Ajker Patrika

গুম কমিশনে ব্যারিস্টার আরমানের অভিযোগ

অনলাইন ডেস্ক
ব্যারিস্টার আরমান। ছবি: সংগৃহীত
ব্যারিস্টার আরমান। ছবি: সংগৃহীত

গুম কমিশনে অভিযোগ করেছেন ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)। আজ মঙ্গলবার আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি অভিযোগটি করেন।

সুপ্রিম কোর্টের তাঁর আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন আজকের পত্রিকাকে অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার গুম কমিশনে অভিযোগটি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে আরমানকে গুম করা ও পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট রাতে প্রথম সাদা পোশাকের একদল ব্যক্তি তার মিরপুরের বাসায় যায়। তারা খোঁজ খবর নেয়। তাদের দারোয়ান বাসায় ঢুকতে না দিলে তারা দারোয়ানকে মারধর করে। এরপর রাত ১২টার দিকে র‍্যাবের পোশাক পরা ব্যক্তিরা আসে, তারা র‍্যাব–১ এর সদস্য ছিলেন। সেদিন তাকে তুলে নেয়নি, তারা কথাবার্তা বলে চলে যান।

এর পাঁচ দিন পর ৯ আগস্ট রাতে ফের মিরপুরের বাসায় ৭–৮ জন ব্যক্তি আসেন, তারা জোর করে গাড়িতে তোলেন। গাড়িতে তুলে তাকে চোখ ও হাত বেঁধে ফেলে। এরপর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এমন একটি স্যাঁতসেঁতে কক্ষে তাকে রাখা হয়, যেখানে ইঁদুর দৌড়াত। নির্জন সেই অজ্ঞাত বন্দিশালায় ১৬ দিন রাখা হয়েছিল তাকে। এরপর একদিন মধ্যরাতে তাকে ফের চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। আধা ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ফের একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যে কক্ষটি টাইলস করা ছিল। সেখানে প্রহরীরা অনেক কঠোর ছিল।

চাল–চলন সুশৃঙ্খল, খাওয়া দাওয়ার বিষয়টি ছিল নিয়মতান্ত্রিক। দিনের বেলায় দুহাত সামনের দিক করে হাতকড়া পরানো থাকত, রাতে পেছনে হাতকড়া পরানো হতো। শুধু গোসল ও খাওয়ার সময় একহাত খুলে দিত। এ সময় চোখ খুললেও কোনো দিকে তাকানো যেত না। তাহলে বকাবকি করত।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, তার কক্ষের পাশেই একটি ইন্টারোগেশন কক্ষ ছিল, সেখান থেকে প্রায়ই কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতেন। তাদের কান্নার আওয়াজে ঘুমতে পারতেন না। এভাবে দীর্ঘ আট বছর তাকে গুম করে রাখা হয়। এই দীর্ঘ আট বছরে তিনি কোনো আলো ও বাতাসের স্পর্শে আসেননি। দু-একজন প্রহরী রাতে আসত, চোখ বাঁধা অবস্থায় তাদের সঙ্গে কথা বলা যেত। তবে মসজিদে যখন আজান দিত, তখন উচ্চশব্দে গান বাজানো হত, যাতে তিনি দিন রাত পার্থক্য করতে না পারেন।

এই আট বছর তাকে পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয়নি, প্রয়োজনের অর্ধেক খাবার দেওয়া হয়েছে। বন্দী থাকা অবস্থায় কখনো তাকে কেউ কিছু বলেনি। কেবল রমজান মাস আসলে বলত, রমজান মাস শুরু। সাহ্রি ও ইফতার দিত। তবে হাতকড়া পরা অবস্থায় নামাজ আদায় করতে হতো। বন্দিশালায় বড় কর্মকর্তারা আসলে দেয়ালের দিক মুখ করে বসে থাকতে হতো। জীবিত ব্যক্তিদের জন্য বন্দিশালা ছিল কবরের মতো। সুপরিকল্পিত ও সিস্টেমেটিক পদ্ধতিতে সেখানে নির্যাতন করা হতো বলেও অভিযোগ করেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, সরকারের অবগতি নির্দেশ বা সহযোগিতা ব্যতীত কারও পক্ষে এত মানুষকে দিনের পর দিন বা বছরের পর বছর গুম করে রাখার সুযোগ নাই।

ব্যারিস্টার আরমনাকে গুম করার কয়েক দিন পরই ওই বন্দিশালায় তাকে এক প্রহরী জানিয়েছিল, তাঁকে যেকোনো সময় হত্যা করা হবে। তবে সিলেটে একটি ঘটনায় এক বড় কর্মকর্তা নিহত হওয়ার কারণে আরমানকে হত্যার দিন পিছিয়ে যায়।

উল্লেখ্য, সিলেটে ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ সন্ত্রাসী হামলায় র‍্যাবের তৎকালীন গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ নিহত হন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, তিনি বন্দী থাকা অবস্থায় তিনটি জিনিস শুনতে পেয়েছেন। এক হচ্ছে বিমান ল্যান্ড করার শব্দ, দ্বিতীয়ত ট্রেনের শব্দ এবং অনেক জোড়ে গাড়ি চলার শব্দ শুনতে পেতেন। এ ছাড়া বন্দিশালায় বাঙালি নয় এমন লোকদের উপস্থিতি টের পেয়েছেন। তারা ভিনদেশি ভাষায় কথা বলতেন।

ব্যারিস্টার আরমানকে গত ৬ আগস্ট উত্তরা দিয়াবাড়ী এলাকায় বন্দিশালা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে পথচারীদের সহায়তায় মিরপুরের বাসায় ফেরেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুম কমিশন গঠন করার পর তিনি মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়ার ঘটনাটি লিখিত আকারে অভিযোগ দিলেন।

গুম কমিশন গঠন হওয়ার পর এখন পর্যন্ত চার শতাধিক অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অভিযোগ করা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন, পরিস্থিতি নিয়ে যা বলছে রাজনৈতিক দল ও উপদেষ্টারা

‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না’ লেখা পোস্টটি সরিয়ে ফেললেন ফয়েজ তৈয়্যব

দেশে ফিরলেন আওয়ামী লীগ নেতা, বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার

পার্লামেন্টে জুতায় বিয়ার ঢেলে পান করে রাজনীতিকে বিদায় জানালেন এমপি

চিকিৎসকের ছুরিকাঘাতে আহত তরুণ মারা গেছেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত