Ajker Patrika

কমলা সিঁড়ি দেখতে ইরানে ছোটেন পর্যটকেরা

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১৬: ৩০
Thumbnail image

উত্তর ইরানের মাজানদারান প্রদেশে অবস্থান বাদাব-ই সুরতের। সেখানে গেলেই দেখবেন অনেকটা স্টেডিয়ামের গ্যালারির মতো ধাপে ধাপে নেমে গেছে সমতল তাকের মতো কিছু জায়গা। কিংবা একে অনেক চওড়া সিঁড়ির সঙ্গেও তুলনা করতে পারেন। ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝবেন উজ্জ্বল কমলা-লাল রঙের সিঁড়িগুলো মোটেই মানুষের তৈরি কিছু নয়, প্রাকৃতিকভাবেই এমন রূপ নিয়েছে।

ট্রাভেরটাইন নামের একধরনের পাথরে সৃষ্টি এই ধাপ কাটা কাঠামোগুলো। ট্রাভেরটাইনের জন্ম কীভাবে জানেন? হাজার হাজার বছর ধরে উষ্ণ প্রস্রবণের খনিজ মেশানো পানির ক্যালসিয়াম কার্বোনেট জমে।

এবার বরং বাদাব-ই সুরত নামটি কীভাবে এসেছে জেনে নেওয়া যাক। বাদাব এসেছে পার্সিয়ান শব্দ বাদ ও আব থেকে। বাদ অর্থ গ্যাস এবং আব অর্থ পানি। দুটো মিলিয়ে দাঁড়ায় গ্যাসীয় বা কার্বনেটেড পানি। মূলত এর মাধ্যমে উষ্ণ প্রস্রবণের কার্বনেটেড খনিজ পানিকে বোঝানো হয়েছে। আর কাছেই অবস্থিত গ্রাম ওরোসতের পুরোনো নাম সুরত, যার অর্থ তীব্র।

কমলা–লাল ধাপ কাটা চত্বরের মতো জায়গাগুলো মুগ্ধ করে পর্যটকদেরবাদাব-ই সুরতের এই ধাপ কাটা চত্বর কিংবা তাকের মতো জায়গাগুলি তৈরি হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী দুটি উষ্ণ প্রস্রবণ থেকে। এদের মধ্যে একটি উষ্ণ প্রস্রবণের মধ্যে আছে খুব লবণাক্ত পানি, যেগুলো ছোট্ট একটি প্রাকৃতিক ডোবায় জমা হয়। পানি জন্মে তৈরি হওয়া ডোবা বা পুকুরটির ব্যাস ১৫ মিটার। গ্রীষ্মের মাসগুলোতে এখানে মানুষ সাঁতার কাটে। এই পানির ঔষধি ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে মাথা ব্যথা, পায়ে ব্যথা ও ত্বকের সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাঁরা খনিজ সমৃদ্ধ পানি নিয়ে যান।

দ্বিতীয় প্রস্রবণটির পানি একটু টক স্বাদযুক্ত এবং কমলা রঙের। মূলত এর রংই প্রভাব বিস্তার করেছে ধাপগুলোতে।

অনেক ওপর থেকে দেখাট্রাভেরটাইনের এ ধরনের ধাপে ধাপে নেমে যাওয়া তাক বা চত্বর কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। তবে সবগুলোর চেহারা এক নয়। এদের মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের ম্যামথ উষ্ণ প্রস্রবণ এলাকা এবং চীনের হোয়াইট ওয়াটার টেরেস। তবে এ ধরনের প্রাকৃতিক বিন্যাসের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত তুরস্কের পামুক্কালে। সাধারণত উষ্ণ প্রস্রবণের মাধ্যমে তৈরি এ ধরনের বেশির ভাগ ধাপ বিশিষ্ট টেরেস বা চত্বরের মতো জায়গাগুলোতে সাদা ও নীলের ছটা থাকে বেশি। তবে বাদাব-ই সুরতের রং উজ্জ্বল কমলা থেকে লাল। প্রচুর পরিমাণে আয়রন অক্সাইডের উপস্থিতির কারণে এমন বর্ণবৈচিত্র্য। 

এখানকার ধাপকাটা এই কমলা-লাল এলাকা এমনিতেই প্রচুর পর্যটক টানে। এর সঙ্গে পাইনের জঙ্গল, পাহাড় ও উপত্যকা মিলিয়ে অসাধারণ এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে।

দুটি উষ্ণ প্রস্রবণের জল থেকে এই প্রাকৃতিক বিস্ময়ের সৃষ্টিএবার ইরান ভ্রমণে গেলে কীভাবে জায়গাটিতে পৌঁছাবেন তা জেনে নেওয়া যাক। ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে বাস কিংবা ট্রেনে চেপে পৌঁছাতে পারবেন মাজানদারান প্রদেশের রাজধানী সারিতে। সেখান থেকে ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান বাদাব-ই সুরত নামের প্রকৃতির এ আশ্চর্য বিস্ময়ের। 

সূত্র: এটলাস অবসকউরা, তেহরান টাইমস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত