Ajker Patrika

‘আমরা চাই সব খুনির ফাঁসি হোক’

মীর মহিবুল্লাহ, পটুয়াখালী
শহীদ মো. দুলাল সরদার। ছবি: সংগৃহীত
শহীদ মো. দুলাল সরদার। ছবি: সংগৃহীত

‘এক বছর হয়ে গেল, অথচ এখন পর্যন্ত একটা বিচারও হলো না। আমরা শহীদ পরিবার, আমরাই বুঝি প্রিয়জন হারানোর কষ্ট ও বেদনা। এটা সরকার কিংবা অন্যরা বুঝবে না। আমরা চাই সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার। শুধু আমার বাবাই নয়, জুলাইয়ের সব হত্যার দ্রুত বিচার দেখতে চাই। আমরা চাই খুনিদের ফাঁসি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বিচার কার্যক্রম শেষ করুক। তা না হলে প্রয়োজনে বিচারের তাগিদে আমরা রাজপথে নামব। এই বাংলার মাটিতেই স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, এই মাটিতেই স্বৈরাচারের বিচার দেখতে চাই।’ জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তিতে বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন শহীদ মো. দুলাল সরদারের বড় ছেলে মো. সাইদুল ইসলাম।

গত ১৮ জুলাই ছিল পটুয়াখালীর শহীদ মো. দুলাল সরদারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছর জুলাই বিপ্লবের ওই দিনে ঢাকার মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন দুলাল সরদার। চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পটুয়াখালীর ২৬ জন শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে বাউফলের সাতজন, গলাচিপার ছয়জন, দশমিনার পাঁচজন, দুমকীর দুজন, রাঙ্গাবালীর একজন এবং পটুয়াখালী সদর উপজেলার পাঁচজন।

মো. দুলাল সরদার (৫০) পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের হকতুল্লাহ গ্রামের বাসিন্দা। বাবা সুলতান সরদার ও মা হালিমা বেগমের একমাত্র পুত্রসন্তান দুলাল। সংসারে আলো ফোটাতে ঢাকায় গিয়ে তাঁর জীবনের আলো নিভে যায় চিরতরে। লাশ হয়ে ফিরে আসেন নিজ জন্মভূমিতে। বাড়ির সামনেই চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।

শহীদ মো. দুলাল সরদারের কবরের পাশে তাঁর মা, স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শহীদ মো. দুলাল সরদারের কবরের পাশে তাঁর মা, স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শহীদ দুলাল সরদারের স্ত্রী মোসা. তাসলিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে, এই মাটিতে তাদের যেন বিচার হয় এবং সব খুনির যেন ফাঁসি হয়। সরকারের কাছে এইটুকুই আমার চাওয়া। সরকার অনেক সহযোগিতা করেছে, এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তার পরও চারটি সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। সরকার যদি আমার একটা ছেলেকে চাকরি দিত, তাহলে সংসারটা একটু ভালো চলত এবং আমার শ্বশুর-শাশুড়ি ও সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকতাম।’

শহীদ দুলালের বৃদ্ধ মা মোসা. হালিমা বেগম বলেন, ‘মোর পোলাডার লগেই মুই আছিলাম। মোর খাওন-পরন হগোলই মোর পুতেই দিত। ছোট্ট বেলা থেইক্যা পোলাডারে লইয়্যা স্বামীর বাড়ি থেইক্যা নাইম্যা গিয়া বাপের বাড়ি উডি এবং পোলাডারে লইয়্যা হেইহানেই থাকতাম। ছোট্টকাল থেইক্যাই মোর পুতে কাম-কাইজ কইর‌্যাই সংসারডা চালাইত। অরে লেহাপড়াও করাইতে পারি নাই। মোর একটা মাত্র পুত (ছেলে), তারে যারা মাইর‌্যা হালাইছে, তাগোরের ফাঁসি চাই’।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবুল হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, ঐতিহাসিক এই মাসে সব জুলাই শহীদ ও যোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। এ জেলায় ২৬ জন জুলাই শহীদ যোদ্ধা রয়েছেন। প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ টাকা, ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রসহ পর্যায়ক্রম তাঁদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা ও ফ্রি চিকিৎসা প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ ছাড়া শহীদ মিনারের পাশেই করা হচ্ছে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত