Ajker Patrika

শেরপুর পৌরসভার টিআর প্রকল্প: নথিতে প্রায় সম্পন্ন, বাস্তবে অদৃশ্য

রঞ্জন কুমার দে, শেরপুর (বগুড়া)
শেরপুর পৌরসভা। ছবি: সংগৃহীত
শেরপুর পৌরসভা। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দ পাওয়া সাতটি প্রকল্পের কাজের মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ। যদিও দাপ্তরিক নথিতে সব প্রকল্পই ‘প্রায় সম্পন্ন’ হিসেবে দেখানো হয়েছে, তবে মাঠপর্যায়ে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তিনটি কিস্তিতে শেরপুর পৌরসভায় মোট ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩২৯ টাকা ৫৫ পয়সা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সাতটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে শিশুপার্ক সংস্কার (৪ লাখ), শিল্পকলা একাডেমি সংস্কার (১ লাখ ১৫ হাজার), মডেল মসজিদের চেয়ার ক্রয় ও দানবাক্স নির্মাণ (১ লাখ ১৫ হাজার), উপজেলা পরিষদের হলরুম সংস্কার ও আসবাবপত্র ক্রয় (১ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৫), টেনিস কোর্টসংলগ্ন ওয়াশরুম ও চেঞ্জরুম নির্মাণ (৩ লাখ), পৌরসভা কার্যালয়ে আইপিএস স্থাপন (৩ লাখ ৫০ হাজার) এবং পৌর এলাকায় ঢাকনাযুক্ত প্লাস্টিক বিন স্থাপন (১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৪ টাকা)।

তালিকায় প্রকল্পগুলো পৌর এলাকার উন্নয়নের জন্য অনুমোদিত হলেও বাস্তবে অধিকাংশ প্রকল্পই উপজেলা পরিষদকেন্দ্রিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টিকে ইউএনওর পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একই বক্তব্য দিয়েছেন শেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. জানে আলম খোকা। তিনি বলেন, ‘পৌরসভার পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও রাস্তাঘাটের নাজুক অবস্থা দীর্ঘদিনের সমস্যা। টিআর প্রকল্পের অর্থ দিয়ে কিছুটা হলেও এ দুরবস্থা কাটানো যেত। কিন্তু যেহেতু ইউএনও একই সঙ্গে পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন, তাই তিনি প্রকল্পগুলো উপজেলা পরিষদকেন্দ্রিক গ্রহণ করেছেন।’

টিআর বাস্তবায়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রকল্প অনুমোদনের ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করে অর্থবছরের মধ্যেই শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির ৫টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে। পর্যাপ্ত সময় থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ শেষ তো দূরের কথা, শুরুই করা হয়নি। মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শুধু শিশুপার্কে কয়েক গাড়ি মাটি ফেলানো হয়েছে এবং মডেল মসজিদের চেয়ার ক্রয় ও দানবাক্স নির্মাণকাজ হয়েছে। অন্য পাঁচটি প্রকল্পে বাস্তবায়নের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে চারটি প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি)। বাকি তিনটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ও মডেল মসজিদের ইমাম মো. হেদায়েতুল্লাহ। তবে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বিষয়ে তাঁদের বক্তব্যে দেখা গেছে ভিন্নতা এবং অসংগতি।

জানতে চাইলে শেরপুরের ইউএনও এবং পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা আশিক খান বলেন, ‘সব প্রকল্পের কাজ প্রায় সম্পন্ন। সামান্য কিছু বাকি রয়েছে, যা শিগগিরই শেষ করা হবে।’

কিন্তু এ বিষয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন চারটি প্রকল্পের সভাপতি ও উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘পৌর শিশুপার্ক সংস্কারের জন্য কিছু মাটি ফেলা হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আর এগোয়নি। বাকি প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শুরু ও শেষ করা হবে।’

তবে সবচেয়ে বিতর্কিত অবস্থান তৈরি হয়েছে শিল্পকলা একাডেমি সংস্কার প্রকল্প নিয়ে। এই প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা দাবি করেন, ‘পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের একটি কক্ষ শিল্পকলা একাডেমির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সে কক্ষটিই সংস্কার করা হয়েছে টিআর প্রকল্পের অর্থে।’ কিন্তু উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, প্রশাসনিক ভবনের সেই সংস্কারকাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আওতায় ই-জিপি টেন্ডারের মাধ্যমে। টিআর প্রকল্পের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

এ নিয়ে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টিআর বাস্তবায়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি করা যাবে না। যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে, তবুও এটি বিধিসম্মত নয়।’

প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজ বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০২ এসি ল্যান্ডকে প্রত্যাহার

গাজীপুরে একটি সংসদীয় আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে, ইসির খসড়া চূড়ান্ত

বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমছে, সবুজসংকেত যুক্তরাষ্ট্রের

গণপূর্তের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের ১ স্থপতি বরখাস্ত

স্বামীর মৃত্যুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েও যাবজ্জীবন এড়াতে পারলেন না রসায়নের অধ্যাপক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত