Ajker Patrika

কলিম শরাফী

সম্পাদকীয়
কলিম শরাফী

রক্ষণশীল পরিবার থেকে উঠে এসেছিলেন কলিম শরাফী। তবু সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আজীবন সক্রিয় ছিলেন। রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও সংগঠক হিসেবে পরিচিত হলেও তাঁর কর্মপ্রবাহ ছিল বৈচিত্র্যময়। তাঁর পুরো নাম মাখদুমজাদা শাহ সৈয়দ কলিম আহমেদ শরাফী। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার খয়রাডিহি গ্রামে তাঁর জন্ম।

তিনি শৈশবেই মাতৃহারা হন। ফলে কিছুটা বাউন্ডুলেপনার ভেতর দিয়ে তাঁর ছোটবেলা কেটেছিল। স্কুলজীবনে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনে তিনি যে ভূমিকা রেখেছিলেন, তার জন্য সুভাষচন্দ্র বসুর প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষে ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনে যোগ দিয়ে প্রথম কারাবরণ করেন। এগারো মাস জেলে থাকাকালে রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা শুরু করেন। রাজনীতি-সংশ্লিষ্টতার কারণে ভর্তি হতে পারেননি শান্তিনিকেতনে। পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময় আবার গণসংগীতের সঙ্গে সখ্য শুরু হয় তাঁর। অংশ নেন লঙ্গরখানার স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। এ সময় পরিচয় ঘটে কমরেড মুজাফ্ফর আহমদের সঙ্গে। তাঁর প্রভাবেই কমিউনিস্ট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।

১৯৪৩ সালে যোগ দিয়েছিলেন ভারতের গণনাট্য সংঘে। ১৯৪৫ সালে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু আর্থিক কারণে মেডিকেলের পড়া ছেড়ে দিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন। ১৯৪৮ সালে নীতিগত বিরোধের কারণে গণনাট্য সংঘ থেকে বেরিয়ে গঠন করেন নাট্য সংস্থা ‘বহুরূপী’। এইচএমভি থেকে একই বছর বের হয় তাঁর গণসংগীতের একটি অ্যালবাম। তিনি কলকাতার বিখ্যাত সংগীত বিদ্যালয় ‘দক্ষিণী’ থেকে সংগীত শিক্ষা লাভ করেন। একসময় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এখানে।

দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে চলে আসেন ঢাকায়। পাকিস্তান টেলিভিশনে পরিচালক পদে যোগ দেন। বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের জেনারেল ম্যানেজারও ছিলেন। ১৯৫১ সালে চট্টগ্রামে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘প্রান্তিক’ নামে একটি সংগঠন।

১৯৬৯ সালে সত্যেন সেনের সঙ্গে উদীচীর কর্মকাণ্ডে যোগ দেন কলিম শরাফী এবং ১৯৭৭ থেকে বেশ কিছু বছর তিনি উদীচীর সভাপতি ছিলেন। ‘জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। সংগীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ‘সঙ্গীত ভবনে’র প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষও ছিলেন।

কলিম শরাফীর বৈচিত্র্যময় জীবনের অবসান হয় ঢাকায়, ২০১০ সালের ২ নভেম্বর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত