Ajker Patrika

‘মার্কেট যখন খোলা, শপিং তো করতেই হবে’

সাইফুল মাসুম ও অর্চি হক
আপডেট : ০৭ মে ২০২১, ১৯: ২৮
‘মার্কেট যখন খোলা, শপিং তো করতেই হবে’

ঢাকা: 'মার্কেট যখন খোলা, শপিং তো করতেই হবে। গতবছর ঈদের আগে মার্কেট বন্ধ ছিল। তাই শপিং করি নাই। কিন্তু এবার মার্কেট খুলে দিছে। তাই চলে এলাম। মাস্ক তো আছেই। ভয় কীসের?' কথাগুলো বলছিলেন সায়েদাবাদ থেকে নিউমার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা জান্নাতুল ইসলাম। মাস্ক থাকলেও সামাজিক (শারীরিক) দূরত্ব তো মানা হচ্ছে না—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এত মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব মানা যায় নাকি? মরতে তো হবেই। এত মানামানি করে হবেটা কী।

শুধু জান্নাতুল ইসলাম নন, তাঁর মতো অসংখ্য মানুষ ঈদের কেনাকাটা করছে করোনাভাইরাস তোয়াক্কা না করে। সংক্রমণ কমাতে সরকারের আরোপ করা বিধিনিষেধের মধ্যেও শপিং মলের পাশাপাশি গণপরিবহনে মানুষের ভীড় দেখা যাচ্ছে। মাস্ক পরার নির্দেশনা থাকলেও অনেকেই তা মানছেন না। কেউ আবার মাস্কের সঠিক ব্যবহার করছেন না। তোয়াক্কা করছেন না সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাসহ স্বাস্থ্যবিধির।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই ঈদের কেনাকাটা করছে মানুষ। নিউমার্কেট থেকে তোলা।মৌচাকের ফরচুন শপিং মলের রুপা বুটিকসের মালিক মোহাম্মদ রেজাউল। মেয়েদের পোশাক তৈরি ও বিক্রি করেন তিনি। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ক্রেতাদের বাজেট কম। তাই কম লাভেই পণ্য ছাড়তে হয়। ক্রেতারা সবাই মাস্ক পরেই শপিংমলে আসছেন।

মৌচাক মার্কেটের একটি গেটে জীবাণুনাশক টানেল রয়েছে। কিন্তু ক্রেতারা চাইলে অন্য গেট দিয়েও প্রবেশ করতে পারেন। এই মার্কেটে ৩৩ বছর ধরে ব্যবসা করেন মায়া জেনারেলের মালিক আলী হোসেন। তিনি বলেন, `এত বছর ধরে ব্যবসা করি। এমন খারাপ পরিস্থিতি আগে কখনো হয়নি। করোনাভাইরাসের অভিশাপ আমাদের পথে বসাচ্ছে। আমরা ব্যবসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে ভাবছি না।'

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে শপিংমল ও গণপরিবহনে বাড়ছে মানুষের ভিড়। বসুন্ধরা সিটি শপিংমল থেকে তোলা।আজ শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, মৌচাক ও মগবাজার এলাকার অধিকাংশ মার্কেট ও গণপরিবহনে একই চিত্র চোখে পড়েছে। সরকারের নির্দেশনায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মার্কেট ও গণপরিবহন চালুর কথা বলা হয়েছে। নগরীর বাসগুলো স্যানিটাইজার ব্যবহার করে এক সিট খালি রেখে যাত্রী পরিবহন করার কথা। কিন্তু কোনোটাই ঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। বাসচালক এবং কন্ডাক্টরেরা গাদাগাদি করে যাত্রী ওঠাচ্ছেন। যাত্রীরাও হুড়মুড় করে বাসে উঠে পড়ছেন। শাহবাগ মোড়ে তরঙ্গ প্লাসের এক বাস চালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'যাত্রীরা জোর কইরা উইঠা পড়ে, তাগোরে তো থামাইয়া রাখা যায় না। তা ছাড়া করোনারে ভয় করলেই ভয়, ভয় না করলেই এইডা কিছু না। আমরা ঘুরি–ফিরি, আমাগো তো কিছু হয় না।'

মোহাম্মদপুর–বনশ্রী রুটের বাস স্বাধীন–এর চালক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, `করোনা বড়লোকদের রোগ। আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের এই রোগ হয় না। কই এতদিন তো রাস্তায় আছি, কোনো দিন তো সমস্যা হয়নি।' এই বাস চালক আরও বলেন, `সবকিছুই তো ঠিক মতো চলছে, আমাদের মতো গরীবদের মারতেই সরকার লকডাউনসহ নানা ফন্দি বের করছে। তারা তো বড়লোকদের অফিস আর কারখানা বন্ধ করতে পারে না।'

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে শপিংমল ও গণপরিবহনে বাড়ছে মানুষের ভিড়। বসুন্ধরা সিটি শপিংমল থেকে তোলা।এ বিষয়ে করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, `আমাদের দেশের মানুষ তো আগে মাস্ক মোটেই পরত না। এখন করোনার কারণে কিছুটা পরে। তবে ঈদের বাজার করতে গিয়ে যদি ঠিকমতো মাস্ক না পরে, স্বাস্থ্যবিধি না মানে, তাহলে তো করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাবে। অনেকে মাস্ক পরে, তবে নাকের অংশটা খুলে রাখে, তারা মনে করে এটাই মনে হয় মাস্ক পরার নিয়ম।' তিনি বলেন, `স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন, মার্কেট কমিটি, স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা রাখা উচিত। করোনা সংক্রমণ রোধে মার্কেটগুলোতে তারা সুপারভিশন করতে পারে।'

করোনার এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি না মানা নিয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, `সরকার ব্যবসায়ী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের কথা চিন্তা করে মার্কেট, গণপরিবহন খুলে দিয়েছে। তাই তাদের উচিত স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে চলা। গণপরিবহনের যাত্রী এবং যারা মার্কেটে ভিড় করছেন, তাঁদেরও নিজেদের স্বাস্থ্যঝুঁকিটা বিবেচনা করা উচিত। শুধু মাস্ক পরাটাই তো সব নয়, সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। আমাদের প্রশাসনের আরও কঠোর হওয়া উচিত। স্বাস্থ্যবিধিকে অবহেলা করলে সংক্রমণ ভয়ংকর আকার ধারণ করবে। তখন ব্যবসা–বাণিজ্য চালু রাখার আর কোনো উপায়ই থাকবে না। তাই সময় থাকতে আমাদের সতর্ক হতে হবে।'

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত