অনলাইন ডেস্ক
প্রবাদ আছে—‘দুই হাতি মারামারি করে, ঘাসের প্রাণ যায়’। কিন্তু যখন বড় ভালুক ছোট কোনো প্রাণীকে আক্রমণ করে, তখন কী ঘটে—২০২৩ সালের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এটি। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বিশ্ববাসীকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতিমধ্যে অনেক ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পুতিন যদি এই যুদ্ধে হেরে যান, তাহলে কী হবে? রাশিয়াকে যেসব দেশ ভয় পায়, যেমন বাল্টিক দেশগুলো, তারা তখন রাশিয়াকে আগের মতো ভয়মিশ্রিত সমীহ করবে না। অন্যান্য দেশও উদ্বিগ্ন হবে, কারণ পরাজিত নেকড়ে কখন কী করে বসবে তার তো ঠিক নেই।
রাশিয়ার সঙ্গে কাজাখস্তানের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। দেশটিতে প্রচুর রুশ ভাষাভাষী সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। পুতিন কখনো তাঁর এই প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে সরাসরি হুমকি দেননি। তবে জাতীয়তাবাদী রুশ পণ্ডিতরা সব সময় তাঁকে এই সীমান্ত ভেঙে ফেলেতে উসকানি দিয়েছেন। তাঁরা সব সময় একটি ‘কাল্পনিক নিপীড়নের’ ধুয়া তুলে ওই ভূখণ্ড দখল করার জন্য পুতিনকে খোঁচা দিয়েছেন।
ইউক্রেন সম্পর্কে ওই পণ্ডিতেরা যেসব মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালান, কাজাখস্তান সম্পর্কেও একই ধরনের কুকথা প্রচার করে বেড়ান। তাঁরা বলেন, রুশ সীমান্তের কাছে কাজাখস্তানের ‘বায়োওয়ারফেয়ার ল্যাব’ আছে। কাজাখস্তান তাদের একটি স্কুলে রুশ ভাষা নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে। এসব উদ্যোগ রাশিয়ার জন্য ভবিষ্যতে বিপদ ডেকে আনবে।
জাতীয়তাবাদী পণ্ডিতদের এসব কথায় পুতিন কাজাখস্তানকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারেন। আবার ইউক্রেনে যেভাবে অযাচিত আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়া, তাতে এই ইঙ্গিত স্পষ্ট যে মস্কো শাসিত কোনো দেশই নিরাপদ নয়। ন্যাটোর সঙ্গে যারাই ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করবে, তাদেরই এক হাত দেখে নেবে রাশিয়া। সম্প্রতি জর্জিয়া ও মলদোভা ন্যাটোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পড়ে তুলেতে আগ্রহী হয়েছে। অন্যদিকে, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের মতো যেসব দেশের ন্যাটোর কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তারা চীনের দিকে ঝুঁকছে। তারা মনে করছে, তাদের ভূখণ্ডে যদি চীনা রেলওয়ে ও কারখানা থাকে, তবে রুশ আক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকবে। তবে এই ২০২৩ সালে একমাত্র ইরানই হয়তো রাশিয়ার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবে। কারণ তাদের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একজন বন্ধু প্রয়োজন এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার প্রয়োজন।
রাশিয়া যেসব দেশকে নানাভাবে সাহায্য-সমর্থন দিয়ে থাকে, তাদের জন্যও এ বছর কঠিন হবে। বেলারুশের স্বৈরাচারী শাসক আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো কার্যত পুতিনের খুঁটির জোরেই ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছেন। এর বিনিময়ে তিনি ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর জন্য পুতিনকে বেলারুশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দিয়েছেন। রাশিয়া এ অঞ্চলকে ‘লঞ্চপ্যাড’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল, তবে তাদের সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে।
রাশিয়াকে নিজের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দিয়ে নিজ দেশের মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন লুকাশেঙ্কো। তিনি নির্বাচনে কারচুপি করে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন—এমন একটি অবজ্ঞাসূচক মনোভাব বেলারুশের মানুষের মধ্যে তীব্র হচ্ছে। একদিকে নিজে দেশে ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারানো, অন্যদিকে পুতিনের পক্ষ থেকে ক্রমাগত চাপ—দুয়ে মিলে লুকাশেঙ্কোর ক্ষমতার চেয়ার নড়ে উঠতে পারে এ বছর। আর ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বেলারুশ।
ওদিকে আফ্রিকায় কী হচ্ছে? মালির স্বৈরাচারী শাসককে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন পুতিন। শুধু তাই নয়, ওয়াগনারের মাধ্যমে ভাড়াটে সৈন্যও সরবরাহ করে লিবিয়ার যুদ্ধবাজ সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই ভাবছেন, এর পেছনে রাশিয়ার স্বার্থ কী? ব্যাপারটি অস্পষ্ট হলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, আফ্রিকার ভূগর্ভস্থ খনিজ তেলের জন্যই রাশিয়ার এই সমর্থন।
যুদ্ধের কারণে জ্বালানির বাজারে যত দিন লঙ্কাকাণ্ড চলবে, তত দিন জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে থাকবে। জ্বালানি উৎপাদনকারী একটি বৃহৎ দেশ সৌদি আরব। দেশটি মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করতে এবং অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে এ বছর চাপের মধ্যে থাকবে। ফলে অন্যান্য জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলো লাভবান হবে। ইউরোপের দেশগুলো ইতিমধ্যে গ্যাসের জন্য কাতারের দিকে ঝুঁকেছে। ইসলামপন্থীদের সমর্থনকে কেন্দ্র করে একসময় কাতারের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত ছিল যে মিশর, সেই মিশরও এখন আর্থিক সহায়তার আশায় কাতারের সঙ্গে কোলাকুলি করতে শুরু করেছে।
এ বছর খাদ্যের উচ্চমূল্য থেকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা যায়। কিছুদিন আগে জ্বালানির সংকট, অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা কারণে শ্রীলঙ্কায় আমরা বিক্ষোভ হতে দেখেছি এবং দেশটির প্রেসিডেন্টকে উৎখাত হতে দেখেছি।
খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের কারণে পাকিস্তান ও তিউনিসিয়ার সরকার অজনপ্রিয় হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর যদি খাদ্যদ্রব্যের দাম কমে, তাহলে পাকিস্তান ও তিউনিসিয়ার মতো দেশগুলোতে হয়তো অস্থিরতা কমবে। আবার এ বছর বেশ কয়েকটি দেশে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যেমন নাইজেরিয়া ও তুরস্ক। এসব দেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা বাড়তে পারে।
লক্ষ্য করার মতো বিষয় হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে নানাভাবে সুবিধা আদায় করতে চাইছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে গেলে সিরিয়া ও দক্ষিণ ককেশাসের মতো তুরস্কের সঙ্গেও রাশিয়ার সম্পর্ক নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে। আর্মেনিয়ার সঙ্গে ভূখণ্ড নিয়ে লড়াই করছে তুরস্ক। যদি আর্মেনিয়াকে সমর্থন দেয় রাশিয়া, তাহলে এরদোয়ানও আজারবাইজানের প্রতি সমর্থন জোরদার করবেন।
এরদোয়ান এক রহস্যময় চরিত্র। পুতিন যদি ইউক্রেন যুদ্ধ টানতেই থাকেন, এরদোয়ান সম্ভবত দুই পক্ষের সঙ্গেই খেলা চালিয়ে যাবেন। তিনি রুশ পর্যটকদের তাঁর দেশে স্বাগত জানাবেন অর্থের জন্য, বিনিময়ে মস্কোর কাছ থেকে গ্যাস নেবেন। আবার ইউক্রেনের কাছেও অস্ত্র বিক্রি করবেন। অন্যদিকে কৃষ্ণসাগরে রুশ যুদ্ধজাহাজের প্রবেশ ঠেকানোর জন্য পশ্চিমাদের কাছ থেকে ক্রেডিটও নেবেন। আগামী জুনে তুরস্কে নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনে এরদোয়ান যদি হেরেও যান, তবে তাঁর উত্তরসূরি এসে বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে এরদোয়ানের দেখানো পথই অনুসরণ করবে বলে ধারণা করা যায়।
সামগ্রিকভাবে একটি বিষয় স্পষ্ট, সেটি হচ্ছে, ইউক্রেনে পুতিনের আপাত হোঁচট দেশে দেশে স্বৈরাচারীদের যুদ্ধের ব্যাপারে সতর্ক করে তুলেছে। তারা যুদ্ধ শুরু করার আগে দ্বিতীয়বার পুতিনের পরিণতি ভাববেন। ইউক্রেনকে যাঁরা সমর্থন দিচ্ছেন, তাঁরা হয়তো এ বছর তাঁদের সমর্থন আরও বাড়াবেন। কোনো আগ্রাসনেই অর্থের জোগান দেওয়া উচিত নয়, এমনকি কেউ অর্থ দিচ্ছেন, সেটি দেখাও উচিত নয়। পুতিন যদি এই যুদ্ধে হেরে যান, তাহলে পৃথিবীতে দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি নেমে আসবে বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা।
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফ ইসলাম
প্রবাদ আছে—‘দুই হাতি মারামারি করে, ঘাসের প্রাণ যায়’। কিন্তু যখন বড় ভালুক ছোট কোনো প্রাণীকে আক্রমণ করে, তখন কী ঘটে—২০২৩ সালের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এটি। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বিশ্ববাসীকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতিমধ্যে অনেক ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পুতিন যদি এই যুদ্ধে হেরে যান, তাহলে কী হবে? রাশিয়াকে যেসব দেশ ভয় পায়, যেমন বাল্টিক দেশগুলো, তারা তখন রাশিয়াকে আগের মতো ভয়মিশ্রিত সমীহ করবে না। অন্যান্য দেশও উদ্বিগ্ন হবে, কারণ পরাজিত নেকড়ে কখন কী করে বসবে তার তো ঠিক নেই।
রাশিয়ার সঙ্গে কাজাখস্তানের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। দেশটিতে প্রচুর রুশ ভাষাভাষী সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। পুতিন কখনো তাঁর এই প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে সরাসরি হুমকি দেননি। তবে জাতীয়তাবাদী রুশ পণ্ডিতরা সব সময় তাঁকে এই সীমান্ত ভেঙে ফেলেতে উসকানি দিয়েছেন। তাঁরা সব সময় একটি ‘কাল্পনিক নিপীড়নের’ ধুয়া তুলে ওই ভূখণ্ড দখল করার জন্য পুতিনকে খোঁচা দিয়েছেন।
ইউক্রেন সম্পর্কে ওই পণ্ডিতেরা যেসব মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালান, কাজাখস্তান সম্পর্কেও একই ধরনের কুকথা প্রচার করে বেড়ান। তাঁরা বলেন, রুশ সীমান্তের কাছে কাজাখস্তানের ‘বায়োওয়ারফেয়ার ল্যাব’ আছে। কাজাখস্তান তাদের একটি স্কুলে রুশ ভাষা নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে। এসব উদ্যোগ রাশিয়ার জন্য ভবিষ্যতে বিপদ ডেকে আনবে।
জাতীয়তাবাদী পণ্ডিতদের এসব কথায় পুতিন কাজাখস্তানকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারেন। আবার ইউক্রেনে যেভাবে অযাচিত আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়া, তাতে এই ইঙ্গিত স্পষ্ট যে মস্কো শাসিত কোনো দেশই নিরাপদ নয়। ন্যাটোর সঙ্গে যারাই ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করবে, তাদেরই এক হাত দেখে নেবে রাশিয়া। সম্প্রতি জর্জিয়া ও মলদোভা ন্যাটোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পড়ে তুলেতে আগ্রহী হয়েছে। অন্যদিকে, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের মতো যেসব দেশের ন্যাটোর কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তারা চীনের দিকে ঝুঁকছে। তারা মনে করছে, তাদের ভূখণ্ডে যদি চীনা রেলওয়ে ও কারখানা থাকে, তবে রুশ আক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকবে। তবে এই ২০২৩ সালে একমাত্র ইরানই হয়তো রাশিয়ার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবে। কারণ তাদের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একজন বন্ধু প্রয়োজন এবং গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার প্রয়োজন।
রাশিয়া যেসব দেশকে নানাভাবে সাহায্য-সমর্থন দিয়ে থাকে, তাদের জন্যও এ বছর কঠিন হবে। বেলারুশের স্বৈরাচারী শাসক আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো কার্যত পুতিনের খুঁটির জোরেই ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছেন। এর বিনিময়ে তিনি ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর জন্য পুতিনকে বেলারুশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দিয়েছেন। রাশিয়া এ অঞ্চলকে ‘লঞ্চপ্যাড’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল, তবে তাদের সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে।
রাশিয়াকে নিজের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দিয়ে নিজ দেশের মানুষের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন লুকাশেঙ্কো। তিনি নির্বাচনে কারচুপি করে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন—এমন একটি অবজ্ঞাসূচক মনোভাব বেলারুশের মানুষের মধ্যে তীব্র হচ্ছে। একদিকে নিজে দেশে ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারানো, অন্যদিকে পুতিনের পক্ষ থেকে ক্রমাগত চাপ—দুয়ে মিলে লুকাশেঙ্কোর ক্ষমতার চেয়ার নড়ে উঠতে পারে এ বছর। আর ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বেলারুশ।
ওদিকে আফ্রিকায় কী হচ্ছে? মালির স্বৈরাচারী শাসককে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন পুতিন। শুধু তাই নয়, ওয়াগনারের মাধ্যমে ভাড়াটে সৈন্যও সরবরাহ করে লিবিয়ার যুদ্ধবাজ সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই ভাবছেন, এর পেছনে রাশিয়ার স্বার্থ কী? ব্যাপারটি অস্পষ্ট হলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, আফ্রিকার ভূগর্ভস্থ খনিজ তেলের জন্যই রাশিয়ার এই সমর্থন।
যুদ্ধের কারণে জ্বালানির বাজারে যত দিন লঙ্কাকাণ্ড চলবে, তত দিন জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলো তাদের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে থাকবে। জ্বালানি উৎপাদনকারী একটি বৃহৎ দেশ সৌদি আরব। দেশটি মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করতে এবং অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে এ বছর চাপের মধ্যে থাকবে। ফলে অন্যান্য জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলো লাভবান হবে। ইউরোপের দেশগুলো ইতিমধ্যে গ্যাসের জন্য কাতারের দিকে ঝুঁকেছে। ইসলামপন্থীদের সমর্থনকে কেন্দ্র করে একসময় কাতারের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত ছিল যে মিশর, সেই মিশরও এখন আর্থিক সহায়তার আশায় কাতারের সঙ্গে কোলাকুলি করতে শুরু করেছে।
এ বছর খাদ্যের উচ্চমূল্য থেকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা যায়। কিছুদিন আগে জ্বালানির সংকট, অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা কারণে শ্রীলঙ্কায় আমরা বিক্ষোভ হতে দেখেছি এবং দেশটির প্রেসিডেন্টকে উৎখাত হতে দেখেছি।
খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের কারণে পাকিস্তান ও তিউনিসিয়ার সরকার অজনপ্রিয় হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর যদি খাদ্যদ্রব্যের দাম কমে, তাহলে পাকিস্তান ও তিউনিসিয়ার মতো দেশগুলোতে হয়তো অস্থিরতা কমবে। আবার এ বছর বেশ কয়েকটি দেশে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যেমন নাইজেরিয়া ও তুরস্ক। এসব দেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা বাড়তে পারে।
লক্ষ্য করার মতো বিষয় হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে নানাভাবে সুবিধা আদায় করতে চাইছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে গেলে সিরিয়া ও দক্ষিণ ককেশাসের মতো তুরস্কের সঙ্গেও রাশিয়ার সম্পর্ক নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে। আর্মেনিয়ার সঙ্গে ভূখণ্ড নিয়ে লড়াই করছে তুরস্ক। যদি আর্মেনিয়াকে সমর্থন দেয় রাশিয়া, তাহলে এরদোয়ানও আজারবাইজানের প্রতি সমর্থন জোরদার করবেন।
এরদোয়ান এক রহস্যময় চরিত্র। পুতিন যদি ইউক্রেন যুদ্ধ টানতেই থাকেন, এরদোয়ান সম্ভবত দুই পক্ষের সঙ্গেই খেলা চালিয়ে যাবেন। তিনি রুশ পর্যটকদের তাঁর দেশে স্বাগত জানাবেন অর্থের জন্য, বিনিময়ে মস্কোর কাছ থেকে গ্যাস নেবেন। আবার ইউক্রেনের কাছেও অস্ত্র বিক্রি করবেন। অন্যদিকে কৃষ্ণসাগরে রুশ যুদ্ধজাহাজের প্রবেশ ঠেকানোর জন্য পশ্চিমাদের কাছ থেকে ক্রেডিটও নেবেন। আগামী জুনে তুরস্কে নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনে এরদোয়ান যদি হেরেও যান, তবে তাঁর উত্তরসূরি এসে বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে এরদোয়ানের দেখানো পথই অনুসরণ করবে বলে ধারণা করা যায়।
সামগ্রিকভাবে একটি বিষয় স্পষ্ট, সেটি হচ্ছে, ইউক্রেনে পুতিনের আপাত হোঁচট দেশে দেশে স্বৈরাচারীদের যুদ্ধের ব্যাপারে সতর্ক করে তুলেছে। তারা যুদ্ধ শুরু করার আগে দ্বিতীয়বার পুতিনের পরিণতি ভাববেন। ইউক্রেনকে যাঁরা সমর্থন দিচ্ছেন, তাঁরা হয়তো এ বছর তাঁদের সমর্থন আরও বাড়াবেন। কোনো আগ্রাসনেই অর্থের জোগান দেওয়া উচিত নয়, এমনকি কেউ অর্থ দিচ্ছেন, সেটি দেখাও উচিত নয়। পুতিন যদি এই যুদ্ধে হেরে যান, তাহলে পৃথিবীতে দীর্ঘ মেয়াদে শান্তি নেমে আসবে বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা।
তথ্যসূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফ ইসলাম
হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভূত বিলিয়নিয়ার জর্জ সরোসের ছেলে অ্যালেক্স সরোস ঢাকায় নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এই বৈঠক এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশে সমস্ত আর্থিক সহায়তা স্থগিত করেছেন। এর ফলে বাংলাদেশেও মার্কিন সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে।
১ দিন আগেহাংঝৌভিত্তিক এই স্টার্টআপ বা উদ্যোগটি দাবি করেছে, তারা ডিপসিক আর১ মডেলটি সিলিকন ভ্যালির সাম্প্রতিকতম মডেলগুলোর তুলনায় অনেক কম খরচে তৈরি করেছে। এই ঘোষণা এআই দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্য ও শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর...
৩ দিন আগে২০১১ সালে টেক্সাসের অস্টিন থেকে আসা একজন ইগল স্কাউট রস উলব্রিচট ‘সিল্ক রোড’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি অনলাইন কালোবাজার, যেখানে মাদক, অর্থ পাচার এবং সাইবার অপরাধমূলক লেনদেন পরিচালিত হতো। ২০১৩ সালে তাঁর গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত সাইটটি কয়েক মিলিয়ন ডলারের রাজস্ব সংগ্রহ করেছিল।
৪ দিন আগেঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি বাংলাদেশে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এর মাধ্যমে ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে চলা শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতার অবসান ঘটে।
৮ দিন আগে