Ajker Patrika

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

আব্দুর রহমান 
আপডেট : ০১ মে ২০২৫, ১০: ৪৬
বিশ্লেষকেরা বলছেন, লোকবল ও সরঞ্জামে পিছিয়ে থাকলেও সক্ষমতায় ভারতের কাছাকাছিই আছে পাকিস্তান। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
বিশ্লেষকেরা বলছেন, লোকবল ও সরঞ্জামে পিছিয়ে থাকলেও সক্ষমতায় ভারতের কাছাকাছিই আছে পাকিস্তান। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

ভারতীয় উপমহাদেশের চিরবৈরী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে প্রতিবেশী দেশ দুটি তিনবার বড় আকারের যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের যুদ্ধের পর থেকে দুই দেশ ১৯৯৯ সালে আবারও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এরপর অবশ্য আর বড় কোনো সংঘাত হয়নি। তবে দেশ দুটি প্রায়ই বিভিন্ন সময়ে সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তান আবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যেকোনো সময় আবারও যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্রধর এ দুটি দেশ যদি সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে এগিয়ে থাকবে কে? সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হয়, যার লোকবল, অস্ত্র ও সরঞ্জাম বেশি তারাই জিতবে। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলেন, বিষয়টি মোটেও অতটা সরল নয়। আর তাই আপাতদৃষ্টিতে ভারত সামরিক সক্ষমতায় এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই হলে তারা জিতবে, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না মোটেও।

সমরশক্তির তুলনা নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য বলছে, সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম সশস্ত্র বাহিনীর অধিকারী, যেখানে পাকিস্তানের অবস্থান ১২তম। সামগ্রিক বিবেচনায় স্থলশক্তিতে ভারতের লোকবল ও সামরিক সরঞ্জাম বেশি থাকলেও এগিয়ে পাকিস্তান। এর কারণ নানাবিধ। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হলো পাকিস্তানের ভূপ্রকৃতি।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০২৪ তথ্য অনুসারে, ভারতের সশস্ত্র বাহিনীতে সক্রিয় কর্মী আছে ১৪ লাখ ৫০ হাজারে বেশি এবং পাকিস্তানের সাড়ে ৬ লাখের বেশি। ভারতের রিজার্ভ সেনা আছে সাড়ে ১১ লাখের মতো, যেখানে পাকিস্তানের আছে সাড়ে ৫ লাখ। ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর আকার এবং দেশটির অর্থনীতি বেশি হওয়ায় দেশটি বিপুল পরিমাণ অর্থ সামরিক বাজেটের জন্য বরাদ্দ করতে পারে। ২০২৪ সালে ভারতের সামরিক বরাদ্দ ৭৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে পাকিস্তানের ছিল মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

পাকিস্তানের বিমান সক্ষমতার ক্ষেত্রে মোট বিমান আছে ১ হাজার ৩৯৯, যার মধ্যে যুদ্ধবিমান আছে ৩২৮টি। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান আছে ৪৫২ টি। বিপরীতে ভারতের মোট বিমান ২ হাজার ২২৯টি এবং যুদ্ধবিমান আছে ৫১৩টি। তবে রয়টার্সের তথ্য অনুসারে ভারতের যুদ্ধবিমান আছে ৭৩০টির মতো।

ভারতের অ্যাটাক হেলিকপ্টার আছে যেখানে ৮০টি, সেখানে পাকিস্তানের ৫৭টি। ভারতের ট্যাংক আছে ৪ হাজার ২০১টি, বিপরীতে পাকিস্তানের আছে ২ হাজার ৬২৭টি। ভারতের সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি আছে ১০০টি, যেখানে পাকিস্তানের আছে ৬৬২টি। ভারতের টোয়েড আর্টিলারি আছে ৩ হাজার ৯৭৫টি এবং পাকিস্তানের আছে ২ হাজার ৬২৯টি।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আনুপাতিক সক্ষমতা বিবেচনায় ভারতের প্রায় কাছাকাছি হলেও নৌশক্তিতে পাকিস্তান বেশ খানিকটা পিছিয়েই আছে। ভারতের নৌবহরে মোট নৌযান আছে ২৯৩টি—এর মধ্যে দুটি বিমানবাহী রণতরি, ১৮টি সাবমেরিন, ডেস্ট্রয়ার ১৩টি, ফ্রিগেট ১৪টি, করভেট ১৮টি এবং টহল নৌযান ১৩৫টি। বিপরীতে পাকিস্তানের নৌবহরে মোট নৌযান আছে ১২১ টি। দেশটির কোনো বিমানবাহী রণতরি নেই, তবে ৮টি সাবমেরিন আছে। কোনো ডেস্ট্রয়ার না থাকলেও ফ্রিগেট ও করভেট আছে ৯টি করে। পাকিস্তানের টহল নৌযান আছে ৬৯টি। মাইন ওয়ারফেয়ারের ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতা শূন্য, পাকিস্তানের নৌযান আছে ৩টি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সব সময় লোকবল ও সরঞ্জামই একটি সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা তুলে ধরে না। মার্কিন থিংক ট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেইন রিলেশনসের ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র ফেলো মানজারি চ্যাটার্জি মিলার নিউজউইককে বলেন, ভারতের সামরিক বাজেট ও সক্ষমতা পাকিস্তানের চেয়ে ‘অনেক বেশি’ হলেও এটি মূল সমস্যা নয়। তিনি বলেন, ‘আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, যুদ্ধের ক্ষেত্রে উভয় দেশের সামরিক বাহিনী উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে এবং ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটাতে পারে কি না এবং এর উত্তর দ্ব্যর্থহীনভাবে হ্যাঁ।’

যুক্তরাষ্ট্রের সেলেম স্টেট ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক কানিষ্কম সাতশিভম নিউজউইককে বলেন, জনসংখ্যা ও জিডিপির ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা থাকলেও দুই দেশের সামরিক শক্তি ‘ততটা ভিন্ন নয়’। তিনি জানান, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের পর পাকিস্তান নিশ্চিত করেছে যে তাদের সক্ষমতা ‘অন্তত ভারতের সমপর্যায়ে’ থাকবে।

কানিষ্কম সাতাশিভম বলেন, ‘জনশক্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামের হিসাবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর আকার ভারতের চেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ ছোট। তবে, পাকিস্তানের প্রায় পুরো সেনাবাহিনীই ভারতের বিরুদ্ধে মোতায়েন করা। অন্যদিকে ভারতের সেনাবাহিনী পূর্বে চীনের দিকেও মোতায়েন রয়েছে।’ ফলে পাকিস্তান সীমান্তে ভারতের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিতে পারবে বলে তিনি জানান।

মিলার বলেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও জনগণের চাপের মুখে ভারতের ‘শিগগিরই পাল্টা আঘাত হানা ছাড়া উপায় নেই।’ জনগণ একটি ‘কড়া জবাব’ চাইছে। পরিস্থিতি শান্ত করা কঠিন। উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু কাশ্মীর, দুই দেশের নেতাদের কঠোর ভাষা ও যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক খারাপ হওয়া পরিস্থিতিকে ‘বিস্ফোরক’ করে তুলেছে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, ‘দুটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সংঘাতের ক্ষেত্রে পারমাণবিক উদ্বেগ সব সময়ই বৈধ। তবে, কেউ কেউ মনে করেন, অতীতে পারমাণবিক উদ্বেগই ভারত-পাকিস্তানকে সংযত রেখেছে। এটি উভয়কে কেবল সীমিত সংঘাতে জড়াতে বাধ্য করেছে।’

সাতাশিভম বলেন, তিনি এই পরিস্থিতি নিয়ে ‘খুব উদ্বিগ্ন’। তিনি পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ‘অদ্ভুতভাবে যুদ্ধংদেহী হয়ে ওঠা মনোভাবের’ দিকে ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, ‘যদি পাকিস্তানের ওপর ভারতীয় হামলায় তাদের প্রতিরক্ষাব্যূহ দ্রুত ভেঙে পড়ে এবং ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডের গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়, তাহলে পাকিস্তানিরা ভারতীয় অগ্রগতি থামাতে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে অত্যন্ত উৎসাহিত হবে।’

তথ্যসূত্র: নিউজউইক, রয়টার্স, ইউএসনিউজ ও গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিতের আবেদন, শুনানি রোববার

মধুপুরে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত