আজকের পত্রিকা ডেস্ক
নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরা এবং নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রচারণাও চালানো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশেষে এক বড় কূটনৈতিক সাফল্য পেয়েছেন। সেই সাফল্য আবার ক্যামেরার সামনে ফলাও করে প্রচারও করেছেন। তাঁর আহ্বানে বিশ্বনেতারা উড়ে গেলেন মিসরে। আর সেখানে তিনি সকলের মধ্যমণি হয়েছে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময়ের চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
তবে বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, এই সাফল্য টেকসই শান্তির পথে কত দূর এগোবে, তা নির্ভর করবে ট্রাম্প কতটা চাপ বজায় রাখতে পারেন তার ওপর। বিশেষ করে সেই নেতার ওপর, যাঁর সমর্থন তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দরকার হবে। তিনি আর কেউ নন—ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
বিল ক্লিনটন থেকে জো বাইডেন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রেসিডেন্টের জন্যই নেতানিয়াহুর সঙ্গে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ইসরায়েলের কিছু সামরিক হামলায় বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। তাদের মতে, এসব হামলা যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে দুর্বল করেছে।
তবুও এ মাসে ট্রাম্প এক বড় সাফল্য দেখিয়েছেন। তিনি নেতানিয়াহুকে রাজি করাতে পেরেছেন তাঁর প্রস্তাবিত বৃহত্তর শান্তি চুক্তির কাঠামোয়। পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোকে বোঝাতে পেরেছেন, যেন তারা হামাসকে সব ইসরায়েলি বন্দী ফেরত দিতে রাজি করায়—যা যুদ্ধের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল। তবে এখান থেকে কাজ আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে মতবিরোধ
ইসরায়েল ও হামাস এখনো ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনার অনেক বিষয়ে একমত হতে পারেনি। আগামী বছর ইসরায়েলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—তাই নেতানিয়াহু তাঁর ডানপন্থী জোট টিকিয়ে রাখতে গেলে নীতি বদলাতেও পারেন। নেতানিয়াহুর জোটের প্রভাবশালী দুই সহযোগী—ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মতরিচ—হামাসের সঙ্গে করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সমালোচনা করেছেন। জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন-গভির তো সরকার ছাড়ার হুমকিও দিয়েছেন।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক থিংকট্যাংক ‘মিতভিম’—এর প্রেসিডেন্ট নিমরোদ গোরেন বলেন, ‘আমরা এখন এমন এক রাজনৈতিক বছরে ঢুকছি যেখানে সবকিছুই নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে সম্পর্কিত। নেতানিয়াহুর হিসাব এখন পাল্টে যেতে পারে—চাপের কাছে নতি স্বীকার করার বদলে তিনি হয়তো রাজনৈতিক টিকে থাকার চেষ্টা করবেন।’
বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার শক্তিটাই আবার তার দুর্বলতা। এই চুক্তির মূল দলিলটিতে অনেক বিষয়ই অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। উভয় পক্ষই বিস্তারিত শর্তে একমত হয়নি। এই অস্পষ্টতাই হয়তো দুই পক্ষকে সই করাতে সাহায্য করেছে, কিন্তু এর অর্থ হলো—সবচেয়ে কঠিন কূটনৈতিক কাজ এখনো বাকি।
‘গাজা শাসনই’—বড় প্রশ্ন
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে এবং যুদ্ধপরবর্তী গাজার প্রশাসনে কোনো ভূমিকায় থাকতে পারবে না। যদিও হামাস পরিকল্পনাটিতে সাধারণভাবে সম্মতি জানিয়েছে, তাদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই শর্তগুলোর উল্লেখ নেই। বরং হামাস নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তারা গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থায় নিজেদের ভূমিকা দেখতে চান।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ও সাবেক কূটনীতিক জন অলটারম্যান বলেন, ‘এটা এমন এক চুক্তি, যেটি সহজেই ভেস্তে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন অস্পষ্ট চুক্তি বিরল—যেখানে এত কিছু পরবর্তীতে ঠিক করতে হবে।’
এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃঢ় সমর্থন দেওয়ার কারণেই ট্রাম্প এখন নেতানিয়াহুর ওপর প্রভাব খাটাতে পারছেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, ট্রাম্পের আগের প্রশাসন জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং গোলান মালভূমিকেও ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিল।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে শতভাগ বিষয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থেকেছেন। মধ্যপন্থা অবলম্বন করার চেষ্টা করেননি। আর সেই কারণেই তিনি ইসরায়েলকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পেরেছেন।’
ইসরায়েলি জরিপকারী মিচেল বারাক—যিনি নব্বইয়ের দশকে নেতানিয়াহুর সঙ্গে কাজ করেছিলেন—বলেন, ট্রাম্প যত দিন হোয়াইট হাউসে আছেন, তত দিন নেতানিয়াহুর কোনো উপায় থাকবে না। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মেলাতেই হবে।
কঠোর ট্রাম্পের আবির্ভাব
নেতানিয়াহুর ওপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগে ট্রাম্পের রেকর্ড মিশ্র। গত জুলাইয়ে ইসরায়েল সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিমান হামলা চালায়, যে সময় যুক্তরাষ্ট্র নতুন সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছিল। গাজায় দীর্ঘদিন ধরে মানবিক সংকট চললেও ট্রাম্প সেই সময় নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিকভাবে রক্ষা দিয়ে গেছেন।
তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এক কঠোর ট্রাম্প দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে হামাস প্রতিনিধিদের লক্ষ্য করে কাতারে ইসরায়েলের ব্যর্থ বোমা হামলার পর তিনি নেতানিয়াহুকে কাতারের আমিরের কাছে ফোন করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। শেষ পর্যন্ত নেতানিয়াহুকে তাঁর অনিচ্ছা সত্ত্বেও ২০ দফা পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করাতে সক্ষম হন ট্রাম্প।
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক জন অলটারম্যান বলেন, এখন ট্রাম্পের হাতে বড় সুবিধা রয়েছে—কারণ ইসরায়েলে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা নেতানিয়াহুর চেয়েও বেশি। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প চাইলে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে সমর্থনও দিতে পারেন, আবার চাইলে ধ্বংসও করতে পারেন।’
সোমবার ইসরায়েলি পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প রসিকতার সুরে নেতানিয়াহুকে বলেন, ‘আচ্ছা, এখন একটু ভদ্র হতে পারো, বিবি (নেতানিয়াহুর ডাক নাম), কারণ তুমি আর যুদ্ধে নেই।’ বক্তব্যে হাসির রোল পড়ে।
তবে আগামী বছরের নির্বাচন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক হিসাব পুরোপুরি পাল্টে দিতে পারে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, হামাস অস্ত্র সমর্পণে দেরি করলে ডানপন্থী জোট নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়াবে যেন তিনি গাজায় সামরিক অভিযান আবার শুরু করেন, যা ট্রাম্পের শান্তিচুক্তিকে কার্যত ভেস্তে দেবে।
ইসরায়েলের ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী ‘রিলিজিয়াস জায়োনিজম’ পার্টির এমপি সিমচা রথম্যান সোমবার বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন যে’ হামাস এখনো প্রকাশ্যে বলছে, তারা গাজার ক্ষমতায় থাকবে। আমরা এমন কোনো চুক্তি মেনে নেব না, যা হামাসের পূর্ণ আত্মসমর্পণ নয়। আংশিক বিজয় আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রসঙ্গেই সবচেয়ে বড় বাধা
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় একটি ধারা রয়েছে, যেখানে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা উল্লেখ আছে। বিশ্লেষকদের মতে, হামাসের ২০২৩ সালের অক্টোবরের হামলার পর অধিকাংশ ইসরায়েলির পক্ষেই এখন এ ধারণা মেনে নেওয়া কঠিন। ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান শ্যাপিরো বলেন, সরকার ও বিরোধী দল যদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা করে প্রচারণা চালায়, তাহলে আরব দেশগুলোর আগ্রহ কমে যাবে—তারা হয়তো হামাসের ওপর চাপ দিতে চাইবে না।
শ্যাপিরো বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনার বিষয়টি পরিকল্পনায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, এর মাধ্যমেই আরব দেশগুলোকে তাদের অংশের দায়িত্ব নিতে রাজি করানো গেছে। কিন্তু যদি ইসরায়েলের রাজনীতিতে এই ধারণার একেবারে পূর্ণ প্রত্যাখ্যান দেখা যায়, তাহলে আরব রাষ্ট্রগুলোর অংশগ্রহণও কমে যাবে।’
রয়টার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরা এবং নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রচারণাও চালানো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশেষে এক বড় কূটনৈতিক সাফল্য পেয়েছেন। সেই সাফল্য আবার ক্যামেরার সামনে ফলাও করে প্রচারও করেছেন। তাঁর আহ্বানে বিশ্বনেতারা উড়ে গেলেন মিসরে। আর সেখানে তিনি সকলের মধ্যমণি হয়েছে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময়ের চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়।
তবে বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, এই সাফল্য টেকসই শান্তির পথে কত দূর এগোবে, তা নির্ভর করবে ট্রাম্প কতটা চাপ বজায় রাখতে পারেন তার ওপর। বিশেষ করে সেই নেতার ওপর, যাঁর সমর্থন তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দরকার হবে। তিনি আর কেউ নন—ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
বিল ক্লিনটন থেকে জো বাইডেন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রেসিডেন্টের জন্যই নেতানিয়াহুর সঙ্গে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ইসরায়েলের কিছু সামরিক হামলায় বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন। তাদের মতে, এসব হামলা যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে দুর্বল করেছে।
তবুও এ মাসে ট্রাম্প এক বড় সাফল্য দেখিয়েছেন। তিনি নেতানিয়াহুকে রাজি করাতে পেরেছেন তাঁর প্রস্তাবিত বৃহত্তর শান্তি চুক্তির কাঠামোয়। পাশাপাশি, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোকে বোঝাতে পেরেছেন, যেন তারা হামাসকে সব ইসরায়েলি বন্দী ফেরত দিতে রাজি করায়—যা যুদ্ধের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল। তবে এখান থেকে কাজ আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে মতবিরোধ
ইসরায়েল ও হামাস এখনো ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনার অনেক বিষয়ে একমত হতে পারেনি। আগামী বছর ইসরায়েলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—তাই নেতানিয়াহু তাঁর ডানপন্থী জোট টিকিয়ে রাখতে গেলে নীতি বদলাতেও পারেন। নেতানিয়াহুর জোটের প্রভাবশালী দুই সহযোগী—ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মতরিচ—হামাসের সঙ্গে করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সমালোচনা করেছেন। জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন-গভির তো সরকার ছাড়ার হুমকিও দিয়েছেন।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক থিংকট্যাংক ‘মিতভিম’—এর প্রেসিডেন্ট নিমরোদ গোরেন বলেন, ‘আমরা এখন এমন এক রাজনৈতিক বছরে ঢুকছি যেখানে সবকিছুই নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে সম্পর্কিত। নেতানিয়াহুর হিসাব এখন পাল্টে যেতে পারে—চাপের কাছে নতি স্বীকার করার বদলে তিনি হয়তো রাজনৈতিক টিকে থাকার চেষ্টা করবেন।’
বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার শক্তিটাই আবার তার দুর্বলতা। এই চুক্তির মূল দলিলটিতে অনেক বিষয়ই অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। উভয় পক্ষই বিস্তারিত শর্তে একমত হয়নি। এই অস্পষ্টতাই হয়তো দুই পক্ষকে সই করাতে সাহায্য করেছে, কিন্তু এর অর্থ হলো—সবচেয়ে কঠিন কূটনৈতিক কাজ এখনো বাকি।
‘গাজা শাসনই’—বড় প্রশ্ন
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাসকে অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে এবং যুদ্ধপরবর্তী গাজার প্রশাসনে কোনো ভূমিকায় থাকতে পারবে না। যদিও হামাস পরিকল্পনাটিতে সাধারণভাবে সম্মতি জানিয়েছে, তাদের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই শর্তগুলোর উল্লেখ নেই। বরং হামাস নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তারা গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থায় নিজেদের ভূমিকা দেখতে চান।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ও সাবেক কূটনীতিক জন অলটারম্যান বলেন, ‘এটা এমন এক চুক্তি, যেটি সহজেই ভেস্তে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন অস্পষ্ট চুক্তি বিরল—যেখানে এত কিছু পরবর্তীতে ঠিক করতে হবে।’
এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃঢ় সমর্থন দেওয়ার কারণেই ট্রাম্প এখন নেতানিয়াহুর ওপর প্রভাব খাটাতে পারছেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, ট্রাম্পের আগের প্রশাসন জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং গোলান মালভূমিকেও ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিল।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে শতভাগ বিষয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থেকেছেন। মধ্যপন্থা অবলম্বন করার চেষ্টা করেননি। আর সেই কারণেই তিনি ইসরায়েলকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পেরেছেন।’
ইসরায়েলি জরিপকারী মিচেল বারাক—যিনি নব্বইয়ের দশকে নেতানিয়াহুর সঙ্গে কাজ করেছিলেন—বলেন, ট্রাম্প যত দিন হোয়াইট হাউসে আছেন, তত দিন নেতানিয়াহুর কোনো উপায় থাকবে না। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মেলাতেই হবে।
কঠোর ট্রাম্পের আবির্ভাব
নেতানিয়াহুর ওপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগে ট্রাম্পের রেকর্ড মিশ্র। গত জুলাইয়ে ইসরায়েল সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বিমান হামলা চালায়, যে সময় যুক্তরাষ্ট্র নতুন সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছিল। গাজায় দীর্ঘদিন ধরে মানবিক সংকট চললেও ট্রাম্প সেই সময় নেতানিয়াহুকে রাজনৈতিকভাবে রক্ষা দিয়ে গেছেন।
তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এক কঠোর ট্রাম্প দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে হামাস প্রতিনিধিদের লক্ষ্য করে কাতারে ইসরায়েলের ব্যর্থ বোমা হামলার পর তিনি নেতানিয়াহুকে কাতারের আমিরের কাছে ফোন করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। শেষ পর্যন্ত নেতানিয়াহুকে তাঁর অনিচ্ছা সত্ত্বেও ২০ দফা পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করাতে সক্ষম হন ট্রাম্প।
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক জন অলটারম্যান বলেন, এখন ট্রাম্পের হাতে বড় সুবিধা রয়েছে—কারণ ইসরায়েলে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা নেতানিয়াহুর চেয়েও বেশি। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প চাইলে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে সমর্থনও দিতে পারেন, আবার চাইলে ধ্বংসও করতে পারেন।’
সোমবার ইসরায়েলি পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প রসিকতার সুরে নেতানিয়াহুকে বলেন, ‘আচ্ছা, এখন একটু ভদ্র হতে পারো, বিবি (নেতানিয়াহুর ডাক নাম), কারণ তুমি আর যুদ্ধে নেই।’ বক্তব্যে হাসির রোল পড়ে।
তবে আগামী বছরের নির্বাচন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক হিসাব পুরোপুরি পাল্টে দিতে পারে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, হামাস অস্ত্র সমর্পণে দেরি করলে ডানপন্থী জোট নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়াবে যেন তিনি গাজায় সামরিক অভিযান আবার শুরু করেন, যা ট্রাম্পের শান্তিচুক্তিকে কার্যত ভেস্তে দেবে।
ইসরায়েলের ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী ‘রিলিজিয়াস জায়োনিজম’ পার্টির এমপি সিমচা রথম্যান সোমবার বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন যে’ হামাস এখনো প্রকাশ্যে বলছে, তারা গাজার ক্ষমতায় থাকবে। আমরা এমন কোনো চুক্তি মেনে নেব না, যা হামাসের পূর্ণ আত্মসমর্পণ নয়। আংশিক বিজয় আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রসঙ্গেই সবচেয়ে বড় বাধা
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় একটি ধারা রয়েছে, যেখানে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা উল্লেখ আছে। বিশ্লেষকদের মতে, হামাসের ২০২৩ সালের অক্টোবরের হামলার পর অধিকাংশ ইসরায়েলির পক্ষেই এখন এ ধারণা মেনে নেওয়া কঠিন। ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান শ্যাপিরো বলেন, সরকার ও বিরোধী দল যদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা করে প্রচারণা চালায়, তাহলে আরব দেশগুলোর আগ্রহ কমে যাবে—তারা হয়তো হামাসের ওপর চাপ দিতে চাইবে না।
শ্যাপিরো বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনার বিষয়টি পরিকল্পনায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, এর মাধ্যমেই আরব দেশগুলোকে তাদের অংশের দায়িত্ব নিতে রাজি করানো গেছে। কিন্তু যদি ইসরায়েলের রাজনীতিতে এই ধারণার একেবারে পূর্ণ প্রত্যাখ্যান দেখা যায়, তাহলে আরব রাষ্ট্রগুলোর অংশগ্রহণও কমে যাবে।’
রয়টার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধ বন্ধ, জিম্মি–বন্দিবিনিময় এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারা। এর আগে হামাস এবং ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। কাতার, তুরস্ক, মিসর, পাকিস্তান, জর্ডানের নেতারাও এই চুক্তিতে...
২১ ঘণ্টা আগেমাঝখানে কয়েক দিনের বিরতি দিয়ে টানা দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের পর এখন এক বিশাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে—গাজা সিটির ৮৩ শতাংশ ভবনই ক্ষতিগ্রস্ত। সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে অন্তত ১৭ হাজার ৭০০টি ভবন।
২ দিন আগেকিছু পাকিস্তানি বিশ্লেষক মনে করেন, ইসলামাবাদের আপাতত চিন্তার কিছু নেই। পূর্ব আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ছিলেন আসিফ দুররানি। তিনি বলেন, ‘ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্ক নয়াদিল্লি–কাবুলের তুলনায় গভীর। ভারত তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এখন পারস্পরিক সুবিধা মূল্যায়ন করে ফিরে..
৩ দিন আগেফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একসময় ‘বর্ণবাদী’, ‘অরাজকতার রেসিপি’ এবং গাজা নিয়ে ‘অযৌক্তিক কল্পনা’ পোষণকারী ব্যক্তি বলে আখ্যা দিয়েছিল। তবু গত মাসে এক অবিশ্বাস্য ফোনকল হামাসকে এই বিশ্বাসে রাজি করিয়েছে যে, যুদ্ধের জিম্মিদের সবাইকে ছেড়ে দিলেও...
৩ দিন আগে