Ajker Patrika

সব সাথীদের খবর দে

সায়েমা খাতুন
সব সাথীদের খবর দে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে ছাত্রলীগ নেতা এবং তাঁর সহযোগীরা মিলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় বিমর্ষ ও স্তম্ভিত হয়ে গেছি। ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে অক্লান্তভাবে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে চলা সংগ্রাম কি তাহলে তার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে?

এ ঘটনার কিছু আগে দেখলাম, হলে হলে নবাগত শিক্ষার্থীদের অকথ্য নির্যাতনের সংবাদ। এই সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণদের নবীন মনগুলোকে যারা বিষপ্রয়োগে নষ্ট করে দিল, তাঁদের বয়সোচিত স্বাভাবিক আত্মবিশ্বাস, আশা, কুসুমিত স্বপ্নগুলো যারা ভূলুণ্ঠিত করল, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। যে ট্রমার ভেতর এই সবুজ নাগরিকদের জীবন শুরু হলো, তার নিরাময় কীভাবে হবে? যে প্রশাসন হলে হলে নিপীড়ক এসব শিক্ষার্থী নামধারী পান্ডাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিল, তারা জাতির প্রকাশ্য শত্রু। ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন এই ক্ষমতার বলয়েই সৃষ্টি হয় এবং প্রশ্রয় পায়।

বারবার আমরা দেখি, যৌন নিপীড়ন একটা অ্যাসিড টেস্টের মতো, যা দিয়ে ক্ষমতার দৌরাত্ম্যের একটা চরম আকার-আকৃতি বোঝা যায়। ক্ষমতার সঙ্গে গাঁটছড়া ছাড়া ধর্ষণ-নিপীড়ন সম্ভব নয়। এর প্রতিবাদে দেখলাম মশালমিছিল হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্যও শুনলাম। প্রতিরোধ তাহলে জীবিত আছে! এই অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের আবার রাস্তায় নামতে হচ্ছে দেখে সিসিফাসের অন্তহীনভাবে পাহাড় ঠেলে পাথর তোলার গল্পটাই মনে এল। আবার ১৯৯৮ সালের আগস্টের সেই উত্তাল দিনগুলোতে ফিরে গেলাম। 

কানে বাজছে, আটানব্বইয়ের আন্দোলন যখন শুরু হবে, সে সময় হলের শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাদের সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন, আপনারা যাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে যাচ্ছেন, আপনাদের কোনো ধারণাই নেই, ওদের হাত কত লম্বা আর কত শক্তিশালী। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তারা ঘনিষ্ঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতাশীন মহলেও যোগাযোগ নিবিড়। আমরা তখন নিতান্তই সাধারণ পড়ুয়া। তারপরও কোথা থেকে যেন এক ভয়ংকর সাহস বুকে জন্মেছিল। বাঁচি অথবা মরি—এর শেষ দেখে ছাড়ব। সেই সাবধানবাণী শুনে যদি তখন হাজার হাজার মেয়ে রাস্তায় না নামতাম, তাহলে ধর্ষক-খুনি গোষ্ঠীকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়ন করা সম্ভব হতো না। মনে হয়েছিল, আমাদের পরের প্রজন্মকে যেন আর কখনো এমন দিন দেখতে না হয়।

দুর্ভাগ্য আমাদের, ক্যাম্পাসে ২৫ বছর পরে আবার সে রকম দাবি নিয়ে মশালমিছিল করতে হচ্ছে। কোথায় সেই হাইকোর্টের নির্দেশনায় গঠিত যৌন নিপীড়ন দমন সেল? আটানব্বইয়ের আন্দোলনের ভেতর থেকে অর্জিত যে আইনি সুরক্ষাকাঠামো সৃষ্টি হলো, কোথায় তার অস্তিত্ব? কোথায় তার তৎপরতা? ক্ষমতার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে, বিশেষ করে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার সহযোগীরূপে ধর্ষণ-নিপীড়ন অনেক বছর ধরে এ দেশের নারীদের জীবন দুর্বিষহ করে রেখেছে। বেগমগঞ্জের কথা ভুলে যাইনি। প্রতিটি জুলুম জাতির হৃদয়ে 
বড় বড় ক্ষত সৃষ্টি করে রেখেছে। এই ক্ষতগুলো চারপাশে বার্তা পাঠাচ্ছে; ফলাফলের জন্য তৈরি থাকুন!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত