Ajker Patrika

সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে কী চান ডোনাল্ড ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৮ মে ২০২৫, ২১: ১৩
সৌদি আরবের রিয়াদে সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে দেখা হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ছবি: এএফপি
সৌদি আরবের রিয়াদে সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে দেখা হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ছবি: এএফপি

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর সম্পন্ন করেছেন। সফরকালে তিনি ওই দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বলে আখ্যায়িত করেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কূটনীতির এক নাটকীয় রূপান্তরের ইঙ্গিত দেন।

বিশেষ চমক হিসেবে সৌদি আরবের রিয়াদে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ৪৬ বছর ধরে সিরিয়ার ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে। এই ঘোষণার পরপরই তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উপস্থিতিতে সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও এই বৈঠকে টেলিফোনে যোগ দেন।

আহমেদ আল-শারা অতীতে আল-কায়েদার অধীন আল-নুসরা ফ্রন্টের নেতা ‘আবু মুহাম্মদ আল-গোলানি’ নামে পরিচিত ছিলেন। ২০১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁর মাথার জন্য দাম ঘোষণা করেছিল। সেই ঘোষণা বাতিল করা হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, যখন তিনি সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে অপসারণ করে ক্ষমতায় বসেন।

এই রূপান্তরিত নেতৃত্বকে কেন্দ্র করেই ট্রাম্প প্রশাসন সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একসময় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল আসাদ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে। তবে আসাদ সরকারের পতন হওয়ায় যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া পুনর্গঠনের জন্য এই অবরোধ তুলে নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার।

ট্রাম্প বলেছেন, ‘অনেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিদেশি নেতাদের আত্মা বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন। আমি চাই স্থিতিশীলতা ও বাণিজ্য।’ এই প্রেক্ষাপটে সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব আন্তর্জাতিকভাবে ইসলামপন্থা-বর্জিত ও সমন্বয়মূলক অবস্থান নিচ্ছে। অভ্যন্তরীণভাবে তারা বিচ্ছিন্ন বাহিনীগুলোকে জাতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করছে। এতে পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া সহজ হবে।

ট্রাম্পের এই অবস্থানের দ্বিতীয় দিকটি হলো, মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দায় কমিয়ে আঞ্চলিক সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেওয়া। তিনি সিরিয়ার ভবিষ্যতের জন্য বড় কোনো অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি দেননি। বরং আল-শারার কাছে দাবি করেছেন, আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষর, ইসরায়েলকে স্বীকৃতি, বিদেশি ও ফিলিস্তিনি জঙ্গিদের অপসারণ এবং আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দায়িত্ব নেওয়া।

সিরিয়ার পুনর্গঠনে কাতার, তুরস্ক ও সৌদি আরব ইতিমধ্যে বড় অঙ্কের সহায়তা ঘোষণা করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে চাপ কমিয়ে আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে এগিয়ে আসার সুযোগ তৈরি করেছে।

এই সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—ব্যবসা। ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন, কাতারের সঙ্গে ২৪৩.৫ বিলিয়ন ও আমিরাতের সঙ্গে ২০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি করেছে। এতে অস্ত্র, প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ খাতে বিপুল লেনদেন হচ্ছে।

ইসরায়েলের আপত্তি সত্ত্বেও ট্রাম্প তুরস্কের সঙ্গে ৩০৪ মিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি করেছেন। পাশাপাশি ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক সমঝোতার ইঙ্গিতও দিয়েছেন।

মোটকথা, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য কূটনীতি এখন নৈতিকতা বা ইতিহাস নয়, বরং বাস্তবতা, অর্থনীতি ও আঞ্চলিক ভারসাম্যের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির এক নতুন অধ্যায়, যেখানে পুরোনো শত্রুরাও নতুন বন্ধু হতে পারে, যদি তা বাণিজ্য ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারজিসের পোস্টে কমেন্ট করে বরখাস্ত মৎস্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী

আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই আসতে পারে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ঘোষণা

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প স্থবির

নূর ধান-২: এক চালেই হবে ভাত পোলাও খিচুড়ি বিরিয়ানি তেহারি

‘৩ শর্তে’ সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুতদের বিক্ষোভ স্থগিত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত