Ajker Patrika

যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা, যুদ্ধবিরতি ও নেতৃত্ব নিয়ে যা ভাবছে ইসরায়েলিরা

আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১৯: ২১
যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা, যুদ্ধবিরতি ও নেতৃত্ব নিয়ে যা ভাবছে ইসরায়েলিরা

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলা। এতে গাজা ও পশ্চিম তীরে নিহতের সংখ্যা বেঁড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। বিশ্বের অনেক দেশ ও সংগঠন যুদ্ধবিরতির আবেদন জানালেও কর্ণপাত করেনি ইসরায়েল। সারা বিশ্ব ভাবছে যুদ্ধ কবে শেষ হবে এবং পরে গাজায় শাসনব্যবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

গত রোববার (২৯ অক্টোবর) মধ্যরাতে সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে করা এক টুইটে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস যে আকস্মিক হামলা পরিচালনা করেছিল, সে বিষয়ে ন্যূনতম আভাসও কেউ তাঁকে দিতে পারেনি। প্রকারান্তরে ওই হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহতের দায় তিনি তাঁর দেশের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দাপ্রধানদের ওপর চাপিয়ে দেন।

নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য তীব্র অসন্তোষের জন্ম দেয়। ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতারা এমন সংঘাতময় পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক কূটচাল নিয়ে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ আনেন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে। ঘটনার জল এতটাই গড়ায় যে আলোচিত ওই টুইট এক্স প্ল্যাটফর্ম থেকে মুছে দিতে বাধ্য হন তিনি। এমনকি বিষয়টির উল্লেখ করে নম্র কণ্ঠে তিনি ক্ষমাও চান এবং বলেন, ‘আমি ভুল ছিলাম।’

যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদ গঠন নিয়েও নেতানিয়াহুর সমালোচনা হচ্ছে। জিম্মি মুক্তির ব্যাপারে যার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, সেই গ্যাল হার্শকে নেতানিয়াহু দিয়েছেন হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারে দেন-দরবারের দায়িত্ব। গ্যাল হার্শ ২০০৬ সালেই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী থেকে অব্যাহতি নেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাউল কিমহি বলেন, ‘নেতানিয়াহুর সম্পর্কে কার ধারণা কেমন, সেই ভিত্তিতে যুদ্ধকালীন প্রশাসনে যোগদানের জন্য তিনি (নেতানিয়াহু) লোকদের বেছে নিচ্ছেন। তারা কাজটার জন্য কতটা উপযুক্ত তার ভিত্তিতে নয়। নেতানিয়াহুর মতোই হার্শও লিকুদ পার্টির সদস্য এবং দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন।’

ইসরায়েলের হিব্রু ভাষার সংবাদপত্র মারিভ একটি জরিপ চালিয়েছে ইসরায়েলিদের ওপর। যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা নিয়ে ইসরায়েলের ভূমিকা কী হবে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাদের ভাবনা এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও মতামত দিয়েছে তারা। 

সংঘাত শেষ হয়ে গেলে গাজায় সামরিক উপস্থিতির ক্ষেত্রে ইসরায়েলের কী করা উচিত-তা জানতে চাওয়া হলে ৪৪ শতাংশ বলেছেন, তারা গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি শাসনকে সমর্থন করে। আবার এই ৪৪ শতাংশের অর্ধেক মনে করে, গাজায় সামরিক উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা বা নতুন বসতি স্থাপনের মাধ্যমেই এই শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। অন্যদিকে, প্রায় ৪১ শতাংশ ইসরায়েলি চায়, তাদের সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকা ছেড়ে যাক।

যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে প্রায় ৫৯ শতাংশ বলেছে, তারা বন্দীদের মুক্তির লক্ষ্যে মানবিক যুদ্ধবিরতি সমর্থন করে। তবে সব জিম্মিকে মুক্তি দিলে সংঘাত থামানোর পক্ষে মত দিয়েছে এই ৫৯ শতাংশের প্রায় সবাই। গাজায় জিম্মিদের তথ্য প্রকাশ্যের বিনিময়ে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ৪ শতাংশ ইসরায়েলি

ইসরায়েলের নেতৃত্বের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল ইসরায়েলিদের। ২৬ শতাংশ ইসরায়েলি নেতানিয়াহুর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। অন্যদিকে, যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান ৫২ শতাংশ।

নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের জ্যেষ্ঠ ফেলো অ্যারন ডেভিড মিলার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলি সরকারের গড় আয়ু ১ দশমিক ৮ বছর।

তিনি আরও বলেন, ‘নেতানিয়াহু সরকারের ক্ষমতার শেষ মাস ডিসেম্বর। আমার পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন যে পরের বছর এই সময়েও তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।’

গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া নির্বিচার ইসরায়েলি হামলার কারণে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অন্তত ১৫ লাখ লোক অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তারপরও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজার অধিবাসীদের বাস্তুচ্যুত বা শাসন করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। এর আগে তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, প্রয়োজনে ইসরায়েল অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজা শাসন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত