Ajker Patrika

হাজার একর জমিতে ফসল আবাদ বন্ধ

  • ডাকাতিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত মিঠানিয়া খালের উৎসমুখ বালু, ময়লা-আবর্জনায় ভরাট।
  • সেচের পানি না পাওয়ায় জমি আবাদ বন্ধ ২০ হাজার কৃষকের।
চাঁদপুর প্রতিনিধি
Thumbnail image
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ডাকাতিয়া নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খাল ভরাট হওয়ায় ফসলি জমি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সম্প্রতি মকিমাবাদে। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ডাকাতিয়া নদীর সঙ্গে সংযুক্ত একটি খাল মিঠানিয়া। এই খাল থেকে ১১টি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হতো। কিন্তু দখল, দূষণ ও পৌরসভার আবর্জনা ফেলার কারণে খালের উৎসমুখ অনেকটাই ভরাট হয়ে গেছে। এতে কৃষকের ফসলি জমিতে সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না সেচ প্রকল্প। ফলে পানি-সংকটে খালের ওপর নির্ভরশীল প্রায় এক হাজার একর ফসলি জমিতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে আছে।

আগাছায় ভরে পতিত জমিতে রূপ নিয়েছে কৃষকের জমি। জমির মালিক অন্তত ২০ হাজার কৃষক ফসল আবাদ করতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাঁরা খালটি দ্রুত পুনঃ খনন ও দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালের মুখ ভরাট থাকায় জলাবদ্ধতার পাশাপাশি গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির অভাবে বহুদিন ধরে মকিমাবাদ, খাটরা-বিলওয়াই, কাজিরগাঁও, দোয়ালিয়া ও মাতৈনসহ সেচ প্রকল্পের আওতাধীন মাঠের অধিকাংশ স্থানে ফসলের জমি অনাবাদি রয়ে গেছে। খালটি পুনরুদ্ধার ও খননের জন্য জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের কাছে দীর্ঘদিন ধরে কৃষক, এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীরা দাবি জানিয়ে এলেও কাজ হয়নি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজারের কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মিঠানিয়া সেতুর নিচে এবং খালের দুই পাশ ময়লা আবর্জনায় ভরে আছে। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং স্থানীয় লোকজন আবর্জনা ফেলছেন এখানে। খালে কচুরিপানা ও ঘাসের কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া খালের ওপর থাকা ড্রেজার পাইপের জোড়া অংশের লিকেজ দিয়ে বালু পড়ে খালের মুখটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে।

হোসেন মিজি ও আব্দুল মালেক নামের দুজন কৃষক জানান, মিঠানিয়া সেতু নির্মাণের সময় খালের ওপর বিকল্প সড়ক স্থাপন এবং সেতু চালুর পর ওই বিকল্প সড়কের মাটি ও বালু অপসারণ করা হয়নি। এ কারণে সেচের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেল, হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডাকাতিয়া নদী থেকে শুরু করে মিঠানিয়া খালটি হাজীগঞ্জ পৌরসভা হয়ে হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বিভিন্ন খালের সঙ্গে সংযুক্ত। এই খাল দিয়ে একসময় নৌকাযোগে উত্তরাঞ্চলের লোকজনের চলাচল ছিল।

এ ছাড়া খালের পানি ব্যবহার করে পৌরসভার ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের খাটরা বিলওয়াই ও মকিমাবাদ গ্রাম, হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সুদিয়া, মাতৈন, দোয়ালিয়া, মৈশাইদ, খাকবাড়িয়া, বাড্ডা, বাউড়া, শাহপুর, সুবিদপুর, মাড়ামুড়া ও কালচোঁ গ্রামের একাংশের প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফসল ফলাতেন। কিন্তু দিনে দিনে খালটি দূষণ ও দখলের কারণে পানিপ্রবাহ অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।

সেচ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৩ সালে প্রকল্পের ব্যবস্থাপকদের উদ্যোগে এবং তাঁদের নিজস্ব অর্থায়নে মিঠানিয়া সেতুর দুই পাশ থেকে ময়লা-আবর্জনা ও মাটি অপসারণ করে সেচের পানিপ্রবাহের ব্যবস্থা করা হয়।

খাটরা-বিলওয়াই মাঠের সেচ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আবুল হাসেম বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষকেরা জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাসহ অনেকের কাছে গিয়েছেন, কোনো কাজ হয়নি।

দোয়ালিয়া উজ্জ্বল মাঠের সেচ প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, মিঠানিয়া খালটি দ্রুত খননসহ সেচ প্রকল্পের ড্রেন পাকাকরণ প্রয়োজন। তা না হলে এখানে কয়েক শ একর জমি অনাবাদি থাকবে।

হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, খালটি খননের বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। স্থায়ী কিছু করা যায় কি না, সে বিষয়ে কথা হয়েছে।

সমস্যা সমাধানের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

বিএডিসি হাজীগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (সেচ) মো. মামুন রশিদ বলেন, খালটির পানিপ্রবাহে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাজীগঞ্জের ইউএনও তাপস শীল বলেন, খালটি খননসহ টেকসই ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত