Ajker Patrika

‘হান্টিংটন কোরিয়া’ রোগে নির্বংশের পথে পরিবার, পাশে দাঁড়ালেন বিএসএমএমইউ চিকিৎসক

গোপালপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 
Thumbnail image
হান্টিংটন কোরিয়া রোগে আক্রান্ত সুমাইয়া খাতুন (২০) ও আমিনুল ইসলামকে (১৪) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করানো হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে চার দশক ধরে বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যায় মোহাম্মদ আলীর বংশধরেরা। কেউ কেউ বেঁচে থাকলেও রোগাক্রান্ত হয়ে পঙ্গু জীবন যাপন করছেন। চিকিৎসার খরচ চালাতে পুরো বংশের সব পরিবার পথে বসেছে। অন্যের দান-খয়রাতে জীবন চলে। অসহায় এই পরিবারের দুর্দশা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিদ্যুৎ চন্দ্র দেবনাথ।

আজ মঙ্গলবার পরিবারের সদস্য সুমাইয়া খাতুন (২০) ও আমিনুল ইসলামকে (১৪) ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করানো হয়েছে। বিএসএমএমইউর নিউরোলজি বিভাগের প্রফেসর আহসান হাবিব হেলালের তত্ত্বাবধানে তাঁদের চিকিৎসা চলছে।

একই সঙ্গে গোপালপুর উপজেলা প্রশাসন এ দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের শীতবস্ত্র ও ত্রাণসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করছেন।

ভুটিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, ‘গত শুক্রবার চিকিৎসক বিদ্যুৎ চন্দ্র দেবনাথ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। মিডিয়া এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বিরল রোগে আক্রান্ত পরিবারের সকল সদস্যকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা জানান। তাঁদের ঢাকায় আসা-যাওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেন। অসহায় পরিবারের সদস্যরা এবার বিনা মূল্যে সুচিকিৎসা পাচ্ছেন। আমি অনেক খুশি।’

পরিবারের লাইলী বেগম বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার খুব ভোরে সুমাইয়া ও আমিনুলকে গাড়িতে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চিকিৎসাও চলছে। হতদরিদ্র পরিবারের সুচিকিৎসার জন্য এভাবে পাশে দাঁড়ানোর ঘটনায় পরিবারের সবাই কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। গ্রামবাসীও খুবই খুশি।’

হান্টিংটন কোরিয়া রোগে আক্রান্ত সুমাইয়া খাতুন (২০) ও আমিনুল ইসলামকে (১৪) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করানো হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
হান্টিংটন কোরিয়া রোগে আক্রান্ত সুমাইয়া খাতুন (২০) ও আমিনুল ইসলামকে (১৪) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করানো হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোপালপুরের সন্তান ও চিকিৎসক বিদ্যুৎ চন্দ্র দেবনাথ জানান, বিএসএমএমইউর ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, তাঁরা ‘হান্টিংটন কোরিয়া’ রোগে আক্রান্ত। জেনেটিক মিউটেশনের কারণে এ রোগ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে প্রসারিত হয়। অনেকে বংশগত রোগও বলে থাকেন। অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়া, ভারসাম্যহীনতা, পেশি সংকোচন, স্মৃতিহীনতা, ডিপ্রেশন, অস্থির ও নার্ভাস হয়ে শেষ পর্যায়ে পঙ্গু হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। চিকিৎসা কিছুটা ব্যয়বহুল। পরিবারের সুমাইয়া ও আমিনুলের চিকিৎসা চলছে। কিছু স্যাম্পল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ভারতে পাঠানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে পরিবারের সকলকে চিকিৎসাসেবার আওতায় আনা হবে বলে জানান চিকিৎসব বিদ্যুৎ চন্দ্র দেবনাথ।

গোপালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তুহিন হোসেন জানান, অসহায় পরিবারের পাশে উপজেলা প্রশাসন দাঁড়িয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সুযোগমতো সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা, খাদ্যসামগ্রী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক পরিবারকে শীতবস্ত্র দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত