালিকায় দেখা যায়, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম এখন ১৯ থেকে ২০ শতাংশ হারে শুল্কের মুখে পড়েছে। তাদের মধ্যে ব্রুনেই কিছুটা ব্যতিক্রম, যেখানে শুল্কহার ২৫ শতাংশ।
তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে লাওস ও মিয়ানমার। এই দুই দেশের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে কেন এই দুই দেশের ওপর এত উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে হেনরিখ ফাউন্ডেশনের বাণিজ্যনীতি বিভাগের প্রধান ড. ডেবোরা এল্মস মনে করছেন, এই দেশগুলোর সীমিত বাজার প্রবেশাধিকার, কম ক্রয়ক্ষমতা ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়তো হোয়াইট হাউসের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের শুল্কহার অপরিবর্তিত রয়েছে ১০ শতাংশ। এই নগররাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে যতটা আমদানি করে, তারচেয়ে কম রপ্তানি করে।
এশিয়ার অন্য দেশগুলোর অবস্থা যেমন
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শুল্কহার দেশভেদে ভিন্ন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম শুল্কহার পেয়েছে পাকিস্তান। দেশটির ওপর মাত্র ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উষ্ণ হয়ে উঠেছে। এমনকি গত জুন মাসে পাকিস্তান ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নও দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তুলনামূলক কম শুল্কহার পাকিস্তানের বস্ত্রশিল্পের (টেক্সটাইল) জন্য বিশেষ সুবিধা এনে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের মোট রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশই বস্ত্রশিল্প, যার একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রমুখী। অন্যদিকে একই খাতে পাকিস্তানের মূল প্রতিযোগী ভারত, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। তাদের ওপর বেশি শুল্কের চাপ পড়েছে।
অন্যদিকে আফগানিস্তান, ফিজি, নাউরু ও পাপুয়া নিউগিনি এখন ১৫ শতাংশ শুল্কের আওতায় রয়েছে। আর কাজাখস্তান পেয়েছে ২৫ শতাংশ হার।
তবে এ শুল্ক যে চূড়ান্ত নয়, তা আবারও মনে করিয়ে দিয়েছেন হেনরিখ ফাউন্ডেশনের ড. ডেবোরা এল্মস। তিনি বলেন, নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কিংবা পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট যেকোনো সময় এই হার পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারেন। সুতরাং প্রথমত, প্রেসিডেন্ট যা খুশি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, তিনি তাঁর অধীনস্থ সংস্থাগুলোকে বাণিজ্য বাধা মোকাবিলায় ব্যাপক স্বাধীনতা দিয়েছেন।
গত এপ্রিল মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে। যে ঘোষণা অস্থির করে তোলে বিশ্ব অর্থনীতিকে। তারপর বেশিরভাগ শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করতে বাধ্য হন ট্রাম্প।
১৯ ঘণ্টা আগেবিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে দ্রুত উত্থান, মার্কিন কৌশলগত নীতির কারণে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ওয়াশিংটনের কাছে দিল্লির একটা আলাদা গুরুত্ব সব সময়ই ছিল। এতে ভারতের আত্মবিশ্বাস ও আঞ্চলিক প্রভাব অনেক বেড়েছে। বিশ্বমঞ্চে ভারতের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রবল আত্মবিশ্ব
১ দিন আগে‘বাসুধৈব কুটুম্বকম’—বিশ্ব একটি পরিবার, এই মহৎ বার্তা দিয়েই ভারত নিজ দেশে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে বিশ্বের সামনে নিজ দেশের দর্শন তুলে ধরেছিল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। একটি জাতিকে নির্মূল করার যুদ্ধে মদদ দিয়ে, যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দমন করে, এমনকি শিশুদের ওপর বোমাবর্ষণকারী এক...
৩ দিন আগেমিয়ানমারের বিরল খনিজ সম্পদের দিকে চোখ পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। মিয়ানমারের বিরল খনিজে চীনের কর্তৃত্ব সরিয়ে নিতে এবার ট্রাম্প প্রশাসন হাত মেলাচ্ছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে। এমনকি দেশটির ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাগুলোতে আসছে শিথিলতা, হচ্ছে প্রত্যাহারও।
৪ দিন আগে