চীনে সি চিন পিংয়ের টানা এক দশকের শাসনে দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌবাহিনী গড়েছে। এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম স্থায়ী সেনাবাহিনী গঠনের দিকে এবং প্রতিপক্ষের কপালে ভাঁজ ধরাতে পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক অস্ত্রের বিশাল সংগ্রহও নিশ্চিত করেছে। চীনের এমন সমরসজ্জা প্রতিবেশী প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নামতে বাধ্য করেছে। ফলে সি চিন পিংয়ের পরবর্তী পাঁচ বছরের শাসনামলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা দ্রুত বাড়তে যাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের পরপরই গভীর সমুদ্র উপযোগী নৌবাহিনী তৈরি করছে দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন কিনছে অস্ট্রেলিয়া। কেবল এ দুটি দেশই নয়, চীনের প্রতিবেশী অনেক দেশই সমর ব্যয় বাড়িয়েছে। লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ জানিয়েছে, গত বছর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সম্মিলিত সামরিক ব্যয় ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বিগত এক দশকে চীন, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম তাদের সামরিক ব্যয় দ্বিগুণ করেছে। পিছিয়ে নেই দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত কিংবা পাকিস্তানও। এমনকি জাপানের মতো দেশও দীর্ঘদিনের ‘আগে আক্রমণ নয়’ নীতি ভেঙে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
চীনের সমরসজ্জা অশান্ত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্ম দিতে যাচ্ছে এবং এটি মূলত চীনের কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক এবং অস্ট্রেলিয়ার সাবেক সেনা কর্মকর্তা ম্যালকম ডেভিস বলেছেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সব মূল খেলোয়াড়ই মূলত চীনের সামরিক আধুনিকীকরণের প্রতিক্রিয়ায় তাদের সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব তারা বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’
একটা সময় ছিল, যখন চীনের পিপল’স লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) কাছে যথেষ্ট অস্ত্র ছিল না, লোকবল ছিল না। তখন ইতিহাসবিদেরা তাদের ‘বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক জাদুঘর’ বলে আখ্যা দিতেন। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, কোরীয় যুদ্ধে প্রায় ২ লাখ চীনা সৈন্য প্রাণ হারায়। ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধেও প্রাণ হারায় কয়েক লাখ সেনা। কিন্তু ইতিহাসের পাতা থেকে প্রাণহানির বিষয়টি মুছে ফেলা হয়েছে। সেই দিন আর নেই। পুরোনো সোভিয়েত আমলের অস্ত্রের নির্ভরতা এবং দুর্নীতির কালো ছায়া পেছনে ফেলে দারুণভাবে নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে।
২০১৩ সালে সি চিন পিং ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই পিএলএতে সংস্কার চলমান ছিল। শুরু হয়েছিল মূলত ১৯৯০-এর দশকে চীনা প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিনের সময়। সে সময় উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং তৃতীয় তাইওয়ান প্রণালি সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা জিয়াং জেমিনকে হতবাক করে দিয়েছিল। তবে আসল প্রক্রিয়া শুরু হয় সি চিন পিংয়ের আমলেই। এ বিষয়ে স্ট্র্যাটেজিক কনসালট্যান্ট আলেক্সান্ডার নিল এএফপিকে বলেছেন, ‘সি চিন পিং ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল না। তিনি আসার পরই সেই প্রচেষ্টা সক্ষমতায় বদলে যাওয়া শুরু হয়।’
সে সময়ে পিএলএর একটি মাত্র বিমানবাহী রণতরী ছিল। তাও সেটি ছিল ইউক্রেনের কাছ থেকে আনা। এরপর টানা ২৭ বছর ধরে সামরিক বাজেট বৃদ্ধি করেছে চীন। এর ফলাফল হলো—চীনের কাছে বর্তমানে দুটি বিমানবাহী রণতরী, কয়েক শ দূর ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কয়েক হাজার যুদ্ধবিমান রয়েছে। দেশটির নৌবাহিনীর আকার যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই গত আগস্টে চীন যখন তাইওয়ানকে ঘিরে সামরিক মহড়া চালায়, তখন শীর্ষ এক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, আসল বিষয়টির ধাক্কা সামলানো ওয়াশিংটনের জন্য খুব একটা সহজ হবে না।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের কমান্ডার কার্ল থমাসও। তিনি মার্কিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের নৌবাহিনী খুবই বড়। তারা যদি তাইওয়ানের চারপাশে নিজেদের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রাখতে চায় এবং অন্য দেশকে উত্তেজিত করতে চায়, খুব সহজেই তা করতে পারবে।’ নৌবাহিনীর আকার বাড়িয়েই ক্ষান্ত থাকেনি চীন, পাশাপাশি বাড়িয়েছে পারমাণবিকসহ বিভিন্ন কৌশলগত অস্ত্রের মজুতও। পেন্টাগনের মতে, চীন এসব অস্ত্র স্থল, নৌ এবং আকাশ যেকোনো জায়গা থেকেই ব্যবহার করতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টের মতে, চীনের কাছে অন্তত সাড়ে ৩০০ পরমাণু অস্ত্র রয়েছে যা স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুমান, ২০২৭ সালের মধ্যে চীনের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বেড়ে ৭০০ ছাড়িয়ে যাবে।
চীনের উত্থান ও শক্তি অর্জন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে দেশটি চীনকেই একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করছে। বিষয়টি স্পষ্ট হয় গত বছর পেন্টাগন প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীনই একমাত্র প্রতিযোগী, যা তার অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত শক্তিকে একত্র করে স্থিতিশীল ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য একটি টেকসই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে সক্ষম।’ ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বেইজিং তার কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা এবং জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে খাপ খায় এমনভাবে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চায়।’
যা হোক, এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আশপাশে অনেক দেশই বড় ধরনের সামরিক প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, যার স্পষ্ট অর্থ হলো চীনের প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আনা। এ লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি গভীর সমুদ্রে কাজ করতে সক্ষম নৌবাহিনী বিকাশের পরিকল্পনা করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার এই পরিকল্পনার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সশস্ত্র হয়ে ওঠার সম্পর্ক নেই খুব একটা, যতটা রয়েছে চীনের সশস্ত্র হয়ে ওঠার সঙ্গে।
কেবল দক্ষিণ কোরিয়া নয়, অস্ট্রেলিয়াও তথাকথিত অকাস (AUKUS) চুক্তির মাধ্যমে সামরিক খাতে ব্রিটিশ ও মার্কিন সহায়তা নিচ্ছে। সহায়তার তালিকায় রয়েছে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন ক্রয়, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য পানির নিচে থাকতে পারে এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণের জবাবে পাল্টা আক্রমণ করতে পারে। এ ছড়া, বিভিন্ন হাইপারসনিক অস্ত্র, দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি অত্যাধুনিক বি-২১ স্টেলথ বোমারু বিমান, যা কার্যত নিজেকে লুকিয়ে রেখে বিশ্বের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম তা কিনতেও ক্যানবেরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ম্যালকম ডেভিসের মতে, এই প্রকল্পগুলো এটিই নির্দেশ করে যে চীন তার ইচ্ছা অনুসারে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর আধিপত্যের দিন দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।’ তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন মিত্ররা সেই অনুযায়ী নিজেদের নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করছে। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সি জিনপিং না থাকলে অকাস থাকত না। সেই অর্থে বলা যায় তিনি আমাদের বিশাল উপকার করেছেন।’
এএফপি থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
চীনে সি চিন পিংয়ের টানা এক দশকের শাসনে দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌবাহিনী গড়েছে। এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম স্থায়ী সেনাবাহিনী গঠনের দিকে এবং প্রতিপক্ষের কপালে ভাঁজ ধরাতে পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক অস্ত্রের বিশাল সংগ্রহও নিশ্চিত করেছে। চীনের এমন সমরসজ্জা প্রতিবেশী প্রতিপক্ষ দেশগুলোকে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নামতে বাধ্য করেছে। ফলে সি চিন পিংয়ের পরবর্তী পাঁচ বছরের শাসনামলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা দ্রুত বাড়তে যাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের পরপরই গভীর সমুদ্র উপযোগী নৌবাহিনী তৈরি করছে দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন কিনছে অস্ট্রেলিয়া। কেবল এ দুটি দেশই নয়, চীনের প্রতিবেশী অনেক দেশই সমর ব্যয় বাড়িয়েছে। লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ জানিয়েছে, গত বছর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সম্মিলিত সামরিক ব্যয় ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
বিগত এক দশকে চীন, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম তাদের সামরিক ব্যয় দ্বিগুণ করেছে। পিছিয়ে নেই দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত কিংবা পাকিস্তানও। এমনকি জাপানের মতো দেশও দীর্ঘদিনের ‘আগে আক্রমণ নয়’ নীতি ভেঙে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
চীনের সমরসজ্জা অশান্ত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্ম দিতে যাচ্ছে এবং এটি মূলত চীনের কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক এবং অস্ট্রেলিয়ার সাবেক সেনা কর্মকর্তা ম্যালকম ডেভিস বলেছেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সব মূল খেলোয়াড়ই মূলত চীনের সামরিক আধুনিকীকরণের প্রতিক্রিয়ায় তাদের সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব তারা বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’
একটা সময় ছিল, যখন চীনের পিপল’স লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) কাছে যথেষ্ট অস্ত্র ছিল না, লোকবল ছিল না। তখন ইতিহাসবিদেরা তাদের ‘বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক জাদুঘর’ বলে আখ্যা দিতেন। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, কোরীয় যুদ্ধে প্রায় ২ লাখ চীনা সৈন্য প্রাণ হারায়। ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধেও প্রাণ হারায় কয়েক লাখ সেনা। কিন্তু ইতিহাসের পাতা থেকে প্রাণহানির বিষয়টি মুছে ফেলা হয়েছে। সেই দিন আর নেই। পুরোনো সোভিয়েত আমলের অস্ত্রের নির্ভরতা এবং দুর্নীতির কালো ছায়া পেছনে ফেলে দারুণভাবে নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে।
২০১৩ সালে সি চিন পিং ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই পিএলএতে সংস্কার চলমান ছিল। শুরু হয়েছিল মূলত ১৯৯০-এর দশকে চীনা প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিনের সময়। সে সময় উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং তৃতীয় তাইওয়ান প্রণালি সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা জিয়াং জেমিনকে হতবাক করে দিয়েছিল। তবে আসল প্রক্রিয়া শুরু হয় সি চিন পিংয়ের আমলেই। এ বিষয়ে স্ট্র্যাটেজিক কনসালট্যান্ট আলেক্সান্ডার নিল এএফপিকে বলেছেন, ‘সি চিন পিং ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত প্রচেষ্টা যথেষ্ট ছিল না। তিনি আসার পরই সেই প্রচেষ্টা সক্ষমতায় বদলে যাওয়া শুরু হয়।’
সে সময়ে পিএলএর একটি মাত্র বিমানবাহী রণতরী ছিল। তাও সেটি ছিল ইউক্রেনের কাছ থেকে আনা। এরপর টানা ২৭ বছর ধরে সামরিক বাজেট বৃদ্ধি করেছে চীন। এর ফলাফল হলো—চীনের কাছে বর্তমানে দুটি বিমানবাহী রণতরী, কয়েক শ দূর ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কয়েক হাজার যুদ্ধবিমান রয়েছে। দেশটির নৌবাহিনীর আকার যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই গত আগস্টে চীন যখন তাইওয়ানকে ঘিরে সামরিক মহড়া চালায়, তখন শীর্ষ এক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, আসল বিষয়টির ধাক্কা সামলানো ওয়াশিংটনের জন্য খুব একটা সহজ হবে না।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরের কমান্ডার কার্ল থমাসও। তিনি মার্কিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের নৌবাহিনী খুবই বড়। তারা যদি তাইওয়ানের চারপাশে নিজেদের যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রাখতে চায় এবং অন্য দেশকে উত্তেজিত করতে চায়, খুব সহজেই তা করতে পারবে।’ নৌবাহিনীর আকার বাড়িয়েই ক্ষান্ত থাকেনি চীন, পাশাপাশি বাড়িয়েছে পারমাণবিকসহ বিভিন্ন কৌশলগত অস্ত্রের মজুতও। পেন্টাগনের মতে, চীন এসব অস্ত্র স্থল, নৌ এবং আকাশ যেকোনো জায়গা থেকেই ব্যবহার করতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টের মতে, চীনের কাছে অন্তত সাড়ে ৩০০ পরমাণু অস্ত্র রয়েছে যা স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুমান, ২০২৭ সালের মধ্যে চীনের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা বেড়ে ৭০০ ছাড়িয়ে যাবে।
চীনের উত্থান ও শক্তি অর্জন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে দেশটি চীনকেই একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করছে। বিষয়টি স্পষ্ট হয় গত বছর পেন্টাগন প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীনই একমাত্র প্রতিযোগী, যা তার অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত শক্তিকে একত্র করে স্থিতিশীল ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য একটি টেকসই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে সক্ষম।’ ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘বেইজিং তার কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা এবং জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে খাপ খায় এমনভাবে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চায়।’
যা হোক, এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আশপাশে অনেক দেশই বড় ধরনের সামরিক প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, যার স্পষ্ট অর্থ হলো চীনের প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আনা। এ লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি গভীর সমুদ্রে কাজ করতে সক্ষম নৌবাহিনী বিকাশের পরিকল্পনা করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার এই পরিকল্পনার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সশস্ত্র হয়ে ওঠার সম্পর্ক নেই খুব একটা, যতটা রয়েছে চীনের সশস্ত্র হয়ে ওঠার সঙ্গে।
কেবল দক্ষিণ কোরিয়া নয়, অস্ট্রেলিয়াও তথাকথিত অকাস (AUKUS) চুক্তির মাধ্যমে সামরিক খাতে ব্রিটিশ ও মার্কিন সহায়তা নিচ্ছে। সহায়তার তালিকায় রয়েছে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন ক্রয়, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য পানির নিচে থাকতে পারে এবং প্রতিপক্ষের আক্রমণের জবাবে পাল্টা আক্রমণ করতে পারে। এ ছড়া, বিভিন্ন হাইপারসনিক অস্ত্র, দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি অত্যাধুনিক বি-২১ স্টেলথ বোমারু বিমান, যা কার্যত নিজেকে লুকিয়ে রেখে বিশ্বের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম তা কিনতেও ক্যানবেরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ম্যালকম ডেভিসের মতে, এই প্রকল্পগুলো এটিই নির্দেশ করে যে চীন তার ইচ্ছা অনুসারে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। তিনি বলেন, ‘পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর আধিপত্যের দিন দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।’ তবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন মিত্ররা সেই অনুযায়ী নিজেদের নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করছে। অস্ট্রেলিয়ার সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সি জিনপিং না থাকলে অকাস থাকত না। সেই অর্থে বলা যায় তিনি আমাদের বিশাল উপকার করেছেন।’
এএফপি থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সাম্প্রতিক বেলুচ বিদ্রোহীদের প্রতি হুঁশিয়ারি অনেকের কাছে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি মনে হচ্ছে—ঠিক যেমনটা করেছিলেন ইয়াহিয়া খান, ১৯৭১ সালে। বিভাজন, দমন ও অস্বীকারের সেই পুরোনো কৌশলই যেন ফিরে এসেছে নতুন ইউনিফর্মে। ইতিহাস আবার প্রশ্ন করছে—পাকিস্তান কি কিছুই শিখল না?
১৪ ঘণ্টা আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বাণিজ্য যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির বেশ কিছু নজির রয়েছে। উনিশ শতকের শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ছয়টি অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা বলতে ছয় বা তার বেশি ত্রৈমাসিক পর্যন্ত টানা অর্থনৈতিক সংকোচন বোঝানো হয়। যদিও এর কোনো সর্বজনীন সংজ্ঞা নেই।
১৮ ঘণ্টা আগেমার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি দ্রুত অগ্রগতির কোনো ইঙ্গিত না পান, তাহলে কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াবেন। ট্রাম্পের এমন মনোভাব নিয়ে এখন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
৩ দিন আগেট্রাম্পের শুল্ক ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির জন্য বিশাল ধাক্কা। এই দেশগুলো চিপস থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে জড়িত। তারা এখন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দ্বন্দ্বের মাঝে আটকা পড়েছে। যেখানে চীন তাদের শক্তিশালী প্রতিবেশী ও সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার।
৩ দিন আগে