Ajker Patrika

আড়াই বছর ধরে বাসায় আটকে শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতন, দম্পতি পলাতক

নরসিংদী প্রতিনিধি
Thumbnail image

নরসিংদীর শিবপুরে আড়াই বছর ধরে একটি পোশাক কারখানার কোয়ার্টারের বাসায় আটকে রেখে শিশু গৃহকর্মীকে (৮) নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে এক দম্পতির বিরুদ্ধে। নির্যাতন সইতে না পেরে গত ২১ আগস্ট পালিয়ে বাড়িতে আসে শিশুটি। এই ঘটনায় ২৪ আগস্ট থানায় অভিযোগ দিয়েছেন শিশুর বাবা। এই ঘটনায় ওই দম্পতি পলাতক আছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

শিবপুরের কারারচর এলাকার একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন মজুমদার জুয়েল ও তাঁর স্ত্রী রহিমা বেগম ওরফে শাপলার বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের এই অভিযোগ উঠেছে। টানা নির্যাতনের শিকার হয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে শিশুটি। গত ২৪ আগস্ট থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধূরী। 

অভিযোগ ও শিশুর পরিবার থেকে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার শিশুটি শিবপুর উপজেলার এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী (এক চোখ অন্ধ) বাবার ছেলে। সে আড়াই বছর আগে অভাবের তাড়নায় কারারচর এলাকার একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা (ডিরেক্টর প্রোডাকশন) ও গৃহকর্তা জুয়েল ও তাঁর স্ত্রী শাপলার কোয়ার্টারের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যায়। লেখাপড়া করানোসহ বাসায় অন্য শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং বাসার দরজা খুলে দেওয়ার কথা বলেই তাকে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত খেতে না দেওয়াসহ কারণে-অকারণে করা হচ্ছিল শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। 

মাঝেমধ্যে শিশুটির বাবা-মা ছেলেকে দেখতে গেলে কোয়ার্টারের বাসায় ঢুকতে দেওয়া হতো না। জানালা দিয়ে দেখানো হলেও পরনে থাকত বড় পোশাক যাতে নির্যাতনের ক্ষত দেখা না যায়। পরে মা-বাবার হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিতেন জুয়েল ও তাঁর স্ত্রী। নির্যাতন সইতে না পেরে গত ২১ আগস্ট বাসার পেছনের দেয়াল টপকিয়ে পালিয়ে বাড়ি ফেরার পর মা-বাবাসহ এলাকার লোকজন তার ওপর চলা নির্যাতনের ঘটনা জানতে পারেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। 

সরেজমিনে জানা গেছে, শিশুটির শরীরজুড়ে ক্ষতচিহ্ন ফুটে উঠেছে। দুই বছরের বিভিন্ন সময় নির্যাতন করার কারণে অস্বাভাবিক আচরণ করছে শিশুটি। ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ছাড়া খাচ্ছে না কোনো খাবার। রাতে ঘুম না হওয়াসহ দেখা দিয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। 

নির্যাতিত শিশুর বাবা বলেন, ‘আমার ছেলের চোখ, মুখ, ঘাড়, মাথা, বুক, পাসহ প্রায় সব অঙ্গে রয়েছে নির্যাতনের দাগ। ঠান্ডা পানি ছাড়া কিছুই খাচ্ছে না সে। করছে অস্বাভাবিক আচরণ। তার স্মৃতিশক্তির সমস্যা দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর সহায়তায় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছি না।’ 

নির্যাতিত শিশুর মা বলেন, ‘আমার ছেলের আচরণে মানুষ তাকে পাগল বলে বিভিন্ন বিচার নিয়ে আসছে। কোনো খাবার খাচ্ছে না, এমনকি ওষুধও খাচ্ছে না।’ 

অভিযোগের বিষয়ে ওই পোশাক কারখানার কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রীর বক্তব্য জানতে গেলে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি কোয়ার্টারে। তাঁরা ঢাকায় আছেন বলে জানিয়েছেন আব্দুর রহমান নামের ওই কারখানার এক কর্মকর্তা। 

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধূরী বলেন, ‘এই ঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিশুটির বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ ওঠা দম্পতি পলাতক রয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত