Ajker Patrika

ধর্ষকের সঙ্গে নির্যাতিতার বিয়ে বন্ধসহ ৪৮ সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ে বন্ধসহ ৪৮ দফা সুপারিশ জানিয়েছে নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটি। 

আজ সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কমিটির জাতীয় কনভেনশনে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়। 

বক্তারা জানান, দেশে বিয়ে, উত্তরাধিকার, বিয়ে বিচ্ছেদ, দত্তক, অভিভাবকত্ব—এই পাঁচটি ক্ষেত্রে আইনগত বৈষম্য রয়েছে। কিন্তু আমাদের সংবিধানে ২৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, আইনের দৃষ্টিতে সবাইকে সমানভাবে দেখতে হবে। সম্মেলনে সংবিধানের এই ধারার আলোকে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের দাবি জানানো হয়। 

অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এমন একটিও দেশ নেই, যারা নারীকে সুরক্ষা দেওয়া ছাড়া নিম্নমধ্য আয়ের দেশ থেকে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের দেশেরও অগ্রগমন হতে যাচ্ছে, এই সময়ে আমাদের নারী সুরক্ষার বিষয়টি এড়িয়ে গেলে চলবে না। দেড় বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণ হবে বলে আশা করি। এই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে অভিন্ন পারিবারিক আইন যুক্ত করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’ 

সম্মেলনে জানানো হয়, নারীর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। নির্যাতন থেকে রক্ষা পায়নি ২ বছরের শিশু থেকে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা। 
১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে সবচেয়ে বেশি এবং তরুণেরা ধর্ষণের মতো অপরামূলক ঘটনার সঙ্গে জড়িত হচ্ছে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি। 

 ২০২১ সালে ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ৭ টি, কিন্তু ২০২২ সালে জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত এই আট মাসের মধ্যেই ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে সাতটি। ২০২১ সালে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয় ৪৫ জনকে আর ২০২২ সালে অক্টোবর পর্যন্ত যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে ৫৩ জনকে। 

 ‘নারী ও কন্যা নির্যাতন বন্ধ করি, নতুন সমাজ নির্মাণ করি’—এই স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত জাতীয় কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বৈষম্য থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে ৷ সমাজে হোক, রাষ্ট্রে হোক, পরিবারে হোক কোথাও বৈষম্যকে স্থান দেওয়া যাবে না। এটাই বাংলাদেশের দর্শন।’ 

কনভেনশনে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন নারী ও কন্যা নির্যাতন এবং সামাজিক অনাচার প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, ‘নারীকে এখন ঘরে-বাইরে তো বটেই, অনলাইনেও হয়রানির শিকার হতে হয়। নারী নির্যাতনের সংজ্ঞা কী, সাইবার হয়রানি কী, তা আমরা অনেকেই জানি না। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রতিনিয়ত নারীদের হেয় করা হচ্ছে, বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু ডিজিটাল আইনে এই কাজে জড়িতদের কোনো বিচার হচ্ছে না। নারীর সুরক্ষা দিতে পুলিশের সাইবার সেল রয়েছে। এই বিষয়গুলো মানুষকে জানাতে হবে।’ 

বক্তারা জানান, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা একদিকে ব্যক্তি নারীর শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে, অন্যদিকে পরিবার, পরিবারের সার্বিক কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ওপরও প্রভাব ফেলে। নারী আত্মশক্তি হারিয়ে নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করে। কন্যাদের বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। অপমানে, লজ্জায়, ভয়ে নির্যাতনের শিকার অনেক নারী ও কন্যা আত্মহত্যা করে বা আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সমাজে অনাচার বাড়ে। সামগ্রিকভাবে দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত