Ajker Patrika

খামারকে জায়গা দিতে আলাদা হয়ে গেল রাস্তা

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২৩ মে ২০২৩, ১০: ২৯
Thumbnail image

বিশাল এক খামারের কথা চিন্তা করুন। ব্যস্ত এক সড়কের মাঝখানে যার অবস্থান। কিংবা আরও পরিষ্কারভাবে বললে একে জায়গা করে দিতে রাস্তাটাই দুই ভাগ হয়ে গেছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা কোনো গাড়ি থেকে খামারের পশু কিংবা কর্মীদের বাঁচানোর জন্য রাস্তা ও খামারের মধ্যে রয়েছে কেবল শক্তিশালী তারের বেড়া।

ইংল্যান্ডের এম৬২ নামের মোটরওয়ে বা চওড়া রাস্তাটি লিভারপুলের সঙ্গে হালকে সংযুক্ত করেছে। এমনিতে রাস্তাটি অন্য চওড়া সড়কগুলোর মতোই, তবে কেলডারডেল নামক জায়গাটিতে এসে সবকিছু বদলে গেছে, সেখানে রাস্তার মাঝখানে পাবেন বেশ বড়সড় এক ফার্ম বা খামার। 

এমন এক ব্যস্ত সড়কের মাঝখানে একটি খামারের উপস্থিতি নিয়ে নানান গল্পগাথা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাতটি হলো, যে সময় রাস্তাটি তৈরি হয়, তখন খামারের মালিক ছিলেন কেন ও বেথ ওয়াইল্ড। তাঁরা  খামারটি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায়ইনাকি রাস্তাটিকে দুই টুকরো হয়ে যেতে হলো। তবে এটি কিংবা অন্য গল্পগুলো শেষ পর্যন্ত গল্পই। তবে তথ্য-প্রমাণ বলছে, আশ্চর্য এই ঘটনার জন্ম মানে রাস্তার মাঝখানে একটা খামার থাকার মূল রহস্যটি একেবারেই আলাদা।

সড়কটি তৈরির প্রায় ২০ বছর পর মানে ১৯৮৩ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট একটি তথ্যচিত্র তৈরি কর খামারটি নিয়ে। সেটা থেকেই ফাঁস হয় রাস্তার মাঝখানে খামার থাকার রহস্য। স্কট হল ফার্মের মালিকদের আদপে নাকি কখনো জমি বিক্রি করার জন্য বলাই হয়নি।

খামারের মূল বাড়িটির পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে গাড়ি। ছবি: উইকিপিডিয়া১৯৬০-এর দশকে এম৬২ সড়ক তৈরির সময় প্রকৌশলীরা আবিষ্কার করেন ওয়াইল্ডদের জমিতে ভূতাত্ত্বিক ত্রুটি আছে। আর তাই খামারটিকে এড়িয়ে এর দুপাশে রাস্তা তৈরি করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাই খামারমালিকদের ঘাঁটালেন না তাঁরা, মানে খামারটি যেখানে আছে সেখানেই থাকতে দিলেন। 

রাস্তার মাঝে একটি খামার থাকাটা কেমন? আপনার মনে হতে পারে, রাস্তায় হওয়া শব্দ আর দূষণের কারণে এখানে থাকাটা দুঃস্বপ্নের মতো। তবে যারা এই খামারে থাকেন কিংবা থাকতেন, তাঁদের দাবি একেবারেই ভিন্ন। তিন স্তরের কাচের জানালার কারণে এখানকার ঘরগুলোয় শব্দ প্রবেশ করতে পারে কমই। বাতাসও আশ্চর্যরকম পরিষ্কার। 

বাড়িটির বর্তমান মালিক জিল ফ্রাংকিহাম থর্প, তাঁর স্বামী পল ও ছেলে জন উইলিয়ামস বাড়িটির বর্তমান বাসিন্দা। থর্পরা বাড়িটিতে আছেন ২০১১ সাল থেকে। তাঁরা জানান, রাস্তার মাঝখানে হওয়ার পরও অপ্রত্যাশিত রকম কম দূষণ জায়গাটিতে। 

তবে আশপাশে বসতি না থাকায় বেশ নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে হয় এখানকার বাসিন্দাদের। গাড়িতে অন্তত আধা ঘণ্টা লাগে সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির বাড়িতে পৌঁছাতে। এক হিসাবে এটি বেশ অবাক করা ব্যাপারই, কারণ আপনার বাড়ির পাশ দিয়ে প্রতিদিন যাচ্ছে হাজারো মানুষ, কিন্তু আপনি নিঃসঙ্গতায় ভুগবেন।

খামারে চরে বেড়াচ্ছে ভেড়া। ছবি: উইকিমিডিয়াখামারের মূল বাড়িটা অনেক পুরোনো। হবে নাই বা কেন, এই খামার প্রতিষ্ঠিত হয় সেই আঠারো শতকে। তবে ২০০৮ সালে জিল ও তাঁর স্বামী এখানে আস্তানা গাড়ার পর এর সংস্কার করে নেন। জিল সব সময়ই বলেছেন,এখানে থাকাটা অন্য জায়গার থেকে খুব আলাদা কিছু নয়। ‘গাড়ি খুব কাছ দিয়ে যায় এখানে,’ ম্যানচেস্টার ইভেনিং নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি, ‘তবে সব সময় বাতাস থাকে এখানে। যা দূষণকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। ইউনিভার্সিটি অব হাডারসফিল্ডের শিক্ষার্থীরা এখানকার মাটি ও বায়ু পরীক্ষা করে দেখেছেন, দূষণ এখানে একেবারেই কম।

অনবরত গাড়ির শব্দ থাকে এখানে, তবে এটাও সহনশীল পর্যায়ে বলে মনে করে পরিবারটি। আর এখানে থাকাটাই তাঁদের পছন্দ।

কাজেই পাঠক আগামী ইংল্যান্ড সফরে এমন আশ্চর্য এক জায়গায় কিছুটা সময় কাটানো থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না আশা করি। অতিথির দেখা পেলে খামারের মালিক কিংবা কর্মীরাও খুশিই হবেন। 

সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল, মিরর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত