Ajker Patrika

আজ শেষ হচ্ছে নক্ষত্র নারী সংগঠনের মেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আজ শেষ হচ্ছে নক্ষত্র নারী সংগঠনের মেলা

ধানমন্ডি কনভেনশন হলের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ফ্লোর। বিভিন্ন আকারের দোকানে থরে থরে সাজানো জিনিসপত্র। সেগুলোর মধ্যে আছে পোশাক, তেল, সাবান, চুড়িসহ বিভিন্ন গয়না, চুল ও ত্বকের যত্নের বিভিন্ন পণ্য। আছে খাবারদাবার।

নক্ষত্র নারী নামের একটি সংগঠন আয়োজিত মেলাটিতে ঢুকে মনে হলো, গল্পে ভিন্নতা থাকলেও আমাদের নারীরা অর্থনীতিতে এখন ভীষণ সক্রিয়। এই মেলায় অংশ নিয়েছেন তাসলিমা নিলা। কথা হলো তাঁর সঙ্গে। ব্যবসা নাকি স্কুল শিক্ষিকার চাকরি, কোনটিকে বেছে নেবেন তিনি? এই দোলা চালে নিলু বেছে নিয়েছিলেন ব্যবসাকেই। ২০০৭ সাল থেকে প্রায় এক দশক ধরে করা শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে ২০১৮ সালে শুরু করেন ব্যবসা।

 নারীদের কর্মসংস্থান তৈরিতে অবদান রাখতে চান তাসলিমা নিলা।  ‘সেলাইঘর’ নামে প্রথমে অনলাইনে পোশাক বিক্রি শুরু করলেও কয়েক মাস পর মিরপুরে একটি আউটলেট নিয়ে ফেলেন। সেখানে বিক্রি করতে শুরু করেন হাতের কাজ, ব্লক আর বাটিকের শাড়ি ও থ্রিপিস। পাশাপাশি ক্রেতার চাহিদা মতো জামাও তৈরি করে দেন তিনি। তাঁর ছোট একটি কারখানা আছে, সেখানে কাজ করেন ছয়জন। এ ছাড়া জামালপুরের কিছু নারী তাঁদের হাতের কাজ পাঠান নিলুর কাছে। প্রথমে নিজে শিখে পরে কারিগর তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। তাঁর কাছে এসে কাজের অর্ডার নিয়ে যায় মেয়েরা।

নক্ষত্র নারী সংগঠনের আয়োজনে ধানমন্ডি কনভেনশন হলে আয়োজিত উদ্যোক্তা মেলায় নিজেদের সিগনেচার পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন নিলুর মতো আরও অনেক নারী উদ্যোক্তা। তাঁদের মধ্যে আছেন নিলুর মতোই শিক্ষকতা ছেড়ে অনলাইনে ব্লক বাটিকের কাজ শুরু করা দিল আফরোজা রব। স্কুলে শিক্ষকতা করাকালীন শাড়ির ওপর ব্লকের কাজ করতেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষকতা ছেড়ে ব্যবসায় নেমে পড়েন। আফরোজা এখন বিক্রি করেন শান্তিনিকেতনি বাটিকের কাপড়, মণিপুরী শাড়ি, রংপুরের শতরঞ্জি।

ত্বকের যত্নে নিজের পণ্যকে ব্রান্ড হিসেবে দেখতে চান মেহনাজ ইসলাম। মেলায় কাপড়ের পাশাপাশি তেল, চুল ও ত্বকের বিভিন্ন পণ্যের স্টল দেখা গেল। ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ল বিভিন্ন আকৃতির সাবানের দিকে। কোনটা পানপাতা আকারের তো কোনটার আকার গোলাপ ফুলের মতো। জানতে চাইলাম তাদের বিশেষত্ব কী। স্টলে বসে থাকা দুজন নারী একে অন্যকে ঠেলছেন কথা বলার জন্য। শেষে জানা গেল, সাবানগুলো তাঁদের পেজের। একজন অন্যজনকে দেখিয়ে বললেন,‘পণ্য আসলে তাঁর, আমি সঙ্গে আছি।’

জানার আগ্রহ হোল ঘটনা কী। তাঁরা হেসেই চলেছেন। প্রথমজন আবার বললেন, ‘উনি আমার ভাবি। পেজ তারই। আমি তাকে আইডিয়া দিই। কারণ আমি একটা করপোরেট জব করি। এ জন্য সাবান বানাতে গবেষণার ক্ষেত্রে আমি তাকে হেল্প করতে পারি। বাকিটা সে নিজেই করে।’ ননদ-ভাবির এই ফেসবুক পেজটি বেশি দিনের পুরোনো নয়। তবে তাঁদের পণ্যগুলো নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে গিয়েই তৈরি হয়েছে।

এই ননদ-ভাবি জুটির দুজনের নামই মেহনাজ! ভাবি মেহনাজ ইসলাম আর ননদ মেহনাজ রিফাত। তাঁদের পেজের নাম গার্ডিয়ান্স। সাবানে তাঁরা বিভিন্ন ঘরোয়া উপাদান যোগ করেন। যেমন চালের গুঁড়া, সুজি, দুধ, কমলার ছাল, বিটরুট, অ্যালোভেরা ইত্যাদি। চুলের সেরাম, সাবান, মুখের ও চুলের নানান প্যাক ইত্যাদি আছে তাঁদের কাছে। শিশুদের ত্বকের জন্যও আছে একটি সাবান। মেহনাজ রিফাত জানান, বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করে ত্বক বিষয়ে জেনে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন তাঁরা। বাড়িতে পরীক্ষা করে তবেই বিক্রি করেন সেগুলো।

মেলা ঘুরে ঘুরে ব্লক বাটিকের পাশাপাশি চোখে পড়ল হ্যান্ড পেইন্টের বিভিন্ন পণ্য। সেখানে শাড়ি ও কুর্তির পরিমাণই বেশি। চোখ পড়ল জামদানীতে হ্যান্ড পেইন্টের কিছু শাড়ির ওপর। সেগুলো করেছেন নাজমুন নাহার শিউলি। জানা গেল, প্রথমে হাফ সিল্কের ওপরে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে জামদানির ওপর হ্যান্ড পেইন্ট নিয়ে কাজ করা শুরু করেন তিনি। দেশীয় এই পণ্যটিতে হ্যান্ড পেইন্টের কাজ দেশি ও বিদেশি ক্রেতাদের বেশ আগ্রহী করে তোলে বলে জানালেন নাজমুন নাহার।

 4পাশাপাশি হ্যান্ড পেইন্ট আর ডিটিএফ প্রিন্টের কুর্তি ও টি-শার্টও চলছে ভালোই। জানতে চাইলাম তাঁর কাজ শুরুর প্রথম দিকের গল্প। বললেন, ছেলে মেয়েদের বড় করার পর অলস সময় কাটত। সন্তানদের উৎসাহে নিজের একটা সময়ের চেপে রাখা ইচ্ছাকে ডানা মেলতে দিয়েছেন তিনি। জীবন যদি ১০০ বছরের হয়েই থাকে তাহলে তার অর্ধেকটা সময় পার করেই এখন দাঁড়িয়েছেন নিজের স্বপ্নগুলোকে মেলে ধরতে। জীবনের গোধূলিবেলায় এসে তাই নতুন করে পথচলা শুরু করেছেন নিজের পেজ ‘গোধুলীয়া’কে আঁকড়ে ধরে।

এত উদ্যোক্তা নারীকে যিনি এক ছাদের নিচে নিয়ে এসেছেন তাঁর নাম শাহনাজ ইসলাম। তাঁর নিজের শুরুটা ছিল রান্না দিয়ে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড থেকে সার্টিফায়েড একজন রন্ধন শিল্পী ও ট্রেইনার শাহনাজ। মূলত শিক্ষার্থীদের কথায় অনুপ্রাণিত হয়েই নক্ষত্র নারী সংগঠনের যাত্রা শুরু হয় বলে জানান তিনি। ৭৫ জন নারী উদ্যোক্তা নিয়ে প্রথম একটি মিটআপের আয়োজন করেন শাহনাজ। এরপর থেকে এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন আরও উদ্যোক্তা।

 নক্ষত্র নারী সংগঠনের পরিচালক শাহনাজ ইসলাম। খুব কম সময়ের মধ্যে ৭৫ থেকে নক্ষত্র নারী সংগঠন এখন ১৯ হাজার নারী উদ্যোক্তার একটি পরিবার। শাহনাজ চেষ্টা করেন উদ্যোক্তাদের কাজ যেন সঠিকভাবে প্রচার করা হয়। তাঁদের পরিশ্রমের ফলাফল মানুষ অনলাইন চাক্ষুষ দেখতে না পারলেও মেলাগুলোতে এসে দেখার সুযোগ পান। তাই মেলায় উদ্যোক্তাদের প্রচারের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন নিজের কাঁধে।  শাহনাজ বলেন, ‘আমি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেই অনুপ্রেরণা পাই। তাঁদের কথাতেই এই সংগঠনের পথচলা শুরু।’

সরকারি অনুদান ও ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের পথ আরও কিছুটা মসৃণ  করার জন্য কাজ করছেন বলে জানান শাহনাজ ইসলাম। 
গত ৯ তারিখে শুরু হওয়া এই মেলা আজ শেষ হবে। সবার জন্য উন্মুক্ত মেলাটি চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নয়াদিল্লিতে নতুন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ, ৩ মাস সময় নিল ভারত

খেজুরে অতি মুনাফা, হতাশ ক্রেতা

চাপে পড়ে ৫টি বাস রিকুইজিশন দিয়েছেন পিরোজপুরের ডিসি, সরকারের হস্তক্ষেপ নেই: প্রেস সচিব

কলাবাগানে সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের মরদেহ উদ্ধার

রাতে স্বামীর জন্মদিন উদ্‌যাপন, সকালে নদীতে মিলল নববধূর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত