Ajker Patrika

বরগুনার আমতলী

নিষেধাজ্ঞার মধ্যে দেদার মাছ শিকার, পরিবহন দূরপাল্লার বাসে

  • সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করেই চলছে সাগরে মাছ শিকার
  • নজরদারি বৃদ্ধি এবং চেকপোস্ট বসানোর দাবি স্থানীয়দের
  • তথ্য পেলেই সাগরে অভিযান পরিচালনা করা হয়: কোস্ট গার্ড
  • মাছ পরিবহন বন্ধে দ্রুত চেকপোস্ট বসানো হবে: ইউএনও
মো. হোসাইন আলী কাজী, আমতলী (বরগুনা) 
আপডেট : ২৫ মে ২০২৫, ১০: ২২
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে দেদার মাছ শিকার, পরিবহন দূরপাল্লার বাসে

জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন সময় সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে সরকার। তবে অধিকাংশ সময়ই মেলে না এর সুফল। নিষেধাজ্ঞার ওই সময়ে চলে নির্বিচারে মাছ শিকার। আর প্রশাসনের নাকের ডগায় সেই মাছ দূরপাল্লার বাসে চলে যায় ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ ও তালতলী উপজেলা মৎস্য বিভাগকে ম্যানেজ করেই কিছু অসাধু জেলে সাগরে মাছ শিকার করেন। তাঁরা পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের আমতলী পয়েন্টে ট্রাফিক, কোস্ট গার্ড, মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনের কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি এবং চেকপোস্ট বসানোর দাবি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল থেকে আগামী ১১ জুন ৫৮ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ শিকার, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে উপকূলীয় অঞ্চল মহিপুর, আলীপুর, কুয়াকাটা, তালতলীর অসাধু ব্যবসায়ীরা উপজেলার মৎস্য বিভাগ, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জেলেদের দিয়ে সাগরে মাছ শিকার করাচ্ছেন। অসাধু ব্যবসায়ীরা কুয়াকাটা, কলাপাড়া, তালতলী ও ফকিরহাট বাসস্ট্যান্ডে ওই মাছ ককশিটে করে ইসলাম, মিজান, আলিফ, অন্তরা, ইটালী, হাসান, যমুনা লাইনসহ বিভিন্ন পরিবহনে ঢাকায় পাঠাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী-কুয়াকাটা ও তালতলী—এই তিন সড়কের মধ্যস্থান আমতলী চৌরাস্তা। এসব সড়কের পরিবহনগুলো আমতলী হয়ে যেতে হয়। আমতলী ছাড়া অন্য কোনো সড়ক নেই। প্রতিদিনই এ সড়ক হয়ে বঙ্গোপসাগরে শিকার করা মাছ পরিবহনে যাচ্ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে মাছ বিভিন্ন দূরপাল্লার পরিবহনে আমতলী পয়েন্ট ত্যাগ করা শুরু করে। এ যাত্রা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। ওই সময় সড়কে ট্রাফিক পুলিশ থাকার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তারা সড়কে থাকে না।

রুবেল মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করেই রাতে মাছ পরিবহনের গাড়িগুলো আমতলী অতিক্রম করছে। ফলে অনায়াসে তারা আমতলী পয়েন্ট ত্যাগ করতে পারে। মাঝেমধ্যে দু-এক দিন মাছসহ বাস প্রশাসনের কাছে ধরা পড়লেও তা সামান্য। তাঁর দাবি, এ সড়কে মাছ পরিবহন বন্ধ করতে হলে ট্রাফিক টহল, কোস্ট গার্ড, মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসনকে সজাগ হতে হবে।

জেলে সুলতান, রফেজ ও আবুল বাশার বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা মাছ শিকার করতে সাগরে পাঠান, তাই সাগরে মাছ শিকারে যাই। সাগরে কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ আমাদের মাছ শিকার করা দেখেও তো কিছুই বলে না।’

তালতলী নিদ্রাসকিনা কোস্ট গার্ড স্টেশনের ইনচার্জ সুজা উদ্দিন মাহমুদ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ওই স্টেশনের গোয়েন্দা বিভাগের হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তথ্য পেলে আমরা সাগরে অভিযান পরিচালনা করি। ফকিরহাটে যে মাছ উঠছে, তা সাগরের মাছ নয়, নদীর মাছ।’ সাগরের মাছ দূরপাল্লার বাসে আপনাদের সামনে দিয়েই নিয়ে যাচ্ছে, আপনারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বলতে পারব না।’

তালতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। আমতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাশ বলেন, ‘গত মাসের আইনশৃঙ্খলা সভায় সাগরে মাছ শিকার নিষিদ্ধের ৫৮ দিন পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের আমতলী চৌরাস্তায় চেকপোস্ট বসার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ রাজি হয়নি। আমার দপ্তরে সেই রকম জনবল নেই। ফলে পরিবহন আটকে মাছ জব্দ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ‘মৎস্য বিভাগ চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ চাইলেই আমি দিতে পারি। কিন্তু তারা তো চেকপোস্টই বসায় না।’

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক হাসান বলেন, মাছ পরিবহন বন্ধে দ্রুত চেকপোস্ট বসানো হবে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে সামুদ্রিক মাছ জব্দ করা হয়েছে। চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দত্তক এনে মার্কেট লিখে দিয়েছিলেন, সেই ছেলে পিটিয়ে মারল মাকে

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ও খলিলুরসহ ৩ উপদেষ্টাকে সরানোর দাবিতে অনড় বিএনপি

ঝোপ বুঝে কোপ মারা বাংলাদেশে আর হবে না: রাষ্ট্রদূত আনসারী

পরাজিত শক্তির ইন্ধন ও বিদেশি ষড়যন্ত্র, সকল কারণ জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে: উপদেষ্টা পরিষদ

ময়মনসিংহে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার মানহানির মামলা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত