আরসা প্রধানের ভাই শাহ আলী ৬ দিনের রিমান্ডে

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে গ্রেপ্তার হওয়া আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধানের ভাই শাহ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারক শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যার আদালত এ আদেশ দেন।

গ্রেপ্তার শাহ আলী (৫৫) মিয়ানমারের নিষিদ্ধ ঘোষিত সশস্ত্র সংগঠন ‘আরসা’ প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর ভাই। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাঁর কাছ থেকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র জব্দ করেছে। ওই পরিচয়পত্রে তিনি চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালি থানার দেওয়ান বাজার এলাকার জয়নব কলোনির ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। 

এ ঘটনায় ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) উপপরিদর্শক মোহাম্মদ রুহুল আজম বাদী হয়ে এ ঘটনায় উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ ছাড়া মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার এবং অপহরণের ঘটনায় আরও পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শাহ আলী ও ৬ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের এ-১১ ব্লকের বাসিন্দা মৃত আবুল কালামের ছেলে মোহাম্মদ জোবাইরসহ (২৫) আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে।

গত রোববার ভোর রাতে উখিয়ার কুতুপালং ৬ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের নৌকার মাঠ সংলগ্ন এলাকা থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ শাহ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় দেশীয় তৈরি ১ টি বন্দুক, ১ টি বড় আকারের ছোরা ও ১ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। শাহ আলীকে আটকের সময় মোহাম্মদ সালেহ নামের এক রোহিঙ্গা যুবককে চোখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে মুক্তিপণের জন্য আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে ওই যুবক অভিযোগ করেছেন।

কক্সবাজার আদালতের পুলিশ পরিদর্শক চন্দন কুমার দাশ জানান, তিনটি মামলায় শাহ আলীকে সাত দিন করে ২১দিন রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত ৬দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

• ক্যাম্প থেকে আরসাপ্রধানের ভাই আটক

এর আগে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার নাঈমুল হক বলেছেন, তাঁদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল ৬নম্বর রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় কিছু দুষ্কৃতকারী অবস্থান নিয়েছে এবং তারা শিবিরে বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ড্রোন ব্যবহার করে শাহ আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার শাহ আলী জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর ভাই আরসা প্রধান আতাউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বল প্রয়োগে বাস্তুচ্যুত প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়। নতুন ও পুরোনো মিলে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয় শিবিরে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছেন। 

গত দুই বছর ধরে রোহিঙ্গা শিবিরে স্বদেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে অস্থিরতা,খুনোখুনি,মাদক পাচারসহ নানা অপরাধে আরসার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর উখিয়ার কুতুপালং লাম্বাশিয়া ক্যাম্পে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ মাস্টার। দেশ-বিদেশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সরব ছিলেন মুহিবুল্লাহ। এ জন্য প্রত্যাবাসন বিরোধী ও আরসার সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করেন বলে পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয়। এরপর ক্যাম্পের ভেতরে একটি মাদ্রাসায় হামলা করে ছয় রোহিঙ্গা হত্যার ঘটনায়ও আরসার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তথ্য মতে, মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর এ পর্যন্ত তথাকথিত আরসা নামধারী ১১৬ জন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।