Ajker Patrika

নিউইয়র্কে ৩০ লাখ ইঁদুর, মারতে এলেন আরেক ‘হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা’ 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১৫: ৫০
Thumbnail image

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার কথা মনে আছে? ওই যে, এক বাঁশিওয়ালাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শহরটিকে ইঁদুরমুক্ত করতে। হঠাৎ করে তার প্রসঙ্গ কেন এল? নিউইয়র্ক শহরের একটি অংশকে ইঁদুরমুক্ত করতে কোনো বাঁশিওয়ালাকে দায়িত্ব দেওয়া না হলেও আস্থা রাখা হয়েছে ইঁদুর দমনে অভিজ্ঞ এক ব্যক্তির ওপর। তবে ইঁদুরের মোকাবিলায় তাঁর তরিকা যে ভিন্ন, তাতে সন্দেহ নেই।

প্রচুর পরিমাণে ইঁদুরের উপস্থিতির জন্য নিউইয়র্ক শহরের আলাদা পরিচিতি আছে বহু আগে থেকেই। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইঁদুরের সংখ্যা বিপুল হারে বেড়েছে। তীব্র আকার ধারণ করেছে উৎপাত। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিউইয়র্কে বর্তমানে ৩০ লাখের মতো ইঁদুর আছে। শুনে অবাক হবেন, গত এক দশকেই শহরটিতে ইঁদুর বেড়েছে প্রায় ১০ লাখ। আর নিউইয়র্ক শহরের কিছু অংশের ইঁদুরের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ম্যাট ডিওডাটো নামের এক ব্যক্তিকে। কিন্তু শহরকে ইঁদুরমুক্ত করতে কী করছেন তিনি? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের সূত্রে সেই গল্পই শোনাব পাঠকদের।

ম্যানহাটনের আপার ইস্ট সাইডের প্রতিনিধিত্বকারী সিটি কাউন্সিল সদস্য জুলি মেনিন জানান, কোভিডের সময় বাইরে খাবারের বর্জ্য বেশি পড়ে থাকার পাশাপাশি শহরের পয়োনিষ্কাশন বিভাগে সাম্প্রতিক ব্যয় কমানো উপকৃত করেছে ইঁদুরদের। সংখ্যার দিক থেকে বিবেচনা করলে রীতিমতো ইঁদুরের একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে শহরে। মেনিনের অফিস ইঁদুরসংক্রান্ত অভিযোগে রীতিমতো প্লাবিত হয়েছে। ‘আমরা আক্ষরিক অর্থেই অভিভাবকদের কাছ থেকে শুনেছি, বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার সময় তাদের পায়ের ওপর দিয়ে ইঁদুর ছুটে যাচ্ছে।’

তবে মেনিন জানিয়েছেন, তাঁর জেলা কিংবা ডিস্ট্রিক্ট এ সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে পেয়েছে। সেটি ইঁদুরের ওপর গ্যাস প্রয়োগ করা। কোভিড-পরবর্তী ইঁদুরের সংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির মধ্যে মেনিনের কর্মীরা সমাধানগুলো নিয়ে গবেষণা করছিলেন। এ সময় তাঁরা জানতে পারেন, বোস্টন ও সান ডিয়েগো শহরে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে ইঁদুর দমনে। মেনিনের অফিস জানতে পারে, এভাবে ইঁদুর দমনে দক্ষ ম্যাট ডিওডাটো নিউইয়র্কেই বাস করেন। ব্যাস, তাঁকেই দেওয়া হলো সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব। কিন্তু নিউইয়র্ক সিটির কুখ্যাত এই খুদে বাসিন্দাদের কবল থেকে কি শেষ পর্যন্ত এই তরিকায় মুক্তি মিলবে?

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিউইয়র্কে বর্তমানে ৩০ লাখের মতো ইঁদুর আছে।ম্যাট ডিওডাটো কিন্তু নিজের কাজটি ভালোভাবেই করছেন। তাঁর অভিজ্ঞ চোখে কোথায় ইঁদুর থাকতে পারে তা ঠিকই ধরা পড়ে। কোনো একটি গর্ত দেখলেই তিনি বলে দিতে পারেন সেখানে ওই খুদে জন্তুরা আশ্রয় নিয়েছে কি না। তারপর তাঁর যন্ত্র বা অস্ত্র, অর্থাৎ নতুন কার্বন মনোক্সাইড মেশিনটি প্রস্তুত করে ফেলেন।

পদ্ধতিটি সহজ। নিউইয়র্ক সিটির উঠান, পার্ক ও গাছের গর্তে ইঁদুরের গর্তের মধ্যে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস ছড়িয়ে দেন। ইঁদুরগুলো প্রথম চেতানাহীন হয়ে পড়ে, তারপর দম বন্ধ হয়ে মারা যায়। পরে গ্যাসটি স্বাভাবিকভাবেই ছড়িয়ে পড়ে, যা এটিকে বিষটোপ বা ফাঁদের মতো পদ্ধতির চেয়ে নিরাপদ করে তোলে। কারণ ওই পদ্ধতিগুলো পোষা প্রাণী এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীর জন্যও ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। এটি কাজও করে দ্রুত। একে অন্য পদ্ধতিগুলোর তুলনায় তাঁর কাছে কার্যকর বলে মনে হয়েছে, জানান ডিওডাটো।

ডিওডাটো একটি ছোট চাকাযুক্ত মেশিন ব্যবহার করেন কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস ছড়িয়ে দিতে। তিনি যে গর্তটিতে ইঁদুর থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন, সেখানে মেশিনের নলটি প্রবেশ করিয়ে গ্যাস পাম্প করেন। পরমুহূর্তেই কাছাকাছি বিভিন্ন স্থান থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হতে থাকে। ডিওডাটো জানান, ইঁদুরের এই বাসস্থানে কখনোই কেবল একটি গর্ত থাকে না।

ইঁদুর দমনের অভিযানে ম্যাট ডিওডাটো।ডিওডাটো একটি বাদে বাকি সব গর্তের মুখ আটকে দেন। একমাত্র গর্ত দিয়ে গ্যাস প্রবেশ করে, কিন্তু বের হয় না। ইঁদুরেরও পালানোর সুযোগ থাকে না।

তবে ঘটনা হলো, নিউইয়র্ক সিটির ইঁদুরেরা শত্রু হিসেবে রীতিমতো দুর্ধর্ষ। ‘তাদের প্রশংসা না করে উপায় নেই। কারণ তারা বেঁচে থাকার জন্য সবকিছুই করে।’ বলেন ডিওডাটো। মোটামুটি এক বছরের আয়ুতে একটি স্ত্রী ইঁদুর সাত থেকে আটবার বাচ্চা দেয়। সে সোমবার বাচ্চা জন্ম দিয়ে মঙ্গলবার আবার গর্ভবতী হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এমনকি বাচ্চারাও শক্তিশালী। ‘আপনি একটি আবর্জনার ব্যাগ নড়তে দেখবেন, তার পরই একটি ইঁদুরের বাচ্চা ব্যাগ ফুটো করে বেরিয়ে আসে।’ বলেন ডিওডাটো।

মেনিনের অফিস জানিয়েছে, ডিওডাটোর কৌশলটি কাজ করছে। গাছের যে গর্তগুলোতে এটি প্রয়োগ করা হয়েছিল, সেখানে ইঁদুর মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ। তাঁর অফিস প্রথম বছরে এর পেছনে ১০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে। এ বছর টাকার বরাদ্দ দ্বিগুণ করা হয়েছে। মেনিন তাঁর জেলার নতুন নতুন রাস্তায় পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে চাইছেন।

কিন্তু এটা কি গোটা নিউইয়র্কের ইঁদুর সমস্যার সমাধান করবে? উৎসটি যদি নষ্ট করা না যায়, এ ধরনের কোনো উদ্ভাবনী পদ্ধতিই ইঁদুরদের পরাস্ত করতে পারবে বলে মনে হয় না। নিউইয়র্কের রাস্তার আবর্জনার ব্যাগ একটি বড় সমস্যা। সাম্প্রতিক সময়ে পিপারমিন্ট তেল ব্যবহার করা হয় এ ধরনের ব্যাগে। বলা হয়, এর গন্ধ ইঁদুরেরা ঘৃণা করে। ‘এটি তাদের থামাতে পারে না।’ ডিওডাটো বলেন, ‘বরং পচা খাবার খাওয়ার পরে তাদের তাজা শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দেয় এটি।’

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মেয়র এরিক অ্যাডামস নিউইয়র্ক সিটির আবর্জনা ব্যাগের স্তূপ ঢাকনাযুক্ত পাত্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি উচ্চাভিলাষী প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছেন। ‘নিউইয়র্ক সিটি নোংরা রাস্তার জন্য পরিচিত ছিল, কিন্তু সামনের দিকে আমরা আমাদের পরিষ্কার রাস্তার জন্য পরিচিত হতে যাচ্ছি।’ অ্যাডামস জুনে বলেছিলেন। মেনিন জানান, এই প্রচেষ্টায় তাঁর পূর্ণ সমর্থন আছে। কিন্তু এটি বাস্তবায়িত হতে কয়েক বছর লাগবে। আর আবর্জনা সমস্যার নিষ্পত্তি ছাড়া ইঁদুরদের যে পুরোপুরি তাড়ানো যাবে না, স্বীকার করেছেন ডিওডাটো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

‘মধ্যমপন্থী’ দল গড়ছেন অভ্যুত্থানের নেতারা, আলোচনায় ইলিশ প্রতীক

রাজধানীর প্রেসক্লাব এলাকায় লিফলেট বিতরণ করল আ.লীগ

লিবিয়ার সৈকতে ২০ জনের গলিত লাশ, সবাই বাংলাদেশি বলে ধারণা

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, বিচার চাইল বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত