Ajker Patrika

নাম সচ্ছলদের, বঞ্চিত দুস্থরা

  • কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর বলদিয়া ইউনিয়নে চাল বিতরণে ‘অনিয়ম’।
  • রয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাসহ প্রায় ২ হাজার সচ্ছল ব্যক্তির নাম।
  • ১৮ টন চাল ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে সিলগালা করে রাখা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম ও ভূরুঙ্গামারী প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর বলদিয়া ইউনিয়নে ভিজিএফের (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) তালিকায় দুস্থদের বাদ দিয়ে সচ্ছলদের অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এতে ঈদ উপলক্ষে দেওয়া ভিজিএফের চাল পায়নি দুস্থরা। ঈদুল আজহার আগের দিন ভিজিএফের চাল বিতরণ শেষ করা হয়।

জানা গেছে, ভিজিএফের এই তালিকায় রাজনৈতিক দলের নেতা, ব্যবসায়ী এবং স্কুলশিক্ষকদের নামও রয়েছে। তবে তাঁরা চাল নিতে আসেননি। অপর দিকে অনেক দুস্থ মানুষ সারা দিন ইউনিয়ন পরিষদে অপেক্ষা করে চাল না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যান।

তালিকাভুক্ত হওয়া সচ্ছল ব্যক্তিরা বলছেন, কীভাবে তাঁদের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে, তা তাঁরা জানেন না। এদিকে অভিযোগ রয়েছে, সচ্ছল ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করে তাঁদের নামে বরাদ্দ দেওয়া চাল বিক্রি করে দেওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসন বলছে, ত্রুটিপূর্ণ ভিজিএফের তালিকা সংশোধন করে অবিলিকৃত চাল বিতরণ করা হবে।

জানা গেছে, বলদিয়া ইউনিয়নের ৫ হাজার ৭৪৫ জন হতদরিদ্রের জন্য ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৫৭ দশমিক ৪৫ টন চল বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিজন হতদরিদ্রের জন্য বরাদ্দ ১০ কেজি করে চাল। ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ভিজিএফ সুবিধাভোগীর তালিকা তৈরি করেন। উপজেলা কমিটি যাচাই-বাছাই করে সেই তালিকা অনুমোদন করে। অভিযোগ উঠেছে, বলদিয়া ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের নাম বাদ দিয়ে প্রায় ২ হাজার সচ্ছল ব্যক্তির নাম ভিজিএফের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। গত ঈদুল ফিতরের আগে এই তালিকা করা হয়েছে।

স্থানীয়রা ঈদুল আজহার আগে ভিজিএফের চাল বিতরণের সময় অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন তালিকাভুক্ত নামের সঙ্গে চাল নিতে আসা ব্যক্তির নাম যাচাই করে চাল বিতরণ করে। এতে সাড়ে ১৮ টন চাল নেওয়ার মানুষ না পাওয়া গেলে সেগুলো ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে সিলগালা করে রেখে দেওয়া হয়।

আমেনা বেগম নামের এক দুস্থ নারী বলেন, ‘আজ পর্যন্ত একটা স্লিপ পাই নাই, চালও পাই নাই। মেম্বার-চেয়ারম্যান আমার কার্ড নিয়েছে, সেই কার্ড কী করেছে জানি না।’

অপর দিকে ভিজিএফের তালিকার ২৫৭ নম্বরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফুজ্জামানের নাম রয়েছে। আরমান আলী নামের আরেকজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের নাম ২৫৮ নম্বরে আছে। বলদিয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সরকারের নাম ১১৩৮ নম্বরে নাম রয়েছে। রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর নাম ২৯২১ নম্বরে আছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা লুৎফর রহমানের নাম ২৯৩৯ নম্বরে আছে। তালিকার ২৯৪৯ নম্বরে থাকা আইনুল হক সচ্ছল ব্যক্তি। এভাবে প্রায় ২ হাজার সচ্ছল ব্যক্তির নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ভিজিএফের তালিকাভুক্ত হওয়া শিক্ষক আশরাফুজ্জামান ও আরমান আলী বলেন, তালিকায় আমাদের নাম কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তা জানি না।

বলদিয়া ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক লুৎফর রহমান বলেন, ‘ভিজিএফের তালিকায় নিজের নাম দেখে হতভম্ব হয়েছি। কে বা কারা নাম তালিকাভুক্ত করেছে সেটা জানি না। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা এভাবে নাম দিয়ে চাল বিক্রি করে দেয়।’ তদন্ত করে বিচারের দাবি করেন তিনি।

ঈদুল আজহার আগের দিন ভিজিএফে চাল নিতে ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়া কয়েকজন বলেন, ‘পরিষদে চাল নিতে গিয়ে সারা দিন অপেক্ষা করি। সন্ধ্যায় খালি হাতে বাড়ি ফিরে যাই। তালিকায় নাম না থাকায় চাল দেয়নি।’ তাঁরা অভিযোগ করেন, তাঁদের স্লিপ চেয়ারম্যান-মেম্বাররা বিক্রি করে দিয়েছেন। এসব নারী-পুরুষের অনেকে ঈদুল ফিতরে চাল পেয়েছেন।

বলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, তালিকায় ভুলক্রমে কিছু সচ্ছল ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তবে স্লিপ বিক্রি করার অভিযোগ সত্য নয়।

চাল বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ভিজিএফের তালিকাভুক্ত ১ হাজার ৮৪০ জন বিতরণের শেষ দিনে চাল নিতে আসেন নাই। এসব ব্যক্তির বিপরীতে প্রায় সাড়ে ১৮ টন চাল গুদামে সিলগালা করে রাখা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম ফেরদৌস বলেন, ভিজিএফের তালিকায় ত্রুটি পরিলক্ষিত হওয়ায় চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। তালিকা সংশোধন করে চাল বিতরণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত