আজকের পত্রিকা ডেস্ক
ইসরায়েলে গতকাল শনিবার ভোরে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরান। শুক্রবারের হামলার প্রতিশোধ নিতে চালানো এই আক্রমণে অন্তত ৪ ইসরায়েলি নিহত এবং ১৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে বাড়িঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তু ছাড়াও গ্যাস ক্ষেত্র ও বন্দরে আঘাত হেনেছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করলেও তা শেষ করবে ইরান। আর ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রাখলে আরও কড়া জবাব দেওয়া হবে। অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আরও ভয়াবহ হামলার হুমকি দিয়েছেন।
ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের তেল আবিব, এর কাছের রামাত গান, রিশন লেজিঅনসহ বিভিন্ন স্থানে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোনো কোনো স্থান এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার তুলনা কেবল গাজার ধ্বংসস্তূপের সঙ্গেই চলে। এ ধরনের ঘটনায় অনভ্যস্ত ইসরায়েলি নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও বিহ্বলতা দেখা যায়।
আল জাজিরা ও এএফপির খবরে বলা হয়, শনিবার ভোরে ইসরায়েলের শহরগুলোতে বিমান হামলার সতর্কবার্তা বাজতে শুরু করে। এরপরই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। তেল আবিবের বিভিন্ন ছবিতে ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখা যায়। বেশ কিছু বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা একের পর এক ভবন থেকে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করেন। তবে দক্ষ আগাম সতর্কব্যবস্থা এবং সুরক্ষিত আশ্রয়কেন্দ্রের সুবিধার কারণে ইসরায়েলিদের মধ্যে হতাহতের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
তবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তেল আবিবের কাছের শহর রিশনের বাসিন্দা অভি গাতেনিও বলেন, ‘সাইরেন বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিচে নেমে নিরাপদ কক্ষে চলে যাই। পাঁচ মিনিট পর বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। এরপর বাইরে বেরিয়ে দেখি, ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে গেছে।’
এদিকে ইরানের হামলার সময় সুরক্ষিত বাংকারে বসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন নেতানিয়াহু। পরে সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, ইরানকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রাখলে তেহরান পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।
সিএনএনের যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ‘ইসরায়েলের পেন্টাগন’ হিসেবে পরিচিত তেল আবিবের কিরিয়া এলাকায় আঘাত হানে। ওই এলাকাতেই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সদর দপ্তর। এই অফিসের একটি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে সেনারা টিভি সাংবাদিকদের দ্রুত সরিয়ে দেয়।
ইরানের ক্ষয়ক্ষতি
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ইরানের ১০টির বেশি শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা মেহরসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বলেছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় বুশেহর প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সম্পদ দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্রে হামলা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে সেখানে আগুন ধরে যায়। বুশেহরের কাঙ্গান বন্দরেও হামলা করেছে ইসরায়েল। সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ এলএনজি প্ল্যান্ট আছে। ইসরায়েলি সেনা মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফি ডেফরিন গতকাল বলেছেন, ইরানের বিমানবিধ্বংসী ব্যবস্থা, কমান্ড অবকাঠামোসহ ৪০টির বেশি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তাঁর দেশ।
ইরানের জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েল ইরানের দুটি গ্যাসক্ষেত্রে হামলা চালিয়েছে। একটি বুশেহর প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সম্পদ দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্র, অন্যটি একটি প্রদেশের ফজর জাম গ্যাস পরিশোধন কেন্দ্র।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের গ্যাস অবকাঠামোয় আঘাত হানায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এতে একদিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম লাফিয়ে বাড়বে, অন্যদিকে ইরানও ইসরায়েলের তেল-গ্যাস অবকাঠামোয় হামলা শুরু করতে পারে। এতে ইরান ও ইসরায়েলের সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়ানোর ঝুঁকি আরও বাড়বে। ইরানের কর্মকর্তারা আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন, তাঁদের জ্বালানি অবকাঠামোয় আঘাত হানলে ইরানও সমান ও পাল্টা জবাব দেবে। ইসরায়েলের তেল-গ্যাস সম্পদ খুব বেশি না থাকলেও যা-ই আছে, তাতেই ইরান হামলা করে বসতে পারে। এমনকি ইসরায়েলের অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতও হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। পাশাপাশি হরমুজ প্রণালি বন্ধের যে হুমকি ইরান দিয়ে রেখেছে, সেটাও বাস্তবায়ন করে বসতে পারে তারা।
এদিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) নিশ্চিত করেছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া নাতাঞ্জ কেন্দ্রেও হামলা হয়েছে। যদিও এসব কেন্দ্রের আশপাশে এখনো তেজস্ক্রিয়তার হেরফের ঘটেনি।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে টেলিফোনে বলেছেন, ইসরায়েলি আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে আরও কড়া ও শক্তিশালী জবাব দেবে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী।
নেতানিয়াহুর হুমকি
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল এক ভিডিও বার্তায় ইরানকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্ভবত বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছে। আরও বড় আঘাত আসতে এখনো বাকি।
বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা ইরানি শাসকদের প্রতিটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করব। তারা এখন পর্যন্ত যা অনুভব করেছে, তা আগামী দিনে যা আসবে, তার তুলনায় কিছুই নয়।’
নেতানিয়াহু বলেন, তাদের সামরিক বাহিনী এখন ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ধ্বংস করছে।
নেতানিয়াহু এর আগে ইরানে তাঁর দেশের হামলার পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এই অভিযান অপরিহার্য ছিল। ইরানি জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকুন।’
গতকাল ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে শহীদ চামরান শহরের একটি ১৪ তলা আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি হামলায় ২০ শিশুসহ ৬০ জন নিহত হয়েছে। এর আগে শুক্রবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ইসরায়েলি হামলায় তাঁর দেশে সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জন আহত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ইরান তিন দফায় প্রায় ১৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তাদের প্রায় ২ হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মজুত রয়েছে। তবে ইসরায়েলও আরও হামলা চালাতে প্রস্তুত।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি
ইসরায়েলের তিনটি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরান। এ ছাড়া দুই ইসরায়েলি পাইলটকেও আটকের দাবি করেছে তারা। ইরানের সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে তেহরান টাইমসের খবরে বলা হয়, শুক্রবার দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পর গতকাল শনিবার আরেকটি এফ-৩৫ ভূপাতিত করা হয়। তিন যুদ্ধবিমানের পাইলটদের মধ্যে একজন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ইসরায়েল তাদের কোনো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর অস্বীকার করেছে।
হরমুজ প্রণালি বন্ধের ইঙ্গিত
চলমান সংঘাতে জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হরমুজ প্রণালি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই নৌপথ ইরানসংলগ্ন পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরকে যুক্ত করেছে। ইরানি পার্লামেন্টের নিরাপত্তা কমিশনের সদস্য ইসমাইল কোসারি বলেছেন, তাঁর দেশ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই পথ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করছে।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রায় ২০ শতাংশই হয় হরমুজ প্রণালি দিয়ে। ফলে এই নৌপথে কোনো অস্থিরতা গোটা বিশ্বে জ্বালানির সরবরাহ চক্রের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক তৌফিক রহিম আল জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েল এখনো ইরানের তেলের অবকাঠামোয় হামলা চালায়নি। যদি হামলা হয়, তার প্রভাব হবে ভয়াবহ ও ব্যাপক।
পরমাণু আলোচনা বাতিল
এদিকে মধ্যস্থতাকারী ওমান গতকাল রাতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের আলোচনা বাতিল করা হয়েছে। এর আগে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, ইসরায়েলে আক্রমণের মুখে থাকা অবস্থায় এই আলোচনা হবে অর্থহীন। আজ রোববার আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
শুরু হয়েছে কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ। গতকাল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টেলিফোনে কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধ হওয়া উচিত। জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, এই সংঘাত বন্ধের পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধও বন্ধ হওয়া উচিত।
পরে ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে বলেছে, টেলিফোনে আলোচনার সময় পুতিন ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানান। দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে ৫০ মিনিট আলোচনা হয়।
এদিকে গতকাল সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। আলোচনায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানান বলে জানিয়েছে বিবিসি। যুবরাজ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উত্তেজনা নিরসনের বিষয়ে একমত হন।
এদিকে, এরদোয়ান যুবরাজের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনার সময় নেতানিয়াহুকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি বলে মন্তব্য করেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আলোচনায় এরদোয়ান সৌদি যুবরাজকে বলেন, ইসরায়েলকে থামতে হবে। এদিন এরদোয়ান ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন। কাতারের আমির শেখ তামিমও এদিন ইরানের প্রেসিডেন্টকে টেলিফোন করেন। এ সময় তিনি ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানান।
আরও খবর পড়ুন:
ইসরায়েলে গতকাল শনিবার ভোরে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরান। শুক্রবারের হামলার প্রতিশোধ নিতে চালানো এই আক্রমণে অন্তত ৪ ইসরায়েলি নিহত এবং ১৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে বাড়িঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তু ছাড়াও গ্যাস ক্ষেত্র ও বন্দরে আঘাত হেনেছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করলেও তা শেষ করবে ইরান। আর ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রাখলে আরও কড়া জবাব দেওয়া হবে। অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আরও ভয়াবহ হামলার হুমকি দিয়েছেন।
ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের তেল আবিব, এর কাছের রামাত গান, রিশন লেজিঅনসহ বিভিন্ন স্থানে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোনো কোনো স্থান এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার তুলনা কেবল গাজার ধ্বংসস্তূপের সঙ্গেই চলে। এ ধরনের ঘটনায় অনভ্যস্ত ইসরায়েলি নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও বিহ্বলতা দেখা যায়।
আল জাজিরা ও এএফপির খবরে বলা হয়, শনিবার ভোরে ইসরায়েলের শহরগুলোতে বিমান হামলার সতর্কবার্তা বাজতে শুরু করে। এরপরই ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। তেল আবিবের বিভিন্ন ছবিতে ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখা যায়। বেশ কিছু বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা একের পর এক ভবন থেকে আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করেন। তবে দক্ষ আগাম সতর্কব্যবস্থা এবং সুরক্ষিত আশ্রয়কেন্দ্রের সুবিধার কারণে ইসরায়েলিদের মধ্যে হতাহতের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
তবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তেল আবিবের কাছের শহর রিশনের বাসিন্দা অভি গাতেনিও বলেন, ‘সাইরেন বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নিচে নেমে নিরাপদ কক্ষে চলে যাই। পাঁচ মিনিট পর বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। এরপর বাইরে বেরিয়ে দেখি, ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে গেছে।’
এদিকে ইরানের হামলার সময় সুরক্ষিত বাংকারে বসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন নেতানিয়াহু। পরে সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেন, ইরানকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রাখলে তেহরান পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।
সিএনএনের যাচাই করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ‘ইসরায়েলের পেন্টাগন’ হিসেবে পরিচিত তেল আবিবের কিরিয়া এলাকায় আঘাত হানে। ওই এলাকাতেই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সদর দপ্তর। এই অফিসের একটি অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে সেনারা টিভি সাংবাদিকদের দ্রুত সরিয়ে দেয়।
ইরানের ক্ষয়ক্ষতি
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ইরানের ১০টির বেশি শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা মেহরসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বলেছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় বুশেহর প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সম্পদ দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্রে হামলা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে সেখানে আগুন ধরে যায়। বুশেহরের কাঙ্গান বন্দরেও হামলা করেছে ইসরায়েল। সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ এলএনজি প্ল্যান্ট আছে। ইসরায়েলি সেনা মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফি ডেফরিন গতকাল বলেছেন, ইরানের বিমানবিধ্বংসী ব্যবস্থা, কমান্ড অবকাঠামোসহ ৪০টির বেশি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তাঁর দেশ।
ইরানের জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েল ইরানের দুটি গ্যাসক্ষেত্রে হামলা চালিয়েছে। একটি বুশেহর প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সম্পদ দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্র, অন্যটি একটি প্রদেশের ফজর জাম গ্যাস পরিশোধন কেন্দ্র।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের গ্যাস অবকাঠামোয় আঘাত হানায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এতে একদিকে বিশ্ববাজারে তেলের দাম লাফিয়ে বাড়বে, অন্যদিকে ইরানও ইসরায়েলের তেল-গ্যাস অবকাঠামোয় হামলা শুরু করতে পারে। এতে ইরান ও ইসরায়েলের সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়ানোর ঝুঁকি আরও বাড়বে। ইরানের কর্মকর্তারা আগেই হুমকি দিয়ে রেখেছেন, তাঁদের জ্বালানি অবকাঠামোয় আঘাত হানলে ইরানও সমান ও পাল্টা জবাব দেবে। ইসরায়েলের তেল-গ্যাস সম্পদ খুব বেশি না থাকলেও যা-ই আছে, তাতেই ইরান হামলা করে বসতে পারে। এমনকি ইসরায়েলের অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতও হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। পাশাপাশি হরমুজ প্রণালি বন্ধের যে হুমকি ইরান দিয়ে রেখেছে, সেটাও বাস্তবায়ন করে বসতে পারে তারা।
এদিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) নিশ্চিত করেছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া নাতাঞ্জ কেন্দ্রেও হামলা হয়েছে। যদিও এসব কেন্দ্রের আশপাশে এখনো তেজস্ক্রিয়তার হেরফের ঘটেনি।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে টেলিফোনে বলেছেন, ইসরায়েলি আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে আরও কড়া ও শক্তিশালী জবাব দেবে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী।
নেতানিয়াহুর হুমকি
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল এক ভিডিও বার্তায় ইরানকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্ভবত বেশ কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছে। আরও বড় আঘাত আসতে এখনো বাকি।
বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা ইরানি শাসকদের প্রতিটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করব। তারা এখন পর্যন্ত যা অনুভব করেছে, তা আগামী দিনে যা আসবে, তার তুলনায় কিছুই নয়।’
নেতানিয়াহু বলেন, তাদের সামরিক বাহিনী এখন ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সক্ষমতা ধ্বংস করছে।
নেতানিয়াহু এর আগে ইরানে তাঁর দেশের হামলার পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এই অভিযান অপরিহার্য ছিল। ইরানি জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকুন।’
গতকাল ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে শহীদ চামরান শহরের একটি ১৪ তলা আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি হামলায় ২০ শিশুসহ ৬০ জন নিহত হয়েছে। এর আগে শুক্রবার জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ইসরায়েলি হামলায় তাঁর দেশে সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জন আহত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ইরান তিন দফায় প্রায় ১৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তাদের প্রায় ২ হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মজুত রয়েছে। তবে ইসরায়েলও আরও হামলা চালাতে প্রস্তুত।
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি
ইসরায়েলের তিনটি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরান। এ ছাড়া দুই ইসরায়েলি পাইলটকেও আটকের দাবি করেছে তারা। ইরানের সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে তেহরান টাইমসের খবরে বলা হয়, শুক্রবার দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পর গতকাল শনিবার আরেকটি এফ-৩৫ ভূপাতিত করা হয়। তিন যুদ্ধবিমানের পাইলটদের মধ্যে একজন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ইসরায়েল তাদের কোনো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর অস্বীকার করেছে।
হরমুজ প্রণালি বন্ধের ইঙ্গিত
চলমান সংঘাতে জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হরমুজ প্রণালি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই নৌপথ ইরানসংলগ্ন পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরকে যুক্ত করেছে। ইরানি পার্লামেন্টের নিরাপত্তা কমিশনের সদস্য ইসমাইল কোসারি বলেছেন, তাঁর দেশ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই পথ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করছে।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল পরিবহনের প্রায় ২০ শতাংশই হয় হরমুজ প্রণালি দিয়ে। ফলে এই নৌপথে কোনো অস্থিরতা গোটা বিশ্বে জ্বালানির সরবরাহ চক্রের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে। ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক তৌফিক রহিম আল জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েল এখনো ইরানের তেলের অবকাঠামোয় হামলা চালায়নি। যদি হামলা হয়, তার প্রভাব হবে ভয়াবহ ও ব্যাপক।
পরমাণু আলোচনা বাতিল
এদিকে মধ্যস্থতাকারী ওমান গতকাল রাতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের আলোচনা বাতিল করা হয়েছে। এর আগে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, ইসরায়েলে আক্রমণের মুখে থাকা অবস্থায় এই আলোচনা হবে অর্থহীন। আজ রোববার আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
শুরু হয়েছে কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপ। গতকাল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টেলিফোনে কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধ হওয়া উচিত। জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, এই সংঘাত বন্ধের পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধও বন্ধ হওয়া উচিত।
পরে ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে বলেছে, টেলিফোনে আলোচনার সময় পুতিন ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানান। দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে ৫০ মিনিট আলোচনা হয়।
এদিকে গতকাল সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। আলোচনায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানান বলে জানিয়েছে বিবিসি। যুবরাজ ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উত্তেজনা নিরসনের বিষয়ে একমত হন।
এদিকে, এরদোয়ান যুবরাজের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনার সময় নেতানিয়াহুকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি বলে মন্তব্য করেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আলোচনায় এরদোয়ান সৌদি যুবরাজকে বলেন, ইসরায়েলকে থামতে হবে। এদিন এরদোয়ান ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন। কাতারের আমির শেখ তামিমও এদিন ইরানের প্রেসিডেন্টকে টেলিফোন করেন। এ সময় তিনি ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানান।
আরও খবর পড়ুন:
বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। জাতীয় জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাহিনীও এসডিআরএফের সঙ্গে উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, হেলিকপ্টারটি একটি দুর্গম এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে বলে উদ্ধারকাজ বিলম্ব হচ্ছে।
৩৭ মিনিট আগেভারতের কেরালার থিরুবনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্রিটেনের একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান জরুরি অবতরণ করেছে। গতকাল শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই)।
৪২ মিনিট আগেএবার সাতজন আরোহী নিয়ে ভারতের উত্তরাখন্ডে বিধ্বস্ত হলো এক হেলিকপ্টার। আরোহীদের সবাই নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজ্যের জরুরি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাহিনীর (এসডিআরএফ) বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই এ তথ্য জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটির তথ্য অনুযায়ী, আজ রোববার, স্থানীয় সময় সকালে উত্তরাখন্ডের গৌরিকু
২ ঘণ্টা আগেমধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। ইসরায়েলের মানুষ সার্বক্ষণিক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আতঙ্কে ভুগছে। এরই মধ্যে তেলআবিব ও হাইফার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বহু স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়েছে। হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এই পরিস্থিতির মধ্যেও ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের আরব বেদুইন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার
৩ ঘণ্টা আগে