Ajker Patrika

বাবা আমাদের বাঁচাও, অতিরিক্ত ডিআইজির কন্যা লামিসার আকুতি

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৪, ১৬: ০১
Thumbnail image

কেউ কোনো কথা বলছেন না। নিস্তব্ধ পরিবেশ। সবার চোখে-মুখে যেন যন্ত্রণার ছাপ। কয়েকজন কাঁদছেন ডুকরে ডুকরে। হঠাৎ আহাজারি লামিসার বৃদ্ধ দাদির। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শুধু বলছেন, ‘দাদু, তোর সাথে আমাকেও নিয়ে যা।’ 

এমন দৃশ্য রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী লামিসা আক্তারের বাড়িতে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর লাশ এসে পৌঁছায় নিজ বাড়ি ফরিদপুর শহরের দক্ষিণ ঝিলটুলী এলাকার স্বর্ণলতা বাসভবন চত্বরে। এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ছুটে আসেন প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। লাশ দেখে সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বন্ধুর সঙ্গে রাজধানীর ওই বহুতল ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয় গিয়ে অগ্নিকাণ্ডে লামিসার মৃত্যু হয়। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের আর অ্যান্ড সিপি বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি নাসিরুল ইসলাম শামীমের বড় মেয়ে। বুয়েটের মেকানিক্যাল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। 

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত বুয়েটর শিক্ষার্থী ও ডিআইজির কন্যা লামিসার লাশবাহী গাড়ি ফরিদপুরের বাড়িতে

নিহত লামিসা রাজধানীর ভিকারুননিসা স্কুল থেকে এসএসসি এবং হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বুয়েটে সুযোগ পান। ২০১৮ সালে তাঁর মা আফরিনা মাহমুদ মিতুর মৃত্যু হয়। এরপর থেকে বাবা ও ছোট বোন রাইসার সঙ্গে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অফিসার্স ক্লাবে বসবাস করছিলেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। 

নিহত লামিসার বড় চাচা রফিকুল ইসলাম সুমন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওর বন্ধু নাহিয়ানকে নিয়ে বইমেলায় গিয়েছিল। এরপর কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে যায়। পরে ওর বাবাকে ফোন দিয়ে বলে, “আগুন লেগেছে, আমাদের বাঁচাও।” এরপর থেকে যতবার ফোন দিয়েছি, ফোন বাজতে থাকে, কেউ রিসিভ করেনি। পরে রাত সাড়ে ১১টার সময় ঢাকা মেডিকেলে ওর লাশ পাই। কিন্তু ওর শরীর আগুনে পোড়েনি। অক্সিজেনের স্বল্পতায় সম্ভবত মারা গেছে।’ 

এদিকে সকালে বাড়িতে ঢাকা মেট্রোপলিটনের একটি লাশবাহী গাড়িতে তার লাশ এসে পৌঁছায়। এ সময় সেখানে ছুটে আসে অনেকে। নিহত লামিসার বাবাকে ঘিরে বসে থাকতে দেখা যায় স্বজনদের। শোকে মুহ্যমান তিনি। শুধু নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকছেন। কখনো স্বজনদের গলা জড়িয়ে কাঁদতে দেখা যায় তাঁকে। 

মেয়ের শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা অতিরিক্ত ডিআইজি নাসিরুল ইসলাম শামীম

খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন অতিরিক্ত ডিআইজি ও ফরিদপুরের সাবেক পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসানুজ্জামান হাসানসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যেও দেখা যায় নীরবতা। 

এ সময় কথা হয় নিহত লামিসার চাচাতো ভাই প্রিতমের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনাস্থলের পাশে আমাদের বাসা ছিল। ওর ফোন পেয়ে ছুটে গিয়েছিলাম, কিন্তু ওরে বাঁচাতে পারিনি। ওর বন্ধু নাহিয়ানও মারা গেছে।’ 

পরে বেলা ১টার দিকে তার লাশ শহরের চকবাজার জামে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জুমাবাদ জানাজা শেষে আলীপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত