Ajker Patrika

ঈদের আনন্দে যমুনার দুর্গম চরে ঘুড়ি উৎসব

গোপালপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 
যমুনার চরে ঘুড়ি উৎসব। ছবি: আজকের পত্রিকা
যমুনার চরে ঘুড়ি উৎসব। ছবি: আজকের পত্রিকা

আবহমান গ্রাম-বাংলা থেকে হারাতে বসেছে শৈশবের চিরচেনা ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব। আর সেই হারানো ঐতিহ্যকে ফেরাতে ও বর্তমান প্রজন্মের সামনে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসবকে তুলে ধরতে ‘এসো ওড়াই ঘুড়ি, বাংলার ঐতিহ্য লালন করি’ প্রতিপাদ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ উদ্‌যাপন উপলক্ষে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে উপজেলার নলিন বাজারের পাশে যমুনার ধু-ধু বালুচরে মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্যোগে এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমরা গোপালপুরবাসী ফেসবুক গ্রুপ ও শুভশক্তি বাংলাদেশের সহযোগিতায় ঘুড়ি উৎসব পালন করা হয়।

এই ঘুড়ি উৎসবে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ স্কুলপড়ুয়া শিশুশিক্ষার্থী নানা রঙের ও বর্ণের রঙিন ঘুড়ি নিয়ে বালুময় চরে বিকেল বেলা সমবেত হয়। পরে একে একে ঘুড়ি ওড়ানো ও ঘুড়ির সুতা কাটাকাটি খেলা শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যায় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বাউল গানের আড্ডায় মেতে ওঠে বিনোদনপ্রেমীরা।

ঘুড়ি উড়াতে আসা স্কুলশিক্ষার্থী আসফিয়া জান্নাত আদরিতা বলে, ‘ছোটবেলা থেকে শহরে থাকি, এবার পরিবার সঙ্গে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি এসেছি। এর আগে কখনো ঘুড়ি উৎসব দেখিনি বা ঘুড়ি ওড়ানো হয়নি। এবারই প্রথম ঘুড়ি ওড়ানো উৎসবে এসেছি এবং উড়িয়েছি। এখানে এসে সত্যিই খুব ভালো লাগছে।’

মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘কয়েক বছর ধরে আমাদের স্কুল থেকে চরাঞ্চলে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করে আসছে। আমরা কয়েক দিন ধরে নানা রঙের বিভিন্ন ঘুড়ি তৈরি করেছি। নদীর পাড়ে বিকেলে এমন উৎসবে আমাদের অনেক সহপাঠী তাদের বাবা–মা নিয়ে আনন্দ উপভোগ করছে।’

মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ঘুড়ি উৎসব আয়োজক আঞ্জু আনোয়ারা ময়না বলেন, ‘গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ২০১৯ সাল থেকে স্কুলের শিশুশিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ঘুড়ি উৎসব পালন করে আসছি। এর ন্যায় এবার ঈদের পর এই আয়োজন করা হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর লোকজনের উপস্থিতি বেড়েছে। প্রতিবছর এমন ঘুড়ি উৎসব উদ্‌যাপন করা হবে।’

গোপালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ছোটবেলা আমি নিজেও ঘুড়ি উড়িয়েছি, এটিতে আলাদা একটি আনন্দ আছে। আমি মনে করি, বাঙালির এই ঘুড়ি ওড়ানোর মধ্য দিয়ে সংস্কৃতির অতীতকে স্মরণ করা হয়। এটি একটি বিশুদ্ধ প্রতিযোগিতা। এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে ভালো লাগছে।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাজমুল হাসান বলেন, ‘ঘুড়ি উৎসব আমাদের প্রাণের একটি উৎসব। এমন পরিবেশে বর্ণিল এই রঙিন ঘুড়ি উৎসব কখনো দেখার সুযোগ হয়নি। দীর্ঘদিন পর ঘুড়ি উৎসবে প্রাণ ফিরেছে সেই শৈশবের রঙে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত