Ajker Patrika

আগুন নেভাতে বাধা ছিল বাতাস, কারণ জানা যাবে তদন্তের পর: ফায়ার সার্ভিসের ডিজি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ শনিবার রাত ১০টায় বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের সামনে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ শনিবার রাত ১০টায় বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের সামনে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। ছবি: আজকের পত্রিকা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বাতাস সবচেয়ে বড় বাধা ছিল বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। একই সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের কারণ তদন্তের পর জানা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আজ শনিবার রাত ১০টায় বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ‘আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। বর্তমানে আমরা নির্বাপণের কাজ করছি। আগুন আর বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর আপনারা জানেন ডমেস্টিক ফ্লাইট কিন্তু চালু হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আমাদের হিসাবে দুজন ফায়ার ফাইটার আহত হয়েছেন। আনসারের কিছু সদস্যও প্রাথমিকভাবে আহত হয়ে থাকতে পারেন। আমরা সংখ্যাটা এখনো কনফার্ম না।’

জাহেদ কামাল বলেন, আর যে জায়গায় আগুনের ঘটনা, এটা হচ্ছে আমদানি কার্গো রাখার জায়গা, আনুমানিক ৪০০ বাই ৪০০ গজ, যেখানে খোলা জায়গায় এবং বদ্ধ জায়গায় বা বিভিন্ন স্টোরে নানা ধরনের মালামাল রক্ষিত থাকে। আমরা সেখানেই আগুন নেভানোর কাজ করেছি। আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে থাকব। নির্বাপণের পর আমরা কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব হ্যান্ডওভার করে চলে যাব।’

অন্যান্য বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, ‘এই কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর সদস্যদের আমরা দেখেছি, তাঁরা বিভিন্নভাবে আগুন নেভানোর কাজে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগুনের সূত্রপাত আসলে আগুন নেভানোর পরে বলা যাবে। তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। এখন আমরা এটা বলতে পারছি না।’

আগুন নেভাতে এসে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছেন—জানতে চাইলে ডিজি বলেন, ‘আসলে আগুন নেভাতে এসে সবচেয়ে বড় প্রবলেম ছিল বাতাস। যেহেতু এটা খোলা জায়গা, প্রচুর বাতাস ছিল। ফলে অক্সিজেনের একটা প্রাপ্তি সব সময় ছিল, যেটা আগুনকে জ্বালাতে সহায়তা করে। যে কারণে আপনারা অনেক ওপরে পর্যন্ত ধোঁয়া দেখতে পেয়েছেন। নিচে হয়তো আগুন অল্প। কিন্তু বাতাসের কারণে আপনাদের কাছে মনে হয়েছে অনেক বড়, ওপরে যেহেতু ধোঁয়া উঠেছে। আর দুই নাম্বার হচ্ছে, কার্গোর ভেতরের জায়গাগুলো খোপ খোপ করা, এই খোপ খোপের মধ্যে আবার দেয়াল দেওয়া। ফলে প্রত্যেকটা খোপ পরিষ্কার করে আমাদের আগুন নেভাতে হয়েছে। এটা আমাদের একটা ডিফিকাল্টিস ছিল।’

ডিজি আরও বলেন, ‘আর কিছু কার্গো ছিল খোলা জায়গায়, তো খোলা জায়গায় যেহেতু কার্গো ছিল, আপনারা দেখেছেন, এয়ারপোর্টে খোলা জায়গায় কিছু কার্গো থাকে, সেগুলোতে খুব সহজেই আগুন ধরে গেছে। যেহেতু বাতাস ছিল, বাতাসের ফ্লোতে দ্রুত আগুনটা ছড়িয়ে পড়েছে। যা হোক, আমরা সবকিছু আমাদের কন্ট্রোলে নিয়ে আসতে পেরেছি। আমাদের চেষ্টা জারি আছে। আমরা চেষ্টা করেছি, যাতে দ্রুত সময়ে ইন্টারন্যাশনাল এবং ডমেস্টিক ফ্লাইট চালু করে দেওয়া যায়।’

আগুন থেকে আপনারা কী কী রক্ষা করতে পারলেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। কারণ যখন আগুন নির্বাপণের কাজ চলছিল, তখন আমরা একদিকে আগুন নেভানোর কাজ করেছি এবং অন্যদিকে আমরা জায়গা করে দিয়েছি জিনিসপত্র বের করে নিয়ে আসার জন্য। অনেক জিনিসপত্র আমরা বের করতে দেখেছি। এখন কী পরিমাণ, কতটুকু হয়েছে, এটা আসলে এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, ‘আমরা এখনো কাজ করছি। কাজ করার সময় মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না। কাজ করার পর আমরা বুঝব, কোন জায়গায় প্রবলেম ফেস করেছি। কারণ আমরা সবাই কাজ করছি। সম্মিলিতভাবে যখন সবার মতামত পাব, তখন আমরা বলতে পারব কী কী মানদণ্ড ছিল না বা কোন জায়গায় তারা প্রবলেম ফেস করেছে। একটি আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টকে কীভাবে সচল করা যায়, আমরা সেই চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলাম। আমরা সেটা আল্লাহর রহমতে করেছি। এখন আমরা বাকিদের সঙ্গে বসব। কোথাও কোনো সমস্যা ফেস করেছি কি না? এক ভাই জানতে চাইলেন কোনো কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে কি না? সেগুলো তখন জানা যাবে। এখন আমাদের কাছে প্রথম প্রায়োরিটি হচ্ছে, আগুনটাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং নির্বাপণ করে ফেলা। সেটা আমরা করছি।’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, ‘এয়ারপোর্টের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কোনো অফিস নেই। আমরা যখন আড়াইটায় খবর পেয়েছি, তারপর মুভ করেছি। এখানে যাদের ফায়ার ফাইটিং গাড়ি দেখেছেন এটা হচ্ছে এভিয়েশনের, আমাদের না। প্রাথমিক রেসপন্সটা এখানকার এভিয়েশন টিম করেছে।’

এতটা সময় লাগল কেন এবং দ্রুত নিয়ন্ত্রণ কেন করা গেল না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমার বক্তব্যে বলেছি যে আমরা যখন এসেছি আগুন অলমোস্ট ডেভেলপড স্টেজে ছিল। এই জায়গা হচ্ছে পুরোটা খোলা। খোলা জায়গার মধ্যে কার্গো আছে। প্রচুর বাতাস ছিল। আবার কার্গোর ভেতরে ওগুলো খোপ খোপ কম্পার্টমেন্ট করা।

কেমিক্যাল ছিল কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা এখন বলা যাবে না। তবে কিছু কিছু নীল ধোঁয়া আমরা দেখেছি। তার মানে কেমিক্যাল ছিল, এটা বলা যাবে না। যখন নির্বাপণ হবে, তখন আমরা ওভারঅল বলতে পারব, আসলে কোনো কেমিক্যাল ছিল কি না।’

পুরোপুরি নির্বাপণে আর কতটুকু সময় লাগতে পারে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অলরেডি পুরোপুরি আমাদের কন্ট্রোলে চলে এসেছে। আর বেশিক্ষণ লাগবে না।’

এ সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এর আগে চট্টগ্রাম, মিরপুরে আগুন লাগার ঘটনা দেখলাম। আগুন লাগার পর দেখা যায় অনুমোদন, ফায়ার লাইসেন্স ছিল না। আগুন লাগার পরে দেখা যায় যে অনুমতি ছিল না। তো এই বিষয়টা আপনারা জোরালোভাবে দেখবেন কি না?

জবাবে ডিজি বলেন, ‘আপনি যদি একটু খোঁজ নেন, তাহলে দেখবেন যেসব প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগছে, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সেখানে যথাযথ নোটিশ প্রদান, ইন্সপেকশন করা, তাদের সতর্ক করা, লাইসেন্স না দেওয়া—এসব করা হয়েছে। কিন্তু আপনাকে বলার পর যদি আইন না মানেন, তাহলে? আইন না মানার জন্য, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা। আগুন বা দুর্যোগে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো, তাদের উদ্ধার করা। কিন্তু আইন প্রয়োগের জায়গাটা অন্যান্য অথরিটির। তবে আমরা মানুষকে সচেতন করি। আপনি বলতে পারেন সমন্বিত একটি চেষ্টার প্রয়াস প্রয়োজন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুনের সূত্রপাত ও হতাহতের বিষয়ে যা জানা গেল

প্রায় ২৫০ কারখানার পণ্য পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি: বিজিএমইএ সভাপতি

শাহজালালের কার্গো ভিলেজে কী ধরনের পণ্য থাকে

বিমানবন্দরের মতো কৌশলগত স্থাপনায় আগুন নিরাপত্তা ঘাটতির স্পষ্ট প্রমাণ: জামায়াত আমির

এখনো যথেষ্ট আগুন রয়েছে, তবে নিয়ন্ত্রণে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত