
৮ জুলাই, ২০২২। জাপানের নারা শহরে এক নির্বাচনী জনসভায় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান শিনজো আবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকাহত হয় পুরো জাপান। রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঘোষণা দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। কিন্তু কয়েক দিন পরই জানা যায়, একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকায় ‘প্রতিশোধ’ নিতে আবেকে হত্যা করেন তেৎসুয়া ইয়ামাগামি নামে এক যুবক। আবের হত্যাকাণ্ড জাপানের ‘পরিচ্ছন্ন’ রাজনীতির এক নতুন দিক উন্মোচন করে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিনজো আবে যে ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত বলে শোনা যাচ্ছে সেটির নাম ইউনিফিকেশন চার্চ। ১৯৫৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সান মিয়াং মুন বিশ্ব শান্তি এবং পুনর্মিলনের লক্ষ্যে খ্রিষ্ট ধর্মের নতুন এক ধারা ‘ইউনিফিকেশন চার্চ’ গঠন করেন। মতাদর্শিক দিক থেকে গোষ্ঠীটি সমাজতন্ত্র-বিরোধী এবং পারিবারিক রক্ষণশীলতায় বিশ্বাসী।
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের রাজনীতিতে এই চার্চ ব্যাপক প্রভাবশালী বলে ধারণা করা হয়। কেউ সেই প্রভাব বলয়ে থাকতে অথবা ভক্তিতে মোটা অঙ্কের চাঁদা দেন। ভক্তদের চাঁদার অর্থে বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে গোষ্ঠীটি।
করোনা মহামারীর সময় এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামাজিক দূরত্বের বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে এক ধর্মগুরুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বিপুল ভক্তের অংশগ্রহণ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তারের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে এই গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ নেতা সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চান।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভক্তদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থের জোরে ১৯৬৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় টঙ্গিল গ্রুপ নামে একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান খোলেন সান মিয়াং মুন। এই কনগ্লোমারেটে রয়েছে—গলফ ও স্কি রিসোর্ট পরিচালনা প্রতিষ্ঠান, প্রতিরক্ষা শিল্প গোষ্ঠী, রাসায়নিক কারখানা, গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসা এবং সংবাদপত্রের মালিকানা। যুক্তরাষ্ট্রেও ইউনিফিকেশন চার্চের বিপুল সম্পত্তি রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক বিনিয়োগ থাকলেও ইউনিফিকেশন চার্চ এখনো ভক্তদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করে। জাপানি সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, কেবল জাপানেই চার্চের অন্তত ১ লাখ সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। যারা জাপানের বর্তমান শাসক দল এবং শিনজো আবের দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি–এলডিপির প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে প্রচারণাসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন। এলডিপির আইনপ্রণেতাদের একটি বড় অংশই ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে জড়িত।
জাপানের সংবাদমাধ্যম আশাহি শিম্বুন চার্চটির সাবেক এক অনুসারীর বরাত দিয়ে বলেছে, তিনি জাপানকে ‘রক্ষা’ করতে আবের মিত্র কোইচি হাগুইদাকে নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তা করেছেন। আরও পাঁচজন ভক্ত নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এলডিপির প্রার্থীদের হয়ে কাজ করার জন্য তাঁদের চার্চ থেকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হতো।
যাই হোক, শিনজো আবের সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের সম্পর্ক ব্যক্তিগত নয় বরং পারিবারিক। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সাল জাপানের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন নবুসুকো কিশি। তিনি সম্পর্কে শিনজো আবের দাদা। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই মুনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাঁর। কিশিই ১৯৬৮ সালে ইউনিফিকেশন চার্চের রাজনৈতিক শাখা ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর ভিক্টরি ওভার কমিউনিজম’ স্থাপনে সাহায্য করেন। সংগঠনটি জাপানে শক্ত ভিত্তি গড়ার পর থেকেই চার্চ অনুসারীদের ‘অর্থনৈতিক শক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে। অনুসারীদের কাছ থেকে সরাসরি চাঁদা কিংবা বিভিন্ন ‘আধ্যাত্মিক বস্তুর’ বিনিময়ে অর্থ সংগ্রহ করত।
অনুসারীদের মাঝে চার্চের এতটাই প্রভাব বিস্তৃত যে, অনেকেই চার্চের জন্য নিজেদের সবটুকু উৎসর্গ করেছেন। সেরকমই একজন তেৎসুয়া ইয়ামাগামির মা। তাঁর এক আত্মীয় আল–জাজিরাকে বলেছেন, ‘তাঁর মা গোষ্ঠীটির একজন নিবেদিতপ্রাণ ভক্ত ছিলেন। তিনি চার্চকে ১০ কোটি জাপানি ইয়েন দান করেছিলেন।’ এই অর্থ তেৎসুয়ার মা পেয়েছিলেন মৃত স্বামীর পেনশন থেকে। স্বামীর পেনশনের টাকা সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য না রেখে প্রায় পুরোটাই দান করায় তেৎসুয়ার উচ্চশিক্ষার পথ চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
এই বঞ্চনা থেকেই ক্ষোভ জন্ম নেয় তেৎসুয়ার মনে। তিনি চার্চের বর্তমান প্রধান হাক জা মুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হাক জা মুন ২০১২ সালে তাঁর স্বামী ও চার্চের প্রতিষ্ঠাতা সুন মিয়াং মুনের মৃত্যুর পর গোষ্ঠীটির প্রধান হন। কোভিড মহামারির কারণে তিনি জাপান সফরে আসতে পারছিলেন না। তাই তাঁকে হত্যাও করতে পারছিলেন না তেৎসুয়া। পরে গোষ্ঠীটিকে পাঠানো শিনজো আবের শুভেচ্ছা বার্তা দেখে পরিকল্পনা বদলান তেৎসুয়া।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেৎসুয়া জাপানি এক ব্লগারের কাছে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন—হাক জা মুনকে হত্যা করা প্রায় ‘অসম্ভব’ এবং আবে কখনোই তাঁর ‘মূল শত্রু’ ছিলেন না।
ইউনিফিকেশন চার্চ তাঁর পরিবারকে ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে তেৎসুয়া আরও লিখেন, আবে ‘চার্চের পক্ষে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি’। ঠিক এ কারণেই তিনি চার্চের সঙ্গে পূর্বের দায় মেটাতে আবেকে হত্যা করবেন।
জাপানে ইউনিফিকেশন চার্চ নিয়ে বেশ সমালোচনা চলছে। গোষ্ঠীটি আদৌ কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নাকি একটি কাল্ট (সংঘ) তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে আবের মৃত্যুর পর গোষ্ঠীটিকে কাল্ট হিসেবেই বিবেচনা করছেন অনেকে।
এই বিষয়ে টোকিওর সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক কোইচি নাকানো আল–জাজিরাকে বলেছেন, ‘ইউনিফিকেশন চার্চকে ধর্মীয় সংঘের চেয়ে জাপানে একটি স্বার্থান্বেষী সম্প্রদায় হিসেবেই বেশি বিবেচনা করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এলডিপি এই কুখ্যাত সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে দেশের জনগণকে খেপিয়ে তুলেছে।’
জনগণ যে ক্ষুব্ধ হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতার ঘোষণা আসার পর। জাপানের জনগণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিরোধিতা করতে থাকেন। যদিও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে জনরোষ সামলাতে বাধ্য হয়ে মন্ত্রিসভায় রদবদল আনতে হয়েছে কিশিদাকে। দলীয় আইনপ্রণেতাদের ওই চার্চের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
চার্চকে দেওয়া অনুদান যারা এখন ফেরত চাচ্ছেন বা এই চক্র থেকে মুক্তি চান তাঁদের আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কিশিদা।
অবশ্য কিশিদার জন্য বিষয়টি সহজ হবে না। কারণ, এলডিপির অভ্যন্তরীণ এক জরিপ থেকে দেখা গেছে, দেশজুড়ে দলটির ৩৭৯ জন আইনপ্রণেতার অর্ধেকেরও বেশি ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে যুক্ত। ৯৭ জন আইনপ্রণেতা চার্চের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দিয়েছেন। ফলে, সংস্কার চালাতে গিয়ে দলেই তাঁর অবস্থান ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
শিনজো আবে হত্যাকাণ্ডের পর দেশটির রাজনীতিতে বিশেষ ধর্মের প্রভাব নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে ইউনিফিকেশন চার্চ জাপানের কোনো রাজনৈতিক দলকে সরাসরি সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে তারা তাদের রাজনৈতিক শাখার সঙ্গে এলডিপির আইনপ্রণেতাদের সংযোগের বিষয়টি স্বীকার করেছে। বলেছে, যেহেতু তাঁরা অভিন্ন মূল্যবোধ লালন করেন তাই এমন সংযোগ অস্বাভাবিক নয়।
বিভিন্ন সূত্র মিলে গেলেও আবের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের জড়িত থাকার বিষয়টি এখনো প্রমাণিত নয়, দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে, গুজব ছাপিয়ে বিষয়টি সত্য হয়ে ওঠাও অস্বাভাবিক কিছু না। এ প্রসঙ্গে জাপানের কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক মাসাকি নাকাসামা বলেন, তাঁর মতে, এলডিপি এবং ইউনিফিকেশন চার্চের যোগসূত্র ‘খুব একটা শক্ত’ নয়। তবে আবের হত্যাকারী তেৎসুয়ার দাবির সূত্রে জাপানের রাজনীতিতে ‘ধর্ম’, বিশেষ করে কাল্টের প্রভাব নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
অধ্যাপক মাসাকি নাকাসামার মতে, আবের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিসৌধ হবে, আলোচনা হবে। কিন্তু সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বিষয়টি ভুলে যাবে। জাপানের রাজনীতিবিদদের রাজনীতির প্রতি নিবেদনের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রক্ষণশীল জাপানি রাজনীতিবিদদের নিবেদিত ধর্মপ্রাণে পরিণত করা সত্যিই কঠিন।’
জাপানের রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব জেঁকে বসা আদৌ সম্ভব কি না তা সময়ই বলে দেবে। তবে জাপানের রাজনীতির অতীত ইতিহাস বলে—নিকট অতীতে দেশটির রাজনীতিতে ধর্মীয় কাল্টের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায়নি। ভবিষ্যতে দেখা যাবে কি না তার উত্তর পাওয়া যাবে এলডিপির সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, থাকলে তার শিকড় কতটা গভীরে তা উদ্ঘাটিত হলে।
তবে, আবের মৃত্যুর সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের জড়িত থাকার আলাপ যে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

৮ জুলাই, ২০২২। জাপানের নারা শহরে এক নির্বাচনী জনসভায় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান শিনজো আবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকাহত হয় পুরো জাপান। রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঘোষণা দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। কিন্তু কয়েক দিন পরই জানা যায়, একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকায় ‘প্রতিশোধ’ নিতে আবেকে হত্যা করেন তেৎসুয়া ইয়ামাগামি নামে এক যুবক। আবের হত্যাকাণ্ড জাপানের ‘পরিচ্ছন্ন’ রাজনীতির এক নতুন দিক উন্মোচন করে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিনজো আবে যে ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত বলে শোনা যাচ্ছে সেটির নাম ইউনিফিকেশন চার্চ। ১৯৫৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সান মিয়াং মুন বিশ্ব শান্তি এবং পুনর্মিলনের লক্ষ্যে খ্রিষ্ট ধর্মের নতুন এক ধারা ‘ইউনিফিকেশন চার্চ’ গঠন করেন। মতাদর্শিক দিক থেকে গোষ্ঠীটি সমাজতন্ত্র-বিরোধী এবং পারিবারিক রক্ষণশীলতায় বিশ্বাসী।
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের রাজনীতিতে এই চার্চ ব্যাপক প্রভাবশালী বলে ধারণা করা হয়। কেউ সেই প্রভাব বলয়ে থাকতে অথবা ভক্তিতে মোটা অঙ্কের চাঁদা দেন। ভক্তদের চাঁদার অর্থে বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে গোষ্ঠীটি।
করোনা মহামারীর সময় এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামাজিক দূরত্বের বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে এক ধর্মগুরুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বিপুল ভক্তের অংশগ্রহণ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তারের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে এই গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ নেতা সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চান।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভক্তদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থের জোরে ১৯৬৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় টঙ্গিল গ্রুপ নামে একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান খোলেন সান মিয়াং মুন। এই কনগ্লোমারেটে রয়েছে—গলফ ও স্কি রিসোর্ট পরিচালনা প্রতিষ্ঠান, প্রতিরক্ষা শিল্প গোষ্ঠী, রাসায়নিক কারখানা, গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসা এবং সংবাদপত্রের মালিকানা। যুক্তরাষ্ট্রেও ইউনিফিকেশন চার্চের বিপুল সম্পত্তি রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক বিনিয়োগ থাকলেও ইউনিফিকেশন চার্চ এখনো ভক্তদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করে। জাপানি সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, কেবল জাপানেই চার্চের অন্তত ১ লাখ সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। যারা জাপানের বর্তমান শাসক দল এবং শিনজো আবের দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি–এলডিপির প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে প্রচারণাসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন। এলডিপির আইনপ্রণেতাদের একটি বড় অংশই ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে জড়িত।
জাপানের সংবাদমাধ্যম আশাহি শিম্বুন চার্চটির সাবেক এক অনুসারীর বরাত দিয়ে বলেছে, তিনি জাপানকে ‘রক্ষা’ করতে আবের মিত্র কোইচি হাগুইদাকে নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তা করেছেন। আরও পাঁচজন ভক্ত নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এলডিপির প্রার্থীদের হয়ে কাজ করার জন্য তাঁদের চার্চ থেকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হতো।
যাই হোক, শিনজো আবের সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের সম্পর্ক ব্যক্তিগত নয় বরং পারিবারিক। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সাল জাপানের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন নবুসুকো কিশি। তিনি সম্পর্কে শিনজো আবের দাদা। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই মুনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাঁর। কিশিই ১৯৬৮ সালে ইউনিফিকেশন চার্চের রাজনৈতিক শাখা ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর ভিক্টরি ওভার কমিউনিজম’ স্থাপনে সাহায্য করেন। সংগঠনটি জাপানে শক্ত ভিত্তি গড়ার পর থেকেই চার্চ অনুসারীদের ‘অর্থনৈতিক শক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে। অনুসারীদের কাছ থেকে সরাসরি চাঁদা কিংবা বিভিন্ন ‘আধ্যাত্মিক বস্তুর’ বিনিময়ে অর্থ সংগ্রহ করত।
অনুসারীদের মাঝে চার্চের এতটাই প্রভাব বিস্তৃত যে, অনেকেই চার্চের জন্য নিজেদের সবটুকু উৎসর্গ করেছেন। সেরকমই একজন তেৎসুয়া ইয়ামাগামির মা। তাঁর এক আত্মীয় আল–জাজিরাকে বলেছেন, ‘তাঁর মা গোষ্ঠীটির একজন নিবেদিতপ্রাণ ভক্ত ছিলেন। তিনি চার্চকে ১০ কোটি জাপানি ইয়েন দান করেছিলেন।’ এই অর্থ তেৎসুয়ার মা পেয়েছিলেন মৃত স্বামীর পেনশন থেকে। স্বামীর পেনশনের টাকা সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য না রেখে প্রায় পুরোটাই দান করায় তেৎসুয়ার উচ্চশিক্ষার পথ চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
এই বঞ্চনা থেকেই ক্ষোভ জন্ম নেয় তেৎসুয়ার মনে। তিনি চার্চের বর্তমান প্রধান হাক জা মুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হাক জা মুন ২০১২ সালে তাঁর স্বামী ও চার্চের প্রতিষ্ঠাতা সুন মিয়াং মুনের মৃত্যুর পর গোষ্ঠীটির প্রধান হন। কোভিড মহামারির কারণে তিনি জাপান সফরে আসতে পারছিলেন না। তাই তাঁকে হত্যাও করতে পারছিলেন না তেৎসুয়া। পরে গোষ্ঠীটিকে পাঠানো শিনজো আবের শুভেচ্ছা বার্তা দেখে পরিকল্পনা বদলান তেৎসুয়া।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেৎসুয়া জাপানি এক ব্লগারের কাছে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন—হাক জা মুনকে হত্যা করা প্রায় ‘অসম্ভব’ এবং আবে কখনোই তাঁর ‘মূল শত্রু’ ছিলেন না।
ইউনিফিকেশন চার্চ তাঁর পরিবারকে ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে তেৎসুয়া আরও লিখেন, আবে ‘চার্চের পক্ষে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি’। ঠিক এ কারণেই তিনি চার্চের সঙ্গে পূর্বের দায় মেটাতে আবেকে হত্যা করবেন।
জাপানে ইউনিফিকেশন চার্চ নিয়ে বেশ সমালোচনা চলছে। গোষ্ঠীটি আদৌ কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নাকি একটি কাল্ট (সংঘ) তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে আবের মৃত্যুর পর গোষ্ঠীটিকে কাল্ট হিসেবেই বিবেচনা করছেন অনেকে।
এই বিষয়ে টোকিওর সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক কোইচি নাকানো আল–জাজিরাকে বলেছেন, ‘ইউনিফিকেশন চার্চকে ধর্মীয় সংঘের চেয়ে জাপানে একটি স্বার্থান্বেষী সম্প্রদায় হিসেবেই বেশি বিবেচনা করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এলডিপি এই কুখ্যাত সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে দেশের জনগণকে খেপিয়ে তুলেছে।’
জনগণ যে ক্ষুব্ধ হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতার ঘোষণা আসার পর। জাপানের জনগণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিরোধিতা করতে থাকেন। যদিও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে জনরোষ সামলাতে বাধ্য হয়ে মন্ত্রিসভায় রদবদল আনতে হয়েছে কিশিদাকে। দলীয় আইনপ্রণেতাদের ওই চার্চের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
চার্চকে দেওয়া অনুদান যারা এখন ফেরত চাচ্ছেন বা এই চক্র থেকে মুক্তি চান তাঁদের আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কিশিদা।
অবশ্য কিশিদার জন্য বিষয়টি সহজ হবে না। কারণ, এলডিপির অভ্যন্তরীণ এক জরিপ থেকে দেখা গেছে, দেশজুড়ে দলটির ৩৭৯ জন আইনপ্রণেতার অর্ধেকেরও বেশি ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে যুক্ত। ৯৭ জন আইনপ্রণেতা চার্চের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দিয়েছেন। ফলে, সংস্কার চালাতে গিয়ে দলেই তাঁর অবস্থান ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
শিনজো আবে হত্যাকাণ্ডের পর দেশটির রাজনীতিতে বিশেষ ধর্মের প্রভাব নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে ইউনিফিকেশন চার্চ জাপানের কোনো রাজনৈতিক দলকে সরাসরি সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে তারা তাদের রাজনৈতিক শাখার সঙ্গে এলডিপির আইনপ্রণেতাদের সংযোগের বিষয়টি স্বীকার করেছে। বলেছে, যেহেতু তাঁরা অভিন্ন মূল্যবোধ লালন করেন তাই এমন সংযোগ অস্বাভাবিক নয়।
বিভিন্ন সূত্র মিলে গেলেও আবের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের জড়িত থাকার বিষয়টি এখনো প্রমাণিত নয়, দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে, গুজব ছাপিয়ে বিষয়টি সত্য হয়ে ওঠাও অস্বাভাবিক কিছু না। এ প্রসঙ্গে জাপানের কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক মাসাকি নাকাসামা বলেন, তাঁর মতে, এলডিপি এবং ইউনিফিকেশন চার্চের যোগসূত্র ‘খুব একটা শক্ত’ নয়। তবে আবের হত্যাকারী তেৎসুয়ার দাবির সূত্রে জাপানের রাজনীতিতে ‘ধর্ম’, বিশেষ করে কাল্টের প্রভাব নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
অধ্যাপক মাসাকি নাকাসামার মতে, আবের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিসৌধ হবে, আলোচনা হবে। কিন্তু সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বিষয়টি ভুলে যাবে। জাপানের রাজনীতিবিদদের রাজনীতির প্রতি নিবেদনের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রক্ষণশীল জাপানি রাজনীতিবিদদের নিবেদিত ধর্মপ্রাণে পরিণত করা সত্যিই কঠিন।’
জাপানের রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব জেঁকে বসা আদৌ সম্ভব কি না তা সময়ই বলে দেবে। তবে জাপানের রাজনীতির অতীত ইতিহাস বলে—নিকট অতীতে দেশটির রাজনীতিতে ধর্মীয় কাল্টের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায়নি। ভবিষ্যতে দেখা যাবে কি না তার উত্তর পাওয়া যাবে এলডিপির সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, থাকলে তার শিকড় কতটা গভীরে তা উদ্ঘাটিত হলে।
তবে, আবের মৃত্যুর সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের জড়িত থাকার আলাপ যে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

৮ জুলাই, ২০২২। জাপানের নারা শহরে এক নির্বাচনী জনসভায় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান শিনজো আবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকাহত হয় পুরো জাপান। রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঘোষণা দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। কিন্তু কয়েক দিন পরই জানা যায়, একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকায় ‘প্রতিশোধ’ নিতে আবেকে হত্যা করেন তেৎসুয়া ইয়ামাগামি নামে এক যুবক। আবের হত্যাকাণ্ড জাপানের ‘পরিচ্ছন্ন’ রাজনীতির এক নতুন দিক উন্মোচন করে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিনজো আবে যে ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত বলে শোনা যাচ্ছে সেটির নাম ইউনিফিকেশন চার্চ। ১৯৫৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সান মিয়াং মুন বিশ্ব শান্তি এবং পুনর্মিলনের লক্ষ্যে খ্রিষ্ট ধর্মের নতুন এক ধারা ‘ইউনিফিকেশন চার্চ’ গঠন করেন। মতাদর্শিক দিক থেকে গোষ্ঠীটি সমাজতন্ত্র-বিরোধী এবং পারিবারিক রক্ষণশীলতায় বিশ্বাসী।
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের রাজনীতিতে এই চার্চ ব্যাপক প্রভাবশালী বলে ধারণা করা হয়। কেউ সেই প্রভাব বলয়ে থাকতে অথবা ভক্তিতে মোটা অঙ্কের চাঁদা দেন। ভক্তদের চাঁদার অর্থে বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে গোষ্ঠীটি।
করোনা মহামারীর সময় এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামাজিক দূরত্বের বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে এক ধর্মগুরুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বিপুল ভক্তের অংশগ্রহণ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তারের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে এই গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ নেতা সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চান।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভক্তদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থের জোরে ১৯৬৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় টঙ্গিল গ্রুপ নামে একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান খোলেন সান মিয়াং মুন। এই কনগ্লোমারেটে রয়েছে—গলফ ও স্কি রিসোর্ট পরিচালনা প্রতিষ্ঠান, প্রতিরক্ষা শিল্প গোষ্ঠী, রাসায়নিক কারখানা, গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসা এবং সংবাদপত্রের মালিকানা। যুক্তরাষ্ট্রেও ইউনিফিকেশন চার্চের বিপুল সম্পত্তি রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক বিনিয়োগ থাকলেও ইউনিফিকেশন চার্চ এখনো ভক্তদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করে। জাপানি সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, কেবল জাপানেই চার্চের অন্তত ১ লাখ সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। যারা জাপানের বর্তমান শাসক দল এবং শিনজো আবের দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি–এলডিপির প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে প্রচারণাসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন। এলডিপির আইনপ্রণেতাদের একটি বড় অংশই ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে জড়িত।
জাপানের সংবাদমাধ্যম আশাহি শিম্বুন চার্চটির সাবেক এক অনুসারীর বরাত দিয়ে বলেছে, তিনি জাপানকে ‘রক্ষা’ করতে আবের মিত্র কোইচি হাগুইদাকে নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তা করেছেন। আরও পাঁচজন ভক্ত নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এলডিপির প্রার্থীদের হয়ে কাজ করার জন্য তাঁদের চার্চ থেকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হতো।
যাই হোক, শিনজো আবের সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের সম্পর্ক ব্যক্তিগত নয় বরং পারিবারিক। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সাল জাপানের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন নবুসুকো কিশি। তিনি সম্পর্কে শিনজো আবের দাদা। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই মুনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাঁর। কিশিই ১৯৬৮ সালে ইউনিফিকেশন চার্চের রাজনৈতিক শাখা ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর ভিক্টরি ওভার কমিউনিজম’ স্থাপনে সাহায্য করেন। সংগঠনটি জাপানে শক্ত ভিত্তি গড়ার পর থেকেই চার্চ অনুসারীদের ‘অর্থনৈতিক শক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে। অনুসারীদের কাছ থেকে সরাসরি চাঁদা কিংবা বিভিন্ন ‘আধ্যাত্মিক বস্তুর’ বিনিময়ে অর্থ সংগ্রহ করত।
অনুসারীদের মাঝে চার্চের এতটাই প্রভাব বিস্তৃত যে, অনেকেই চার্চের জন্য নিজেদের সবটুকু উৎসর্গ করেছেন। সেরকমই একজন তেৎসুয়া ইয়ামাগামির মা। তাঁর এক আত্মীয় আল–জাজিরাকে বলেছেন, ‘তাঁর মা গোষ্ঠীটির একজন নিবেদিতপ্রাণ ভক্ত ছিলেন। তিনি চার্চকে ১০ কোটি জাপানি ইয়েন দান করেছিলেন।’ এই অর্থ তেৎসুয়ার মা পেয়েছিলেন মৃত স্বামীর পেনশন থেকে। স্বামীর পেনশনের টাকা সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য না রেখে প্রায় পুরোটাই দান করায় তেৎসুয়ার উচ্চশিক্ষার পথ চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
এই বঞ্চনা থেকেই ক্ষোভ জন্ম নেয় তেৎসুয়ার মনে। তিনি চার্চের বর্তমান প্রধান হাক জা মুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হাক জা মুন ২০১২ সালে তাঁর স্বামী ও চার্চের প্রতিষ্ঠাতা সুন মিয়াং মুনের মৃত্যুর পর গোষ্ঠীটির প্রধান হন। কোভিড মহামারির কারণে তিনি জাপান সফরে আসতে পারছিলেন না। তাই তাঁকে হত্যাও করতে পারছিলেন না তেৎসুয়া। পরে গোষ্ঠীটিকে পাঠানো শিনজো আবের শুভেচ্ছা বার্তা দেখে পরিকল্পনা বদলান তেৎসুয়া।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেৎসুয়া জাপানি এক ব্লগারের কাছে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন—হাক জা মুনকে হত্যা করা প্রায় ‘অসম্ভব’ এবং আবে কখনোই তাঁর ‘মূল শত্রু’ ছিলেন না।
ইউনিফিকেশন চার্চ তাঁর পরিবারকে ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে তেৎসুয়া আরও লিখেন, আবে ‘চার্চের পক্ষে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি’। ঠিক এ কারণেই তিনি চার্চের সঙ্গে পূর্বের দায় মেটাতে আবেকে হত্যা করবেন।
জাপানে ইউনিফিকেশন চার্চ নিয়ে বেশ সমালোচনা চলছে। গোষ্ঠীটি আদৌ কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নাকি একটি কাল্ট (সংঘ) তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে আবের মৃত্যুর পর গোষ্ঠীটিকে কাল্ট হিসেবেই বিবেচনা করছেন অনেকে।
এই বিষয়ে টোকিওর সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক কোইচি নাকানো আল–জাজিরাকে বলেছেন, ‘ইউনিফিকেশন চার্চকে ধর্মীয় সংঘের চেয়ে জাপানে একটি স্বার্থান্বেষী সম্প্রদায় হিসেবেই বেশি বিবেচনা করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এলডিপি এই কুখ্যাত সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে দেশের জনগণকে খেপিয়ে তুলেছে।’
জনগণ যে ক্ষুব্ধ হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতার ঘোষণা আসার পর। জাপানের জনগণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিরোধিতা করতে থাকেন। যদিও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে জনরোষ সামলাতে বাধ্য হয়ে মন্ত্রিসভায় রদবদল আনতে হয়েছে কিশিদাকে। দলীয় আইনপ্রণেতাদের ওই চার্চের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
চার্চকে দেওয়া অনুদান যারা এখন ফেরত চাচ্ছেন বা এই চক্র থেকে মুক্তি চান তাঁদের আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কিশিদা।
অবশ্য কিশিদার জন্য বিষয়টি সহজ হবে না। কারণ, এলডিপির অভ্যন্তরীণ এক জরিপ থেকে দেখা গেছে, দেশজুড়ে দলটির ৩৭৯ জন আইনপ্রণেতার অর্ধেকেরও বেশি ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে যুক্ত। ৯৭ জন আইনপ্রণেতা চার্চের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দিয়েছেন। ফলে, সংস্কার চালাতে গিয়ে দলেই তাঁর অবস্থান ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
শিনজো আবে হত্যাকাণ্ডের পর দেশটির রাজনীতিতে বিশেষ ধর্মের প্রভাব নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে ইউনিফিকেশন চার্চ জাপানের কোনো রাজনৈতিক দলকে সরাসরি সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে তারা তাদের রাজনৈতিক শাখার সঙ্গে এলডিপির আইনপ্রণেতাদের সংযোগের বিষয়টি স্বীকার করেছে। বলেছে, যেহেতু তাঁরা অভিন্ন মূল্যবোধ লালন করেন তাই এমন সংযোগ অস্বাভাবিক নয়।
বিভিন্ন সূত্র মিলে গেলেও আবের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের জড়িত থাকার বিষয়টি এখনো প্রমাণিত নয়, দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে, গুজব ছাপিয়ে বিষয়টি সত্য হয়ে ওঠাও অস্বাভাবিক কিছু না। এ প্রসঙ্গে জাপানের কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক মাসাকি নাকাসামা বলেন, তাঁর মতে, এলডিপি এবং ইউনিফিকেশন চার্চের যোগসূত্র ‘খুব একটা শক্ত’ নয়। তবে আবের হত্যাকারী তেৎসুয়ার দাবির সূত্রে জাপানের রাজনীতিতে ‘ধর্ম’, বিশেষ করে কাল্টের প্রভাব নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
অধ্যাপক মাসাকি নাকাসামার মতে, আবের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিসৌধ হবে, আলোচনা হবে। কিন্তু সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বিষয়টি ভুলে যাবে। জাপানের রাজনীতিবিদদের রাজনীতির প্রতি নিবেদনের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রক্ষণশীল জাপানি রাজনীতিবিদদের নিবেদিত ধর্মপ্রাণে পরিণত করা সত্যিই কঠিন।’
জাপানের রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব জেঁকে বসা আদৌ সম্ভব কি না তা সময়ই বলে দেবে। তবে জাপানের রাজনীতির অতীত ইতিহাস বলে—নিকট অতীতে দেশটির রাজনীতিতে ধর্মীয় কাল্টের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায়নি। ভবিষ্যতে দেখা যাবে কি না তার উত্তর পাওয়া যাবে এলডিপির সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, থাকলে তার শিকড় কতটা গভীরে তা উদ্ঘাটিত হলে।
তবে, আবের মৃত্যুর সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের জড়িত থাকার আলাপ যে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

৮ জুলাই, ২০২২। জাপানের নারা শহরে এক নির্বাচনী জনসভায় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান শিনজো আবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকাহত হয় পুরো জাপান। রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঘোষণা দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। কিন্তু কয়েক দিন পরই জানা যায়, একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থাকায় ‘প্রতিশোধ’ নিতে আবেকে হত্যা করেন তেৎসুয়া ইয়ামাগামি নামে এক যুবক। আবের হত্যাকাণ্ড জাপানের ‘পরিচ্ছন্ন’ রাজনীতির এক নতুন দিক উন্মোচন করে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিনজো আবে যে ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত বলে শোনা যাচ্ছে সেটির নাম ইউনিফিকেশন চার্চ। ১৯৫৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সান মিয়াং মুন বিশ্ব শান্তি এবং পুনর্মিলনের লক্ষ্যে খ্রিষ্ট ধর্মের নতুন এক ধারা ‘ইউনিফিকেশন চার্চ’ গঠন করেন। মতাদর্শিক দিক থেকে গোষ্ঠীটি সমাজতন্ত্র-বিরোধী এবং পারিবারিক রক্ষণশীলতায় বিশ্বাসী।
দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের রাজনীতিতে এই চার্চ ব্যাপক প্রভাবশালী বলে ধারণা করা হয়। কেউ সেই প্রভাব বলয়ে থাকতে অথবা ভক্তিতে মোটা অঙ্কের চাঁদা দেন। ভক্তদের চাঁদার অর্থে বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে গোষ্ঠীটি।
করোনা মহামারীর সময় এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামাজিক দূরত্বের বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে এক ধর্মগুরুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বিপুল ভক্তের অংশগ্রহণ থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তারের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে এই গোষ্ঠীর সর্বোচ্চ নেতা সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চান।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভক্তদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থের জোরে ১৯৬৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় টঙ্গিল গ্রুপ নামে একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান খোলেন সান মিয়াং মুন। এই কনগ্লোমারেটে রয়েছে—গলফ ও স্কি রিসোর্ট পরিচালনা প্রতিষ্ঠান, প্রতিরক্ষা শিল্প গোষ্ঠী, রাসায়নিক কারখানা, গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসা এবং সংবাদপত্রের মালিকানা। যুক্তরাষ্ট্রেও ইউনিফিকেশন চার্চের বিপুল সম্পত্তি রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক বিনিয়োগ থাকলেও ইউনিফিকেশন চার্চ এখনো ভক্তদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করে। জাপানি সংবাদমাধ্যমগুলোর মতে, কেবল জাপানেই চার্চের অন্তত ১ লাখ সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। যারা জাপানের বর্তমান শাসক দল এবং শিনজো আবের দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি–এলডিপির প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে প্রচারণাসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন। এলডিপির আইনপ্রণেতাদের একটি বড় অংশই ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে জড়িত।
জাপানের সংবাদমাধ্যম আশাহি শিম্বুন চার্চটির সাবেক এক অনুসারীর বরাত দিয়ে বলেছে, তিনি জাপানকে ‘রক্ষা’ করতে আবের মিত্র কোইচি হাগুইদাকে নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তা করেছেন। আরও পাঁচজন ভক্ত নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এলডিপির প্রার্থীদের হয়ে কাজ করার জন্য তাঁদের চার্চ থেকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হতো।
যাই হোক, শিনজো আবের সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের সম্পর্ক ব্যক্তিগত নয় বরং পারিবারিক। ১৯৫৭ থেকে ১৯৬০ সাল জাপানের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন নবুসুকো কিশি। তিনি সম্পর্কে শিনজো আবের দাদা। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেই মুনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাঁর। কিশিই ১৯৬৮ সালে ইউনিফিকেশন চার্চের রাজনৈতিক শাখা ‘ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর ভিক্টরি ওভার কমিউনিজম’ স্থাপনে সাহায্য করেন। সংগঠনটি জাপানে শক্ত ভিত্তি গড়ার পর থেকেই চার্চ অনুসারীদের ‘অর্থনৈতিক শক্তি’ হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে। অনুসারীদের কাছ থেকে সরাসরি চাঁদা কিংবা বিভিন্ন ‘আধ্যাত্মিক বস্তুর’ বিনিময়ে অর্থ সংগ্রহ করত।
অনুসারীদের মাঝে চার্চের এতটাই প্রভাব বিস্তৃত যে, অনেকেই চার্চের জন্য নিজেদের সবটুকু উৎসর্গ করেছেন। সেরকমই একজন তেৎসুয়া ইয়ামাগামির মা। তাঁর এক আত্মীয় আল–জাজিরাকে বলেছেন, ‘তাঁর মা গোষ্ঠীটির একজন নিবেদিতপ্রাণ ভক্ত ছিলেন। তিনি চার্চকে ১০ কোটি জাপানি ইয়েন দান করেছিলেন।’ এই অর্থ তেৎসুয়ার মা পেয়েছিলেন মৃত স্বামীর পেনশন থেকে। স্বামীর পেনশনের টাকা সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য না রেখে প্রায় পুরোটাই দান করায় তেৎসুয়ার উচ্চশিক্ষার পথ চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
এই বঞ্চনা থেকেই ক্ষোভ জন্ম নেয় তেৎসুয়ার মনে। তিনি চার্চের বর্তমান প্রধান হাক জা মুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। হাক জা মুন ২০১২ সালে তাঁর স্বামী ও চার্চের প্রতিষ্ঠাতা সুন মিয়াং মুনের মৃত্যুর পর গোষ্ঠীটির প্রধান হন। কোভিড মহামারির কারণে তিনি জাপান সফরে আসতে পারছিলেন না। তাই তাঁকে হত্যাও করতে পারছিলেন না তেৎসুয়া। পরে গোষ্ঠীটিকে পাঠানো শিনজো আবের শুভেচ্ছা বার্তা দেখে পরিকল্পনা বদলান তেৎসুয়া।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেৎসুয়া জাপানি এক ব্লগারের কাছে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন—হাক জা মুনকে হত্যা করা প্রায় ‘অসম্ভব’ এবং আবে কখনোই তাঁর ‘মূল শত্রু’ ছিলেন না।
ইউনিফিকেশন চার্চ তাঁর পরিবারকে ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে তেৎসুয়া আরও লিখেন, আবে ‘চার্চের পক্ষে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি’। ঠিক এ কারণেই তিনি চার্চের সঙ্গে পূর্বের দায় মেটাতে আবেকে হত্যা করবেন।
জাপানে ইউনিফিকেশন চার্চ নিয়ে বেশ সমালোচনা চলছে। গোষ্ঠীটি আদৌ কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নাকি একটি কাল্ট (সংঘ) তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে আবের মৃত্যুর পর গোষ্ঠীটিকে কাল্ট হিসেবেই বিবেচনা করছেন অনেকে।
এই বিষয়ে টোকিওর সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক কোইচি নাকানো আল–জাজিরাকে বলেছেন, ‘ইউনিফিকেশন চার্চকে ধর্মীয় সংঘের চেয়ে জাপানে একটি স্বার্থান্বেষী সম্প্রদায় হিসেবেই বেশি বিবেচনা করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এলডিপি এই কুখ্যাত সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে দেশের জনগণকে খেপিয়ে তুলেছে।’
জনগণ যে ক্ষুব্ধ হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় আবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতার ঘোষণা আসার পর। জাপানের জনগণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিরোধিতা করতে থাকেন। যদিও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে জনরোষ সামলাতে বাধ্য হয়ে মন্ত্রিসভায় রদবদল আনতে হয়েছে কিশিদাকে। দলীয় আইনপ্রণেতাদের ওই চার্চের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
চার্চকে দেওয়া অনুদান যারা এখন ফেরত চাচ্ছেন বা এই চক্র থেকে মুক্তি চান তাঁদের আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কিশিদা।
অবশ্য কিশিদার জন্য বিষয়টি সহজ হবে না। কারণ, এলডিপির অভ্যন্তরীণ এক জরিপ থেকে দেখা গেছে, দেশজুড়ে দলটির ৩৭৯ জন আইনপ্রণেতার অর্ধেকেরও বেশি ইউনিফিকেশন চার্চের সঙ্গে যুক্ত। ৯৭ জন আইনপ্রণেতা চার্চের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দিয়েছেন। ফলে, সংস্কার চালাতে গিয়ে দলেই তাঁর অবস্থান ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
শিনজো আবে হত্যাকাণ্ডের পর দেশটির রাজনীতিতে বিশেষ ধর্মের প্রভাব নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তবে ইউনিফিকেশন চার্চ জাপানের কোনো রাজনৈতিক দলকে সরাসরি সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে তারা তাদের রাজনৈতিক শাখার সঙ্গে এলডিপির আইনপ্রণেতাদের সংযোগের বিষয়টি স্বীকার করেছে। বলেছে, যেহেতু তাঁরা অভিন্ন মূল্যবোধ লালন করেন তাই এমন সংযোগ অস্বাভাবিক নয়।
বিভিন্ন সূত্র মিলে গেলেও আবের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের জড়িত থাকার বিষয়টি এখনো প্রমাণিত নয়, দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে, গুজব ছাপিয়ে বিষয়টি সত্য হয়ে ওঠাও অস্বাভাবিক কিছু না। এ প্রসঙ্গে জাপানের কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক মাসাকি নাকাসামা বলেন, তাঁর মতে, এলডিপি এবং ইউনিফিকেশন চার্চের যোগসূত্র ‘খুব একটা শক্ত’ নয়। তবে আবের হত্যাকারী তেৎসুয়ার দাবির সূত্রে জাপানের রাজনীতিতে ‘ধর্ম’, বিশেষ করে কাল্টের প্রভাব নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
অধ্যাপক মাসাকি নাকাসামার মতে, আবের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিসৌধ হবে, আলোচনা হবে। কিন্তু সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বিষয়টি ভুলে যাবে। জাপানের রাজনীতিবিদদের রাজনীতির প্রতি নিবেদনের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রক্ষণশীল জাপানি রাজনীতিবিদদের নিবেদিত ধর্মপ্রাণে পরিণত করা সত্যিই কঠিন।’
জাপানের রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব জেঁকে বসা আদৌ সম্ভব কি না তা সময়ই বলে দেবে। তবে জাপানের রাজনীতির অতীত ইতিহাস বলে—নিকট অতীতে দেশটির রাজনীতিতে ধর্মীয় কাল্টের প্রভাব খুব বেশি দেখা যায়নি। ভবিষ্যতে দেখা যাবে কি না তার উত্তর পাওয়া যাবে এলডিপির সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, থাকলে তার শিকড় কতটা গভীরে তা উদ্ঘাটিত হলে।
তবে, আবের মৃত্যুর সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চের জড়িত থাকার আলাপ যে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আল–জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান

বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
৩ ঘণ্টা আগে
পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকা
৮ ঘণ্টা আগে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান নানা সমস্যা ‘অনেকটাই সমাধান হবে।’ আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেশ
১৪ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের একটি বড় বিতর্কিত বিষয় হলো বিরল খনিজ উপাদান। এই সমস্যার সমাধান করতেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার আলোচনা চলছে।
কয়েক মাস ধরে মার্কিন বাণিজ্য আলোচকদের সঙ্গে বিভিন্ন দফায় আলোচনা হলেও চীন গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ উপাদান সরবরাহের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে গড়িমসি করে যাচ্ছিল। এমনকি, মার্কিন কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বিরল খনিজ লাইসেন্স দেওয়ার আগের নিশ্চয়তাও বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো বেইজিং এই মাসের শুরুতে বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়, যার ফলে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক হারে বাড়ে।
আজ বৃহস্পতিবারের চুক্তির আওতায় চীন নতুন করে চাপানো এসব নিয়ম শিথিল করতে সম্মত হয়েছে। তবে এপ্রিলে ঘোষিত প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞাগুলো সম্ভবত এখনো বহাল আছে।
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
বিরল খনিজ আসলে কী?
রেয়ার আর্থ মিনারেলস বা বিরল মৃত্তিকা খনিজ বলতে পর্যায় সারণির ১৭টি ধাতব উপাদানকে বোঝায়, যার মধ্যে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইডস অন্তর্ভুক্ত। এগুলো রকেট, যুদ্ধবিমান, স্মার্টফোন, ইলেকট্রিক গাড়ির মোটর, উইন্ড টারবাইন, সোলার প্যানেল, স্যাটেলাইট যোগাযোগব্যবস্থা, এমনকি মিসাইল গাইডেন্স সিস্টেমসহ নানা যন্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। একুশ শতকের শিল্প ও সামরিক শক্তির ভিত্তি হিসেবে এই খনিজগুলো পুরোপুরি নির্ভরশীল।
‘বিরল খনিজ’ নামটি কিছুটা ভুল। কারণ, এই উপাদানগুলো পৃথিবীর ভূত্বকের প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়। এগুলো সোনার চেয়েও বেশি পরিমাণে রয়েছে, কিন্তু এগুলোর নিষ্কাশন ও প্রক্রিয়াকরণ করা কঠিন, ব্যয়বহুল এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে খনন করা বিরল খনিজ উৎপাদনের ৬১ শতাংশই আসে চীন থেকে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি।
বিরল খনিজের ব্যবহার
বিরল খনিজ দৈনন্দিন প্রযুক্তিতে সব জায়গায় ব্যবহৃত হয়—স্মার্টফোন থেকে শুরু করে উইন্ড টারবাইন, এলইডি লাইট এবং ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টিভি পর্যন্ত। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, সেই সঙ্গে এমআরআই স্ক্যানার এবং ক্যানসার চিকিৎসার জন্যও এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্যও বিরল খনিজ অপরিহার্য। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) ২০২৫ সালের এক গবেষণা অনুসারে, এগুলো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, লেজার, স্যাটেলাইট, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র এবং আরও অনেক কিছুতে ব্যবহৃত হয়।
উৎস ও বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, খনন করা বিরল খনিজ উৎপাদনের ৬১ শতাংশ আসে চীন থেকে। এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি।
আণবিক ওজন অনুসারে বিরল খনিজ দুই প্রকার—ভারী ও হালকা। ভারী বিরল খনিজগুলো আরও দুর্লভ। নিষ্কাশনের পর এই বিরল খনিজগুলো আলাদা করার সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্রিটিক্যাল মিনারেলস সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক গ্রেসলিন ভাস্করান সিএনএনকে বলেন, ‘বছরের শুরু পর্যন্ত, ক্যালিফোর্নিয়ায় আমরা যে ভারী বিরল খনিজগুলো উত্তোলন করেছি, সেগুলোকে আলাদা করার জন্য চীনে পাঠাতে হতো।’
তবে, এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন চীন থেকে আমদানি পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক ঘোষণার পর এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, চীন বিরল খনিজ আলাদা করার ক্ষেত্রে আমেরিকার নির্ভরতাকে ‘অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে’।
ভাস্করান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বিরল খনিজের মাত্র একটি খনি চালু আছে। অর্থাৎ চীন এই বিরল খনিজে যতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ, যুক্তরাষ্ট্র তার ধারেকাছে নেই।
বাণিজ্যযুদ্ধে এর গুরুত্ব কেন
বাণিজ্যযুদ্ধে বেইজিং বিরল খনিজকে দর-কষাকষির প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সি চিন পিং ও ট্রাম্পের বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় এই বিরল খনিজ।
এই মাসের শুরুতে চীন আরও পাঁচটি বিরল খনিজ উপাদান—হোলমিয়াম, এরবিয়াম, থুলিয়াম, ইউরোপিয়াম, ইটারবিয়াম এবং সম্পর্কিত ম্যাগনেট ও উপকরণগুলোকে বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যুক্ত করে, যার জন্য রপ্তানি লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে নিয়ন্ত্রিত বিরল খনিজের মোট সংখ্যা ১২-তে পৌঁছায়। চীন বিরল খনিজ উৎপাদন প্রযুক্তিও দেশের বাইরে রপ্তানির জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করেছে।
তবে বিরল খনিজ নিয়ন্ত্রণে চীনা বিধিনিষেধের বিষয়ে এবারই প্রথম ক্ষুব্ধ হননি ট্রাম্প। গত জুনে ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেছিলেন, চীন সাতটি বিরল খনিজ এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এরপর তিনি চীনের ওপর আরও শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।
বাণিজ্য বিশ্লেষকদের ধারণা, বিরল খনিজের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে চীনের বিধিনিষেধ বিশ্ববাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এই বস্তুটির জন্য যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা বিরল খনিজ যৌগ ও ধাতুর ৭০ শতাংশই এসেছিল চীন থেকে। তাই বিরল খনিজ নিয়ে বৃহৎ দুই অর্থনীতির দ্বন্দ্ব পুরো বিশ্বে বাণিজ্যযুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের একটি বড় বিতর্কিত বিষয় হলো বিরল খনিজ উপাদান। এই সমস্যার সমাধান করতেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার আলোচনা চলছে।
কয়েক মাস ধরে মার্কিন বাণিজ্য আলোচকদের সঙ্গে বিভিন্ন দফায় আলোচনা হলেও চীন গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ উপাদান সরবরাহের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে গড়িমসি করে যাচ্ছিল। এমনকি, মার্কিন কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বিরল খনিজ লাইসেন্স দেওয়ার আগের নিশ্চয়তাও বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো বেইজিং এই মাসের শুরুতে বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়, যার ফলে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক হারে বাড়ে।
আজ বৃহস্পতিবারের চুক্তির আওতায় চীন নতুন করে চাপানো এসব নিয়ম শিথিল করতে সম্মত হয়েছে। তবে এপ্রিলে ঘোষিত প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞাগুলো সম্ভবত এখনো বহাল আছে।
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
বিরল খনিজ আসলে কী?
রেয়ার আর্থ মিনারেলস বা বিরল মৃত্তিকা খনিজ বলতে পর্যায় সারণির ১৭টি ধাতব উপাদানকে বোঝায়, যার মধ্যে স্ক্যান্ডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইডস অন্তর্ভুক্ত। এগুলো রকেট, যুদ্ধবিমান, স্মার্টফোন, ইলেকট্রিক গাড়ির মোটর, উইন্ড টারবাইন, সোলার প্যানেল, স্যাটেলাইট যোগাযোগব্যবস্থা, এমনকি মিসাইল গাইডেন্স সিস্টেমসহ নানা যন্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। একুশ শতকের শিল্প ও সামরিক শক্তির ভিত্তি হিসেবে এই খনিজগুলো পুরোপুরি নির্ভরশীল।
‘বিরল খনিজ’ নামটি কিছুটা ভুল। কারণ, এই উপাদানগুলো পৃথিবীর ভূত্বকের প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়। এগুলো সোনার চেয়েও বেশি পরিমাণে রয়েছে, কিন্তু এগুলোর নিষ্কাশন ও প্রক্রিয়াকরণ করা কঠিন, ব্যয়বহুল এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে খনন করা বিরল খনিজ উৎপাদনের ৬১ শতাংশই আসে চীন থেকে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি।
বিরল খনিজের ব্যবহার
বিরল খনিজ দৈনন্দিন প্রযুক্তিতে সব জায়গায় ব্যবহৃত হয়—স্মার্টফোন থেকে শুরু করে উইন্ড টারবাইন, এলইডি লাইট এবং ফ্ল্যাট-স্ক্রিন টিভি পর্যন্ত। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, সেই সঙ্গে এমআরআই স্ক্যানার এবং ক্যানসার চিকিৎসার জন্যও এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্যও বিরল খনিজ অপরিহার্য। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) ২০২৫ সালের এক গবেষণা অনুসারে, এগুলো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, লেজার, স্যাটেলাইট, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র এবং আরও অনেক কিছুতে ব্যবহৃত হয়।
উৎস ও বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, খনন করা বিরল খনিজ উৎপাদনের ৬১ শতাংশ আসে চীন থেকে। এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে বিরল খনিজ প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ আউটপুট নিয়ন্ত্রণ করে দেশটি।
আণবিক ওজন অনুসারে বিরল খনিজ দুই প্রকার—ভারী ও হালকা। ভারী বিরল খনিজগুলো আরও দুর্লভ। নিষ্কাশনের পর এই বিরল খনিজগুলো আলাদা করার সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্রিটিক্যাল মিনারেলস সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক গ্রেসলিন ভাস্করান সিএনএনকে বলেন, ‘বছরের শুরু পর্যন্ত, ক্যালিফোর্নিয়ায় আমরা যে ভারী বিরল খনিজগুলো উত্তোলন করেছি, সেগুলোকে আলাদা করার জন্য চীনে পাঠাতে হতো।’
তবে, এপ্রিলে ট্রাম্প প্রশাসন চীন থেকে আমদানি পণ্যের ওপর চড়া শুল্ক ঘোষণার পর এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, চীন বিরল খনিজ আলাদা করার ক্ষেত্রে আমেরিকার নির্ভরতাকে ‘অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে’।
ভাস্করান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বিরল খনিজের মাত্র একটি খনি চালু আছে। অর্থাৎ চীন এই বিরল খনিজে যতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ, যুক্তরাষ্ট্র তার ধারেকাছে নেই।
বাণিজ্যযুদ্ধে এর গুরুত্ব কেন
বাণিজ্যযুদ্ধে বেইজিং বিরল খনিজকে দর-কষাকষির প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সি চিন পিং ও ট্রাম্পের বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় এই বিরল খনিজ।
এই মাসের শুরুতে চীন আরও পাঁচটি বিরল খনিজ উপাদান—হোলমিয়াম, এরবিয়াম, থুলিয়াম, ইউরোপিয়াম, ইটারবিয়াম এবং সম্পর্কিত ম্যাগনেট ও উপকরণগুলোকে বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যুক্ত করে, যার জন্য রপ্তানি লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে নিয়ন্ত্রিত বিরল খনিজের মোট সংখ্যা ১২-তে পৌঁছায়। চীন বিরল খনিজ উৎপাদন প্রযুক্তিও দেশের বাইরে রপ্তানির জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করেছে।
তবে বিরল খনিজ নিয়ন্ত্রণে চীনা বিধিনিষেধের বিষয়ে এবারই প্রথম ক্ষুব্ধ হননি ট্রাম্প। গত জুনে ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেছিলেন, চীন সাতটি বিরল খনিজ এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এরপর তিনি চীনের ওপর আরও শুল্ক আরোপের হুমকি দেন।
বাণিজ্য বিশ্লেষকদের ধারণা, বিরল খনিজের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে চীনের বিধিনিষেধ বিশ্ববাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এই বস্তুটির জন্য যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা বিরল খনিজ যৌগ ও ধাতুর ৭০ শতাংশই এসেছিল চীন থেকে। তাই বিরল খনিজ নিয়ে বৃহৎ দুই অর্থনীতির দ্বন্দ্ব পুরো বিশ্বে বাণিজ্যযুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে।

শিনজো আবের বিরুদ্ধে যে গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তার নাম ইউনিফিকেশন চার্চ। ১৯৫৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সান মিয়াং মুন বিশ্ব শান্তি এবং পুনর্মিলনের লক্ষ্যে ‘ইউনিফিকেশন চার্চ’ গঠন করেন। মতাদর্শিক দিক থেকে গোষ্ঠীটি কমিউনিজম বিরোধী এবং পারিবারিক সংরক্ষণশীলতার পৃষ্ঠপোষক
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকা
৮ ঘণ্টা আগে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান নানা সমস্যা ‘অনেকটাই সমাধান হবে।’ আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেশ
১৪ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকাশ।
গত রোববার এল-ফাশের আরএসএফ দখল করে নেয়। এর আগে তারা ১৮ মাস ধরে শহরটি ঘিরে রেখেছিল। এই সময়ে খাবার, ওষুধ ও জরুরি পণ্য প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। শহরের ভেতরে আটকা পড়া লাখো মানুষ ক্ষুধা ও রোগে ভুগছিল। সুদান আড়াই বছর ধরে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
এল-ফাশেরে কী ঘটেছে
রোববার আরএসএফ পুরো শহর দখল করে। তারা অঞ্চলটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর (এসএএফ) শেষ ঘাঁটিটিও দখল করে নেয়। সেনাবাহিনীর হিসেবে বুধবার পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০।
প্রায় ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ শহরে প্রায় ১২ লাখ মানুষ টিকে ছিল স্রেফ পশুখাদ্য খেয়ে। আরএসএফ ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্যারিকেড তৈরি করে খাবার ও ওষুধের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় এবং মানুষের পালানোর পথও রুদ্ধ করে রাখে। আল–জাজিরার যাচাইকৃত ভিডিওতে দেখা গেছে, আরএসএফ সদস্যরা মানুষকে গুলি করছে, নির্যাতন করছে। আগেও তারা নিজেদের এমন নৃশংসতা ভিডিও করে ছড়িয়েছে।
সুদানি চিকিৎসক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, আরএসএফ গণহত্যা চালাচ্ছে, মানুষকে আটক করছে এবং হাসপাতালগুলোয় হামলা করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, পালিয়ে যাওয়া মানুষদেরও হত্যা করা হচ্ছে। এসব হত্যার পেছনে জাতিগত উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে বলেছে, মাটির রং পরিবর্তন ও ছোট ছোট বস্তুসমষ্টি দেখা গেছে, যা মৃতদেহ ও রক্তের চিহ্ন হতে পারে। এই দাগগুলো আরএসএফ দখলের আগে দেখা যায়নি। জাতিসংঘ জানিয়েছে, মাত্র দুই দিনে ২৬ হাজার মানুষ শহর থেকে পালিয়েছে। তারা বেশির ভাগই পায়ে হেঁটে পশ্চিমে টাওয়িলা শহরের দিকে গেছে, যা ৭০ কিলোমিটার দূরে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে, এখনো প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ এল-ফাশেরে আটকা পড়ে আছে।
এদিকে পাশের উত্তর কোরদোফান প্রদেশের বারা শহরেও হত্যাকাণ্ডের খবর এসেছে। ২৫ অক্টোবর আরএসএফ শহরটি দখলের ঘোষণা দেয়। সেখানে সাধারণ মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন জানিয়েছে, বারায় তাদের পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবক নিহত হয়েছেন, তিনজন নিখোঁজ। বারা শহরটি এল-ওবেইদের কাছে, যা এখনো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে আরএসএফ সেখানে অগ্রসর হচ্ছে।
এল-ফাশের ও এল-ওবেইদ কেন গুরুত্বপূর্ণ
দুই শহরই পশ্চিম সুদানের প্রধান শহর এবং এখন যুদ্ধক্ষেত্র। আরএসএফ ইতিমধ্যে দেশের পশ্চিমাংশে দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা পুরো অঞ্চল দখল করতে চায়। সেনাবাহিনী পূর্ব দিক থেকে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে ঢোকার চেষ্টা করছে। এল-ফাশের ছিল উত্তর দারফুরের রাজধানী এবং দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর শেষ বড় ঘাঁটি। এটি হারানোর পর দেশ কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে—পূর্বে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ, পশ্চিমে আরএসএফের শাসন।
আরএসএফ এখন দারফুরে নিজেদের সমান্তরাল সরকার গঠন করেছে। সেনাবাহিনী অবস্থান করছে পূর্ব, মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে। এল-ওবেইদ উত্তর কোরদোফান প্রদেশের রাজধানী এবং তেলসমৃদ্ধ শহর। এটি দারফুর ও রাজধানী খার্তুমের মধ্যে কৌশলগত সংযোগস্থল। বর্তমানে এটি সেনাবাহিনীর হাতে, কিন্তু আরএসএফ শহরটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
গত ২৫ অক্টোবর আরএসএফ ঘোষণা দেয় যে তারা বারা শহর পুনর্দখল করেছে, যা এল-ওবেইদ থেকে মাত্র ৫৯ কিলোমিটার দূরে। গত সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনী ওই শহরটি আরএসএফের কাছ থেকে পুনরায় নিয়েছিল। এখন আরএসএফ বারা থেকে এল-ওবেইদে হামলা চালাচ্ছে। জুলাই পর্যন্ত সেখানে অন্তত ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।
দুই পক্ষের বক্তব্য
সোমবার সেনাপ্রধান ও কার্যত রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেন, জনগণকে বাঁচাতে তার বাহিনী এল-ফাশের থেকে সরে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের ওপর যা ঘটেছে, তার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’ বুধবার সুদান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আল-আমিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেন।
আরএসএফের নেতা মুহাম্মদ হামদান দাগালো—যিনি হেমেদতি নামেও পরিচিত—দাবি করেন, তারা সুদানকে ‘সত্যিকারের গণতন্ত্রে ঐক্যবদ্ধ’ করতে চান। তিনি বলেন, যারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, তাদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে।
আরএসএফ কারা
আরএসএফের যাত্রা শুরু ২০০৩ সালে, দারফুর যুদ্ধের সময়। তখন তাদের নাম ছিল ‘জানজাওয়িদ।’ তারা ছিল এক যাযাবর সশস্ত্র দল। সে সময় তারা প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পক্ষে লড়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছে। এতে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
এরপর, ২০১৩ সালে আল-বশির জানজাওয়িদ বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ নামে প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৭ সালে আইন করে এই বাহিনীকে স্বাধীন নিরাপত্তা সংস্থার মর্যাদা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে আরএসএফ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয় এবং ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সহায়তা করে। পরে ২০২১ সালে তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদককে উৎখাত করে। এতে দেশটির বেসামরিক-সামরিক যৌথ শাসনব্যবস্থা শেষ হয়ে যায়।
সংঘাতের শুরু যেভাবে
আরএসএফ নেতা হেমেদতি ও সেনাপ্রধান আল-বুরহানের মধ্যে মতবিরোধ বাড়তে থাকে। মূল প্রশ্ন ছিল—আরএসএফ কবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত হবে এবং কে দেশের নেতৃত্ব দেবে। ২০২৩ সালে ১৫ এপ্রিল এই বিরোধ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। সেনাবাহিনী চায়, আরএসএফ পুরোপুরি তাদের অধীনে আসুক। কিন্তু আরএসএফ স্বাধীন থাকতে চায়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, দুই পক্ষই যুদ্ধাপরাধ ও নৃশংসতা চালিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, দারফুরে আরএসএফ ও তাদের মিত্ররা গণহত্যা চালাচ্ছে। এতে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সুদানি মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগে থেকেই সতর্ক করেছিল, আরএসএফ যদি এল-ফাশের দখল করে, তাহলে তা সাধারণ মানুষের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পালিয়ে আসা মানুষজন জানিয়েছে—আরএসএফ সদস্যরা ঘরে ঘরে গিয়ে জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষ হত্যা করছে। এল–ফাশের শহরে সৌদি হাসপাতালেই প্রায় ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও আশ্রয়প্রার্থী সাধারণ মানুষ ছিল।
আরএসএফ শত শত মানুষকে আটক করেছে। বহু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আরএসএফ যেসব শহর দখল করবে, সেখানেও গণহত্যার আশঙ্কা রয়েছে।
এল-ফাশের দখলের ফলে আরএসএফ এখন পুরো দারফুর অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে। অঞ্চলটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি চাদ, লিবিয়া ও দক্ষিণ সুদানের সীমান্তে অবস্থিত এবং সোনার প্রধান উৎসগুলোর একটি। ইতালির আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গবেষণা সংস্থা আইএসপিআই ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, দারফুরের সোনার জন্য লড়াইই এই যুদ্ধের অন্যতম কারণ।
সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকান ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় বহুবার আলোচনার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলে ‘কোয়াড’ নামে একটি জোট গঠন করেছে। তারা ১২ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা ঘোষণা করে।
তাদের পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, তিন মাসের মানবিক বিরতি দেওয়া হবে যাতে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে পারে। এরপর স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং নয় মাসের মধ্যে বেসামরিক সরকারে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথমে সেনাপ্রধান আল-বুরহান এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি চান, আরএসএফ ভেঙে দেওয়া হোক। কিন্তু ১৫ অক্টোবর মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি কিছুটা নমনীয় হন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে দুই পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা হয়। অক্টোবরের শেষে আরও বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আরএসএফ এল-ফাশের দখল করে নেয়। এখন আলোচনা কোন পথে যাবে, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে, এই অবস্থায় আশঙ্কা বাড়ছে যে, যেহেতু দারফুর অঞ্চল প্রায় পুরোটাই আরএসএফের হাতে চলে গেছে, তাহলে কি সুদান আরও একবার ভাঙতে চলেছে। এর আগে, সুদান ভেঙে দক্ষিণ সুদান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়।

পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকাশ।
গত রোববার এল-ফাশের আরএসএফ দখল করে নেয়। এর আগে তারা ১৮ মাস ধরে শহরটি ঘিরে রেখেছিল। এই সময়ে খাবার, ওষুধ ও জরুরি পণ্য প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। শহরের ভেতরে আটকা পড়া লাখো মানুষ ক্ষুধা ও রোগে ভুগছিল। সুদান আড়াই বছর ধরে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
এল-ফাশেরে কী ঘটেছে
রোববার আরএসএফ পুরো শহর দখল করে। তারা অঞ্চলটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর (এসএএফ) শেষ ঘাঁটিটিও দখল করে নেয়। সেনাবাহিনীর হিসেবে বুধবার পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সুদান ডক্টরস নেটওয়ার্কের হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০।
প্রায় ১৮ মাস ধরে অবরুদ্ধ শহরে প্রায় ১২ লাখ মানুষ টিকে ছিল স্রেফ পশুখাদ্য খেয়ে। আরএসএফ ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্যারিকেড তৈরি করে খাবার ও ওষুধের প্রবেশ বন্ধ করে দেয় এবং মানুষের পালানোর পথও রুদ্ধ করে রাখে। আল–জাজিরার যাচাইকৃত ভিডিওতে দেখা গেছে, আরএসএফ সদস্যরা মানুষকে গুলি করছে, নির্যাতন করছে। আগেও তারা নিজেদের এমন নৃশংসতা ভিডিও করে ছড়িয়েছে।
সুদানি চিকিৎসক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, আরএসএফ গণহত্যা চালাচ্ছে, মানুষকে আটক করছে এবং হাসপাতালগুলোয় হামলা করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, পালিয়ে যাওয়া মানুষদেরও হত্যা করা হচ্ছে। এসব হত্যার পেছনে জাতিগত উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে বলেছে, মাটির রং পরিবর্তন ও ছোট ছোট বস্তুসমষ্টি দেখা গেছে, যা মৃতদেহ ও রক্তের চিহ্ন হতে পারে। এই দাগগুলো আরএসএফ দখলের আগে দেখা যায়নি। জাতিসংঘ জানিয়েছে, মাত্র দুই দিনে ২৬ হাজার মানুষ শহর থেকে পালিয়েছে। তারা বেশির ভাগই পায়ে হেঁটে পশ্চিমে টাওয়িলা শহরের দিকে গেছে, যা ৭০ কিলোমিটার দূরে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে, এখনো প্রায় ১ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ এল-ফাশেরে আটকা পড়ে আছে।
এদিকে পাশের উত্তর কোরদোফান প্রদেশের বারা শহরেও হত্যাকাণ্ডের খবর এসেছে। ২৫ অক্টোবর আরএসএফ শহরটি দখলের ঘোষণা দেয়। সেখানে সাধারণ মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের ওপরও হামলা চালানো হয়েছে। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের আন্তর্জাতিক ফেডারেশন জানিয়েছে, বারায় তাদের পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবক নিহত হয়েছেন, তিনজন নিখোঁজ। বারা শহরটি এল-ওবেইদের কাছে, যা এখনো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে আরএসএফ সেখানে অগ্রসর হচ্ছে।
এল-ফাশের ও এল-ওবেইদ কেন গুরুত্বপূর্ণ
দুই শহরই পশ্চিম সুদানের প্রধান শহর এবং এখন যুদ্ধক্ষেত্র। আরএসএফ ইতিমধ্যে দেশের পশ্চিমাংশে দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা পুরো অঞ্চল দখল করতে চায়। সেনাবাহিনী পূর্ব দিক থেকে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে ঢোকার চেষ্টা করছে। এল-ফাশের ছিল উত্তর দারফুরের রাজধানী এবং দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর শেষ বড় ঘাঁটি। এটি হারানোর পর দেশ কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে—পূর্বে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ, পশ্চিমে আরএসএফের শাসন।
আরএসএফ এখন দারফুরে নিজেদের সমান্তরাল সরকার গঠন করেছে। সেনাবাহিনী অবস্থান করছে পূর্ব, মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে। এল-ওবেইদ উত্তর কোরদোফান প্রদেশের রাজধানী এবং তেলসমৃদ্ধ শহর। এটি দারফুর ও রাজধানী খার্তুমের মধ্যে কৌশলগত সংযোগস্থল। বর্তমানে এটি সেনাবাহিনীর হাতে, কিন্তু আরএসএফ শহরটির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
গত ২৫ অক্টোবর আরএসএফ ঘোষণা দেয় যে তারা বারা শহর পুনর্দখল করেছে, যা এল-ওবেইদ থেকে মাত্র ৫৯ কিলোমিটার দূরে। গত সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনী ওই শহরটি আরএসএফের কাছ থেকে পুনরায় নিয়েছিল। এখন আরএসএফ বারা থেকে এল-ওবেইদে হামলা চালাচ্ছে। জুলাই পর্যন্ত সেখানে অন্তত ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।
দুই পক্ষের বক্তব্য
সোমবার সেনাপ্রধান ও কার্যত রাষ্ট্রপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেন, জনগণকে বাঁচাতে তার বাহিনী এল-ফাশের থেকে সরে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের ওপর যা ঘটেছে, তার প্রতিশোধ নেওয়া হবে।’ বুধবার সুদান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আল-আমিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেন।
আরএসএফের নেতা মুহাম্মদ হামদান দাগালো—যিনি হেমেদতি নামেও পরিচিত—দাবি করেন, তারা সুদানকে ‘সত্যিকারের গণতন্ত্রে ঐক্যবদ্ধ’ করতে চান। তিনি বলেন, যারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে, তাদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে।
আরএসএফ কারা
আরএসএফের যাত্রা শুরু ২০০৩ সালে, দারফুর যুদ্ধের সময়। তখন তাদের নাম ছিল ‘জানজাওয়িদ।’ তারা ছিল এক যাযাবর সশস্ত্র দল। সে সময় তারা প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পক্ষে লড়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেছে। এতে ১ লাখ থেকে ৩ লাখ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
এরপর, ২০১৩ সালে আল-বশির জানজাওয়িদ বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ নামে প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৭ সালে আইন করে এই বাহিনীকে স্বাধীন নিরাপত্তা সংস্থার মর্যাদা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে আরএসএফ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয় এবং ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সহায়তা করে। পরে ২০২১ সালে তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদককে উৎখাত করে। এতে দেশটির বেসামরিক-সামরিক যৌথ শাসনব্যবস্থা শেষ হয়ে যায়।
সংঘাতের শুরু যেভাবে
আরএসএফ নেতা হেমেদতি ও সেনাপ্রধান আল-বুরহানের মধ্যে মতবিরোধ বাড়তে থাকে। মূল প্রশ্ন ছিল—আরএসএফ কবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত হবে এবং কে দেশের নেতৃত্ব দেবে। ২০২৩ সালে ১৫ এপ্রিল এই বিরোধ পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়। সেনাবাহিনী চায়, আরএসএফ পুরোপুরি তাদের অধীনে আসুক। কিন্তু আরএসএফ স্বাধীন থাকতে চায়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, দুই পক্ষই যুদ্ধাপরাধ ও নৃশংসতা চালিয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, দারফুরে আরএসএফ ও তাদের মিত্ররা গণহত্যা চালাচ্ছে। এতে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সুদানি মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগে থেকেই সতর্ক করেছিল, আরএসএফ যদি এল-ফাশের দখল করে, তাহলে তা সাধারণ মানুষের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পালিয়ে আসা মানুষজন জানিয়েছে—আরএসএফ সদস্যরা ঘরে ঘরে গিয়ে জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষ হত্যা করছে। এল–ফাশের শহরে সৌদি হাসপাতালেই প্রায় ৫০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সেখানে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও আশ্রয়প্রার্থী সাধারণ মানুষ ছিল।
আরএসএফ শত শত মানুষকে আটক করেছে। বহু নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আরএসএফ যেসব শহর দখল করবে, সেখানেও গণহত্যার আশঙ্কা রয়েছে।
এল-ফাশের দখলের ফলে আরএসএফ এখন পুরো দারফুর অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে। অঞ্চলটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি চাদ, লিবিয়া ও দক্ষিণ সুদানের সীমান্তে অবস্থিত এবং সোনার প্রধান উৎসগুলোর একটি। ইতালির আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গবেষণা সংস্থা আইএসপিআই ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, দারফুরের সোনার জন্য লড়াইই এই যুদ্ধের অন্যতম কারণ।
সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকান ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় বহুবার আলোচনার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মিলে ‘কোয়াড’ নামে একটি জোট গঠন করেছে। তারা ১২ সেপ্টেম্বর যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা ঘোষণা করে।
তাদের পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, তিন মাসের মানবিক বিরতি দেওয়া হবে যাতে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে পারে। এরপর স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং নয় মাসের মধ্যে বেসামরিক সরকারে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রথমে সেনাপ্রধান আল-বুরহান এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি চান, আরএসএফ ভেঙে দেওয়া হোক। কিন্তু ১৫ অক্টোবর মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসির সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি কিছুটা নমনীয় হন।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে দুই পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা হয়। অক্টোবরের শেষে আরও বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আরএসএফ এল-ফাশের দখল করে নেয়। এখন আলোচনা কোন পথে যাবে, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে, এই অবস্থায় আশঙ্কা বাড়ছে যে, যেহেতু দারফুর অঞ্চল প্রায় পুরোটাই আরএসএফের হাতে চলে গেছে, তাহলে কি সুদান আরও একবার ভাঙতে চলেছে। এর আগে, সুদান ভেঙে দক্ষিণ সুদান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়।

শিনজো আবের বিরুদ্ধে যে গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তার নাম ইউনিফিকেশন চার্চ। ১৯৫৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সান মিয়াং মুন বিশ্ব শান্তি এবং পুনর্মিলনের লক্ষ্যে ‘ইউনিফিকেশন চার্চ’ গঠন করেন। মতাদর্শিক দিক থেকে গোষ্ঠীটি কমিউনিজম বিরোধী এবং পারিবারিক সংরক্ষণশীলতার পৃষ্ঠপোষক
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
৩ ঘণ্টা আগে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান নানা সমস্যা ‘অনেকটাই সমাধান হবে।’ আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেশ
১৪ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পররাষ্ট্রনীতি সব সময় একটি কঠিন ভারসাম্যের ওপর টিকে থাকে। নৈতিক বিশ্বাস আর কড়া বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ কাজ নয়। রাষ্ট্রগুলো প্রায়ই বড় বড় মূল্যবোধের কথা বলে; কিন্তু সুযোগ এলেই তারা সেই নীতির রং গা থেকে ঝেড়ে ফেলে। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক যোগাযোগ এই দ্বন্দ্বের ভালো উদাহরণ।
নয়াদিল্লিতে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর এবং বৈঠকগুলো কৌশলগত দিককে নির্দেশ করে। সেখানে মানবিক ও উন্নয়ন সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়ার ঘটনা ভারতের নৈতিক অবস্থানের দিকে চোখ খোলে।
ভারতের তালেবান সম্পর্কের তিনটি মূল কারণ। প্রথমত, ভারতের নিরাপত্তার জন্য কাবুলের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। স্থিতিশীল আফগানিস্তান সন্ত্রাসী কার্যক্রম কমাবে। এটি ভারতীয় স্বার্থের জন্য অপরিহার্য। দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের বহু বছরের উন্নয়ন সম্পর্ক আছে। ভারত বহু বছর ধরে সবচেয়ে বড় সহায়তা দিয়েছে। সহায়তা ও অবকাঠামো বজায় রাখা মানে প্রভাবও বজায় রাখা। তৃতীয়ত, এটি এক ধরনের কৌশলগত ঝুঁকি কমানো। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রমেই বাড়ছে। কাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করলে পাকিস্তান, চীন ও অন্যান্য শক্তি সুবিধা পাবে।
নয়াদিল্লি আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের কনস্যুলার সুবিধা ও মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যদিও তালেবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, ভারতের ‘টেকনিক্যাল মিশন’ উন্নত হয়ে ‘দূতাবাসে’ রূপ নিয়েছে। এটি সতর্কতা ও সম্পৃক্ততার সংকেত। তবে তালেবানদের একটি কূটনৈতিক ভুল সফরের আবহ জটিল করেছে। নয়াদিল্লিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে ভারতজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। পরে তালেবান নেতা নারী সাংবাদিকদের জন্য আলাদা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
ভারতের বর্তমান উদ্যোগ বোঝার জন্য অতীতের ইতিহাসও গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম তালেবান শাসনামলে পাকিস্তানের ভারতবিরোধী অবস্থার কারণে সমস্যা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে আইসি-৮১৪ ফ্লাইট অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কান্দাহারে। সে সময় ভারতের অবস্থান তালেবানের প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছিল। এরপর প্রায় ২৫ বছর ধরে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি।
বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব, তালেবানের কূটনৈতিক স্বাভাবিকীকরণ চেষ্টা এবং ভারতের কৌশলগত প্রয়োজন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ২০২১ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং আঞ্চলিক সমীকরণের পুনর্গঠন ভারতের নীরব কূটনীতি, মানবিক সহযোগিতা ও নির্বাচিত সমন্বয় পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ করেছে। ভারতের নিজস্ব নীতিগত ইতিহাসও আজকের বিতর্ককে ব্যাখ্যা দেয়। ১৯৭০-এর দশকে ভারত বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। ভারত তখন বিশ্বমঞ্চে নৈতিক অবস্থান দেখিয়েছে। এখন আফগান সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার পেছনে মূলত স্বার্থনির্ভর কারণ আছে।
উত্তরটি আংশিকভাবে বলপ্রয়োগ এবং আংশিকভাবে জরুরি পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয়, নিরাপত্তাহীনতা এবং নাজুক রাষ্ট্রব্যবস্থা জটিলতা বাড়িয়েছে। তবে স্বার্থ নৈতিক প্রশ্নকে মুছে দিতে পারে না।
চিন্তাশীল ভারতীয়রা কী করবে? নাগরিক উদ্বেগ বৈধ এবং প্রয়োজনীয়। কূটনৈতিক যোগাযোগ নৈতিকতার বাইরে রাখা যাবে না। চিন্তাশীলদের তিনটি দাবি একসঙ্গে রাখতে হবে: ১. সহায়তা এমনভাবে পরিচালিত হোক যা নারীদের প্রয়োজন অগ্রাধিকার দেয় এবং শিক্ষার ও স্বাস্থ্যসেবায় তাদের প্রবেশাধিকার রক্ষা করে। ২. কূটনৈতিক যোগাযোগ শর্তসাপেক্ষ, পরিমাপযোগ্য এবং প্রত্যাহারযোগ্য হোক। স্বয়ংক্রিয় স্বীকৃতি নয়। লজ্জাজনক সমঝোতা নয়। ৩. দেশের মর্যাদা বিদেশি শক্তির হাতে না হস্তান্তর করা হোক যারা লিঙ্গ সমতার নীতি উপেক্ষা করে।
ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান বাস্তবসম্মত ও নৈতিক হতে পারে যদি জবাবদিহি ব্যবস্থাও থাকে। নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও বিরোধী দল সরকারের ওপর চাপ দিতে পারে যাতে শর্তগুলো স্পষ্ট হয়। তালেবান ইস্যু সমকালীন কূটনীতির একটি পাঠ। দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব—জাতীয় স্বার্থ বনাম গণতান্ত্রিক নৈতিক মান। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, কিন্তু আমাদের বর্তমান সিদ্ধান্তকে নির্ধারণ করে না।
নয়াদিল্লির কাজ হলো নৈতিকতা ও বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা। জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক মর্যাদা উভয়ই রক্ষা করা প্রয়োজন। মহাত্মা গান্ধীর দেশ হিসেবে ভারতকে নিজের প্রতি সত্য থাকতে হবে। কারণ, মহৎ লক্ষ্য কখনো অবৈধ উপায়কে বৈধ করতে পারে না। জনগণকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে যে তাদের নামে কী বলা হচ্ছে এবং কী করা হচ্ছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে সংক্ষেপিত

পররাষ্ট্রনীতি সব সময় একটি কঠিন ভারসাম্যের ওপর টিকে থাকে। নৈতিক বিশ্বাস আর কড়া বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ কাজ নয়। রাষ্ট্রগুলো প্রায়ই বড় বড় মূল্যবোধের কথা বলে; কিন্তু সুযোগ এলেই তারা সেই নীতির রং গা থেকে ঝেড়ে ফেলে। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক যোগাযোগ এই দ্বন্দ্বের ভালো উদাহরণ।
নয়াদিল্লিতে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর এবং বৈঠকগুলো কৌশলগত দিককে নির্দেশ করে। সেখানে মানবিক ও উন্নয়ন সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়ার ঘটনা ভারতের নৈতিক অবস্থানের দিকে চোখ খোলে।
ভারতের তালেবান সম্পর্কের তিনটি মূল কারণ। প্রথমত, ভারতের নিরাপত্তার জন্য কাবুলের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। স্থিতিশীল আফগানিস্তান সন্ত্রাসী কার্যক্রম কমাবে। এটি ভারতীয় স্বার্থের জন্য অপরিহার্য। দ্বিতীয়ত, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের বহু বছরের উন্নয়ন সম্পর্ক আছে। ভারত বহু বছর ধরে সবচেয়ে বড় সহায়তা দিয়েছে। সহায়তা ও অবকাঠামো বজায় রাখা মানে প্রভাবও বজায় রাখা। তৃতীয়ত, এটি এক ধরনের কৌশলগত ঝুঁকি কমানো। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রমেই বাড়ছে। কাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করলে পাকিস্তান, চীন ও অন্যান্য শক্তি সুবিধা পাবে।
নয়াদিল্লি আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের কনস্যুলার সুবিধা ও মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যদিও তালেবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, ভারতের ‘টেকনিক্যাল মিশন’ উন্নত হয়ে ‘দূতাবাসে’ রূপ নিয়েছে। এটি সতর্কতা ও সম্পৃক্ততার সংকেত। তবে তালেবানদের একটি কূটনৈতিক ভুল সফরের আবহ জটিল করেছে। নয়াদিল্লিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে ভারতজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। পরে তালেবান নেতা নারী সাংবাদিকদের জন্য আলাদা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
ভারতের বর্তমান উদ্যোগ বোঝার জন্য অতীতের ইতিহাসও গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম তালেবান শাসনামলে পাকিস্তানের ভারতবিরোধী অবস্থার কারণে সমস্যা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে আইসি-৮১৪ ফ্লাইট অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কান্দাহারে। সে সময় ভারতের অবস্থান তালেবানের প্রতি অবিশ্বাসী হয়েছিল। এরপর প্রায় ২৫ বছর ধরে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি।
বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব, তালেবানের কূটনৈতিক স্বাভাবিকীকরণ চেষ্টা এবং ভারতের কৌশলগত প্রয়োজন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ২০২১ সালে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং আঞ্চলিক সমীকরণের পুনর্গঠন ভারতের নীরব কূটনীতি, মানবিক সহযোগিতা ও নির্বাচিত সমন্বয় পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ করেছে। ভারতের নিজস্ব নীতিগত ইতিহাসও আজকের বিতর্ককে ব্যাখ্যা দেয়। ১৯৭০-এর দশকে ভারত বর্ণবাদী দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। ভারত তখন বিশ্বমঞ্চে নৈতিক অবস্থান দেখিয়েছে। এখন আফগান সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার পেছনে মূলত স্বার্থনির্ভর কারণ আছে।
উত্তরটি আংশিকভাবে বলপ্রয়োগ এবং আংশিকভাবে জরুরি পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। আফগানিস্তানে মানবিক বিপর্যয়, নিরাপত্তাহীনতা এবং নাজুক রাষ্ট্রব্যবস্থা জটিলতা বাড়িয়েছে। তবে স্বার্থ নৈতিক প্রশ্নকে মুছে দিতে পারে না।
চিন্তাশীল ভারতীয়রা কী করবে? নাগরিক উদ্বেগ বৈধ এবং প্রয়োজনীয়। কূটনৈতিক যোগাযোগ নৈতিকতার বাইরে রাখা যাবে না। চিন্তাশীলদের তিনটি দাবি একসঙ্গে রাখতে হবে: ১. সহায়তা এমনভাবে পরিচালিত হোক যা নারীদের প্রয়োজন অগ্রাধিকার দেয় এবং শিক্ষার ও স্বাস্থ্যসেবায় তাদের প্রবেশাধিকার রক্ষা করে। ২. কূটনৈতিক যোগাযোগ শর্তসাপেক্ষ, পরিমাপযোগ্য এবং প্রত্যাহারযোগ্য হোক। স্বয়ংক্রিয় স্বীকৃতি নয়। লজ্জাজনক সমঝোতা নয়। ৩. দেশের মর্যাদা বিদেশি শক্তির হাতে না হস্তান্তর করা হোক যারা লিঙ্গ সমতার নীতি উপেক্ষা করে।
ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান বাস্তবসম্মত ও নৈতিক হতে পারে যদি জবাবদিহি ব্যবস্থাও থাকে। নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও বিরোধী দল সরকারের ওপর চাপ দিতে পারে যাতে শর্তগুলো স্পষ্ট হয়। তালেবান ইস্যু সমকালীন কূটনীতির একটি পাঠ। দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব—জাতীয় স্বার্থ বনাম গণতান্ত্রিক নৈতিক মান। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, কিন্তু আমাদের বর্তমান সিদ্ধান্তকে নির্ধারণ করে না।
নয়াদিল্লির কাজ হলো নৈতিকতা ও বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা। জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক মর্যাদা উভয়ই রক্ষা করা প্রয়োজন। মহাত্মা গান্ধীর দেশ হিসেবে ভারতকে নিজের প্রতি সত্য থাকতে হবে। কারণ, মহৎ লক্ষ্য কখনো অবৈধ উপায়কে বৈধ করতে পারে না। জনগণকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে যে তাদের নামে কী বলা হচ্ছে এবং কী করা হচ্ছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে সংক্ষেপিত

শিনজো আবের বিরুদ্ধে যে গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তার নাম ইউনিফিকেশন চার্চ। ১৯৫৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সান মিয়াং মুন বিশ্ব শান্তি এবং পুনর্মিলনের লক্ষ্যে ‘ইউনিফিকেশন চার্চ’ গঠন করেন। মতাদর্শিক দিক থেকে গোষ্ঠীটি কমিউনিজম বিরোধী এবং পারিবারিক সংরক্ষণশীলতার পৃষ্ঠপোষক
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
৩ ঘণ্টা আগে
পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকা
৮ ঘণ্টা আগে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান নানা সমস্যা ‘অনেকটাই সমাধান হবে।’ আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেশ
১৪ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান নানা সমস্যা ‘অনেকটাই সমাধান হবে’। আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই পরাশক্তির সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের পণ্যের ওপর শতভাগের বেশি প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আর বেইজিং রপ্তানি সীমিত করেছে প্রতিরক্ষা শিল্প ও এআই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য বিরল খনিজে।
গত আগস্ট থেকে বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে দুই দেশের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেছেন। গত সপ্তাহান্তে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে একটি বাণিজ্য চুক্তির কাঠামোতেও তারা একমত হন। দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে গতকাল বুধবার এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তিটি দুই দেশের জন্যই ইতিবাচক হবে এবং ‘সবার জন্য উত্তেজনাপূর্ণ কিছু নিয়ে আসবে’।
তবে প্রকৃতপক্ষে কোনো বাণিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করবে কেবল ট্রাম্প-সি বৈঠকই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি নিয়ে প্রত্যাশা খুব বেশি নয়। দুই দেশের সম্পর্কের গভীর জটিলতা এখন দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের দিকেই ইঙ্গিত করছে।
ট্রাম্প ও সি আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী বুসানে সাক্ষাৎ করবেন। বৈঠকটি স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় শুরু হয়ে গেছে। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে প্রবেশে পর দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ এটি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে জাপানের ওসাকায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে তাদের দেখা হয়েছিল।
বুধবার দক্ষিণ কোরিয়াগামী এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট সির সঙ্গে আমাদের দারুণ একটি বৈঠক হবে। অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’ একই দিনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে মতবিনিময় করবেন।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো হতে পারে—বাণিজ্য শুল্ক, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ফেন্টানিল মাদক পাচার, চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা, যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও তাইওয়ান ইস্যুতে ভূরাজনৈতিক অবস্থান, যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে চীনা জাহাজের ওপর আরোপিত বন্দর ফি এবং টিকটকের মালিকানা বিক্রি সংক্রান্ত আলোচনা।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলেহান্দ্রো রেইয়েস বলেন, উভয় পক্ষই এই বৈঠকে অস্থিতিশীল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে, তবে উদ্দেশ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের লক্ষ্য হলো প্রমাণ করা যে, তাদের কঠোর অবস্থান ফল দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও জাপানের সঙ্গে যেসব বাণিজ্য চুক্তি করেছে, সেগুলো বাজারে প্রবেশাধিকারকে জাতীয় নিরাপত্তার সহযোগিতার সঙ্গে যুক্ত করছে। এসব চুক্তিতে অংশীদার দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ শৃঙ্খলার নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বাধ্য করছে।’
রেইয়েস আরও বলেন, অন্যদিকে ‘বেইজিংয়ের লক্ষ্য শান্ত ও স্থিতিশীল ভাবমূর্তি উপস্থাপন করা। চীন সম্প্রতি সি চিনপিংয়ের ক্ষমতাকে পুনর্নিশ্চিত করেছে এবং আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করেছে। চীন এখন বার্তা দিতে চায়— তারা পশ্চিমা চাপ সামলে উঠেছে, এখন উন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।’
তবে রেইয়েসের মতে, বাণিজ্য শুল্ক, বিরল খনিজ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভূরাজনৈতিক কৌশল—এসব ইস্যু এত গভীরে প্রোথিত যে সহজে মীমাংসা হবে না। তিনি বলেন, ‘এখন অবিশ্বাস কাঠামোগত। শক্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে দুই দেশের চিন্তাভাবনাতেই সেটি প্রোথিত।’
দর-কষাকষিতে কার অবস্থান কতটা শক্ত
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার ভারসাম্য সাম্প্রতিক সময়ে বারবার বদলেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি সীমিত করেন, যা চীনের জন্য বড় ধাক্কা ছিল। চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্কারোপ করে উত্তেজনা আরও বাড়ান।
চীন পাল্টা ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসায়, যতক্ষণ না মে মাসে উভয় দেশ নতুন আলোচনার সুযোগ দিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। এর মধ্যেই চীন এপ্রিল মাসে সাতটি বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়, পরে অক্টোবর মাসে আরও পাঁচটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। জবাবে ট্রাম্প ১০০ শতাংশ নতুন শুল্কের হুমকি দেন।
চীন এদিকে সরবরাহ শৃঙ্খলা বৈচিত্র্য আনতে আসিয়ান (আসিয়ান) সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি জোরদার করেছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রও জাপান, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করেছে। বুধবার দক্ষিণ কোরিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক কমানোর একটি বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছে।
রেইয়েস বলেন, উভয় পক্ষের হাতেই ভিন্ন ধরনের শক্তি আছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন এক নতুন মিত্রজোট গড়ে তুলেছে, যারা কার্যত ওয়াশিংটনের শর্তে সই করেছে।’ মালয়েশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক চুক্তি তারই উদাহরণ। তিনি আরও বলেন, ‘তবে চীনের কাছে রয়েছে সহনশীলতা ও অর্থনৈতিক স্থিতি। তারা এখনো বিশ্ব উৎপাদনের কেন্দ্র, বিরল খনিজ প্রক্রিয়াজাতে প্রভাবশালী, এবং শুল্ক যুদ্ধেও ভেঙে পড়েনি। বরং এই যুদ্ধ তাদের আরও দক্ষ ও দ্রুত করেছে।’ তাঁর ভাষায়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হাতে উচ্চ স্বরে চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা, চীনের হাতে স্থিতিশীল সহনশক্তি। ওয়াশিংটন সংঘাত বাড়াতে পারে, কিন্তু বেইজিং টিকে থাকতে জানে।’
বৈঠকের সম্ভাব্য ফল
ট্রাম্প যদিও বৈঠককে ‘দারুণ’ বলে উল্লেখ করেছেন, বিশ্লেষকেরা খুব বড় কোনো ফলাফল আশা করছেন না। রেইয়েস বলেন, ‘বৈঠকের পর দুই পক্ষই হয়তো কিছু ছোট সাফল্যের কথা জানাবে— যেমন শুল্ক কার্যকরে বিলম্ব, বাণিজ্য স্থিতিশীলতা নিয়ে যৌথ বিবৃতি, বা বিরল খনিজ সহযোগিতায় একটি কার্যকরী কমিটি।’
তাঁর মতে, ‘এই সম্মেলন প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ করার নয়; বরং নতুন একপর্যায়ে প্রবেশের ঘোষণা। যুক্তরাষ্ট্র নতুন চুক্তির মাধ্যমে জোট গড়ছে, চীনও তাই করছে সহনশীলতা ও স্থিতিশীলতা দিয়ে। মূলত, এই বৈঠক শেখাবে— প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ করা নয়, বরং তা নিয়েই কীভাবে সহাবস্থান করা যায়।’
তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান নানা সমস্যা ‘অনেকটাই সমাধান হবে’। আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই পরাশক্তির সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের পণ্যের ওপর শতভাগের বেশি প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আর বেইজিং রপ্তানি সীমিত করেছে প্রতিরক্ষা শিল্প ও এআই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য বিরল খনিজে।
গত আগস্ট থেকে বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে দুই দেশের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেছেন। গত সপ্তাহান্তে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে একটি বাণিজ্য চুক্তির কাঠামোতেও তারা একমত হন। দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে গতকাল বুধবার এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তিটি দুই দেশের জন্যই ইতিবাচক হবে এবং ‘সবার জন্য উত্তেজনাপূর্ণ কিছু নিয়ে আসবে’।
তবে প্রকৃতপক্ষে কোনো বাণিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করবে কেবল ট্রাম্প-সি বৈঠকই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি নিয়ে প্রত্যাশা খুব বেশি নয়। দুই দেশের সম্পর্কের গভীর জটিলতা এখন দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের দিকেই ইঙ্গিত করছে।
ট্রাম্প ও সি আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী বুসানে সাক্ষাৎ করবেন। বৈঠকটি স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় শুরু হয়ে গেছে। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে প্রবেশে পর দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ এটি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে জাপানের ওসাকায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে তাদের দেখা হয়েছিল।
বুধবার দক্ষিণ কোরিয়াগামী এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট সির সঙ্গে আমাদের দারুণ একটি বৈঠক হবে। অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’ একই দিনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে মতবিনিময় করবেন।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো হতে পারে—বাণিজ্য শুল্ক, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ফেন্টানিল মাদক পাচার, চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা, যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও তাইওয়ান ইস্যুতে ভূরাজনৈতিক অবস্থান, যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে চীনা জাহাজের ওপর আরোপিত বন্দর ফি এবং টিকটকের মালিকানা বিক্রি সংক্রান্ত আলোচনা।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলেহান্দ্রো রেইয়েস বলেন, উভয় পক্ষই এই বৈঠকে অস্থিতিশীল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে, তবে উদ্দেশ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের লক্ষ্য হলো প্রমাণ করা যে, তাদের কঠোর অবস্থান ফল দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও জাপানের সঙ্গে যেসব বাণিজ্য চুক্তি করেছে, সেগুলো বাজারে প্রবেশাধিকারকে জাতীয় নিরাপত্তার সহযোগিতার সঙ্গে যুক্ত করছে। এসব চুক্তিতে অংশীদার দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ শৃঙ্খলার নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বাধ্য করছে।’
রেইয়েস আরও বলেন, অন্যদিকে ‘বেইজিংয়ের লক্ষ্য শান্ত ও স্থিতিশীল ভাবমূর্তি উপস্থাপন করা। চীন সম্প্রতি সি চিনপিংয়ের ক্ষমতাকে পুনর্নিশ্চিত করেছে এবং আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করেছে। চীন এখন বার্তা দিতে চায়— তারা পশ্চিমা চাপ সামলে উঠেছে, এখন উন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।’
তবে রেইয়েসের মতে, বাণিজ্য শুল্ক, বিরল খনিজ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভূরাজনৈতিক কৌশল—এসব ইস্যু এত গভীরে প্রোথিত যে সহজে মীমাংসা হবে না। তিনি বলেন, ‘এখন অবিশ্বাস কাঠামোগত। শক্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে দুই দেশের চিন্তাভাবনাতেই সেটি প্রোথিত।’
দর-কষাকষিতে কার অবস্থান কতটা শক্ত
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার ভারসাম্য সাম্প্রতিক সময়ে বারবার বদলেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি সীমিত করেন, যা চীনের জন্য বড় ধাক্কা ছিল। চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্কারোপ করে উত্তেজনা আরও বাড়ান।
চীন পাল্টা ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসায়, যতক্ষণ না মে মাসে উভয় দেশ নতুন আলোচনার সুযোগ দিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। এর মধ্যেই চীন এপ্রিল মাসে সাতটি বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়, পরে অক্টোবর মাসে আরও পাঁচটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। জবাবে ট্রাম্প ১০০ শতাংশ নতুন শুল্কের হুমকি দেন।
চীন এদিকে সরবরাহ শৃঙ্খলা বৈচিত্র্য আনতে আসিয়ান (আসিয়ান) সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি জোরদার করেছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রও জাপান, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করেছে। বুধবার দক্ষিণ কোরিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক কমানোর একটি বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছে।
রেইয়েস বলেন, উভয় পক্ষের হাতেই ভিন্ন ধরনের শক্তি আছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন এক নতুন মিত্রজোট গড়ে তুলেছে, যারা কার্যত ওয়াশিংটনের শর্তে সই করেছে।’ মালয়েশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক চুক্তি তারই উদাহরণ। তিনি আরও বলেন, ‘তবে চীনের কাছে রয়েছে সহনশীলতা ও অর্থনৈতিক স্থিতি। তারা এখনো বিশ্ব উৎপাদনের কেন্দ্র, বিরল খনিজ প্রক্রিয়াজাতে প্রভাবশালী, এবং শুল্ক যুদ্ধেও ভেঙে পড়েনি। বরং এই যুদ্ধ তাদের আরও দক্ষ ও দ্রুত করেছে।’ তাঁর ভাষায়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হাতে উচ্চ স্বরে চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা, চীনের হাতে স্থিতিশীল সহনশক্তি। ওয়াশিংটন সংঘাত বাড়াতে পারে, কিন্তু বেইজিং টিকে থাকতে জানে।’
বৈঠকের সম্ভাব্য ফল
ট্রাম্প যদিও বৈঠককে ‘দারুণ’ বলে উল্লেখ করেছেন, বিশ্লেষকেরা খুব বড় কোনো ফলাফল আশা করছেন না। রেইয়েস বলেন, ‘বৈঠকের পর দুই পক্ষই হয়তো কিছু ছোট সাফল্যের কথা জানাবে— যেমন শুল্ক কার্যকরে বিলম্ব, বাণিজ্য স্থিতিশীলতা নিয়ে যৌথ বিবৃতি, বা বিরল খনিজ সহযোগিতায় একটি কার্যকরী কমিটি।’
তাঁর মতে, ‘এই সম্মেলন প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ করার নয়; বরং নতুন একপর্যায়ে প্রবেশের ঘোষণা। যুক্তরাষ্ট্র নতুন চুক্তির মাধ্যমে জোট গড়ছে, চীনও তাই করছে সহনশীলতা ও স্থিতিশীলতা দিয়ে। মূলত, এই বৈঠক শেখাবে— প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ করা নয়, বরং তা নিয়েই কীভাবে সহাবস্থান করা যায়।’
তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা

শিনজো আবের বিরুদ্ধে যে গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তার নাম ইউনিফিকেশন চার্চ। ১৯৫৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সান মিয়াং মুন বিশ্ব শান্তি এবং পুনর্মিলনের লক্ষ্যে ‘ইউনিফিকেশন চার্চ’ গঠন করেন। মতাদর্শিক দিক থেকে গোষ্ঠীটি কমিউনিজম বিরোধী এবং পারিবারিক সংরক্ষণশীলতার পৃষ্ঠপোষক
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
বিরল খনিজ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের এই টানাপোড়েন আগেও ছিল। চীন বহু বছর ধরে তার বৃহত্তর শিল্পনীতির অংশ হিসেবে এই খনিজগুলোর ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই বিরল খনিজকে কেন্দ্র করে চীনের কৌশলগত বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টার বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা খেলায় নেমেছে।
৩ ঘণ্টা আগে
পশ্চিম সুদানের এল-ফাশের শহরে গণহত্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজারো মানুষকে এরই মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। শহরটি সুদানের দারফুর অঞ্চলের উত্তর প্রদেশের রাজধানী। সম্প্রতি এটি আধাসামরিক বাহিনী ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস’ (আরএসএফ) দখল করেছে। এটি মূলত সুদানের গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বহিঃপ্রকা
৮ ঘণ্টা আগে