Ajker Patrika

খাটের ওপরেও পানি, রাতে ঘুমাতে মানুষদের ঠাঁই হয় এক ভবনে

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ১৮: ৪২
খাটের ওপরেও পানি, রাতে ঘুমাতে মানুষদের ঠাঁই হয় এক ভবনে

বৃষ্টি হলেই চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের শুলকবহর এলাকার পথঘাট সবার আগে তলিয়ে যায়। এদিকে এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টি! সড়কে বুক সমান পানি, ঘর-বাড়িগুলোরও খাটের ওপরেও পানি। দিনে কোনোরকমে কাটিয়ে দেওয়া গেলেও রাতটা ভীষণ দুঃসহ।

এমন পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন ওই এলাকারই বাসিন্দা ওমর ফারুক আলম। নিজ ঘরে ঠাঁই দিয়েছেন, খাওয়াচ্ছেন। সে-ও ১-২ জন নয়, প্রায় ১৫০ জন।

নগরীর চকবাজারের কাতালগঞ্জের ১ নম্বর সড়ক থেকে বাঁ দিকে গেলেই শুলকবহর। দিনমজুর, পোশাকশ্রমিকদের বসবাস এখানেই সবচেয়ে বেশি। এই এলাকায় অন্তত ৫ শতাধিক বাড়িতে নিম্নবিত্ত মানুষেরা থাকেন। কেউ নিচতলায় আর কেউ সেমিপাকা ঘরে। তবে সবচেয়ে কষ্টে আছেন ‘আলম সাহেব’ বলে পরিচিত এলাকার মানুষজন। কারণ এই এলাকাটি জোয়ারের পানিতেও ডুবে যায়।

গত এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টিতে দু: সহ সময় পার করছেন এ এলাকার মানুষজনআজ সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, গৃহবধূ শাহনাজ খাটের ওপরে বসিয়েছেন টেবিল, তার ওপরে রেখেছেন তিন বছর বয়সী ছেলেকে। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর স্বামী। কাজ না থাকায় চার দিন ধরে তিনিও বন্দী। তাঁর মতো এই এলাকায় অন্তত দেড় শ পরিবার পানিবন্দী।

শাহনাজ বেগমের সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘তিন-চার দিন ধরে পাশের আলম সাহেবের ভবনে থাকতেছি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় তোশক বিছিয়ে রাতে ঘুমানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। রাতে ও সকালে খাবারের ব্যবস্থাও করেছেন। এমন মানুষের জন্য অন্তর থেকে দোয়া।’

শাহানাজ বেগমের ঘরের আশপাশে ২০টি সেমিপাকা ঘর। প্রত্যেক ঘরেই পানিতে টইটম্বুর। শিশু-বৃদ্ধদের নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন তাঁরা। এক সপ্তাহ পানিবন্দী থাকায় শিশু-বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন। এখানে যারা পোশাকশ্রমিক থাকেন তাঁদের পানি মাড়িয়ে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। সারা দিন কাজ করে রাতে ঘুমাতে না পারলে, পরদিন কাজে যেতে পারতেন না। ঠাঁই দেওয়ায় তাই আলম সাহেবের বন্দনা এখন সবার মুখে মুখে। 

আলম সাহেবের ভবনে তোশক পেতে রেখেছেন ভুক্তভোগী মানুষেরাআরেকটি পরিবারে ৫৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ মাসহ তিন বোন নার্গিস আক্তার, পারভিন আক্তার ও লাখি আক্তার। তিন বোনই আগ্রাবাদের পোশাক কারখানায় কাজ করেন। বাসায় আছেন মা সাবেকুন নাহার। তাঁর সঙ্গে কথা হলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একদিন কাজে না গেলে অনেক টাকা কেটে ফেলে। আমার তিন মেয়ে পুরোদিন কাজ করার পর রাতে ঘুমাতে না পারলে কাজে যেতে পারত না। আলম সাহেবের ভবনে আমরা রাতে গিয়ে থাকি।’

যে ভবনটি নিয়ে মানুষগুলোর এত রব রব সেই আলম সাহেবের ভবনে দোতলায় গিয়ে দেখা যায়, তাঁরা যেখানে থাকেন তার পাশে তোশক বিছিয়ে রেখেছেন।

সেখানে প্রতিবেদকের কথা হয় এ ভবনটির মালিকের ছেলে ওমর ফারুক আলমের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি। সড়কে বুক সমান পানি। নিম্নবিত্ত এসব মানুষজন যেখানে থাকে, খাটের ওপরেও পানি উঠে গেছে। দায়িত্ববোধ থেকে আমরা প্রায় এক-দেড় শ মানুষকে থাকার ব্যবস্থা করেছি। যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, প্রত্যেকেরই এভাবে এগিয়ে আসা উচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চার মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সেবা ডিজিটাইজ করার নির্দেশ দিল সরকার

গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি: মাইলাম

মাগুরার শিশুটি এখনো অচেতন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

তিন নারী আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত