Ajker Patrika

লেখকের ভারসাম্য রাখা

সম্পাদকীয়
লেখকের ভারসাম্য রাখা

অনেকেই মনে করেন, সাহিত্যিক হতে হলে শুরুতে বিশৃঙ্খল হয়ে উঠতে হবে। সেটা হাসান আজিজুল হকের কাছে হাস্যকর বলে মনে হতো। বিশৃঙ্খলতার সঙ্গে সৃষ্টিশীলতার কোনো সম্পর্ক নেই। শৃঙ্খলা মেনেও ভালো সাহিত্যিক হওয়া যায়।

কিন্তু কোনো কোনো প্রতিভাধর মানুষও মাঝে মাঝে স্বাভাবিক জীবন থেকে সরে যেতে পারেন। ঋত্বিক ঘটক আর মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, দুজনই একসময় খুব মদাসক্ত হয়ে উঠেছিলেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন খুবই অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে। কিন্তু লেখালেখির ক্ষেত্রে বাজে লিখে আপস করা তাঁর ধাতে ছিল না। তাই সেই চাপ সহ্য করার জন্যই হয়তো জীবনের ভারসাম্য হারিয়েছেন। সমাজব্যবস্থার সঙ্গে লেখকের সংঘাতটাও এর একটা বড় কারণ।

লেখক কীভাবে পুঁজিবাদী সমাজে ভারসাম্য রাখবেন তাঁর সৃষ্টিতে, তা নিয়ে যখন প্রশ্ন করা হলো হাসান আজিজুল হককে, তখন তিনি লেখকের পক্ষে একটি যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলেন। কোনো সরল উত্তর নেই এ প্রশ্নের। লেখককে সব সময় ত্যাগী জীবনযাপন করে যেতে হবে, এমন নিয়ম কোথাও গড়ে ওঠেনি। পুরো ব্যবস্থাটার মধ্যেই তো বাস করছেন লেখক। জীবিকার প্রয়োজনে তাঁকে হয়তো যুক্ত থাকতে হচ্ছে কোনো বুর্জোয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। তাই এই ব্যবস্থার সঙ্গে লেখকের একটা যোগাযোগ রয়েই যায়। কিন্তু সেই সুযোগে সমাজে থাকা যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন লেখক, তা তো হতে পারে না। এখানেই আসে ভারসাম্যের প্রশ্ন। অনেক লোভ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকবে চারপাশে, সেই লোভ সামলাতে হবে।

লেখক যে সমাজব্যবস্থার মধ্যে থাকেন, সেই সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে লেখেন, আবার সেই সমাজব্যবস্থা থেকেই যাবতীয় সুবিধা লুটেপুটে নেন—এ কেমন কথা! এটা হতে পারে না।

এত কিছু বলার পর হাসান আজিজুল হক বলেছিলেন, ‘পাশাপাশি এ-ও ঠিক, নানান জায়গায় লেখককে হয়তো আপসও করতে হয়।’

এ কথা কেউ মানবেন, কেউ মানবেন না। তবে লিখতে গেলে এই সংকটের মোকাবিলা করতেই হয়।

সূত্র: শাহাদুজ্জামান, কথাপরম্পরা, পৃষ্ঠা ৫৫-৫৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত