Ajker Patrika

‘বাজারে ক্রেতা কম আসায় একটি গরুও বেচতে পারিনি’

মো. হোসাইন আলী কাজী, আমতলী (বরগুনা) 
আমতলীর বাজারে আসা সবচেয়ে বড় গরু পায়রা বাহাদুর। ছবি: আজকের পত্রিকা
আমতলীর বাজারে আসা সবচেয়ে বড় গরু পায়রা বাহাদুর। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরগুনার আমতলীর বাজারগুলোয় কোরবানির গরু নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন বিক্রেতারা। বাজারগুলোয় গরু বেশি থাকলেও ক্রেতার সমাগম কম। ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর কিছু ক্রেতা থাকলেও বড় গরুর ক্রেতা নেই। দামও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাই গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ব্যাপারীরা।

আমতলী গরুর বাজার পরিচালক নিয়াজ মোর্শ্বেদ ইমন বলেন, যাঁরা গরু কিনতেন, তাঁরা তো এলাকায় নেই। তাঁরা সবাই এলাকাছাড়া। ফলে বাজারে ক্রেতা অনেক কম।

আমতলী প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় কোরবানির জন্য ৮ হাজার ৮১৩টি গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে। চাহিদার বিপরীতে এই উপজেলায় ৯ হাজার ৭০টি পশু রয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৯১২টি গরু, ৫৯৫টি মহিষ, ২ হাজার ৫৬৩টি ছাগল। চাহিদার তুলনায় ২৫৭টি পশু বেশি রয়েছে। শেষ সময়ে আমতলীর বাজারগুলো গরুতে সয়লাব, কিন্তু ক্রেতা নেই। ছোট ও মাঝারি গরুর কিছু ক্রেতা থাকলেও বড় গরুর ক্রেতা নেই। বাজারে যা বেচা হচ্ছে, তা উত্তরাঞ্চলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনছেন। গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।

আজ বুধবার আমতলীর পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, কিছু ছোট ও মাঝারি গরু ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। বড় গরুর ক্রেতা নেই। গলাচিপা উপজেলার আমখোলা গ্রামের ব্যবসায়ী হারুন মিয়া বলেন, ‘পাঁচটি গরু গত এক মাস আগে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কিনেছি। এখন ওই পাঁচটি গরু বর্তমান বাজারে বিক্রি করলে মূলধনের টাকাও আসবে না। লাভ তো দূরে থাক। তারপর গত এক মাস ধরে খাবার খাইয়েছি, তার দাম তো ধরিই নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে ক্রেতা কম আসায় একটি গরুও বেচতে পারিনি।’

গরুর খামারমালিক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘খামারের পায়রা বাহাদুর নামের একটি গরু বাজারে নিয়ে এসেছি, ক্রেতারা ভালো দাম বলে না। সাড়ে তিন লাখ টাকা দাম হাঁকালেও ক্রেতারা দাম বলেন ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বড় গরুর ক্রেতা অনেক কম, কিন্তু ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা কিছু বেশি।

দক্ষিণ রাওগা গ্রামের বাবুল মীর বলেন, ‘তিনটি গরু গত ১৫ দিন আগে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় কিনেছি। এখন ওই গরু বিক্রি করতে পারছি না। একটি গরু অনেক কষ্টে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। অপর দুটি তেমন দাম বলে না কেউ।’ তিনি আরও বলেন, বাজারে অনেক গরু এসেছে। তিনটি গরু বর্তমান বাজারমূল্যে বিক্রি করতে পারলে ব্যবসা তো হবেই না, উল্টো ২৫ হাজার টাকা লোকসান হবে।

পৌরসভার খোন্তাকাটা এলাকার ক্রেতা আল হাসিব সজিব বলেন, ‘কোরবানি উপলক্ষে একটি ছোট গরু কিনতে এসেছি। বাজারে গরু অনেক। দামও অনেক কম। যাচাই-বাছাই করে স্থানীয় গরু কিনব।’

কাঁঠালিয়া গ্রামের লিটন বলেন, ‘বড় গরুর চাহিদা কম। গত বছরের চেয়ে গরুপ্রতি ৩০-৩৫ হাজার টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। একটি গরু ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দাম হাঁকিয়েছি, কিন্তু ক্রেতা ১ লাখ টাকা বলেন। তাও দাম বলে চলে যান।’

পটুয়াখালীর ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে যে পরিমাণ গরু এসেছে, তার চার ভাগের এক ভাগও ক্রেতা নেই। তিনি আরও বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমতলীর বাজার থেকে ২১টি গরু ১১ লাখ টাকায় কিনে কুষ্টিয়া নিয়ে বেচেছি। তাতে কোনো লাভ হয়নি।’

আমতলী পশুর হাটের ইজারাদার আলাউদ্দিন মৃধা বলেন, বাজারে অনেক গরু আসছে। কিন্তু ক্রেতা কম। এখন পর্যন্ত ৩০০টি গরু বিক্রি হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত