Ajker Patrika

কক্সবাজারের রামু: ধসের ঝুঁকিতে ২৫০ বছরের লাওয়ে জাদি

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত লাওয়ে জাদির সীমানাপ্রাচীর ধসে পড়েছে। সম্প্রতি রামু উপজেলার কাউয়ারকোপে। আজকের পত্রিকা
পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত লাওয়ে জাদির সীমানাপ্রাচীর ধসে পড়েছে। সম্প্রতি রামু উপজেলার কাউয়ারকোপে। আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের রামু উপজেলা সদর থেকে বাঁকখালী নদীর তীরের তিন কিলোমিটার আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে গেলেই রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের জাদিপাড়া। সড়কের পাশ ঘেঁষে ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত প্রায় ২৫০ বছরের প্রাচীন লাওয়ে জাদি (প্যাগোডা)। ছয়-সাত বছর ধরে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের ঐতিহাসিক এই প্যাগোডা পাহাড় ক্ষয়ে সীমানাপ্রাচীর ধসে পড়ছে। ভাঙন ধরেছে জাদির গোড়ায়। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, এই পুরাকীর্তি হুমকির মুখে পড়লেও রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেই।

রামু উপজেলার কাউয়ারকোপ ইউনিয়নে পড়েছে এই প্যাগোডা। উপজেলার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ে অবস্থানের কারণে অনেক দূর থেকে এটি দেখা যায়। আবার এ পাহাড়ে উঠলে দেখা মেলে কক্সবাজার শহর, বাঁকখালী নদী এবং চারপাশের প্রাণজুড়ানো নৈসর্গিক সৌন্দর্য।

সরেজমিন দেখা যায়, জাদির পাহাড়ে ওঠার কোনো সিঁড়ি বা রাস্তা নেই। চারপাশে পাহাড় ক্ষয়ে সীমানাপ্রাচীর ধসে পড়ছে। এর মধ্যে উত্তর ও পশ্চিম পাশের সীমানাপ্রাচীর একেবারে বিলীন হয়েছে। ভাঙন গিয়ে ঠেকেছে জাদির গোড়ায়।

স্থানীয় বাসিন্দা পুলক বড়ুয়া জানান, যে পুরাকীর্তি ঘিরে পাহাড়টির নাম জাদি পাহাড় ও এলাকার নামকরণ হয়েছে, সেই বৌদ্ধ পুরাকীর্তি এখন হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। দ্রুত সংস্কার করে এই জাদির পাহাড় রক্ষা করতে পারলে এখানে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

লাওয়ে জাদির ঐতিহ্য তুলে ধরে স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদার কাছ থেকে এই জাদির ঐতিহ্য ও ইতিহাস শুনেছি। এটি রামুর ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। ঐতিহাসিক এই পুরাকীর্তি রক্ষা করতে পারলেই শিক্ষা, গবেষণা, সংস্কৃতি ও পর্যটন প্রসারে ভূমিকা রাখবে। এ জাদি রক্ষায় সরকারের জরুরি উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।

জাদিটি দেখভালের দায়িত্বে আছে স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়। দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় ধসে ঝুঁকিতে থাকা জাদিটি সংস্কারের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছেন জাদি রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির সভাপতি ঊথেনছিং রাখাইন। তিনি বলেন, ছয়-সাত বছর ধরে পাহাড় ধসে জাদির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে পড়েছে। সংস্কারের জন্য জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দপ্তরে জানিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, রামুর বৌদ্ধ পুরাকীর্তিগুলো বাংলাদেশের জন্য বিশেষ নিদর্শন। ঐতিহাসিক এই স্থাপনাগুলো রক্ষায় প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর কাজ করছে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন থেকে জরুরি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

কে বানাল এই জাদি

কথিত আছে, আরাকানের রাজা চন্দ্র বিজয়ার শাসনামলে ১৭১০ খ্রিষ্টাব্দে জাদিটি নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই জাদি নিয়ে গবেষণা করে আসছেন আইনজীবী শিরুপন বড়ুয়া। তাঁর তথ্যমতে, ১৭৮৪ সালের ডিসেম্বরে বর্মি রাজা বোদপায়া আরাকান দখলে নেন এবং আরাকানের শেষ স্বাধীন রাজা মহা থামাডাকে বন্দী করেন। এ সময় রাজা থামাডার ছোট ভাই লাওয়ে মুরং নাফ নদী পেরিয়ে টেকনাফে এসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তাঁকে আশ্রয় দেওয়ায় বর্মি রাজা বোদপায়া ক্ষিপ্ত হন এবং ১৭৯৪ সালের জানুয়ারির দিকে লাওয়ে মুরংকে ধরার জন্য টেকনাফে সৈন্য পাঠান। তখন লাওয়ে মুরং পরিবারসহ রামুতে পালিয়ে আসেন। সে সময় রামুতে ছিল ব্রিটিশদের সেনা ক্যাম্প। এ ছাড়া ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সও তাঁর একটি প্রতিবেদনে লাওয়ে মুরং টেকনাফ ছেড়ে আরও উত্তরে চলে আসার বিষয়টি উল্লেখ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেই সময়ে জাদিটি নির্মাণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘মুসলিম ফ্রন্টগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ইন্টেরিম ভেঙে দিন’

‘বউ আমাকে মিথ্যা ভালোবাসত, টাকা না থাকলে ছেড়ে যাবে, তাই মরে গেলাম’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত