Ajker Patrika

জঙ্গলে প্রাকৃতিক সুইমিংপুল, সুড়ঙ্গ দিয়ে আসে সাগরের পানি

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৩, ১৫: ০৯
জঙ্গলে প্রাকৃতিক সুইমিংপুল, সুড়ঙ্গ দিয়ে আসে সাগরের পানি

পানিভর্তি বড় এক গর্ত বলতে পারেন একে। কিন্তু এমন অনেক পর্যটক আছেন, যাঁরা শুধু এর আকর্ষণেই হাজির হন দ্বীপদেশ সামোয়ায়। পৃথিবীতে সাঁতার কাটার জন্য এমন আশ্চর্য জায়গা পাবেন আর কমই। মজার ঘটনা, জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত এই গর্তে জল আসে সাগর থেকে।

সামোয়ার প্রধান দ্বীপ ওপলোর দক্ষিণ উপকূলে লতোফাগা গ্রামের একটি লাভায় তৈরি জমির মাঝখানে তো সুয়া ওশান ট্রেঞ্চ নামের এই প্রাকৃতিক সুইমিংপুলের অবস্থান। গর্তটির চারপাশে নানা গাছপালার ঠাসবুনোট। 

মজার ঘটনা, স্থানীয় শব্দ তো সুয়ার অর্থ বিশাল সুইমিংপুল। সত্যি প্রাকৃতিক পরিবেশে এমন সুইমিংপুল আর কোথায় মিলবে বলেন? জায়গাটি আগে ছিল দুটি গর্তের সমন্বয়ে তৈরি একটি গুহা। বহু বছর আগে অগ্ন্যুৎপাতের সময় লাভা প্রবাহের কারণে এই গুহার ক্ষয় হয়। সেই সঙ্গে হাজারো বছরে কাছের সাগরের প্রবল ঢেউও জায়গাটিকে এখনকার আকৃতি দিতে সহায়তা হরে। লাভা প্রবাহের ফলে এই এলাকায় আরও বেশ কিছু গর্তের জন্মও হয়। 

একটা মই বেয়ে নামতে হয় পুলের পান্না সবুজ জলে।তো সুয়ার মূল গর্তটি প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত একটি পাতাল সুড়ঙ্গের মাধ্যমে। সেখান থেকেই সাগরের পানিতে ভরে যায় জায়গাটি। এ ছাড়া আরও ছোটখাটো কিছু নালা দিয়েও পানি আসে এখানে সাগর থেকে। আর এভাবেই জন্ম অসাধারণ সুন্দর একটি প্রাকৃতিক সুইমিংপুলের। 

পুলের পান্না সবুজ জলে নামার একটি মাত্রই পথ, সেটা প্ল্যাটফর্ম থেকে নেমে যাওয়া একটি মই। তবে বেশ চওড়া আর গভীরতায় অনেক হলেও যখন সবুজ ঘাস মারিয়ে জায়গাটির দিকে এগোবেন, আগে থেকে জানা না থাকলে এখানে এমন একটি বিস্ময় লুকিয়ে আছে ঠিক ঠাহর করতে পারবেন না। 

মইয়ের থোড়াই কেয়ার করে অনেকে সরাসরি লাফ দেনসরু মই বেয়ে নামাটা কিন্তু বেশ সাহসের ব্যাপার। তবে একটু সাবধানতা অবলম্বন করে নিচে পৌঁছে যাওয়ার পর পুরস্কার মিলবে আপনার। পানি বেশ পরিষ্কার। আর এর নিচের অংশ বালুময়। এখানে আরেকটা বিষয় আপনাকে আকৃষ্ট করবে, সেটা হলো সাগরের দিক থেকে ধেয়ে আসা প্রবল শক্তিশালী ঢেউ। 

তবে সব পর্যটকই মই বেয়ে নামেন তা নয়। অতি দুঃসাহসী কেউ কেউ শেওলা ও পামগাছে ভরপুর গুহার কিনারা থেকে সরাসরি লাফও দেন। অনেকে আবার পানিতে নামার পর সুড়ঙ্গ পাড়ি দিয়ে সাগরেও পৌঁছে যান। 

প্রাকৃতিক সুইমিংপুলটির চারপাশের সবুজ গাছপালা আকৃষ্ট করে পর্যটকদের।আপাতদৃষ্টিতে বিপজ্জনক মনে হলেও ৯০ ফুট গভীরতার নোনা জলের পুকুরটিতে নিরাপদেই লাফিয়ে পড়তে পারেন রোমাঞ্চপ্রেমীরা। তবে মই বেয়ে কিংবা লাফিয়ে—যেভাবেই অসাধারণ এই প্রাকৃতিক সুইমিংপুলে নামেন না কেন, এখানে সাঁতরে বেড়ানো যে দারুণ আনন্দময় এক অভিজ্ঞতা হবে তাতে সন্দেহ নেই। 

নিচ থেকে ওপরের দিকে তাকালেও মুগ্ধ হবেন। চারপাশের পাথুরে দেয়ালে ঝুলতে থাকা লতাজাতীয় উদ্ভিদ আর শেওলা অন্যরকম এক সৌন্দর্যের জন্ম দেয়। হ্রদের পানি উষ্ণ আর সাগর থেকে আসা প্রচুর মাছ পাবেন এখানে। স্নরকেলের মাস্ক সঙ্গে নিয়ে এলে বর্ণিল সামুদ্রিক বন্যপ্রাণীর দেখা পাবেন। জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে এখানে বেশ স্রোত থাকে কখনো কখনো। হ্রদটির মোটামুটি মাঝখানের জায়গায় ঝোলানো একটি দড়ি দেখতে পাবেন। এটা থাকার কারণ, স্রোতে সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত পাতাল সুড়ঙ্গে চলে যাওয়ার অবস্থা হলে যেন দড়িটা ধরে নিজেকে আটকে রাখতে পারেন। 

তো সুয়া ওশান ট্রেঞ্চের গভীরতা ৯০ ফুটতবে দুঃসাহসী কেউ কেউ যারা আরও একটু বেশি রোমাঞ্চ পেতে ও দেখতে চান। তাঁরা সুড়ঙ্গ ধরে নিজের আগ্রহেই পৌঁছে যান সাগরে। দক্ষ সাতারু না হলে এ কাজ না করাই ভালো।

তো সুয়া ওশান ট্রেঞ্চ সাধারণত সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ভেতরে প্রবেশ করতে দিতে হবে ২০ সামোয়ান ‘তালা’। বেশির ভাগ মানুষ দেশটির রাজধানী আপিয়া শহর থেকেই পুলটিতে যান। শহর থেকে বাসে কিংবা ভাড়া গাড়ি নিয়ে পৌঁছাতে সময় লাগবে ঘণ্টা দুয়েক। 
 
এটলাস অবসকিউরা, ম্যান ভার্সাস ক্লক ডট কম, সিডনি মর্নিং হেরাল্ড, অন হিজ অউন ট্রিপ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত