ফজলুল কবির

এমন তো হয়ই যে কেউ কাউকে এড়াতে চাইছে, কিন্তু কোনোভাবেই পারছে না। যেখানেই যায়, ছায়া হয়ে অনুসরণ করে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি। থানা-পুলিশ করেও অনেক সময় সুফল পাওয়া যায় না। আগে হয়তো কাজটি করা হতো কোনো ব্যক্তিকে অনুসরণের দায়িত্ব দিয়ে। এখন সেই জমানা নেই। প্রযুক্তিই এখন এই অনুসরণকারীর দায়িত্ব নিয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে স্টকারওয়্যার। সাদা বাংলায় বললে নজরদারি সফটওয়্যার। আপনাকেও এমন কোনো সফটওয়্যার অনুসরণ করছে না তো? চিনবেন কীভাবে?
নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। বলা অবান্তর, এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তুর কোনো সম্মতি নেওয়া হয় না।
এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ তো বটেই, অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথিও হাতিয়ে নেওয়া যায়। এমনকি ফোনে আড়ি পাতাও সম্ভব।
প্রযুক্তির এই যুগে এমন নজরদারি এক ভয়াবহ সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছেন ইভা গালপেরিন নামের এক নারী। ওই বছর তিনি কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট স্টকারওয়্যার (সিএএস) নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইভা গালপেরিন ধর্ষণের শিকার এমন কিছু নারীর ভোগান্তি সম্পর্কিত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছিলেন, যাঁরা দিনের পর দিন নিপীড়কের হাত থেকে বাঁচার শত চেষ্টা করেও পারছিলেন না। সেই নিপীড়কেরা তাঁদের ছায়ার মতো অনুসরণ করছিল। এ জন্য তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছিল।
এ বিষয়ে ইভা গালপেরিন বিবিসিকে বলেন, যখন কেউ আপনার অজ্ঞাতে ফোনে প্রবেশ করবে, তখন এর অপব্যবহারের মাত্রা হয় ভয়াবহ রকমের। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ব্যক্তিগত ছবির কথা। এসব ক্ষেত্রে সবার আগে ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নেয় নিপীড়কেরা। এরপর শুরু হয় এসব ছবি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি। পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর একটি বড় অংশের ক্ষেত্রেই এ ধরনের সফটওয়্যারের ব্যবহার দেখা গেছে।
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান নর্টন ল্যাবের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্টকারওয়্যারের ব্যবহার বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা বিশ্বেই এই সংকট ক্রমবর্ধমান। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৩ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে করোনাকালে বিভিন্ন বিধিনিষেধে মানুষের ঘরে বেশি সময় কাটানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারণ এই সময়ে ঘরে থাকা সঙ্গীর ব্যক্তিগত ডিভাইস হাতের কাছেই পাওয়া গেছে।
বিবিসি জানায়, গত দুই বছর ইভা গালপেরিন বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এ ধরনের সফটওয়্যারকে অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানিগুলোর আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই উদাসীন ভাব দেখিয়ে আসছে। তারা স্টকারওয়্যারকে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রাম বা ম্যালওয়্যার হিসেবে দেখতে রাজি নয়, যেহেতু এর বৈধ ব্যবহারও রয়েছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে গুগল অবশেষে বেশ কিছু অ্যাপের বিজ্ঞাপন তাদের সাইট থেকে সরিয়ে নেয়, যেগুলো সঙ্গীর ফোনে নজর রাখার বিষয়ে ওকালতি করে আসছিল। মূলত অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের চলাফেরা এবং সাইবার জগতে তাদের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখার জন্য অভিভাবকদের মধ্যে স্টকারওয়্যারের একরকম চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত এখানে শেষ হয় না। এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নিপীড়কেরাই, যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয় নারীরা।
এমনই একটি অ্যাপ হচ্ছে স্পাইফোন, যা গত সেপ্টেম্বরে নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। এ ধরনের কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ বিভিন্ন সময়ে নেওয়া হলেও এখনো অনলাইনে এমন বহু স্টকারওয়্যার অ্যাপের খোঁজ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এগুলো ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে টিউটোরিয়ালও পাওয়া যায় সহজেই।
ইভা গালপেরিনের ভাষ্যমতে, এখন এফটিসি সেই সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করছে, যারা এ ধরনের অ্যাপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত। তিনি এই প্রযুক্তিকে ‘ভীষণ শক্তিশালী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
নানা মোড়কে থাকতে পারে
দেখতে হয়তো ক্যালকুলেটর অ্যাপের মতো, কিন্তু কাজ করে নজরদারির—এমনও হতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমন একটি উদাহরণ উল্লেখ করে বলা হয়, গুগল অ্যাপ স্টোর থেকেই বিনা মূল্যের একটি কিলগার অ্যাপ নামিয়ে দেখা গেছে, তা ক্যালকুলেটর বা ক্যালেন্ডারের ভেক ধরে থাকছে। আর নামিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ফোনে চাপা প্রতিটি বাটনের খোঁজ রাখছে সে। মূলত এ ধরনের অ্যাপ অভিভাবকেরা সন্তানের ওপর নজর রাখতে ব্যবহার করেন। কিন্তু এগুলো যে কারও ব্যক্তিগত জীবন বিষিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। আগে এ ধরনের অ্যাপের সংখ্যা কয়েক শ হলেও এখন এমন অ্যাপ রয়েছে হাজার হাজার।
এ ধরনের অ্যাপের নাম সাধারণত খুব নিরীহ ধাঁচের হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে ‘মোবাইলটুল’ ‘এজেন্ট’, ‘সারবেরাস’ ইত্যাদি নামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এফটিসি ‘স্পাইফোন’ নামের একটি অ্যাপ বাজারে ছাড়ার দায়ে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাপোর্ট কিংকে নিষিদ্ধ করেছে।
প্রযুক্তিবান্ধব হলেই কি চেনা যাবে?
এই অ্যাপগুলো এমনভাবে তৈরি করা, যাতে এগুলো সহজে শনাক্ত করা না যায়। এমনকি প্রযুক্তিবান্ধব অনেক ব্যক্তির পক্ষেও এগুলোর উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব নয়। এমনই এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। সেখানে তাঁর ছদ্মনাম হিসেবে শার্লট বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
বিবিসিকে শার্লট বলেন, বাগ্দানের পর থেকেই তিনি বেশ কিছু উদ্ভট বিষয় লক্ষ করতে শুরু করেন। ফোনের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হওয়া, ফোন হঠাৎ করেই রিস্ট্রার্ট নেওয়া থেকে শুরু করে নানা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে তাঁর সঙ্গে। এ দুটিই নজরদারি সফটওয়্যারের আওতায় পড়ে যাওয়ার প্রাথমিক ইঙ্গিত। কিন্তু এই ইঙ্গিতও যথেষ্ট ছিল না বিষয়টি বোঝার জন্য। তাঁর সঙ্গীই তাঁকে একসময় জানান, তিনি সব সময় জানতেন শার্লট কখন কোথায় থাকেন।
করণীয় জানতে শার্লট পরে হ্যাকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর সঙ্গীও এমন একটি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। তিনিও এর কিছু ধরনধারণ জানতেন। কিন্তু যখন আলাপ করলেন, দেখলেন সঙ্গীর ওপর নজর রাখার বিষয়ে সম্মতি প্রদানের একটি ভয়াবহ সংস্কৃতি রয়েছে। এটি কোনো অপরাধই যেন নয়। এটি তাঁকে ভীষণভাবে আহত করে। এ থেকেই তিনি সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার আগ্রহ পান, যেন এই খাতকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে কাজ করা যায়।
কীভাবে শুরু হয়?
ইন্টারনেট ঘাঁটলে এমন বহু সফটওয়্যার-সেবার খোঁজ পাওয়া যাবে, যা শুধু ফোন নম্বর পেলেই লক্ষ্যবস্তুর ওপর নজরদারি শুরু করতে পারে বলে দাবি করে। এ জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কয়েক শ ডলার মাত্র ব্যয় করতে হয়। এসব সেবাদাতা এমন সব দাবি করে, যে ধরনের নজরদারির সক্ষমতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে রয়েছে। পেগাসাসের কল্যাণে এই সক্ষমতার মাত্রা নিয়ে কারও অন্তত সন্দেহ থাকার কথা নয়। যদিও এগুলো ঠিকঠাক কাজ করে কি না, এ নিয়ে সংশয়ও রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।
শার্লটের ভাষ্যমতে, এ ধরনের নজরদারি সফটওয়্যার সাধারণত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক সময় কিছু মেসেজ পাঠিয়ে কোনো একটি লিংকে ক্লিক করতে বলা হয় অথবা নানা ধরনের চটকদার অ্যাপের মাধ্যমেও এটি ঘটতে পারে। এমন কিছু শনাক্ত করা মাত্রই তা ডিলিট করার পরামর্শ দেন তিনি। শার্লট বলেন, ‘যত ধরনের সতর্কতাই দিক না কেন, ডিলিটের ক্ষেত্রে ঘাবড়াবেন না।’
খেয়াল রাখুন
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে—
১. আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে কি না। স্টকারওয়্যার আপনার অজান্তে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বলেই হয়তো এমনটা হচ্ছে।
২. ডিভাইসটি বিশ্বস্ত স্টকারওয়্যার ডিটেক্টর দিয়ে স্ক্যান করুন। এ ক্ষেত্রে ম্যালওয়্যারবাইটস, সারটো, নর্টনলাইফলক, লুকআউট সহায়ক হতে পারে।
৩. ডিভাইসে থাকা প্রতিটি অ্যাপ লক্ষ করুন। এমন কিছু কি আছে, যা আপনি ইনস্টল করেননি। সন্দেহজনক মনে হলে ডিলিটের আগে ভেবে নিন। এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় অভিযোগ জানাতে চাইলে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
৪. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো চিহ্নিত করুন।
করণীয় কী?
ভুক্তভোগী ও পরে সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক হওয়া শার্লট এ ধরনের সংকটে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেন—
১. প্রথম করণীয় হিসেবে সংশ্লিষ্ট অ্যাপ বা সফটওয়্যারটি ডিলিট করতে হবে।
২. ডিলিটের ক্ষেত্রে তথ্য হারিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে নানা ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হতে পারে। এগুলোতে ঘাবড়ালে চলবে না।
৩. যদি কোনোভাবেই ডিলিট করা না যায়, তবে ডিভাইসটি ফ্যাক্টরি সেটআপ দিতে হবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পাল্টাতে হবে। একই সঙ্গে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করতে হবে।
৫. ঘুরেফিরে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৬. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো বিযুক্ত করুন।
৭. সফটওয়্যার আপডেট করুন। অ্যাপল ও গুগল কিছুদিন পরপরই আপডেট অফার করে। এর মাধ্যমেও এ ধরনের সফটওয়্যারের হাত থেকে মুক্তি মিলতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।
আইনি ব্যবস্থা
এ তো গেল ব্যক্তিগত পর্যায়ে করণীয়। আইনানুগ পথে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
অধিকাংশ দেশেই এখন বিনা সম্মতিতে এ ধরনের নজরদারি রোধে আইন রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বিবিসির প্রতিবেদনে ফ্রান্সের কথা বলা হয়েছে। ২০২০ সালে দেশটি পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন করেছে, যেখানে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে গোপন নজরদারির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কারও সম্মতি ছাড়া তাঁর অবস্থান জানতে নজর রাখলে তাঁকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে সেই আইনে। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এক বছরের জেল ও ৫১ হাজার ডলার জরিমানা হতে পারে। আর এমন কাজ কারও জীবনসঙ্গী করলে এই জরিমানার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
আইনও কি পারবে সমাধান দিতে?
ইভা গালপেরিন অন্তত এ ধরনের বিষয় পুরোপুরি আইনের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি নন। তাঁর দৃষ্টিতে এ ধরনের সংকটের সমাধান শুধু আইন করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তিনি গুগল ও অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি-মোঘলদের সহায়তা চান। তাঁর ভাষ্যমতে, এ দুই প্রতিষ্ঠান চাইলে এ ধরনের অ্যাপের বিক্রি কার্যত অসম্ভব করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে এ ধরনের অভিযোগকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে গেলে তারা একে উড়িয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে এমনকি হাস্যরসও করা হয় বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু ভুক্তভোগীর কাছে এটি ভীষণভাবে পীড়াদায়ক। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এ ধরনের ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে আলাদা সংস্থা গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের করনেল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এমন এক প্রতিষ্ঠানের নাম ক্লিনিক টু অ্যান্ড টেক অ্যাবিউজ (সিইটিএ)।
সিইটিএ সরাসরি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কাজ করে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণাকে একীভূত করে কাজ করে। এমন সংকট থেকে মুক্তি পেতে ভুক্তভোগীদের নানা ধরনের পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
সিইটিএর সঙ্গে কাজ করেন রোসানা বেলিনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ফোন থেকে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ আমরা দিই না। তার আগে কিছু নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে নেওয়া হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণেই এমনটা করা হয়। দেখা গেছে, হুট করেই এ ধরনের কোনো সফটওয়্যার অপসারণ করা হলে নিপীড়ক সহিংস হয়ে ওঠে। তারা তখন নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই এ ক্ষেত্রেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।’

এমন তো হয়ই যে কেউ কাউকে এড়াতে চাইছে, কিন্তু কোনোভাবেই পারছে না। যেখানেই যায়, ছায়া হয়ে অনুসরণ করে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি। থানা-পুলিশ করেও অনেক সময় সুফল পাওয়া যায় না। আগে হয়তো কাজটি করা হতো কোনো ব্যক্তিকে অনুসরণের দায়িত্ব দিয়ে। এখন সেই জমানা নেই। প্রযুক্তিই এখন এই অনুসরণকারীর দায়িত্ব নিয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে স্টকারওয়্যার। সাদা বাংলায় বললে নজরদারি সফটওয়্যার। আপনাকেও এমন কোনো সফটওয়্যার অনুসরণ করছে না তো? চিনবেন কীভাবে?
নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। বলা অবান্তর, এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তুর কোনো সম্মতি নেওয়া হয় না।
এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ তো বটেই, অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথিও হাতিয়ে নেওয়া যায়। এমনকি ফোনে আড়ি পাতাও সম্ভব।
প্রযুক্তির এই যুগে এমন নজরদারি এক ভয়াবহ সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছেন ইভা গালপেরিন নামের এক নারী। ওই বছর তিনি কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট স্টকারওয়্যার (সিএএস) নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইভা গালপেরিন ধর্ষণের শিকার এমন কিছু নারীর ভোগান্তি সম্পর্কিত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছিলেন, যাঁরা দিনের পর দিন নিপীড়কের হাত থেকে বাঁচার শত চেষ্টা করেও পারছিলেন না। সেই নিপীড়কেরা তাঁদের ছায়ার মতো অনুসরণ করছিল। এ জন্য তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছিল।
এ বিষয়ে ইভা গালপেরিন বিবিসিকে বলেন, যখন কেউ আপনার অজ্ঞাতে ফোনে প্রবেশ করবে, তখন এর অপব্যবহারের মাত্রা হয় ভয়াবহ রকমের। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ব্যক্তিগত ছবির কথা। এসব ক্ষেত্রে সবার আগে ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নেয় নিপীড়কেরা। এরপর শুরু হয় এসব ছবি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি। পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর একটি বড় অংশের ক্ষেত্রেই এ ধরনের সফটওয়্যারের ব্যবহার দেখা গেছে।
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান নর্টন ল্যাবের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্টকারওয়্যারের ব্যবহার বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা বিশ্বেই এই সংকট ক্রমবর্ধমান। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৩ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে করোনাকালে বিভিন্ন বিধিনিষেধে মানুষের ঘরে বেশি সময় কাটানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারণ এই সময়ে ঘরে থাকা সঙ্গীর ব্যক্তিগত ডিভাইস হাতের কাছেই পাওয়া গেছে।
বিবিসি জানায়, গত দুই বছর ইভা গালপেরিন বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এ ধরনের সফটওয়্যারকে অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানিগুলোর আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই উদাসীন ভাব দেখিয়ে আসছে। তারা স্টকারওয়্যারকে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রাম বা ম্যালওয়্যার হিসেবে দেখতে রাজি নয়, যেহেতু এর বৈধ ব্যবহারও রয়েছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে গুগল অবশেষে বেশ কিছু অ্যাপের বিজ্ঞাপন তাদের সাইট থেকে সরিয়ে নেয়, যেগুলো সঙ্গীর ফোনে নজর রাখার বিষয়ে ওকালতি করে আসছিল। মূলত অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের চলাফেরা এবং সাইবার জগতে তাদের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখার জন্য অভিভাবকদের মধ্যে স্টকারওয়্যারের একরকম চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত এখানে শেষ হয় না। এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নিপীড়কেরাই, যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয় নারীরা।
এমনই একটি অ্যাপ হচ্ছে স্পাইফোন, যা গত সেপ্টেম্বরে নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। এ ধরনের কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ বিভিন্ন সময়ে নেওয়া হলেও এখনো অনলাইনে এমন বহু স্টকারওয়্যার অ্যাপের খোঁজ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এগুলো ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে টিউটোরিয়ালও পাওয়া যায় সহজেই।
ইভা গালপেরিনের ভাষ্যমতে, এখন এফটিসি সেই সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করছে, যারা এ ধরনের অ্যাপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত। তিনি এই প্রযুক্তিকে ‘ভীষণ শক্তিশালী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
নানা মোড়কে থাকতে পারে
দেখতে হয়তো ক্যালকুলেটর অ্যাপের মতো, কিন্তু কাজ করে নজরদারির—এমনও হতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমন একটি উদাহরণ উল্লেখ করে বলা হয়, গুগল অ্যাপ স্টোর থেকেই বিনা মূল্যের একটি কিলগার অ্যাপ নামিয়ে দেখা গেছে, তা ক্যালকুলেটর বা ক্যালেন্ডারের ভেক ধরে থাকছে। আর নামিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ফোনে চাপা প্রতিটি বাটনের খোঁজ রাখছে সে। মূলত এ ধরনের অ্যাপ অভিভাবকেরা সন্তানের ওপর নজর রাখতে ব্যবহার করেন। কিন্তু এগুলো যে কারও ব্যক্তিগত জীবন বিষিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। আগে এ ধরনের অ্যাপের সংখ্যা কয়েক শ হলেও এখন এমন অ্যাপ রয়েছে হাজার হাজার।
এ ধরনের অ্যাপের নাম সাধারণত খুব নিরীহ ধাঁচের হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে ‘মোবাইলটুল’ ‘এজেন্ট’, ‘সারবেরাস’ ইত্যাদি নামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এফটিসি ‘স্পাইফোন’ নামের একটি অ্যাপ বাজারে ছাড়ার দায়ে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাপোর্ট কিংকে নিষিদ্ধ করেছে।
প্রযুক্তিবান্ধব হলেই কি চেনা যাবে?
এই অ্যাপগুলো এমনভাবে তৈরি করা, যাতে এগুলো সহজে শনাক্ত করা না যায়। এমনকি প্রযুক্তিবান্ধব অনেক ব্যক্তির পক্ষেও এগুলোর উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব নয়। এমনই এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। সেখানে তাঁর ছদ্মনাম হিসেবে শার্লট বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
বিবিসিকে শার্লট বলেন, বাগ্দানের পর থেকেই তিনি বেশ কিছু উদ্ভট বিষয় লক্ষ করতে শুরু করেন। ফোনের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হওয়া, ফোন হঠাৎ করেই রিস্ট্রার্ট নেওয়া থেকে শুরু করে নানা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে তাঁর সঙ্গে। এ দুটিই নজরদারি সফটওয়্যারের আওতায় পড়ে যাওয়ার প্রাথমিক ইঙ্গিত। কিন্তু এই ইঙ্গিতও যথেষ্ট ছিল না বিষয়টি বোঝার জন্য। তাঁর সঙ্গীই তাঁকে একসময় জানান, তিনি সব সময় জানতেন শার্লট কখন কোথায় থাকেন।
করণীয় জানতে শার্লট পরে হ্যাকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর সঙ্গীও এমন একটি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। তিনিও এর কিছু ধরনধারণ জানতেন। কিন্তু যখন আলাপ করলেন, দেখলেন সঙ্গীর ওপর নজর রাখার বিষয়ে সম্মতি প্রদানের একটি ভয়াবহ সংস্কৃতি রয়েছে। এটি কোনো অপরাধই যেন নয়। এটি তাঁকে ভীষণভাবে আহত করে। এ থেকেই তিনি সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার আগ্রহ পান, যেন এই খাতকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে কাজ করা যায়।
কীভাবে শুরু হয়?
ইন্টারনেট ঘাঁটলে এমন বহু সফটওয়্যার-সেবার খোঁজ পাওয়া যাবে, যা শুধু ফোন নম্বর পেলেই লক্ষ্যবস্তুর ওপর নজরদারি শুরু করতে পারে বলে দাবি করে। এ জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কয়েক শ ডলার মাত্র ব্যয় করতে হয়। এসব সেবাদাতা এমন সব দাবি করে, যে ধরনের নজরদারির সক্ষমতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে রয়েছে। পেগাসাসের কল্যাণে এই সক্ষমতার মাত্রা নিয়ে কারও অন্তত সন্দেহ থাকার কথা নয়। যদিও এগুলো ঠিকঠাক কাজ করে কি না, এ নিয়ে সংশয়ও রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।
শার্লটের ভাষ্যমতে, এ ধরনের নজরদারি সফটওয়্যার সাধারণত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক সময় কিছু মেসেজ পাঠিয়ে কোনো একটি লিংকে ক্লিক করতে বলা হয় অথবা নানা ধরনের চটকদার অ্যাপের মাধ্যমেও এটি ঘটতে পারে। এমন কিছু শনাক্ত করা মাত্রই তা ডিলিট করার পরামর্শ দেন তিনি। শার্লট বলেন, ‘যত ধরনের সতর্কতাই দিক না কেন, ডিলিটের ক্ষেত্রে ঘাবড়াবেন না।’
খেয়াল রাখুন
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে—
১. আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে কি না। স্টকারওয়্যার আপনার অজান্তে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বলেই হয়তো এমনটা হচ্ছে।
২. ডিভাইসটি বিশ্বস্ত স্টকারওয়্যার ডিটেক্টর দিয়ে স্ক্যান করুন। এ ক্ষেত্রে ম্যালওয়্যারবাইটস, সারটো, নর্টনলাইফলক, লুকআউট সহায়ক হতে পারে।
৩. ডিভাইসে থাকা প্রতিটি অ্যাপ লক্ষ করুন। এমন কিছু কি আছে, যা আপনি ইনস্টল করেননি। সন্দেহজনক মনে হলে ডিলিটের আগে ভেবে নিন। এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় অভিযোগ জানাতে চাইলে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
৪. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো চিহ্নিত করুন।
করণীয় কী?
ভুক্তভোগী ও পরে সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক হওয়া শার্লট এ ধরনের সংকটে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেন—
১. প্রথম করণীয় হিসেবে সংশ্লিষ্ট অ্যাপ বা সফটওয়্যারটি ডিলিট করতে হবে।
২. ডিলিটের ক্ষেত্রে তথ্য হারিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে নানা ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হতে পারে। এগুলোতে ঘাবড়ালে চলবে না।
৩. যদি কোনোভাবেই ডিলিট করা না যায়, তবে ডিভাইসটি ফ্যাক্টরি সেটআপ দিতে হবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পাল্টাতে হবে। একই সঙ্গে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করতে হবে।
৫. ঘুরেফিরে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৬. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো বিযুক্ত করুন।
৭. সফটওয়্যার আপডেট করুন। অ্যাপল ও গুগল কিছুদিন পরপরই আপডেট অফার করে। এর মাধ্যমেও এ ধরনের সফটওয়্যারের হাত থেকে মুক্তি মিলতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।
আইনি ব্যবস্থা
এ তো গেল ব্যক্তিগত পর্যায়ে করণীয়। আইনানুগ পথে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
অধিকাংশ দেশেই এখন বিনা সম্মতিতে এ ধরনের নজরদারি রোধে আইন রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বিবিসির প্রতিবেদনে ফ্রান্সের কথা বলা হয়েছে। ২০২০ সালে দেশটি পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন করেছে, যেখানে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে গোপন নজরদারির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কারও সম্মতি ছাড়া তাঁর অবস্থান জানতে নজর রাখলে তাঁকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে সেই আইনে। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এক বছরের জেল ও ৫১ হাজার ডলার জরিমানা হতে পারে। আর এমন কাজ কারও জীবনসঙ্গী করলে এই জরিমানার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
আইনও কি পারবে সমাধান দিতে?
ইভা গালপেরিন অন্তত এ ধরনের বিষয় পুরোপুরি আইনের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি নন। তাঁর দৃষ্টিতে এ ধরনের সংকটের সমাধান শুধু আইন করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তিনি গুগল ও অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি-মোঘলদের সহায়তা চান। তাঁর ভাষ্যমতে, এ দুই প্রতিষ্ঠান চাইলে এ ধরনের অ্যাপের বিক্রি কার্যত অসম্ভব করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে এ ধরনের অভিযোগকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে গেলে তারা একে উড়িয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে এমনকি হাস্যরসও করা হয় বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু ভুক্তভোগীর কাছে এটি ভীষণভাবে পীড়াদায়ক। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এ ধরনের ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে আলাদা সংস্থা গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের করনেল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এমন এক প্রতিষ্ঠানের নাম ক্লিনিক টু অ্যান্ড টেক অ্যাবিউজ (সিইটিএ)।
সিইটিএ সরাসরি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কাজ করে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণাকে একীভূত করে কাজ করে। এমন সংকট থেকে মুক্তি পেতে ভুক্তভোগীদের নানা ধরনের পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
সিইটিএর সঙ্গে কাজ করেন রোসানা বেলিনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ফোন থেকে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ আমরা দিই না। তার আগে কিছু নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে নেওয়া হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণেই এমনটা করা হয়। দেখা গেছে, হুট করেই এ ধরনের কোনো সফটওয়্যার অপসারণ করা হলে নিপীড়ক সহিংস হয়ে ওঠে। তারা তখন নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই এ ক্ষেত্রেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।’
ফজলুল কবির

এমন তো হয়ই যে কেউ কাউকে এড়াতে চাইছে, কিন্তু কোনোভাবেই পারছে না। যেখানেই যায়, ছায়া হয়ে অনুসরণ করে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি। থানা-পুলিশ করেও অনেক সময় সুফল পাওয়া যায় না। আগে হয়তো কাজটি করা হতো কোনো ব্যক্তিকে অনুসরণের দায়িত্ব দিয়ে। এখন সেই জমানা নেই। প্রযুক্তিই এখন এই অনুসরণকারীর দায়িত্ব নিয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে স্টকারওয়্যার। সাদা বাংলায় বললে নজরদারি সফটওয়্যার। আপনাকেও এমন কোনো সফটওয়্যার অনুসরণ করছে না তো? চিনবেন কীভাবে?
নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। বলা অবান্তর, এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তুর কোনো সম্মতি নেওয়া হয় না।
এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ তো বটেই, অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথিও হাতিয়ে নেওয়া যায়। এমনকি ফোনে আড়ি পাতাও সম্ভব।
প্রযুক্তির এই যুগে এমন নজরদারি এক ভয়াবহ সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছেন ইভা গালপেরিন নামের এক নারী। ওই বছর তিনি কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট স্টকারওয়্যার (সিএএস) নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইভা গালপেরিন ধর্ষণের শিকার এমন কিছু নারীর ভোগান্তি সম্পর্কিত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছিলেন, যাঁরা দিনের পর দিন নিপীড়কের হাত থেকে বাঁচার শত চেষ্টা করেও পারছিলেন না। সেই নিপীড়কেরা তাঁদের ছায়ার মতো অনুসরণ করছিল। এ জন্য তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছিল।
এ বিষয়ে ইভা গালপেরিন বিবিসিকে বলেন, যখন কেউ আপনার অজ্ঞাতে ফোনে প্রবেশ করবে, তখন এর অপব্যবহারের মাত্রা হয় ভয়াবহ রকমের। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ব্যক্তিগত ছবির কথা। এসব ক্ষেত্রে সবার আগে ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নেয় নিপীড়কেরা। এরপর শুরু হয় এসব ছবি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি। পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর একটি বড় অংশের ক্ষেত্রেই এ ধরনের সফটওয়্যারের ব্যবহার দেখা গেছে।
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান নর্টন ল্যাবের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্টকারওয়্যারের ব্যবহার বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা বিশ্বেই এই সংকট ক্রমবর্ধমান। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৩ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে করোনাকালে বিভিন্ন বিধিনিষেধে মানুষের ঘরে বেশি সময় কাটানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারণ এই সময়ে ঘরে থাকা সঙ্গীর ব্যক্তিগত ডিভাইস হাতের কাছেই পাওয়া গেছে।
বিবিসি জানায়, গত দুই বছর ইভা গালপেরিন বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এ ধরনের সফটওয়্যারকে অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানিগুলোর আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই উদাসীন ভাব দেখিয়ে আসছে। তারা স্টকারওয়্যারকে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রাম বা ম্যালওয়্যার হিসেবে দেখতে রাজি নয়, যেহেতু এর বৈধ ব্যবহারও রয়েছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে গুগল অবশেষে বেশ কিছু অ্যাপের বিজ্ঞাপন তাদের সাইট থেকে সরিয়ে নেয়, যেগুলো সঙ্গীর ফোনে নজর রাখার বিষয়ে ওকালতি করে আসছিল। মূলত অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের চলাফেরা এবং সাইবার জগতে তাদের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখার জন্য অভিভাবকদের মধ্যে স্টকারওয়্যারের একরকম চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত এখানে শেষ হয় না। এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নিপীড়কেরাই, যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয় নারীরা।
এমনই একটি অ্যাপ হচ্ছে স্পাইফোন, যা গত সেপ্টেম্বরে নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। এ ধরনের কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ বিভিন্ন সময়ে নেওয়া হলেও এখনো অনলাইনে এমন বহু স্টকারওয়্যার অ্যাপের খোঁজ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এগুলো ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে টিউটোরিয়ালও পাওয়া যায় সহজেই।
ইভা গালপেরিনের ভাষ্যমতে, এখন এফটিসি সেই সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করছে, যারা এ ধরনের অ্যাপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত। তিনি এই প্রযুক্তিকে ‘ভীষণ শক্তিশালী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
নানা মোড়কে থাকতে পারে
দেখতে হয়তো ক্যালকুলেটর অ্যাপের মতো, কিন্তু কাজ করে নজরদারির—এমনও হতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমন একটি উদাহরণ উল্লেখ করে বলা হয়, গুগল অ্যাপ স্টোর থেকেই বিনা মূল্যের একটি কিলগার অ্যাপ নামিয়ে দেখা গেছে, তা ক্যালকুলেটর বা ক্যালেন্ডারের ভেক ধরে থাকছে। আর নামিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ফোনে চাপা প্রতিটি বাটনের খোঁজ রাখছে সে। মূলত এ ধরনের অ্যাপ অভিভাবকেরা সন্তানের ওপর নজর রাখতে ব্যবহার করেন। কিন্তু এগুলো যে কারও ব্যক্তিগত জীবন বিষিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। আগে এ ধরনের অ্যাপের সংখ্যা কয়েক শ হলেও এখন এমন অ্যাপ রয়েছে হাজার হাজার।
এ ধরনের অ্যাপের নাম সাধারণত খুব নিরীহ ধাঁচের হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে ‘মোবাইলটুল’ ‘এজেন্ট’, ‘সারবেরাস’ ইত্যাদি নামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এফটিসি ‘স্পাইফোন’ নামের একটি অ্যাপ বাজারে ছাড়ার দায়ে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাপোর্ট কিংকে নিষিদ্ধ করেছে।
প্রযুক্তিবান্ধব হলেই কি চেনা যাবে?
এই অ্যাপগুলো এমনভাবে তৈরি করা, যাতে এগুলো সহজে শনাক্ত করা না যায়। এমনকি প্রযুক্তিবান্ধব অনেক ব্যক্তির পক্ষেও এগুলোর উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব নয়। এমনই এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। সেখানে তাঁর ছদ্মনাম হিসেবে শার্লট বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
বিবিসিকে শার্লট বলেন, বাগ্দানের পর থেকেই তিনি বেশ কিছু উদ্ভট বিষয় লক্ষ করতে শুরু করেন। ফোনের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হওয়া, ফোন হঠাৎ করেই রিস্ট্রার্ট নেওয়া থেকে শুরু করে নানা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে তাঁর সঙ্গে। এ দুটিই নজরদারি সফটওয়্যারের আওতায় পড়ে যাওয়ার প্রাথমিক ইঙ্গিত। কিন্তু এই ইঙ্গিতও যথেষ্ট ছিল না বিষয়টি বোঝার জন্য। তাঁর সঙ্গীই তাঁকে একসময় জানান, তিনি সব সময় জানতেন শার্লট কখন কোথায় থাকেন।
করণীয় জানতে শার্লট পরে হ্যাকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর সঙ্গীও এমন একটি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। তিনিও এর কিছু ধরনধারণ জানতেন। কিন্তু যখন আলাপ করলেন, দেখলেন সঙ্গীর ওপর নজর রাখার বিষয়ে সম্মতি প্রদানের একটি ভয়াবহ সংস্কৃতি রয়েছে। এটি কোনো অপরাধই যেন নয়। এটি তাঁকে ভীষণভাবে আহত করে। এ থেকেই তিনি সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার আগ্রহ পান, যেন এই খাতকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে কাজ করা যায়।
কীভাবে শুরু হয়?
ইন্টারনেট ঘাঁটলে এমন বহু সফটওয়্যার-সেবার খোঁজ পাওয়া যাবে, যা শুধু ফোন নম্বর পেলেই লক্ষ্যবস্তুর ওপর নজরদারি শুরু করতে পারে বলে দাবি করে। এ জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কয়েক শ ডলার মাত্র ব্যয় করতে হয়। এসব সেবাদাতা এমন সব দাবি করে, যে ধরনের নজরদারির সক্ষমতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে রয়েছে। পেগাসাসের কল্যাণে এই সক্ষমতার মাত্রা নিয়ে কারও অন্তত সন্দেহ থাকার কথা নয়। যদিও এগুলো ঠিকঠাক কাজ করে কি না, এ নিয়ে সংশয়ও রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।
শার্লটের ভাষ্যমতে, এ ধরনের নজরদারি সফটওয়্যার সাধারণত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক সময় কিছু মেসেজ পাঠিয়ে কোনো একটি লিংকে ক্লিক করতে বলা হয় অথবা নানা ধরনের চটকদার অ্যাপের মাধ্যমেও এটি ঘটতে পারে। এমন কিছু শনাক্ত করা মাত্রই তা ডিলিট করার পরামর্শ দেন তিনি। শার্লট বলেন, ‘যত ধরনের সতর্কতাই দিক না কেন, ডিলিটের ক্ষেত্রে ঘাবড়াবেন না।’
খেয়াল রাখুন
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে—
১. আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে কি না। স্টকারওয়্যার আপনার অজান্তে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বলেই হয়তো এমনটা হচ্ছে।
২. ডিভাইসটি বিশ্বস্ত স্টকারওয়্যার ডিটেক্টর দিয়ে স্ক্যান করুন। এ ক্ষেত্রে ম্যালওয়্যারবাইটস, সারটো, নর্টনলাইফলক, লুকআউট সহায়ক হতে পারে।
৩. ডিভাইসে থাকা প্রতিটি অ্যাপ লক্ষ করুন। এমন কিছু কি আছে, যা আপনি ইনস্টল করেননি। সন্দেহজনক মনে হলে ডিলিটের আগে ভেবে নিন। এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় অভিযোগ জানাতে চাইলে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
৪. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো চিহ্নিত করুন।
করণীয় কী?
ভুক্তভোগী ও পরে সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক হওয়া শার্লট এ ধরনের সংকটে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেন—
১. প্রথম করণীয় হিসেবে সংশ্লিষ্ট অ্যাপ বা সফটওয়্যারটি ডিলিট করতে হবে।
২. ডিলিটের ক্ষেত্রে তথ্য হারিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে নানা ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হতে পারে। এগুলোতে ঘাবড়ালে চলবে না।
৩. যদি কোনোভাবেই ডিলিট করা না যায়, তবে ডিভাইসটি ফ্যাক্টরি সেটআপ দিতে হবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পাল্টাতে হবে। একই সঙ্গে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করতে হবে।
৫. ঘুরেফিরে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৬. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো বিযুক্ত করুন।
৭. সফটওয়্যার আপডেট করুন। অ্যাপল ও গুগল কিছুদিন পরপরই আপডেট অফার করে। এর মাধ্যমেও এ ধরনের সফটওয়্যারের হাত থেকে মুক্তি মিলতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।
আইনি ব্যবস্থা
এ তো গেল ব্যক্তিগত পর্যায়ে করণীয়। আইনানুগ পথে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
অধিকাংশ দেশেই এখন বিনা সম্মতিতে এ ধরনের নজরদারি রোধে আইন রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বিবিসির প্রতিবেদনে ফ্রান্সের কথা বলা হয়েছে। ২০২০ সালে দেশটি পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন করেছে, যেখানে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে গোপন নজরদারির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কারও সম্মতি ছাড়া তাঁর অবস্থান জানতে নজর রাখলে তাঁকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে সেই আইনে। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এক বছরের জেল ও ৫১ হাজার ডলার জরিমানা হতে পারে। আর এমন কাজ কারও জীবনসঙ্গী করলে এই জরিমানার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
আইনও কি পারবে সমাধান দিতে?
ইভা গালপেরিন অন্তত এ ধরনের বিষয় পুরোপুরি আইনের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি নন। তাঁর দৃষ্টিতে এ ধরনের সংকটের সমাধান শুধু আইন করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তিনি গুগল ও অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি-মোঘলদের সহায়তা চান। তাঁর ভাষ্যমতে, এ দুই প্রতিষ্ঠান চাইলে এ ধরনের অ্যাপের বিক্রি কার্যত অসম্ভব করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে এ ধরনের অভিযোগকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে গেলে তারা একে উড়িয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে এমনকি হাস্যরসও করা হয় বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু ভুক্তভোগীর কাছে এটি ভীষণভাবে পীড়াদায়ক। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এ ধরনের ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে আলাদা সংস্থা গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের করনেল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এমন এক প্রতিষ্ঠানের নাম ক্লিনিক টু অ্যান্ড টেক অ্যাবিউজ (সিইটিএ)।
সিইটিএ সরাসরি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কাজ করে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণাকে একীভূত করে কাজ করে। এমন সংকট থেকে মুক্তি পেতে ভুক্তভোগীদের নানা ধরনের পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
সিইটিএর সঙ্গে কাজ করেন রোসানা বেলিনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ফোন থেকে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ আমরা দিই না। তার আগে কিছু নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে নেওয়া হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণেই এমনটা করা হয়। দেখা গেছে, হুট করেই এ ধরনের কোনো সফটওয়্যার অপসারণ করা হলে নিপীড়ক সহিংস হয়ে ওঠে। তারা তখন নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই এ ক্ষেত্রেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।’

এমন তো হয়ই যে কেউ কাউকে এড়াতে চাইছে, কিন্তু কোনোভাবেই পারছে না। যেখানেই যায়, ছায়া হয়ে অনুসরণ করে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি। থানা-পুলিশ করেও অনেক সময় সুফল পাওয়া যায় না। আগে হয়তো কাজটি করা হতো কোনো ব্যক্তিকে অনুসরণের দায়িত্ব দিয়ে। এখন সেই জমানা নেই। প্রযুক্তিই এখন এই অনুসরণকারীর দায়িত্ব নিয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে স্টকারওয়্যার। সাদা বাংলায় বললে নজরদারি সফটওয়্যার। আপনাকেও এমন কোনো সফটওয়্যার অনুসরণ করছে না তো? চিনবেন কীভাবে?
নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। বলা অবান্তর, এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তুর কোনো সম্মতি নেওয়া হয় না।
এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ তো বটেই, অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথিও হাতিয়ে নেওয়া যায়। এমনকি ফোনে আড়ি পাতাও সম্ভব।
প্রযুক্তির এই যুগে এমন নজরদারি এক ভয়াবহ সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছেন ইভা গালপেরিন নামের এক নারী। ওই বছর তিনি কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট স্টকারওয়্যার (সিএএস) নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইভা গালপেরিন ধর্ষণের শিকার এমন কিছু নারীর ভোগান্তি সম্পর্কিত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছিলেন, যাঁরা দিনের পর দিন নিপীড়কের হাত থেকে বাঁচার শত চেষ্টা করেও পারছিলেন না। সেই নিপীড়কেরা তাঁদের ছায়ার মতো অনুসরণ করছিল। এ জন্য তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছিল।
এ বিষয়ে ইভা গালপেরিন বিবিসিকে বলেন, যখন কেউ আপনার অজ্ঞাতে ফোনে প্রবেশ করবে, তখন এর অপব্যবহারের মাত্রা হয় ভয়াবহ রকমের। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ব্যক্তিগত ছবির কথা। এসব ক্ষেত্রে সবার আগে ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নেয় নিপীড়কেরা। এরপর শুরু হয় এসব ছবি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি। পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর একটি বড় অংশের ক্ষেত্রেই এ ধরনের সফটওয়্যারের ব্যবহার দেখা গেছে।
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান নর্টন ল্যাবের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্টকারওয়্যারের ব্যবহার বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা বিশ্বেই এই সংকট ক্রমবর্ধমান। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৩ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে করোনাকালে বিভিন্ন বিধিনিষেধে মানুষের ঘরে বেশি সময় কাটানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারণ এই সময়ে ঘরে থাকা সঙ্গীর ব্যক্তিগত ডিভাইস হাতের কাছেই পাওয়া গেছে।
বিবিসি জানায়, গত দুই বছর ইভা গালপেরিন বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এ ধরনের সফটওয়্যারকে অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানিগুলোর আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই উদাসীন ভাব দেখিয়ে আসছে। তারা স্টকারওয়্যারকে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রাম বা ম্যালওয়্যার হিসেবে দেখতে রাজি নয়, যেহেতু এর বৈধ ব্যবহারও রয়েছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে গুগল অবশেষে বেশ কিছু অ্যাপের বিজ্ঞাপন তাদের সাইট থেকে সরিয়ে নেয়, যেগুলো সঙ্গীর ফোনে নজর রাখার বিষয়ে ওকালতি করে আসছিল। মূলত অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের চলাফেরা এবং সাইবার জগতে তাদের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখার জন্য অভিভাবকদের মধ্যে স্টকারওয়্যারের একরকম চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত এখানে শেষ হয় না। এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নিপীড়কেরাই, যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয় নারীরা।
এমনই একটি অ্যাপ হচ্ছে স্পাইফোন, যা গত সেপ্টেম্বরে নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। এ ধরনের কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ বিভিন্ন সময়ে নেওয়া হলেও এখনো অনলাইনে এমন বহু স্টকারওয়্যার অ্যাপের খোঁজ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এগুলো ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে টিউটোরিয়ালও পাওয়া যায় সহজেই।
ইভা গালপেরিনের ভাষ্যমতে, এখন এফটিসি সেই সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করছে, যারা এ ধরনের অ্যাপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত। তিনি এই প্রযুক্তিকে ‘ভীষণ শক্তিশালী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
নানা মোড়কে থাকতে পারে
দেখতে হয়তো ক্যালকুলেটর অ্যাপের মতো, কিন্তু কাজ করে নজরদারির—এমনও হতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমন একটি উদাহরণ উল্লেখ করে বলা হয়, গুগল অ্যাপ স্টোর থেকেই বিনা মূল্যের একটি কিলগার অ্যাপ নামিয়ে দেখা গেছে, তা ক্যালকুলেটর বা ক্যালেন্ডারের ভেক ধরে থাকছে। আর নামিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ফোনে চাপা প্রতিটি বাটনের খোঁজ রাখছে সে। মূলত এ ধরনের অ্যাপ অভিভাবকেরা সন্তানের ওপর নজর রাখতে ব্যবহার করেন। কিন্তু এগুলো যে কারও ব্যক্তিগত জীবন বিষিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। আগে এ ধরনের অ্যাপের সংখ্যা কয়েক শ হলেও এখন এমন অ্যাপ রয়েছে হাজার হাজার।
এ ধরনের অ্যাপের নাম সাধারণত খুব নিরীহ ধাঁচের হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে ‘মোবাইলটুল’ ‘এজেন্ট’, ‘সারবেরাস’ ইত্যাদি নামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এফটিসি ‘স্পাইফোন’ নামের একটি অ্যাপ বাজারে ছাড়ার দায়ে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাপোর্ট কিংকে নিষিদ্ধ করেছে।
প্রযুক্তিবান্ধব হলেই কি চেনা যাবে?
এই অ্যাপগুলো এমনভাবে তৈরি করা, যাতে এগুলো সহজে শনাক্ত করা না যায়। এমনকি প্রযুক্তিবান্ধব অনেক ব্যক্তির পক্ষেও এগুলোর উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব নয়। এমনই এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। সেখানে তাঁর ছদ্মনাম হিসেবে শার্লট বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
বিবিসিকে শার্লট বলেন, বাগ্দানের পর থেকেই তিনি বেশ কিছু উদ্ভট বিষয় লক্ষ করতে শুরু করেন। ফোনের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হওয়া, ফোন হঠাৎ করেই রিস্ট্রার্ট নেওয়া থেকে শুরু করে নানা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে তাঁর সঙ্গে। এ দুটিই নজরদারি সফটওয়্যারের আওতায় পড়ে যাওয়ার প্রাথমিক ইঙ্গিত। কিন্তু এই ইঙ্গিতও যথেষ্ট ছিল না বিষয়টি বোঝার জন্য। তাঁর সঙ্গীই তাঁকে একসময় জানান, তিনি সব সময় জানতেন শার্লট কখন কোথায় থাকেন।
করণীয় জানতে শার্লট পরে হ্যাকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর সঙ্গীও এমন একটি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। তিনিও এর কিছু ধরনধারণ জানতেন। কিন্তু যখন আলাপ করলেন, দেখলেন সঙ্গীর ওপর নজর রাখার বিষয়ে সম্মতি প্রদানের একটি ভয়াবহ সংস্কৃতি রয়েছে। এটি কোনো অপরাধই যেন নয়। এটি তাঁকে ভীষণভাবে আহত করে। এ থেকেই তিনি সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার আগ্রহ পান, যেন এই খাতকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে কাজ করা যায়।
কীভাবে শুরু হয়?
ইন্টারনেট ঘাঁটলে এমন বহু সফটওয়্যার-সেবার খোঁজ পাওয়া যাবে, যা শুধু ফোন নম্বর পেলেই লক্ষ্যবস্তুর ওপর নজরদারি শুরু করতে পারে বলে দাবি করে। এ জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কয়েক শ ডলার মাত্র ব্যয় করতে হয়। এসব সেবাদাতা এমন সব দাবি করে, যে ধরনের নজরদারির সক্ষমতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে রয়েছে। পেগাসাসের কল্যাণে এই সক্ষমতার মাত্রা নিয়ে কারও অন্তত সন্দেহ থাকার কথা নয়। যদিও এগুলো ঠিকঠাক কাজ করে কি না, এ নিয়ে সংশয়ও রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।
শার্লটের ভাষ্যমতে, এ ধরনের নজরদারি সফটওয়্যার সাধারণত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক সময় কিছু মেসেজ পাঠিয়ে কোনো একটি লিংকে ক্লিক করতে বলা হয় অথবা নানা ধরনের চটকদার অ্যাপের মাধ্যমেও এটি ঘটতে পারে। এমন কিছু শনাক্ত করা মাত্রই তা ডিলিট করার পরামর্শ দেন তিনি। শার্লট বলেন, ‘যত ধরনের সতর্কতাই দিক না কেন, ডিলিটের ক্ষেত্রে ঘাবড়াবেন না।’
খেয়াল রাখুন
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে—
১. আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে কি না। স্টকারওয়্যার আপনার অজান্তে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বলেই হয়তো এমনটা হচ্ছে।
২. ডিভাইসটি বিশ্বস্ত স্টকারওয়্যার ডিটেক্টর দিয়ে স্ক্যান করুন। এ ক্ষেত্রে ম্যালওয়্যারবাইটস, সারটো, নর্টনলাইফলক, লুকআউট সহায়ক হতে পারে।
৩. ডিভাইসে থাকা প্রতিটি অ্যাপ লক্ষ করুন। এমন কিছু কি আছে, যা আপনি ইনস্টল করেননি। সন্দেহজনক মনে হলে ডিলিটের আগে ভেবে নিন। এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় অভিযোগ জানাতে চাইলে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
৪. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো চিহ্নিত করুন।
করণীয় কী?
ভুক্তভোগী ও পরে সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক হওয়া শার্লট এ ধরনের সংকটে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেন—
১. প্রথম করণীয় হিসেবে সংশ্লিষ্ট অ্যাপ বা সফটওয়্যারটি ডিলিট করতে হবে।
২. ডিলিটের ক্ষেত্রে তথ্য হারিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে নানা ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হতে পারে। এগুলোতে ঘাবড়ালে চলবে না।
৩. যদি কোনোভাবেই ডিলিট করা না যায়, তবে ডিভাইসটি ফ্যাক্টরি সেটআপ দিতে হবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পাল্টাতে হবে। একই সঙ্গে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করতে হবে।
৫. ঘুরেফিরে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৬. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো বিযুক্ত করুন।
৭. সফটওয়্যার আপডেট করুন। অ্যাপল ও গুগল কিছুদিন পরপরই আপডেট অফার করে। এর মাধ্যমেও এ ধরনের সফটওয়্যারের হাত থেকে মুক্তি মিলতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।
আইনি ব্যবস্থা
এ তো গেল ব্যক্তিগত পর্যায়ে করণীয়। আইনানুগ পথে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
অধিকাংশ দেশেই এখন বিনা সম্মতিতে এ ধরনের নজরদারি রোধে আইন রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বিবিসির প্রতিবেদনে ফ্রান্সের কথা বলা হয়েছে। ২০২০ সালে দেশটি পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন করেছে, যেখানে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে গোপন নজরদারির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কারও সম্মতি ছাড়া তাঁর অবস্থান জানতে নজর রাখলে তাঁকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে সেই আইনে। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এক বছরের জেল ও ৫১ হাজার ডলার জরিমানা হতে পারে। আর এমন কাজ কারও জীবনসঙ্গী করলে এই জরিমানার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
আইনও কি পারবে সমাধান দিতে?
ইভা গালপেরিন অন্তত এ ধরনের বিষয় পুরোপুরি আইনের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি নন। তাঁর দৃষ্টিতে এ ধরনের সংকটের সমাধান শুধু আইন করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তিনি গুগল ও অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি-মোঘলদের সহায়তা চান। তাঁর ভাষ্যমতে, এ দুই প্রতিষ্ঠান চাইলে এ ধরনের অ্যাপের বিক্রি কার্যত অসম্ভব করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে এ ধরনের অভিযোগকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে গেলে তারা একে উড়িয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে এমনকি হাস্যরসও করা হয় বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু ভুক্তভোগীর কাছে এটি ভীষণভাবে পীড়াদায়ক। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এ ধরনের ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে আলাদা সংস্থা গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের করনেল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এমন এক প্রতিষ্ঠানের নাম ক্লিনিক টু অ্যান্ড টেক অ্যাবিউজ (সিইটিএ)।
সিইটিএ সরাসরি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কাজ করে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণাকে একীভূত করে কাজ করে। এমন সংকট থেকে মুক্তি পেতে ভুক্তভোগীদের নানা ধরনের পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
সিইটিএর সঙ্গে কাজ করেন রোসানা বেলিনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ফোন থেকে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ আমরা দিই না। তার আগে কিছু নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে নেওয়া হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণেই এমনটা করা হয়। দেখা গেছে, হুট করেই এ ধরনের কোনো সফটওয়্যার অপসারণ করা হলে নিপীড়ক সহিংস হয়ে ওঠে। তারা তখন নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই এ ক্ষেত্রেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।’

আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে।
২ দিন আগে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতাল
৩ দিন আগে
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

আফ্রিকা মহাদেশে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার এবং চলমান সংঘাতকে উসকে দেওয়ার এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর বিরুদ্ধে। সোমালিয়ার পুনটল্যান্ড রাজ্যের বোসাসো বিমানবন্দরকে একটি গোপন ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহার করে আমিরাত সুদানের বিতর্কিত আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। সরবরাহ করা হচ্ছে কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা।
মিডল ইস্ট আই-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা, স্যাটেলাইট চিত্র, স্থানীয় সূত্র এবং মার্কিন ও আঞ্চলিক কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে। আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।

ভারী কার্গো বিমানের রহস্যময় যাতায়াত
বোসাসো বিমানবন্দরে আজকাল ভারী কার্গো পরিবহনকারী আইএফ-৭৬ বিমানের ঘন ঘন অবতরণ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অস্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এখন নিয়মিত ঘটনা। পুনটল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্সের (পিএমপিএফ) একজন কমান্ডার (আবদুল্লাহি) মিডল ইস্ট মনিটরকে জানিয়েছেন, এই বিমানগুলো ঘন ঘন আসে এবং এগুলোর মাধ্যমে আসা সামরিক সরঞ্জাম ও রসদ দ্রুত অপেক্ষমাণ অন্য বিমানে তুলে সুদানে আরএসএফ-এর জন্য পাঠানো হয়।
সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিমানগুলোর উৎস হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিমানবন্দর ব্যবহারের সময়সূচি ঘন ঘন পরিবর্তন করা হয় এবং বিমানগুলো সাধারণত বিমানবন্দরের কর্মচাঞ্চল্য কম থাকার সময় বোসাসোতে পৌঁছায়। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, এই চালানগুলোর মধ্যে চীনা-নির্মিত ড্রোনসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।
বোসাসো বন্দরের একজন সিনিয়র ম্যানেজার প্রথমবারের মতো মিডল ইস্ট আই-কে নিশ্চিত করেছেন, গত দুই বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি ‘বিপজ্জনক’ চিহ্নিত কন্টেইনার আমিরাত বোসাসো বন্দরের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। সাধারণ কার্গোর বিপরীতে, এই আমিরাতি চালানগুলোতে ভেতরের মালপত্র বা গন্তব্যের কোনো বিস্তারিত বিবরণ নথিভুক্ত করা হয় না। বন্দরে একটি জাহাজ ভিড়লে পিএমপিএফ বাহিনীকে মোতায়েন করে এলাকা ঘিরে ফেলা হয় এবং ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে।
কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনাদের গোপন নেটওয়ার্ক
বোসাসো বিমানবন্দরের উত্তর দিকে একটি সামরিক স্থাপনা রয়েছে, এটি কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনাদের আশ্রয়স্থল। মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা ছবিতে দেখা গেছে, ব্যাকপ্যাক বহনকারী ডজন ডজন কলম্বিয়ান বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি সামরিক ক্যাম্পে যাচ্ছে। পিএমপিএফ কমান্ডার আব্দুল্লাহি নিশ্চিত করেছেন, এই এলাকায় বিপুলসংখ্যক কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনা আরএসএফ-এর পক্ষে সুদানে যুদ্ধ পরিচালনার কাজ করছে।
এই ভাড়াটে সেনারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইটে বোসাসোতে আসে এবং এরপর প্রায় প্রতিদিনই ট্রানজিট হয়ে সুদানে পাড়ি জমায়। এই ভাড়াটে সেনারা তাদের ক্যাম্পের ভেতরে একটি নতুন হাসপাতালও নির্মাণ করেছে। সেখানে সুদানে আহত হওয়া আরএসএফ সৈন্যদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আব্দুল্লাহি রক্তমাখা বিমান দেখার কথা স্মরণ করে বলেন, এই ক্যাম্প আহত আরএসএফ যোদ্ধাদের জন্য একটি চিকিৎসা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

বোসাসো বিমানবন্দরকে সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সেখানে একটি ফরাসি-নির্মিত সামরিক রাডার সিস্টেমও স্থাপন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২৩ সালেই ঘোষণা করেছিল, আরএসএফ এবং তাদের সহযোগী মিলিশিয়ারা সুদানে ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আরএসএফ-কে সোমালিয়ার মাটি ব্যবহার করে সাহায্য করার বিষয়টি স্থানীয় পিএমপিএফ সৈন্যদের মধ্যে তীব্র নৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। অনেক সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, দীর্ঘদিনের মিত্র সুদানের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ভাড়াটে সেনাদের সহায়তা করা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
হর্ন অব আফ্রিকার সংঘাত বিশেষজ্ঞ মার্টিন প্লট সতর্ক করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সুদানের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত করছে এবং পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এই অপরাধে সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত হতে পারে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে গৃহযুদ্ধে সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে সমর্থন করার অভিযোগে সুদান সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। খার্তুম অভিযোগ করে, আরব আমিরাত পশ্চিম দারফুরে মাসালিত সম্প্রদায়ের ‘গণহত্যায় জড়িত’, তারা আরএসএফকে সামরিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে এ অপরাধ সংঘটিত করছে।
যদিও ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, আরএসএফ এবং সুদানি সেনাবাহিনী উভয়ের বিরুদ্ধেই নৃশংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মোগাদিসুর নীরবতা ও আমিরাতের কৌশলগত ঘাঁটি
সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার মোগাদিসুর আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ করলেও, তাদের বোসাসোর বন্দর ও বিমানবন্দরের ওপর কোনো কর্তৃত্ব নেই। বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার (প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ-এর নেতৃত্বাধীন) আমিরাতের ক্রমবর্ধমান ও প্রসারমান প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রস্তুত না থাকায় সামরিক কার্যক্রমে প্রকাশ্যে বাধা দিতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমিরাতের এই কার্যকলাপের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সুদানের স্বর্ণখনি দখল এবং লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার। আমিরাত এই অঞ্চলে মায়ুন, আবদ আল-কুরি, সামহা, সোমালিল্যান্ডের বেরবেরা এবং ইয়েমেনের মোচা বন্দরে ঘাঁটি নির্মাণ বা সম্প্রসারণের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
প্লট আরও বলেন, পুনটল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান এবং নজরদারির অভাব এটিকে আমিরাতের জন্য আদর্শ অপারেশনাল ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। কারণ এখানে তাদের কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না।
আমিরাত সরকার একাধিকবার আরএসএফকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও, এ বিষয়ে মির বা পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কেউই কখনো গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

আফ্রিকা মহাদেশে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার এবং চলমান সংঘাতকে উসকে দেওয়ার এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর বিরুদ্ধে। সোমালিয়ার পুনটল্যান্ড রাজ্যের বোসাসো বিমানবন্দরকে একটি গোপন ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহার করে আমিরাত সুদানের বিতর্কিত আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। সরবরাহ করা হচ্ছে কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা।
মিডল ইস্ট আই-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা, স্যাটেলাইট চিত্র, স্থানীয় সূত্র এবং মার্কিন ও আঞ্চলিক কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে। আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।

ভারী কার্গো বিমানের রহস্যময় যাতায়াত
বোসাসো বিমানবন্দরে আজকাল ভারী কার্গো পরিবহনকারী আইএফ-৭৬ বিমানের ঘন ঘন অবতরণ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অস্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এখন নিয়মিত ঘটনা। পুনটল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্সের (পিএমপিএফ) একজন কমান্ডার (আবদুল্লাহি) মিডল ইস্ট মনিটরকে জানিয়েছেন, এই বিমানগুলো ঘন ঘন আসে এবং এগুলোর মাধ্যমে আসা সামরিক সরঞ্জাম ও রসদ দ্রুত অপেক্ষমাণ অন্য বিমানে তুলে সুদানে আরএসএফ-এর জন্য পাঠানো হয়।
সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিমানগুলোর উৎস হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিমানবন্দর ব্যবহারের সময়সূচি ঘন ঘন পরিবর্তন করা হয় এবং বিমানগুলো সাধারণত বিমানবন্দরের কর্মচাঞ্চল্য কম থাকার সময় বোসাসোতে পৌঁছায়। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, এই চালানগুলোর মধ্যে চীনা-নির্মিত ড্রোনসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।
বোসাসো বন্দরের একজন সিনিয়র ম্যানেজার প্রথমবারের মতো মিডল ইস্ট আই-কে নিশ্চিত করেছেন, গত দুই বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি ‘বিপজ্জনক’ চিহ্নিত কন্টেইনার আমিরাত বোসাসো বন্দরের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। সাধারণ কার্গোর বিপরীতে, এই আমিরাতি চালানগুলোতে ভেতরের মালপত্র বা গন্তব্যের কোনো বিস্তারিত বিবরণ নথিভুক্ত করা হয় না। বন্দরে একটি জাহাজ ভিড়লে পিএমপিএফ বাহিনীকে মোতায়েন করে এলাকা ঘিরে ফেলা হয় এবং ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে।
কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনাদের গোপন নেটওয়ার্ক
বোসাসো বিমানবন্দরের উত্তর দিকে একটি সামরিক স্থাপনা রয়েছে, এটি কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনাদের আশ্রয়স্থল। মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা ছবিতে দেখা গেছে, ব্যাকপ্যাক বহনকারী ডজন ডজন কলম্বিয়ান বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি সামরিক ক্যাম্পে যাচ্ছে। পিএমপিএফ কমান্ডার আব্দুল্লাহি নিশ্চিত করেছেন, এই এলাকায় বিপুলসংখ্যক কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনা আরএসএফ-এর পক্ষে সুদানে যুদ্ধ পরিচালনার কাজ করছে।
এই ভাড়াটে সেনারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইটে বোসাসোতে আসে এবং এরপর প্রায় প্রতিদিনই ট্রানজিট হয়ে সুদানে পাড়ি জমায়। এই ভাড়াটে সেনারা তাদের ক্যাম্পের ভেতরে একটি নতুন হাসপাতালও নির্মাণ করেছে। সেখানে সুদানে আহত হওয়া আরএসএফ সৈন্যদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আব্দুল্লাহি রক্তমাখা বিমান দেখার কথা স্মরণ করে বলেন, এই ক্যাম্প আহত আরএসএফ যোদ্ধাদের জন্য একটি চিকিৎসা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

বোসাসো বিমানবন্দরকে সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সেখানে একটি ফরাসি-নির্মিত সামরিক রাডার সিস্টেমও স্থাপন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২৩ সালেই ঘোষণা করেছিল, আরএসএফ এবং তাদের সহযোগী মিলিশিয়ারা সুদানে ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আরএসএফ-কে সোমালিয়ার মাটি ব্যবহার করে সাহায্য করার বিষয়টি স্থানীয় পিএমপিএফ সৈন্যদের মধ্যে তীব্র নৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। অনেক সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, দীর্ঘদিনের মিত্র সুদানের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ভাড়াটে সেনাদের সহায়তা করা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
হর্ন অব আফ্রিকার সংঘাত বিশেষজ্ঞ মার্টিন প্লট সতর্ক করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সুদানের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত করছে এবং পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এই অপরাধে সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত হতে পারে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে গৃহযুদ্ধে সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে সমর্থন করার অভিযোগে সুদান সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। খার্তুম অভিযোগ করে, আরব আমিরাত পশ্চিম দারফুরে মাসালিত সম্প্রদায়ের ‘গণহত্যায় জড়িত’, তারা আরএসএফকে সামরিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে এ অপরাধ সংঘটিত করছে।
যদিও ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, আরএসএফ এবং সুদানি সেনাবাহিনী উভয়ের বিরুদ্ধেই নৃশংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মোগাদিসুর নীরবতা ও আমিরাতের কৌশলগত ঘাঁটি
সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার মোগাদিসুর আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ করলেও, তাদের বোসাসোর বন্দর ও বিমানবন্দরের ওপর কোনো কর্তৃত্ব নেই। বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার (প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ-এর নেতৃত্বাধীন) আমিরাতের ক্রমবর্ধমান ও প্রসারমান প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রস্তুত না থাকায় সামরিক কার্যক্রমে প্রকাশ্যে বাধা দিতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমিরাতের এই কার্যকলাপের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সুদানের স্বর্ণখনি দখল এবং লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার। আমিরাত এই অঞ্চলে মায়ুন, আবদ আল-কুরি, সামহা, সোমালিল্যান্ডের বেরবেরা এবং ইয়েমেনের মোচা বন্দরে ঘাঁটি নির্মাণ বা সম্প্রসারণের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
প্লট আরও বলেন, পুনটল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান এবং নজরদারির অভাব এটিকে আমিরাতের জন্য আদর্শ অপারেশনাল ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। কারণ এখানে তাদের কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না।
আমিরাত সরকার একাধিকবার আরএসএফকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও, এ বিষয়ে মির বা পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কেউই কখনো গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। এটি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ, তার অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি হাত
০৪ ডিসেম্বর ২০২১
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে।
২ দিন আগে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতাল
৩ দিন আগে
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
৩ দিন আগেদ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রতিবেদন
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে। তাঁদের মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে তিনি আবার দাবি করেছেন, অন্তত ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ ভেনেজুয়েলান নাগরিক এরই মধ্যে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন।
২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের আগে যেমন সাদ্দাম হোসেন তাঁর ফেদাইন বাহিনী গঠন করেছিলেন, তেমনই এবার মাদুরোও আগেভাগে তাঁর মিলিশিয়াদের প্রস্তুত করছেন। তবে সাদ্দামের তুলনায় মাদুরোর বাহিনীর সদস্যসংখ্যা অনেক বেশি।
তবে সিবিএস নিউজ বলছে, মাদুরোর দাবি অতিরঞ্জিত। আসলে সক্রিয় মিলিশিয়া সদস্যসংখ্যা ৩ লাখ ৪৩ হাজারের মতো, যা সাদ্দামের অনানুষ্ঠানিক বাহিনীর চেয়ে বেশি হলেও মাদুরোর ঘোষণার তুলনায় অনেক কম।
কারাকাস জানে, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য শুধু মাদকবিরোধী অভিযান নয়, মার্কিন আক্রমণ হলে সেটি আসলে পূর্ণাঙ্গ শাসন পরিবর্তনের জন্যই হবে। এ কারণেই মাদুরো এখন রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। মস্কো ভেনেজুয়েলাকে বিপুল অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে, এমনকি ওয়াগনার গ্রুপের প্রায় ২০০ ভাড়াটে সেনা দেশটিতে পাঠানো হয়েছে।

এখানে প্রশ্ন উঠেছে, এই বলিভারিয়ান মিলিশিয়ারা আদৌ মার্কিন বাহিনীর জন্য হুমকি কি না। আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণে সমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হলে তাদের টিকতে পারা কঠিন। তবে গেরিলা ধাঁচের যুদ্ধ, জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা মিলিশিয়া বাহিনী এবং ভূপ্রকৃতি মার্কিন অভিযানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অনেক ভেনেজুয়েলান অবশ্য যুদ্ধের আহ্বানে সাড়া দিতে অনাগ্রহী। ফলে মাদুরোর ‘অস্ত্র ধারণের ডাক’ কতটা বাস্তবে রূপ পাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি সহজ নয়, শাসক পরিবর্তন করতে গেলে দেশ মেরামতের দায়ভারও নিতে হবে। তাই ইরাকের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ট্রাম্পের লক্ষ্য পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি মনরো নীতির পুনরুত্থান চান, অর্থাৎ পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নিশ্চিত করা। তাঁর মতে, চীন, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই ওয়াশিংটনের বড় মাথাব্যথা।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, মাদুরো সরকারের পতনের পর ভেনেজুয়েলা যদি চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।
ভেনেজুয়েলার জঙ্গলে যুদ্ধ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হবে। দেশটির সেনারা মূলত মরুভূমি বা ইউরোপীয় বনাঞ্চলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু বলিভিয়ার ভূপ্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই অভিযান হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব অভিজ্ঞতা দেবে, তবে তা কতটা সফল হবে, তা এখনই বলা কঠিন।
বেশির ভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সহজে মাদুরোর বাহিনীকে পরাজিত করতে পারবে; কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী গেরিলা বিদ্রোহই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—ফলে পরিস্থিতি ইরাকের মতো হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, মাদুরোর ‘যুদ্ধের আহ্বান’ জনগণের মধ্যে খুব একটা সাড়া জাগায়নি।
যাহোক, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য স্পষ্ট, আমেরিকার প্রভাব পুনরুদ্ধার করা। তবে পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এ পথে হেঁটে সত্যিই কি পশ্চিম গোলার্ধে স্থিতিশীলতা আসবে, নাকি আরও এক ‘লাতিন লিবিয়া’ তৈরি হবে?

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে। তাঁদের মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে তিনি আবার দাবি করেছেন, অন্তত ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ ভেনেজুয়েলান নাগরিক এরই মধ্যে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন।
২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের আগে যেমন সাদ্দাম হোসেন তাঁর ফেদাইন বাহিনী গঠন করেছিলেন, তেমনই এবার মাদুরোও আগেভাগে তাঁর মিলিশিয়াদের প্রস্তুত করছেন। তবে সাদ্দামের তুলনায় মাদুরোর বাহিনীর সদস্যসংখ্যা অনেক বেশি।
তবে সিবিএস নিউজ বলছে, মাদুরোর দাবি অতিরঞ্জিত। আসলে সক্রিয় মিলিশিয়া সদস্যসংখ্যা ৩ লাখ ৪৩ হাজারের মতো, যা সাদ্দামের অনানুষ্ঠানিক বাহিনীর চেয়ে বেশি হলেও মাদুরোর ঘোষণার তুলনায় অনেক কম।
কারাকাস জানে, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য শুধু মাদকবিরোধী অভিযান নয়, মার্কিন আক্রমণ হলে সেটি আসলে পূর্ণাঙ্গ শাসন পরিবর্তনের জন্যই হবে। এ কারণেই মাদুরো এখন রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। মস্কো ভেনেজুয়েলাকে বিপুল অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে, এমনকি ওয়াগনার গ্রুপের প্রায় ২০০ ভাড়াটে সেনা দেশটিতে পাঠানো হয়েছে।

এখানে প্রশ্ন উঠেছে, এই বলিভারিয়ান মিলিশিয়ারা আদৌ মার্কিন বাহিনীর জন্য হুমকি কি না। আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণে সমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হলে তাদের টিকতে পারা কঠিন। তবে গেরিলা ধাঁচের যুদ্ধ, জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা মিলিশিয়া বাহিনী এবং ভূপ্রকৃতি মার্কিন অভিযানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অনেক ভেনেজুয়েলান অবশ্য যুদ্ধের আহ্বানে সাড়া দিতে অনাগ্রহী। ফলে মাদুরোর ‘অস্ত্র ধারণের ডাক’ কতটা বাস্তবে রূপ পাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি সহজ নয়, শাসক পরিবর্তন করতে গেলে দেশ মেরামতের দায়ভারও নিতে হবে। তাই ইরাকের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ট্রাম্পের লক্ষ্য পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি মনরো নীতির পুনরুত্থান চান, অর্থাৎ পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নিশ্চিত করা। তাঁর মতে, চীন, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই ওয়াশিংটনের বড় মাথাব্যথা।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, মাদুরো সরকারের পতনের পর ভেনেজুয়েলা যদি চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।
ভেনেজুয়েলার জঙ্গলে যুদ্ধ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হবে। দেশটির সেনারা মূলত মরুভূমি বা ইউরোপীয় বনাঞ্চলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু বলিভিয়ার ভূপ্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই অভিযান হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব অভিজ্ঞতা দেবে, তবে তা কতটা সফল হবে, তা এখনই বলা কঠিন।
বেশির ভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সহজে মাদুরোর বাহিনীকে পরাজিত করতে পারবে; কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী গেরিলা বিদ্রোহই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—ফলে পরিস্থিতি ইরাকের মতো হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, মাদুরোর ‘যুদ্ধের আহ্বান’ জনগণের মধ্যে খুব একটা সাড়া জাগায়নি।
যাহোক, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য স্পষ্ট, আমেরিকার প্রভাব পুনরুদ্ধার করা। তবে পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এ পথে হেঁটে সত্যিই কি পশ্চিম গোলার্ধে স্থিতিশীলতা আসবে, নাকি আরও এক ‘লাতিন লিবিয়া’ তৈরি হবে?

নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। এটি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ, তার অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি হাত
০৪ ডিসেম্বর ২০২১
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
২ দিন আগে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতাল
৩ দিন আগে
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতালে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে আমাদের যুদ্ধ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া খুব শিগগির শুরু হয়ে যাবে।’
বিশ্বে বেশ কয়েকটি দেশ আছে পারমাণবিক শক্তিধর। এই দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘নিউক্লিয়ার ক্লাবের’ সদস্য বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা স্পষ্ট নয়। এসব দেশ নিয়মিতভাবে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে থাকে। তবে ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে এখন পর্যন্ত একমাত্র উত্তর কোরিয়াই প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, সেটাও হয়েছে ২০১৭ সালে।
হোয়াইট হাউস এখনো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তাই এটি স্পষ্ট নয় যে, তিনি ‘পারমাণবিক পরীক্ষা’ বলতে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন, নাকি অস্ত্রগুলোরই ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণ পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন। ট্রাম্প পরে বলেছেন, পারমাণবিক পরীক্ষার স্থান পরে নির্ধারণ করা হবে।
বিবিসি এই বিষয়ে ছয়জন নীতি বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের বেশির ভাগই বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা এখনকার উত্তেজনাপূর্ণ সময়কে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে। তাদের মতে, বিশ্ব এমন এক অবস্থার দিকে এগোচ্ছে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু না হলেও, আশঙ্কা প্রবল। তবে এক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্পের বক্তব্য বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছে করে প্রতিযোগিতা উসকে দিচ্ছে না।’ তবে সবাই একমত যে, বিশ্বে পারমাণবিক ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
মার্কিন থিংক ট্যাংক কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের নিউক্লিয়ার পলিসি প্রোগ্রামের ফেলো জেমি কুয়াং বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে উত্তর কোরিয়া ছাড়া পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো আসল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। তাই এখন কেউ যদি শুরু করে, সেটি অন্যদেরও উসকে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন হয়তো নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতার দ্বারপ্রান্তে।’
লন্ডনভিত্তিক প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো দারিয়া দলজিকোভা বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্যে পরিস্থিতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন না। তবে তাঁর মতে, ‘বিশ্বজুড়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যা পারমাণবিক সংঘাত ও অস্ত্র বিস্তারের ঝুঁকি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় নিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের বার্তা বিশাল এক সমস্যার সমুদ্রে এক ফোঁটা মাত্র, কিন্তু সমুদ্রটা এরই মধ্যে উপচে পড়ার উপক্রম।’
বিশেষজ্ঞরা উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংঘাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাধিকবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। তা ছাড়া, ভারত-পাকিস্তানের এ বছরের সংঘাত, কিংবা ইসরায়েলের ইরান হামলার ঘটনা বৈশ্বিক অস্থিরতা বাড়িয়েছে। যদিও ইসরায়েল কখনো প্রকাশ্যে তার পারমাণবিক অস্ত্রের কথা স্বীকার করেনি। পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার অভিযোগ করে আসছে। তবে তেহরান তা বারবার অস্বীকার করেছে।
কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা ও তাইওয়ান নিয়ে চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান শেষ পারমাণবিক অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তিটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে।
ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে বলেছেন—যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি। তবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) হালনাগাদ তথ্য এর সঙ্গে মেলে না। সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে ৫ হাজার ৪৫৯টি। এর পরেই যুক্তরাষ্ট্র, যার ওয়ারহেড ৫ হাজার ১৭৭টি। চীন অনেক পিছিয়ে, তাদের রয়েছে ৬০০টি ওয়ারহেড। অন্য গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্যও প্রায় একই।
সম্প্রতি রাশিয়া জানিয়েছে, তারা নতুন পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। ক্রেমলিন দাবি করেছে, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। এ ছাড়া, তাদের এমন এক ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা পানির নিচ দিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার এই ঘোষণাই ট্রাম্পের বক্তব্যের কারণ হতে পারে। যদিও রাশিয়া বলেছে, এসব পরীক্ষা ‘পারমাণবিক নয়।’ অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর গভীর নজর রাখছে।
তাদের আশঙ্কা, চীনও দ্রুত ‘সমমানের পারমাণবিক শক্তি’ অর্জনের পথে। এতে তৈরি হচ্ছে ‘দুই-প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক ঝুঁকি।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করে, তাহলে রাশিয়া ও চীনও একই পথে যেতে পারে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, ‘কেউ যদি পরীক্ষার নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে, রাশিয়া তার জবাব দেবে।’ চীন জানিয়েছে, তারা আশা করে যুক্তরাষ্ট্র ‘কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট–ব্যান ট্রিটি’র প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশই চুক্তিতে সই করেছে, কিন্তু অনুমোদন দেয়নি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবলের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, তা হবে ‘আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ইতিহাসে ভয়াবহ ভুল।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি ক্রমেই বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যদি নতুন চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে তিন দিক থেকে—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন—এক বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে।’
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের পারমাণবিক তথ্য প্রকল্পের পরিচালক হান্স ক্রিস্টেনসেন বলেন, গত পাঁচ বছরে প্রথমবারের মতো ওয়ারহেড সংখ্যা বেড়েছে—শীতল যুদ্ধের পর এমনটা হয়নি। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষেরও উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, ” বলেন তিনি।’
যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল ১৯৯২ সালে, নেভাদায়। কিমবলের মতে, সেই কেন্দ্র আবার চালু করতে কমপক্ষে ৩৬ মাস লাগবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র কম্পিউটার সিমুলেশন ও অন্যান্য অ-বিস্ফোরক পদ্ধতিতে অস্ত্র পরীক্ষা করে। তাই নতুন বিস্ফোরণমূলক পরীক্ষার বাস্তব প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিষয়ে কুয়াং বলেন, ভূগর্ভস্থ পরীক্ষাতেও ঝুঁকি থাকে—বিকিরণ যেন মাটির ওপর বা ভূগর্ভস্থ পানিতে ছড়ায় না, তা নিশ্চিত করতে হয়।
ট্রাম্পের এমন ঘোষণার পেছনে রাশিয়া ও চীনকে দায়ী করে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের গবেষক রবার্ট পিটার্স বলেন, বৈজ্ঞানিক কারণ না থাকলেও, ‘রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য’ এমন পরীক্ষা দরকার হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘বিশ্বাসযোগ্যতা দেখাতে কোনো প্রেসিডেন্টের—ট্রাম্প, বা অন্য যে কেউ—পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো প্রয়োজন হতে পারে।’ তাঁর মতে, ‘এটি অযৌক্তিক অবস্থান নয়।’
তবে অনেক বিশেষজ্ঞই এতে একমত নন। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রিস ক্রিলি বলেন, ‘নতুন এক পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা যদি ইতিমধ্যেই শুরু না হয়ে থাকে, তবে আমরা তার একদম দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিনই আমি এই আশঙ্কায় থাকি যে, যেকোনো সময় পৃথিবী আবার পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে ১৯৪৫ সালের জুলাইয়ে, নিউ মেক্সিকোর আলমাগোর্ডো মরুভূমিতে। তারপর আগস্টে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, যা মানব ইতিহাসে এখনো একমাত্র পারমাণবিক হামলা।
বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতালে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে আমাদের যুদ্ধ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া খুব শিগগির শুরু হয়ে যাবে।’
বিশ্বে বেশ কয়েকটি দেশ আছে পারমাণবিক শক্তিধর। এই দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘নিউক্লিয়ার ক্লাবের’ সদস্য বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা স্পষ্ট নয়। এসব দেশ নিয়মিতভাবে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে থাকে। তবে ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে এখন পর্যন্ত একমাত্র উত্তর কোরিয়াই প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, সেটাও হয়েছে ২০১৭ সালে।
হোয়াইট হাউস এখনো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তাই এটি স্পষ্ট নয় যে, তিনি ‘পারমাণবিক পরীক্ষা’ বলতে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন, নাকি অস্ত্রগুলোরই ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণ পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন। ট্রাম্প পরে বলেছেন, পারমাণবিক পরীক্ষার স্থান পরে নির্ধারণ করা হবে।
বিবিসি এই বিষয়ে ছয়জন নীতি বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের বেশির ভাগই বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা এখনকার উত্তেজনাপূর্ণ সময়কে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে। তাদের মতে, বিশ্ব এমন এক অবস্থার দিকে এগোচ্ছে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু না হলেও, আশঙ্কা প্রবল। তবে এক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্পের বক্তব্য বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছে করে প্রতিযোগিতা উসকে দিচ্ছে না।’ তবে সবাই একমত যে, বিশ্বে পারমাণবিক ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
মার্কিন থিংক ট্যাংক কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের নিউক্লিয়ার পলিসি প্রোগ্রামের ফেলো জেমি কুয়াং বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে উত্তর কোরিয়া ছাড়া পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো আসল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। তাই এখন কেউ যদি শুরু করে, সেটি অন্যদেরও উসকে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন হয়তো নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতার দ্বারপ্রান্তে।’
লন্ডনভিত্তিক প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো দারিয়া দলজিকোভা বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্যে পরিস্থিতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন না। তবে তাঁর মতে, ‘বিশ্বজুড়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যা পারমাণবিক সংঘাত ও অস্ত্র বিস্তারের ঝুঁকি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় নিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের বার্তা বিশাল এক সমস্যার সমুদ্রে এক ফোঁটা মাত্র, কিন্তু সমুদ্রটা এরই মধ্যে উপচে পড়ার উপক্রম।’
বিশেষজ্ঞরা উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংঘাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাধিকবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। তা ছাড়া, ভারত-পাকিস্তানের এ বছরের সংঘাত, কিংবা ইসরায়েলের ইরান হামলার ঘটনা বৈশ্বিক অস্থিরতা বাড়িয়েছে। যদিও ইসরায়েল কখনো প্রকাশ্যে তার পারমাণবিক অস্ত্রের কথা স্বীকার করেনি। পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার অভিযোগ করে আসছে। তবে তেহরান তা বারবার অস্বীকার করেছে।
কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা ও তাইওয়ান নিয়ে চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান শেষ পারমাণবিক অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তিটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে।
ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে বলেছেন—যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি। তবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) হালনাগাদ তথ্য এর সঙ্গে মেলে না। সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে ৫ হাজার ৪৫৯টি। এর পরেই যুক্তরাষ্ট্র, যার ওয়ারহেড ৫ হাজার ১৭৭টি। চীন অনেক পিছিয়ে, তাদের রয়েছে ৬০০টি ওয়ারহেড। অন্য গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্যও প্রায় একই।
সম্প্রতি রাশিয়া জানিয়েছে, তারা নতুন পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। ক্রেমলিন দাবি করেছে, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। এ ছাড়া, তাদের এমন এক ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা পানির নিচ দিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার এই ঘোষণাই ট্রাম্পের বক্তব্যের কারণ হতে পারে। যদিও রাশিয়া বলেছে, এসব পরীক্ষা ‘পারমাণবিক নয়।’ অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর গভীর নজর রাখছে।
তাদের আশঙ্কা, চীনও দ্রুত ‘সমমানের পারমাণবিক শক্তি’ অর্জনের পথে। এতে তৈরি হচ্ছে ‘দুই-প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক ঝুঁকি।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করে, তাহলে রাশিয়া ও চীনও একই পথে যেতে পারে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, ‘কেউ যদি পরীক্ষার নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে, রাশিয়া তার জবাব দেবে।’ চীন জানিয়েছে, তারা আশা করে যুক্তরাষ্ট্র ‘কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট–ব্যান ট্রিটি’র প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশই চুক্তিতে সই করেছে, কিন্তু অনুমোদন দেয়নি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবলের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, তা হবে ‘আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ইতিহাসে ভয়াবহ ভুল।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি ক্রমেই বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যদি নতুন চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে তিন দিক থেকে—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন—এক বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে।’
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের পারমাণবিক তথ্য প্রকল্পের পরিচালক হান্স ক্রিস্টেনসেন বলেন, গত পাঁচ বছরে প্রথমবারের মতো ওয়ারহেড সংখ্যা বেড়েছে—শীতল যুদ্ধের পর এমনটা হয়নি। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষেরও উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, ” বলেন তিনি।’
যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল ১৯৯২ সালে, নেভাদায়। কিমবলের মতে, সেই কেন্দ্র আবার চালু করতে কমপক্ষে ৩৬ মাস লাগবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র কম্পিউটার সিমুলেশন ও অন্যান্য অ-বিস্ফোরক পদ্ধতিতে অস্ত্র পরীক্ষা করে। তাই নতুন বিস্ফোরণমূলক পরীক্ষার বাস্তব প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিষয়ে কুয়াং বলেন, ভূগর্ভস্থ পরীক্ষাতেও ঝুঁকি থাকে—বিকিরণ যেন মাটির ওপর বা ভূগর্ভস্থ পানিতে ছড়ায় না, তা নিশ্চিত করতে হয়।
ট্রাম্পের এমন ঘোষণার পেছনে রাশিয়া ও চীনকে দায়ী করে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের গবেষক রবার্ট পিটার্স বলেন, বৈজ্ঞানিক কারণ না থাকলেও, ‘রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য’ এমন পরীক্ষা দরকার হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘বিশ্বাসযোগ্যতা দেখাতে কোনো প্রেসিডেন্টের—ট্রাম্প, বা অন্য যে কেউ—পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো প্রয়োজন হতে পারে।’ তাঁর মতে, ‘এটি অযৌক্তিক অবস্থান নয়।’
তবে অনেক বিশেষজ্ঞই এতে একমত নন। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রিস ক্রিলি বলেন, ‘নতুন এক পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা যদি ইতিমধ্যেই শুরু না হয়ে থাকে, তবে আমরা তার একদম দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিনই আমি এই আশঙ্কায় থাকি যে, যেকোনো সময় পৃথিবী আবার পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে ১৯৪৫ সালের জুলাইয়ে, নিউ মেক্সিকোর আলমাগোর্ডো মরুভূমিতে। তারপর আগস্টে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, যা মানব ইতিহাসে এখনো একমাত্র পারমাণবিক হামলা।
বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। এটি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ, তার অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি হাত
০৪ ডিসেম্বর ২০২১
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে।
২ দিন আগে
বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কর্মসূচি আবারও শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘অন্য দেশগুলো যেহেতু পরীক্ষায় ব্যস্ত, আমরাও সমানভাবে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করব।’ তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে স্পষ্ট নয়—তিনি সরাসরি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার কথা বলেছেন, নাকি পরমাণু সক্ষম অস্ত্রের মহড়ার কথা বলেছেন।
এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই মস্কোর এক সামরিক হাসপাতালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরেকটি ‘অজেয়’ অস্ত্র পরীক্ষার দাবি করেন। তিনি জানান, রাশিয়া সফলভাবে ‘পোসাইডন’ নামের পরমাণু-চালিত টর্পেডো পরীক্ষায় সফল হয়েছে। ধারণা করা হয়, এই টর্পেডো প্রায় ৯ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে এবং তা কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। পুতিনের ভাষায়, ‘পোসাইডন’ পৃথিবীর যে কোনো আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী।’
তিনি আরও জানান, বহু প্রতীক্ষিত ‘সারমাত’ বা ‘স্যাটান ২’ ক্ষেপণাস্ত্রও শিগগিরই রুশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হতে পারে।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সীমিত রাখার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর তার আগেই দুই দেশই নতুন অস্ত্র প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সপ্তাহখানেক আগে পুতিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাশিয়া সফলভাবে ‘বুরেভেস্টনিক’ নামের পরমাণু-চালিত ক্রুজ মিসাইলের পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছে। এই মিসাইল দীর্ঘ সময় ধরে সাবসনিক গতিতে উড়তে পারে বলে দাবি রুশ সামরিক বাহিনীর। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পরমাণু-চালিত অস্ত্র প্রযুক্তিগতভাবে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ, বাস্তবে ব্যবহারের জন্য এখনো অপ্রস্তুত।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রাশিয়ার এই ‘পারমাণবিক ঝনঝনানি’ মূলত সামরিক নয়, কূটনৈতিক চাপের কৌশল। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ও পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর অবস্থানের কারণে মস্কো চায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তার দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগী হোক।
কিন্তু পুতিনের এই প্রদর্শনের জবাবে ট্রাম্পের নির্দেশ বিশ্বকে নতুন এক অনিশ্চিত পথে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দুই শক্তিধর দেশের এই পাল্টাপাল্টি হুমকি পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে আবারও উসকে দেবে। এর ফলে বিশ্বে শীতল-যুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, যেখানে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বা অসতর্ক কোনো পদক্ষেপ মানবসভ্যতাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে।

বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কর্মসূচি আবারও শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘অন্য দেশগুলো যেহেতু পরীক্ষায় ব্যস্ত, আমরাও সমানভাবে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করব।’ তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে স্পষ্ট নয়—তিনি সরাসরি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার কথা বলেছেন, নাকি পরমাণু সক্ষম অস্ত্রের মহড়ার কথা বলেছেন।
এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই মস্কোর এক সামরিক হাসপাতালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরেকটি ‘অজেয়’ অস্ত্র পরীক্ষার দাবি করেন। তিনি জানান, রাশিয়া সফলভাবে ‘পোসাইডন’ নামের পরমাণু-চালিত টর্পেডো পরীক্ষায় সফল হয়েছে। ধারণা করা হয়, এই টর্পেডো প্রায় ৯ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে এবং তা কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। পুতিনের ভাষায়, ‘পোসাইডন’ পৃথিবীর যে কোনো আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী।’
তিনি আরও জানান, বহু প্রতীক্ষিত ‘সারমাত’ বা ‘স্যাটান ২’ ক্ষেপণাস্ত্রও শিগগিরই রুশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হতে পারে।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সীমিত রাখার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর তার আগেই দুই দেশই নতুন অস্ত্র প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
সপ্তাহখানেক আগে পুতিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাশিয়া সফলভাবে ‘বুরেভেস্টনিক’ নামের পরমাণু-চালিত ক্রুজ মিসাইলের পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছে। এই মিসাইল দীর্ঘ সময় ধরে সাবসনিক গতিতে উড়তে পারে বলে দাবি রুশ সামরিক বাহিনীর। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পরমাণু-চালিত অস্ত্র প্রযুক্তিগতভাবে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ, বাস্তবে ব্যবহারের জন্য এখনো অপ্রস্তুত।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রাশিয়ার এই ‘পারমাণবিক ঝনঝনানি’ মূলত সামরিক নয়, কূটনৈতিক চাপের কৌশল। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ও পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর অবস্থানের কারণে মস্কো চায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তার দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগী হোক।
কিন্তু পুতিনের এই প্রদর্শনের জবাবে ট্রাম্পের নির্দেশ বিশ্বকে নতুন এক অনিশ্চিত পথে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দুই শক্তিধর দেশের এই পাল্টাপাল্টি হুমকি পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে আবারও উসকে দেবে। এর ফলে বিশ্বে শীতল-যুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, যেখানে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বা অসতর্ক কোনো পদক্ষেপ মানবসভ্যতাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে।

নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। এটি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ, তার অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি হাত
০৪ ডিসেম্বর ২০২১
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
২ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে।
২ দিন আগে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতাল
৩ দিন আগে