Ajker Patrika

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: উৎসুক মানুষের ভিড়ে বেগ পেতে হয় উদ্ধারকর্মীদের

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা)  
আপডেট : ২১ জুলাই ২০২৫, ২১: ৪৪
দুর্ঘটনার পরে থেকে কলেজের আশপাশ এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুর্ঘটনার পরে থেকে কলেজের আশপাশ এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর দিয়াবাড়িতে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটে। আজ সোমবার বেলা সোয়া ১টার দিকে এই দুর্ঘটনার পর উৎসুক মানুষের ভিড়ে উদ্ধারকাজে বেগ পেতে হয় উদ্ধারকারীদের।

ঘটনাস্থলে সরেজমিনে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পর দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আশপাশ এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে প্রবেশের মূল পথ দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে হাজার হাজার মানুষকে ভিড় করতে দেখা যায়। এ ছাড়া আশপাশের বহুতল ভবনের ছাদগুলোও ছিল উৎসুক মানুষে পূর্ণ।

শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির আশপাশেই নয়, উত্তরার হাউস বিল্ডিং থেকে দিয়াবাড়ি সড়ক ও আশপাশের সড়কও ছিল লোকারণ্য। এ জন্য জরুরি সেবায় নিয়োজিত অ্যাম্বুলেন্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থলে প্রবেশ ও বের হতে ভীষণ বেগ পেতে হয়।

এদিকে রাস্তা থেকে উৎসুক জনতাকে বারবার সরিয়ে দিতে দেখা যায় সেনাবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীদের। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। একদিকে সরিয়ে দিলেও অন্যদিকে এসে ভিড় জমায় জনতা।

ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উৎসুক মানুষের অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে আমাদের কাজের বিঘ্ন ঘটছে। তাদের একদিকে সরিয়ে দিলে আরেক দিকে এসে ভিড় জমায়। যার কারণে উদ্ধারকারী দলের ঘটনাস্থলে যেতে ও আসতে বিলম্ব হয়েছে। সেই সঙ্গে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধারের পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার রাস্তাও ব্লক থাকায় মেট্রোরেলের গেট খুলে ভেতর দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

উত্তরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর অতি উৎসাহী লোকজন গাড়ির ওপর দাঁড়িয়ে থেকে কাজের বিঘ্ন ঘটিয়েছে। পানি শেষ হওয়ার পর আবার পানি আনার জন্য যেতেও অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এদিকে রাস্তা লোকজনে ভরপুর, অন্যদিকে গাড়ির ওপর এবং আশপাশে থেকে তাদের সরাতে অনেক কষ্ট হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। এ সময় তাঁদের কান্না ও আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে দিয়াবাড়ির আকাশ-বাতাস। এ সময় ‘আমার বাবা/মা কোথায় তুই, কেমন আছস, কী অবস্থায় আছস?’, ‘আল্লাহ্‌ হঠাৎ করে কী হয়ে গেল?’, ‘আমার বুকের মানিককে কোথায় কেমন অবস্থায় রাখলে?’, ‘বুকের ধনকে বুকে ফিরিয়ে দাও’সহ নানান আহাজারি শোনা যায়।

দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও মেট্রোরেলের টেকনিশিয়ান মেহেদী হাসান জানান, হঠাৎ একটি বিমান মাইলস্টোনের প্রাইমারি শাখার বিল্ডিংয়ের ওপর পড়ে যায়। পড়ে যাওয়ামাত্রই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। আর সেখান থেকে ‘বাঁচাও’ ‘বাঁচাও’ বলে চিৎকার শুরু হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ‘পরে ভেতরে গিয়ে দেখি, বাচ্চাদের ক্লাসরুমের ভেতর বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। সেখানে অনেক ছাত্রের পোড়া মরদেহ রয়েছে। আবার অনেকে আহত অবস্থায় চিৎকার-চেঁচামেচি করছে। শিশুদের শরীর পুড়ে বীভৎস হয়ে রয়েছে।’

মাইলস্টোন কলেজের কয়েকজন কর্মচারী বলেন, দুর্ঘটনার পরপর ঘটনাস্থলে থেকে যাকে যেভাবে পাওয়া গেছে, উদ্ধার করে কলেজ বাসে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাইমারি শাখার ক্যাম্পাসে আজ দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় পাইলটসহ ১৯ জন নিহত ও অন্তত ১৬৪ জন আহত হয়েছে। মর্মান্তিক এই ঘটনার পর আগামীকাল মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৃতীয়বার বিধ্বস্ত হলো বিমানবাহিনীর এফ-৭, এই চীনা যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য কী

উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত: পাইলটসহ নিহত ২০, আহত দেড় শতাধিক, মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক

৯ লাখ টন চাল কিনবে বাংলাদেশ, আশায় বুক বাঁধছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত

পাইলটের মা-বাবাকে বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে নেওয়া হলো ঢাকায়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত