Ajker Patrika

রাস্তায় পুলিশ-সাংবাদিকের স্টিকারযুক্ত গাড়ি দেখলেই যাচাই-বাছাই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ মে ২০২৪, ২২: ৩২
রাস্তায় পুলিশ-সাংবাদিকের স্টিকারযুক্ত গাড়ি দেখলেই যাচাই-বাছাই

একটি মন্ত্রণালয়ে লোগো ব্যবহার করে তিন বছর ধরে গাড়ি চালাতেন জুবায়ের আহমেদ। কিন্তু জুবায়ের ওই মন্ত্রণালয়ের কেউ না। করেন ব্যবসা। একটি সেমিনারে গিয়ে মন্ত্রণালয়ের লোগোটি সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। সেই থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে ব্যবহার করতে থাকেন। তিন বছর পর আজ বৃহস্পতিবার গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার সামনে ট্রাফিক পুলিশের একটি চেকপোস্টে ধরা পড়েন। গাড়ির কাগজপত্র ঠিক না থাকাসহ মোট সাত হাজার টাকার মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। 

ব্যক্তিগত গাড়িতে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের স্টিকার ব্যবহার করে রাজধানীতে চলছে নানা অপরাধীরা। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতেই তাঁদের গাড়িতে স্টিকার ও লোগো ব্যবহার করে আসছে। 

খোদ ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বলছেন, অপরাধীদের নিয়ে চলা এসব গাড়িগুলোর অধিকাংশতেই ব্যবহার হচ্ছে ভুয়া স্টিকার। তার মধ্যে পুলিশে স্টিকারই বেশি। যদিও অপরাধীদের সঙ্গে পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই রাস্তায় পুলিশের স্টিকারযুক্ত কোনো গাড়ি দেখলে ডিউটিরত থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) হাবিবুর রহমান। 

পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা দুই দিন পর গতকাল রাজধানীজুড়ে গাড়ির স্টিকারে বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ। ভুয়া স্টিকার-লোগো ব্যবহার যানবাহনের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে কঠোর ব্যবস্থা। 

মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের গাড়িতে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিভিন্ন বাহিনী, মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও বিভিন্ন পেশার স্টিকার বিধি-বহির্ভূতভাবে ব্যবহার করে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করছিল যানবাহনের কিছু চালক। এ অপরাধের রাশ টানতে তাঁদের এই অভিযান। 

সরেজমিন দেখা যায়, রাজধানীর প্রবেশমুখসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান চালাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের অধীন ঢাকার অন্যতম প্রবেশমুখ ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় বিশেষ অভিযান চালাচ্ছেন ডিএমপির ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার আশরাফ ইমাম। ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের সদস্যদের তিনটি টিমে ভাগ করে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। 

বেলা দেড়টা পর্যন্ত প্রায় ৫০টি গাড়ির স্টিকার ব্যবহারের বৈধতা যাচাই-বাছাই করা হয়। ২৫টি গাড়ি সার্বিক বিবেচনা সঠিক থাকায় তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকি ২৫টি গাড়ির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ২৫টি গাড়ির মধ্যে দুটি গাড়িকে আটক করা হয় এবং ২৩টি গাড়ির বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করা হয়। 

একই অভিযান পরিচালনা হচ্ছে মগবাজার ও হাতিরঝিল এলাকায়। হাতিরঝিল এলাকায় নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন, গাড়িগুলোতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় পুলিশ, সাংবাদিক আর মন্ত্রণালয়ের নাম। তবে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে কেউ সঠিক জবাব দিতে পারেন না। এমনকি এই গাড়িগুলোতে লাগানো স্টিকার বা লোগোর প্রতিষ্ঠানে তাঁরা কাজও করেন। বন্ধু-আত্মীয়স্বজনের নামে সড়কে প্রভাব খাটাতে গাড়ি নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন এত দিন। প্রমাণ পাওয়া এমন সবারই বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে মামলা করা হয়েছে। 

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকেল ৪টা পর্যন্ত অন্তত ৬০০টি গাড়ির বিরুদ্ধে বিভিন্ন জরিমানা করে মামলা করা হয়েছে। 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিকের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ফাঁকি দিয়ে চলা অপরাধীদের ধরতে সাঁড়াশি এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত