ইশতিয়াক হাসান
একসময় দ্বীপটি ছিল খুব ঘনবসতিপূর্ণ এক জায়গা। এখন পরিণত হয়েছে এক ভূতুড়ে দ্বীপে। চারপাশে দেয়ালঘেরা এলাকাটিতে একটির সঙ্গে আরেকটির গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে আছে অনেক দালানকোঠা। কিন্তু এগুলো এখন পুরোপুরি পরিত্যক্ত। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে কোনো মানুষের বসতি নেই দ্বীপটিতে। অবশ্য পর্যটকেরা চাইলে ট্যুর কোম্পানির মাধ্যমে ঘুরে দেখতে পারেন।
জাপানের নাগাসাকি জেলা বা অঞ্চলে অবস্থান গুনকানজিমা নামের এই দ্বীপটির। হাশিমা দ্বীপ নামেও পরিচিত এটি। জাপানি শব্দ গুনকানজিমা অর্থ ব্যাটলশিপ। ওপর থেকে বা দূর থেকে অনেকটা যুদ্ধজাহাজের মতো দেখায় দ্বীপটিকে, তাই এর নাম ব্যাটলশিপ আইল্যান্ড বা গুনকানজিমা দ্বীপ।
এখানকার সাগরতলে কয়লার খোঁজ মেলে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। তবে মোটামুটি ১৮৮৭ সালের দিকে এখানে কয়লা খনন শুরু হয় এবং দ্বীপটিতে মানুষের বসতি গড়া শুরু হয়। ওই সময় গুনকানজিমা দ্বীপটি কিনে নিয়ে মিতসুবিশি করপোরেশন ব্যাপক হারে কয়লা তোলা শুরু করে সাগরতলের খনি থেকে। পরের বছরগুলোতে খনি এলাকা আরও সম্প্রসারিত হয়। সাগর তলদেশের বালুর নিচ থেকে সংগ্রহ করা হতে থাকে কয়লা। জাপানের শিল্পকারখানা বিশেষ করে জাহাজ নির্মাণ শিল্প সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখে এই কয়লা।
১৯৪১ সালের দিকে এখনকার এক বর্গকিলোমিটারের কম জায়গা থেকেই উত্তোলন করা হতো বছরে চার লাখ টন কয়লা। অবশ্য দ্বীপটি নিয়ে কিছু বিতর্কেরও জন্ম হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং এর আগের কয়েক বছর এখানকার খনিতে অনেককেই জোর করে কাজ করানো হয়। আর এঁদের একটা বড় অংশ ছিলেন কোরিয়ার নাগরিক। পাতালে বা খনিতে দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে এঁদের মধ্যে বেশ কিছু শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে এ সময়।
আর এই খনিকে কেন্দ্র করেই দ্বীপে গড়ে উঠে শহরটি। খনিশ্রমিকদের জায়গা দিতে ১০তলা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স তৈরি হয়। চত্বর, সিঁড়ি আর বারান্দার মাধ্যমে একটি অংশের সঙ্গে আরেকটু সংযুক্ত করা হয়। দ্বীপটিতে তৈরি করা হয় স্কুল, রেস্তোরাঁসহ নানা স্থাপনা। তবে সব দালানকোঠা ঘিরে দেওয়া হয় সাগরের ঢেউ থেকে রক্ষা করার জন্য শক্ত পাথরের দেয়ালে।
দ্বীপটি পরিচিতি পায়, ‘মিদোরি নাশি শিমা’ বা সবুজহীন দ্বীপ নামে। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝির দিকে পূর্ব-পশ্চিমে ১৬০ মিটার ও উত্তর-দক্ষিণে ৪৮০ মিটারের ছোট্ট দ্বীপটির জনসংখ্যা গিয়ে ঠেকে ছয় হাজারে, যা একে পরিণত করে পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। তারপরই টান পড়ে কয়লার ভান্ডারে। এ সময় কয়লার দামেরও পতন ঘটে।
অতএব, বন্ধ করে দেওয়া হলো খনি। সবাই চলে গেল। দ্বীপ শহর হয়ে গেল পরিত্যক্ত। প্রকৃতি ধীরে ধীরে দখল বুঝে নিতে লাগল জায়গাটির। অট্টালিকাগুলোর দেয়ালে ধরল চিড়, ধীরে ধীরে নষ্ট হতে লাগল এগুলো। আর প্রথমবারের মতো এখনকার ঊষর চত্বরে জন্মাতে লাগল ঘাস, লতা-পাতা। ভাঙা কাচ, পুরোনো সংবাদপত্র বাতাসে উড়ে গিয়ে জায়গা নিতে লাগল রাস্তায়। বলা চলে সাগরের মাঝে জন্ম নিল এক ভূতুড়ে শহর বা দ্বীপের।
২০০৯ সাল পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য পুরোপুরি বন্ধ থাকল দ্বীপটির দুয়ার। তারপর জাপান সরকার পর্যটকদের জন্য জায়গাটি উন্মুক্ত করে দেয়। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়ও উঠেছে এর নাম।
তবে সেখানে চাইলেই একা যেতে পারবেন না। দ্বীপটির দালানকোঠাগুলোর অবস্থা মোটেই সুবিধার নয়। কাজেই পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই ট্যুর কোম্পানিগুলো একত্রে বেশ কিছু মানুষ নিয়ে গাইডসহ ট্যুরের আয়োজন করে। এদিকের সাগরের আবহাওয়া ভালো থাকে না অনেক সময়। তাই শীত, বর্ষা আর ঝড়ের মৌসুমে দ্বীপ ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়াই নিরাপদ। তবে নাগাসাকি পোর্ট থেকে বোটে সেখানে যেতে সময় বেশি লাগবে না, মোটে ৪০ মিনিট। সাধারণত ট্যুর কোম্পানিগুলো দ্বীপ ঘুরিয়ে আনার জন্য ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৫ হাজার ১০০ ইয়েন নেয়। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মতো খরচ গুনতে হবে আপনার।
কয়েকটি চলচ্চিত্রের শুটিংও হয়েছে এই হাশিমা দ্বীপে। এগুলোর অন্যতম জেমস বন্ডের স্কাইফল। বিভিন্ন তথ্যচিত্রও হয়েছে দ্বীপটি এবং এর নানা ঘটনা প্রবাহ ঘিরে।
সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, জাপান চিপো ডট কম, জাপান ট্রাভেল ডট কম
একসময় দ্বীপটি ছিল খুব ঘনবসতিপূর্ণ এক জায়গা। এখন পরিণত হয়েছে এক ভূতুড়ে দ্বীপে। চারপাশে দেয়ালঘেরা এলাকাটিতে একটির সঙ্গে আরেকটির গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে আছে অনেক দালানকোঠা। কিন্তু এগুলো এখন পুরোপুরি পরিত্যক্ত। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে কোনো মানুষের বসতি নেই দ্বীপটিতে। অবশ্য পর্যটকেরা চাইলে ট্যুর কোম্পানির মাধ্যমে ঘুরে দেখতে পারেন।
জাপানের নাগাসাকি জেলা বা অঞ্চলে অবস্থান গুনকানজিমা নামের এই দ্বীপটির। হাশিমা দ্বীপ নামেও পরিচিত এটি। জাপানি শব্দ গুনকানজিমা অর্থ ব্যাটলশিপ। ওপর থেকে বা দূর থেকে অনেকটা যুদ্ধজাহাজের মতো দেখায় দ্বীপটিকে, তাই এর নাম ব্যাটলশিপ আইল্যান্ড বা গুনকানজিমা দ্বীপ।
এখানকার সাগরতলে কয়লার খোঁজ মেলে উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। তবে মোটামুটি ১৮৮৭ সালের দিকে এখানে কয়লা খনন শুরু হয় এবং দ্বীপটিতে মানুষের বসতি গড়া শুরু হয়। ওই সময় গুনকানজিমা দ্বীপটি কিনে নিয়ে মিতসুবিশি করপোরেশন ব্যাপক হারে কয়লা তোলা শুরু করে সাগরতলের খনি থেকে। পরের বছরগুলোতে খনি এলাকা আরও সম্প্রসারিত হয়। সাগর তলদেশের বালুর নিচ থেকে সংগ্রহ করা হতে থাকে কয়লা। জাপানের শিল্পকারখানা বিশেষ করে জাহাজ নির্মাণ শিল্প সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখে এই কয়লা।
১৯৪১ সালের দিকে এখনকার এক বর্গকিলোমিটারের কম জায়গা থেকেই উত্তোলন করা হতো বছরে চার লাখ টন কয়লা। অবশ্য দ্বীপটি নিয়ে কিছু বিতর্কেরও জন্ম হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং এর আগের কয়েক বছর এখানকার খনিতে অনেককেই জোর করে কাজ করানো হয়। আর এঁদের একটা বড় অংশ ছিলেন কোরিয়ার নাগরিক। পাতালে বা খনিতে দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে এঁদের মধ্যে বেশ কিছু শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে এ সময়।
আর এই খনিকে কেন্দ্র করেই দ্বীপে গড়ে উঠে শহরটি। খনিশ্রমিকদের জায়গা দিতে ১০তলা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স তৈরি হয়। চত্বর, সিঁড়ি আর বারান্দার মাধ্যমে একটি অংশের সঙ্গে আরেকটু সংযুক্ত করা হয়। দ্বীপটিতে তৈরি করা হয় স্কুল, রেস্তোরাঁসহ নানা স্থাপনা। তবে সব দালানকোঠা ঘিরে দেওয়া হয় সাগরের ঢেউ থেকে রক্ষা করার জন্য শক্ত পাথরের দেয়ালে।
দ্বীপটি পরিচিতি পায়, ‘মিদোরি নাশি শিমা’ বা সবুজহীন দ্বীপ নামে। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝির দিকে পূর্ব-পশ্চিমে ১৬০ মিটার ও উত্তর-দক্ষিণে ৪৮০ মিটারের ছোট্ট দ্বীপটির জনসংখ্যা গিয়ে ঠেকে ছয় হাজারে, যা একে পরিণত করে পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। তারপরই টান পড়ে কয়লার ভান্ডারে। এ সময় কয়লার দামেরও পতন ঘটে।
অতএব, বন্ধ করে দেওয়া হলো খনি। সবাই চলে গেল। দ্বীপ শহর হয়ে গেল পরিত্যক্ত। প্রকৃতি ধীরে ধীরে দখল বুঝে নিতে লাগল জায়গাটির। অট্টালিকাগুলোর দেয়ালে ধরল চিড়, ধীরে ধীরে নষ্ট হতে লাগল এগুলো। আর প্রথমবারের মতো এখনকার ঊষর চত্বরে জন্মাতে লাগল ঘাস, লতা-পাতা। ভাঙা কাচ, পুরোনো সংবাদপত্র বাতাসে উড়ে গিয়ে জায়গা নিতে লাগল রাস্তায়। বলা চলে সাগরের মাঝে জন্ম নিল এক ভূতুড়ে শহর বা দ্বীপের।
২০০৯ সাল পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য পুরোপুরি বন্ধ থাকল দ্বীপটির দুয়ার। তারপর জাপান সরকার পর্যটকদের জন্য জায়গাটি উন্মুক্ত করে দেয়। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়ও উঠেছে এর নাম।
তবে সেখানে চাইলেই একা যেতে পারবেন না। দ্বীপটির দালানকোঠাগুলোর অবস্থা মোটেই সুবিধার নয়। কাজেই পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই ট্যুর কোম্পানিগুলো একত্রে বেশ কিছু মানুষ নিয়ে গাইডসহ ট্যুরের আয়োজন করে। এদিকের সাগরের আবহাওয়া ভালো থাকে না অনেক সময়। তাই শীত, বর্ষা আর ঝড়ের মৌসুমে দ্বীপ ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়াই নিরাপদ। তবে নাগাসাকি পোর্ট থেকে বোটে সেখানে যেতে সময় বেশি লাগবে না, মোটে ৪০ মিনিট। সাধারণত ট্যুর কোম্পানিগুলো দ্বীপ ঘুরিয়ে আনার জন্য ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৫ হাজার ১০০ ইয়েন নেয়। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মতো খরচ গুনতে হবে আপনার।
কয়েকটি চলচ্চিত্রের শুটিংও হয়েছে এই হাশিমা দ্বীপে। এগুলোর অন্যতম জেমস বন্ডের স্কাইফল। বিভিন্ন তথ্যচিত্রও হয়েছে দ্বীপটি এবং এর নানা ঘটনা প্রবাহ ঘিরে।
সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, জাপান চিপো ডট কম, জাপান ট্রাভেল ডট কম
আজ ফোর টুয়েন্টি (৪২০) দিবস। সংখ্যাটা পড়েই ভাবছেন প্রতারকদের দিবস আজ? না না। এই ফোর টুয়েন্টি সেই ফোর টুয়েন্টি নয়। পশ্চিমা বিশ্বে এই সংখ্যা গাঁজা সংস্কৃতির কোড ভাষা।
২১ ঘণ্টা আগেসাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপ ও এশিয়ায় বিপুল পরিমাণে পাচার হচ্ছে বড় আকারের লাখ লাখ পিঁপড়া। ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোতে এসব পিঁপড়া পোষা প্রাণী হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। আফ্রিকার দেশ কেনিয়া থেকে সম্প্রতি হাজার হাজার জীবন্ত পিঁপড়া পাচারকালে ৪ চোরাকারবারিকে আটক করা হয়েছে।
৫ দিন আগেগত বছর একটি রাতের অনুষ্ঠানে এক ভ্লগারের ক্যামেরায় অপ্রত্যাশিত এবং অশালীন মন্তব্য করে রাতারাতি ভাইরাল হন হেইলি ওয়েলচ। দ্রুতই ‘হক তুয়াহ’ নামে খ্যাতি পান তিনি। সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছেন এই তরুণী। তিনি জানিয়েছেন, নিজের নামে চালু করা বিতর্কিত ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে...
৭ দিন আগেরাজনীতি তো বটেই, একের পর এক উদ্ভট কথা আর কাণ্ডের জন্যও আলোচনায় থাকেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বুধবার (২ এপ্রিল) বিশ্বজুড়ে শতাধিক দেশের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি। এরপর থেকেই এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা গুরুগম্ভীর আলোচনা, বিশ্লেষণ চলছে। আবার সামাজিক মাধ্যমে চলছে
১৭ দিন আগে