একতরফা নির্বাচনের পথে দেশ, গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

দেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন। একই সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রকৃত রাজনীতিবিদদের ভূমিকা রাখতে হবে। না হলে দেশে আবারও একতরফা বা যেমন খুশি তেমন নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা। 

আজ শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বেসরকারি সংস্থা দি হাঙ্গার প্রজেক্টের ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা প্রকল্পের আওতায় ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের পরিবেশ: প্রত্যাশা, বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তাঁরা এসব কথা বলেন। 

আলোচনায় সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা একটা ইউনিক নির্বাচন দেখতে পাচ্ছি। যেমন খুশি তেমন নির্বাচন আরকি! আমরা এখন ঘোরতর সংকটে আছি, অনেকে এটি বুঝছেন। ১০০ বছরের পুরোনো মীমাংসিত বিষয় নিয়ে আমাদের এখনো কথা বলতে হচ্ছে। নির্বাচন হয়তো করে ফেলবে, কিন্তু নির্বাচনের পর কী হবে, এটি নিয়ে আমি সন্দিহান।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘উন্নতি হচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নাই, তবে এগুলো আগামী বছর থেকে বোঝা যাবে। কিন্তু আমাদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। যে দলের ক্ষমতা আছে প্রতিযোগিতা করার, সে দল নির্বাচনে না আসলে তা সুষ্ঠু হবে না! অতীতের দুই নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, এবারও সে রকম হবে কি না জানি না, তবে এবার ভালো হওয়া উচিত এবং আমরা আশা রাখি ভালো হবে! আমরা জন্মগতভাবে গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি, সেখান থেকেই আমাদের কথা বলতে হবে। গণতন্ত্র হলো সেলফিশ। আমাদেরও সেভাবেই ভাবতে হবে।’ এ সময় সবাইকে শালীনতা বজায় রাখার জন্যও আহ্বান জানান সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার।

একতরফা নির্বাচনের পথেই হাঁটছে দেশ এমনটা মনে করেন দি হাঙ্গার প্রজেক্টের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। এটি দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে আরেকটি একতরফা নির্বাচন হচ্ছে। এখন বিভিন্ন মহল থেকে সংলাপের কথা বলা হচ্ছে। আমরাও নাগরিক সমাজের থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের বসার আহ্বান জানিয়ে আসছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধীরা চাইলেও নির্বাচন করতে পারবে না। কারণ, তাদের সব নেতাই এখন জেলে। এরই মধ্যে অনেকে আদালতে সাজা পেয়েছেন, আরও অনেকে পাবেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, একতরফা নির্বাচনই আমাদের নিয়তি।’ 

গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা প্রকল্পের সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন। কিন্তু পূর্বাভাস বলছে, আমরা একটি একতরফা ও সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছি।’ 

বর্তমান পরিস্থিতিতে সংলাপের ওপর জোর দেওয়া এবং এর বিকল্প নেই বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম লাইন হচ্ছে গভর্নমেন্ট বাই দা ডিসকাশন। তাই সংলাপ চালিয়ে যেতে হবে। সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। যেকোনো সময় সংলাপ হতে হবে। সংলাপের সময় শেষ হওয়া মানে গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘটা।’ 

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বদিউল আলম মজুমদার। এতে আরও বক্তব্য দেন ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমীন মুরশিদ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণের নেতা সঞ্জীব দ্রং।