Ajker Patrika

৫ আগস্টের প্রেরণা ৫ মের হেফাজতের রক্ত: কুবি সমন্বয়ক রায়হান

কুবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১৬: ৫০
৫ আগস্টের প্রেরণা ৫ মের হেফাজতের রক্ত: কুবি সমন্বয়ক রায়হান

‘আপনাদের বলতে চাই, আমরা ৫ আগস্ট আমাদের সংগ্রামের যে সফলতা পেয়েছি, এটা মূলত ৫ মে হেফাজতের যে রক্ত ঝরেছিল, সেই রক্ত থেকে আমরা এই সংগ্রামের (কোটা আন্দোলন) প্রেরণা পেয়েছি।’

গত মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) কুমিল্লা শহরের মাদ্রাসায়ে আশরাফিয়া নামক একটি মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের একজন আবু মুহাম্মদ রায়হান। এই বক্তব্যের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রতিবেদনের স্বার্থে ভিডিওটি প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বট্টগ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস আল্লামা নুরুল হক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুফতি বশীরুল্লাহ, অর্থ সম্পাদক মাওলানা মুনীর হোসাইন কাসেমীসহ কুমিল্লা জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সমন্বয়কেরা।

এই অনুষ্ঠানে রায়হান আরও বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে পেরে আমি খুব গর্বিত অনুভব করতেছি। আসলে এর আগেও বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের দাওয়াত দিয়েছে, সব জায়গায় না গেলেও আলেম-ওলামাদের সম্মানে এই দাওয়াত কবুল করেছি আমরা। আর আপনাদের বলতে চাই, আমরা ৫ আগস্ট আমাদের সংগ্রামের যে সফলতা পেয়েছি, এটা মূলত ৫ মে হেফাজতের যেই রক্ত ঝরেছিল, সেই রক্ত থেকে আমরা সংগ্রামের প্রেরণা পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এই দেশ আলেম-ওলামার দেশ। এই দেশে কোনো ভারতীয় অ্যাজেন্ডা আমরা বাস্তবায়ন করতে দেব না। দেশে আলেম-ওলামা বা ছাত্রদের বিরুদ্ধে যেকোনো চক্রান্ত আমরা একসাথে রুখে দেব, ইনশা আল্লাহ। আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আপনারা হেফাজত, চরমোনাই, জামায়াত—সবাই এক হয়ে যান। আমরা ছাত্রসমাজ আপনাদের পক্ষে আছি। অন্য যত অপশক্তি আছে সবাই আমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ কিন্তু আমরা আলেম-ওলামারা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। আমরা চাই, আগামী দিনের বাংলাদেশ আলেম-ওলামার নেতৃত্বে গড়ে উঠবে, ইনশা আল্লাহ। সবাইকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আবু মুহাম্মদ রায়হান বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম ব্যাচ ও ২০১৪-১৫ সেশনের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশন ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফাহিম আবরার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৫ মে হেফাজতের আন্দোলন থেকে আমরা এই গণ-আন্দোলনের অনুপ্রেরণা পেয়েছি—এটি সম্পূর্ণ বিতর্কিত একটি মন্তব্য করেছেন আবু রায়হান ভাই। জনগণের স্বাধীনতার অনুপ্রেরণা জাগ্রত হওয়ার পুরো স্বত্ব তিনি একটি গোষ্ঠীকে দিয়ে দিলেন।’

কুমিল্লা শহরের মাদ্রাসায়ে আশরাফিয়াতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সমন্বয়ক আবু মুহাম্মদ রায়হান। ছবি: সংগৃহীতএই বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশন ও শেখ হাসিনা হলের (যেটির নাম শিক্ষার্থীরা পাল্টে ‘সুনীতি-শান্তি হল’ দিয়েছেন) আবাসিক শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই আন্দোলনের শুরুটা কোটা নিয়ে, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাই একত্র হয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে এক দফা আন্দোলনে উপনীত হয়েছে। হেফাজত, জামায়াত, শিবিরসহ অন্যান্য অনেকেরই ভূমিকা আছে, তা অস্বীকার করব না। কিন্তু ২০১৩ সালের ৫ মের ওপর ভিত্তি করে এই আন্দোলন শুরু হয়নি। তবে কুবি সমন্বয়ক আবু রায়হান আবেগের তাড়নায় বা অন্য কোনো কারণে দাবি করছে ৫ মের হেফাজতের ঝরানো রক্তই নাকি আমাদের ৫ আগস্টের বিজয়ের প্রেরণা। সমন্বয়ক হিসেবে সে সব সময় নিজেকে জাহির করায় ব্যস্ত।’

এ ছাড়া আবু রায়হান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, ‘রায়হান ভাই হলের নামকরণ নিয়ে করা পোস্টে মন্তব্য করেন—‘‘হলের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে ছিল, ওরা কি দেশ স্বাধীন করেছে?’ ’ এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। তাঁর হিসেবে, হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো আন্দোলন করেনি। অথচ, জুনের শুরু থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত হলের শিক্ষার্থী ছাড়া কুমিল্লায় বাইরের কেউ আন্দোলনে যোগ দেয়নি, এমনকি আবু রায়হানকে দেখা গেছে ১৫ তারিখের পর। হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁর এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ এবং ব্যথিত। কুবির সাবেক শিক্ষার্থী হয়ে বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওপর তাঁর দাবি-দাওয়া চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা চাই না সমন্বয়ক পরিচয়ে কোনো সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওপর প্রেশার দিক।’

শেখ হাসিনা হলের শিক্ষার্থী আমেনা বলেন, ‘আন্দোলনে প্রধান ভূমিকায় থাকা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন রায়হান ভাই। বলেছেন, হলের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে ছিল, তাঁরা কী দেশ স্বাধীন করেছে! এ ছাড়া অনলাইন-অফলাইনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে বেড়াচ্ছেন উনি। তাঁর সঙ্গে দ্বিমত হলেই ছাত্রলীগ ট্যাগ দিচ্ছেন।’

বিস্তর অভিযোগের বিষয়ে সমন্বয়ক আবু মুহাম্মদ রায়হান বলেন, ‘আমি বক্তব্যটা আলেম সমাজের সঙ্গে ছাত্রসমাজ আছে এবং তাদের ওপরে যে হত্যাকাণ্ড স্বৈরাচারী সরকার চালিয়েছিল তাঁর প্রতিবাদের ভিত্তিতে বলেছি।’

আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের বিষয় রায়হান বলেন, ‘আমি ওই মন্তব্য করেছি, তবে সকল আবাসিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে নয়। যারা সে সময় আন্দোলনে না গিয়ে বরং অন্যদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছিল, যে নাম থাকলে সমস্যা হবে বা এমন তাঁদের উদ্দেশ করে বলেছি।’

রায়হান আরও জানান, শিক্ষার্থীরা যখন সিনিয়র কাউকে আন্দোলনের নেতৃত্বে চেয়েছিল, তখনই তিনি এসেছিলেন। এখন যদি তাঁকে সিনিয়র হিসেবে শিক্ষার্থীরা না চায়, তাহলে তিনি সরে যাবেন বলেও মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে ‘নারী উন্নয়ন নীতিমালা’ ঘোষিত হওয়ার পরপরই আলোচনায় আসে ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ সংগঠনটি। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর আবারও আলোচনায় আসে এ সংগঠন। দেশে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে তারা ১৩ দফা উত্থাপন করে। ১৩ দফা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে প্রথমে সংগঠনটি ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকা অবরোধ করে। পরবর্তী সময়ে আবার ৫ মে শাপলা চত্বরে সমাবেশ ডাকে। একপর্যায়ে সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়, ডাক দেওয়া হয় সরকার পতনের। সেই রাতে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি যৌথ অভিযান চালিয়ে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এই অভিযানে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সখীপুরে ইয়াবাসহ শ্রমিক দল নেতা গ্রেপ্তার, দল থেকে বহিষ্কার

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 
গ্রেপ্তার শ্রমিক দল নেতা সামছুল আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার শ্রমিক দল নেতা সামছুল আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা

টাঙ্গাইলের সখীপুরে ৩৮০টি ইয়াবা ট্যাবলেটসহ সামছুল আলম (৩৫) নামের এক শ্রমিক দল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার দেবরাজ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আজ শনিবার সকালে টাঙ্গাইল আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার সামছুল আলম উপজেলার বড়চওনা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং কুতুবপুর শুকনারছিট এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে।

সখীপুর থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ উপজেলার দেবরাজ এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে ওই এলাকা থেকে মাদকদ্রব্যসহ সামছুলকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর কাছ থেকে ৩৮০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে।

এদিকে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে দলীয় সকল পদ থেকে সামছুল আলমকে বহিষ্কার করা হয়। উপজেলা শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মো. মতিন ও সদস্যসচিব বাবুল মিয়া এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ, দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে সামছুলকে দলীয় প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সখীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লিবাস চক্রবর্তী বলেন, ‘আসামি কোনো দলের নেতা কি না, তা আমাদের জানা নেই। তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

গাজীপুর (শ্রীপুর) প্রতিনিধি
অভিযুক্ত শিক্ষক দৌড়ে গিয়ে পুলিশ বক্সে আশ্রয় নিলে সেখানে তাঁকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযুক্ত শিক্ষক দৌড়ে গিয়ে পুলিশ বক্সে আশ্রয় নিলে সেখানে তাঁকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে মাদ্রাসার এক শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে ওই শিক্ষক দৌড়ে গিয়ে পুলিশ বক্সে আশ্রয় নিলে সেখানে তাঁকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। খবর পেয়ে ওসির নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে হেফাজতে নেয়। এ সময় পুলিশ ও বিক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

গতকাল শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাতে উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশ বক্সে এই ঘটনা ঘটে। শুক্রবার রাত ১১টায় পুলিশ বক্স থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে পুলিশ। অভিযুক্ত মোহাম্মদ মহসিন (৩৫) নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার কাচুটিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে। তিনি শ্রীপুর উপজেলার দারুল হিকমা হাফিজিয়া ক্যাডেট মাদ্রাসার শিক্ষক।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাত সোয়া ৯টার দিকে অভিযুক্ত শিক্ষককে গণপিটুনি দেন মাদ্রাসার আশপাশের বাসিন্দা ও ভুক্তভোগী শিশুশিক্ষার্থীর স্বজনেরা। এরপর প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে গিয়ে মাওনা চৌরাস্তা এলাকার জেলা পুলিশ বক্সে আশ্রয় নেন অভিযুক্ত শিক্ষক। এরপর কয়েক শ মানুষ পুলিশ বক্স ঘিরে ফেলে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করেন। পরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে কয়েক দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুই ঘণ্টার চেষ্টায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় তাঁকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, প্রথমে বিষয়টি জানার পরপরই পুলিশ পাঠানো হয়। পরে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে পড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় বিক্ষুব্ধ জনতাকে ধাওয়া দিয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসাশিক্ষককে আটক করে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাইকোর্টের সামনে মধ্যরাতে গাড়িচাপায় নারীর মৃত্যু

ঢামেক প্রতিবেদক
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৫৭
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর শাহবাগ থানাধীন হাইকোর্টের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় (৩০) এক নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতর অবস্থায় পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক রাত আড়াইটার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হামিদুল ইসলাম জানান, রাতে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর আসে হাইকোর্টের সামনে কোনো যানবাহনের ধাক্কায় এক নারী গুরুতর আহত হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

হামিদুল ইসলাম আরও জানান, স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে জানা গেছে, ওই নারী ভবঘুরে প্রকৃতির। হাইকোর্ট এলাকায় থাকতেন। তাঁর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পোকা দমনে পরিবেশবান্ধব ‘পাচিং’ পদ্ধতিতে সুফল পাচ্ছেন মৌলভীবাজারের আমনচাষিরা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নে আমনখেতে পাচিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নে আমনখেতে পাচিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের কৃষকেরা আমন ধানের ক্ষতিকারক পোকা দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ‘পাচিং’ পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। জেলার হাওর এলাকা এবং সমতল ভূমিতে বাঁশ বা গাছের খুঁটি ব্যবহার করে এই ‘ডেথ পাচিং’ পদ্ধতি প্রয়োগ করে কৃষকেরা উল্লেখযোগ্য সুফল পাচ্ছেন। কৃষিবিদেরা মনে করছেন, কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা আরও বাড়ালে এই পদ্ধতির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা সম্ভব।

এই পদ্ধতিতে ধানখেতে বাঁশের খুঁটি বা ডাল পুঁতে দেওয়া হয়, যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির শিকারি পাখি এসে বসে। এই পাখিগুলো ধানগাছের ক্ষতিকর পোকামাকড়, বিশেষ করে মাজরা পোকা খেয়ে ফেলে। ফলে ফসলে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কমে যায়, কীটনাশকের ব্যবহার ও খরচ হ্রাস পায় এবং পরিবেশ সুরক্ষিত থাকে। পাখিদের মল থেকে জৈব সার তৈরি হওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তিও বাড়ে।

সরেজমিনে জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা বিচ্ছিন্নভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। প্রায় ১০০ শতক জমিতে ২৫-৩০টি ডেথ পাচিং দেওয়া হয়েছে। বাঁশের খুঁটি বা গাছের ডালের মাথায় খড় বেঁধে পাখির বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশির ভাগ কৃষক পরিবেশবান্ধব এই ডেথ পাচিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।

কৃষকেরা জানান, জেলায় সবচেয়ে বেশি আমন ধান চাষ হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এই পোকা ধানের ডিগ পাতা কেটে দেওয়ায় অনেক সময় পচন রোগের সৃষ্টি হয়। এই আক্রমণ মোকাবিলায় কীটনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি তাঁরা পাচিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের কৃষক আনোয়ার মিয়া বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে আমার ধানখেতে পাচিং পদ্ধতি ব্যবহার করছি। এই পদ্ধতির কারণে পোকামাকড় কম আসে। আমরা ধানের চারা রোপণের কয়েক সপ্তাহ পর থেকে পাচিং পদ্ধতি ব্যবহার করি। কিছুদিন আগে জমির প্রায় পুরোটা মাজরা পোকার আক্রমণের শিকার হয়েছে। পোকা দমনে কীটনাশক ছিটানোর পাশাপাশি পাচিং পদ্ধতি ব্যবহার করছি।’

কৃষকদের মতে, বিশেষ করে শালিক ও ফিঙে—এই দুই ধরনের পাখি পাচিংয়ে বসে পোকা নিধনে প্রধান ভূমিকা রাখে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ পূরণ করেছে।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, পাচিং পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকেরা সুফল পাচ্ছেন। যারা এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন, তাঁদের খরচ কম হয় এবং সুফল বেশি হয়। এটি পরিবেশ বান্ধব। কম খরচে বাঁশের খুঁটি দ্বারা সহজে এটি করা যায়। বিশেষ করে মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে ধান রক্ষার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত