Ajker Patrika

পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধে ধস, চিঠি চালাচালিতে বাঁধা পদক্ষেপ

  • গত কয়েক দিনে ১০০ মিটার পর্যন্ত ধসে পড়েছে
  • ব্যবস্থা নিচ্ছে না বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও পাউবো
  • বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জটিলতা
শরীয়তপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image
ধসে পড়েছে পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধ। সম্প্রতি শরীয়তপুরের জাজিরার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকায়। আজকের পত্রিকা

শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার ধসে পদ্মায় বিলীন হয়েছে। এতে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডসহ আশপাশের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনা।

চলতি মাসের শুরুর দিকে এই বাঁধে ধস শুরু হয়। গত শনিবার পর্যন্ত পদ্মা সেতু থেকে দেড় কিলোমিটার ভাটিতে পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকায় ১০০ মিটার পর্যন্ত ধসে পড়ে। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এ বাঁধ নির্মাণ করেছে।

স্থানীয়দের দাবি, পদ্মা সেতুর আশপাশে পদ্মা নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি প্রভাবশালী চক্র। বালু উত্তোলনের ফলে বাঁধটি ধসে পড়েছে। তবে বাঁধ রক্ষায় এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো উদ্যোগ নেয়নি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) বা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। দুই প্রতিষ্ঠান শুধু চিঠি চালাচালির মাধ্যমে শেষ করেছে তাদের কার্যক্রম।

দুই দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করায় বিবিএ এখন আর বাঁধের কোনো কাজ করতে চাচ্ছে না। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সরকারিভাবে বাঁধের দায়িত্ব না দেওয়ায় তারাও কোনো কাজ করতে চাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মূল পদ্মা সেতু থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার ভাটিতে মাঝিরঘাট এলাকায় পদ্মা সেতু কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-২ রক্ষা বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার কংক্রিটের সিসি ব্লক তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার আশপাশে ফাটল দেখা দিয়েছে। ওই এলাকায় পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে রয়েছে।

পাউবো জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ সালে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধটি নির্মাণ করে বিবিএ। এত দিন বাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিবিএর কাছেই ছিল। গত ৩০ জুন পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাঁধটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারিভাবে পাউবোকে এখনো হস্তান্তর করেনি বিবিএ। এর ফলে বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে দেখা দিয়েছে জটিলতা।

পূর্ব নাওডোবা মাঝিরঘাট এলাকার বাদশা মাদবর বলেন, ‘দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাঁধটি ধসে নেমে যাচ্ছে। ভাঙনের বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসক, ইউএনও এবং পাউবোকে জানিয়েছি। কিন্তু এখনো কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। বাঁধের ভাঙন রোধে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা না নিলে আমাদের এলাকার পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়বে।’

বিষয়টি নিয়ে ১০ নভেম্বর শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর একটি চিঠি দেয় বিবিএ। সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. ওহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাজিরা উপজেলার মাঝিকান্দি ঘাট থেকে ভাটিতে প্রায় ১০০ মিটার (বিবিএর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-২ থেকে প্রায় ৫০০ মিটার ভাটিতে) দূরে নদীভাঙনের ঘটনা ঘটে। নদীভাঙনের ওই স্থানটি বিবিএর আওতাধীন নয়। তা ছাড়া পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম গত ৩০ জুন শেষ হওয়ায় ভাঙনরোধে নদীশাসনের কাজ করা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় ওই স্থানে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, ‘বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গত বছর এই সময় আমরা বিবিএকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, বাঁধটি আমাদের প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে নিই। ওরা তখন বাঁধটি আমাদের দেয়নি। তখন তারাই কাজ করবে বলেছিল। এখন বলছে, তারা কাজ করতে পারবে না। আমাদের করতে বলছে। কিন্তু এখন আমাদের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তখন তারা দিলে আমাদের প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে পারতাম। এখন বাঁধ ধসে পড়ছে। আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। বিবিএ আমাদের চিঠি দিয়েছে। আমরাও তাদের চিঠি দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। আপাতত আমাদের কিছু করার নেই।’

এ বিষয়ে বিবিএর নির্বাহী পরিচালক মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধ ধসে পড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। খবর নিয়ে দেখছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত