Ajker Patrika

ফরিদপুরে পল্লিকবি জসিম উদ্দীনের ১২২ তম জন্মবার্ষিকী

ফরিদপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image
কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘এইখানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে’—সেই ডালিম গাছের পাশেই শায়িত রয়েছেন পল্লী কবি জসিমউদ্দীন। কবির ১২২ তম জন্মদিন আজ ১ জানুয়ারি। এদিন ভোরের আলো ফুটতেই তাঁর সমাধিতে হাজির ফরিদপুরের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়ার মাধ্যমে পালন করা হয় জন্মবার্ষিকী।

আজ সকাল ৯টায় ফরিদপুর জেলা সদরের অম্বিকাপুরে কবির সমাধিতে প্রথমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পরে জেলা পুলিশ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ফরিদপুর প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এরপর সকাল ১০টায় কবির বাড়ির আঙিনায় জেলা প্রশাসন ও জসীম ফাউন্ডেশনের আয়োজনে দোয়া মাহফিল ও কবির স্মৃতিচারণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি পুত্র খুরশীদ আনোয়ার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছিন কবির, প্রবীণ শিক্ষাবিদ এম এ সামাদ, প্রফেসর আলতাফ মাহমুদ, মফিজ ইমাম মিলন প্রমুখ।

তাঁরা কবির বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাংলা সাহিত্যে একজন আধুনিক মানের শক্তিশালী কবি জসীম উদ্দীন। পল্লিকবি উপাধিতে ভূষিত জসীম উদ্দীন আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত পূর্ণাঙ্গ আধুনিক কবিদের মধ্যে প্রথম। গ্রাম-বাংলার মাটি ও মানুষের সহজ-সরল জীবনযাত্রা ফুটে উঠেছে তার কবিতা, গান, গল্প ও উপন্যাসে। বাংলা কবিতার মূল ধারাটিকে নগরসভায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব তাঁরই।

বাংলা সাহিত্যের এই অন্যতম প্রাণপুরুষ ১৯০৪ সালে মতান্তরে ১৯০৩ সালে ফরিদপুরের সদর উপজেলার তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুতালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আনসারউদ্দিন মোল্যা একজন স্কুলশিক্ষক ছিলেন। মায়ের নাম ছিল আমিনা খাতুন।

তাঁর রচিত ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ ও ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ বাংলা ভাষার গীতিময় কবিতার উৎকৃষ্টতম নিদর্শনগুলোর অন্যতম। তার কবিতা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার লেখা অসংখ্য পল্লিগীতি এখনো গ্রাম বাংলার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আমার হার কালা করলাম রে’, ‘আমায় ভাসাইলি রে’, ‘বন্ধু কাজল ভ্রমরা রে’ ইত্যাদি। তবে গ্রাম-বাংলার মাটি ও মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনাকে কেন্দ্র করে দরদি কবিতা, ছড়া, গীতিকবিতা ও উপন্যাসসহ সাহিত্য রচনা করায় তাকে পল্লিকবি বলা হয়।

তিনি একুশে পদক (১৯৭৬) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর, ১৯৭৮) ছাড়াও বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি তাঁকে সাহিত্য পুরস্কার দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭৬ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন পল্লিকবি।

কবির জন্মবার্ষিকীকে ঘিরে প্রতি বছর অম্বিকাপুরে জসীম পল্লিমেলার আয়োজনের রেওয়াজ রয়েছে। তবে গতবারের মতো এ বছরও এই পল্লিমেলা আয়োজনে ছন্দপতন ঘটেছে। এখনো ফরিদপুরের এই জসীম পল্লিমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। লোকজন অনুষঙ্গ ঘিরে গড়ে ওঠা এ পল্লিমেলার প্রতি এ অঞ্চলের ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের একটি বিশেষ আবেদন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত