Ajker Patrika

ব্যস্ততা দেখায় পুলিশ, চুরি যাওয়া গাড়ি নিজেরাই উদ্ধার করলেন ব্রিটিশ দম্পতি

অনলাইন ডেস্ক
জাগুয়ার ই-পেস গাড়ি। ছবি: সংগৃহীত
জাগুয়ার ই-পেস গাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

চুরি গেছে গাড়ি। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন যুক্তরাজ্যের এক দম্পতি। তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে গাড়ি কোথায় আছে সে তথ্য বের করে ফেলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশ এতটাই ‘ব্যস্ত’ যে, কোথায় আছে গাড়িটি সে তথ্য থাকার পর এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া সময় বা সুযোগ তাদের নেই। এ অবস্থা দেখে গাড়ি উদ্ধারে নিজেরাই নেমে গেলেন মিয়া ফোর্বস পিরি ও মার্ক সিম্পসন।

লন্ডনের পশ্চিমাংশের ব্রুক গ্রিন এলাকার বাসিন্দা মিয়া ও মার্কের জাগুয়ার ই-পেস গাড়িটি চলতি মাসের শুরুতে চুরি হয়। এই দম্পতি জানান, গত ৪ জুন রাত ৩টা ২০ মিনিটে বাড়ির সামনের রাস্তা থেকেই গায়েব হয় তাদের জাগুয়ার ই-পেস গাড়িটি। গাড়িটিতে ‘ঘোস্ট ইমোবিলাইজার’ এবং অ্যাপল-এর এয়ারট্যাগ লোকেটর লাগানো ছিল। ঘোস্ট ইমোবিলাইজার এমন একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা যা গাড়ি চালু করতে হলে একটি নির্দিষ্ট কোড দিতে হয়, ফলে চোররা সাধারণ উপায়ে তা চালু করতে পারে না।

অ্যাপল এয়ারট্যাগ লোকেটর অনুযায়ী গাড়িটি রাত ৩টা ২০ পর্যন্ত বাড়ির সামনেই ছিল। তবে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে পরবর্তী আপডেটে দেখা যায়, গাড়িটি চিসউইক এলাকায় অবস্থান করছে।

এরপর তাঁরা চুরির ঘটনা পুলিশকে জানান। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রত্যুত্তরে বলা হয়, তারা এতটাই ব্যস্ত যে এখনই বিষয়টি তদন্ত করা সম্ভব নয়। এমনকি জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ যোগাযোগ করে চুরির বিষয়টি জানানো হলে সেখান থেকেও উত্তর আসে, ‘তদন্ত কবে হবে, বলা যাচ্ছে না।’

পুলিশের এমন উত্তর শুনে আর অপেক্ষা না করে মিয়া ও মার্ক নিজেরাই ওই এলাকায় গিয়ে নিজেদের গাড়ি খুঁজে বের করেন। তাঁরা গাড়িটিকে খুঁজে পান একটি নিরিবিলি এলাকার এক গলিতে। গাড়ির ভেতরের আসবাব ও কার্পেট ছেঁড়া ছিল। দেখে বোঝা যাচ্ছিল, চোরেরা গাড়ির বৈদ্যুতিক তার কাটতে বা নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেছিল।

পরে লিংকডইনে দেওয়া এক পোস্টে মিয়া ফোর্বস পিরি বলেন, “আমাদের চুরি যাওয়া গাড়ি নিজেরাই আবার ‘চুরি করে’ ফেরত নেওয়াটা একরকম মজার অভিজ্ঞতাই ছিল। ”

চুরি যাওয়া নিজের গাড়ি নিজে খুঁজে পাওয়ার অভিজ্ঞতা যতই রোমাঞ্চকর হোক না কেন, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মিয়া। তিনি বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে পুলিশ পুরোপুরি উদাসীন। গাড়ির ভেতরের অবস্থা দেখে স্পষ্ট বোঝা যায়, চোরেরা অনেকটা সময় পেয়েছিল। পুলিশ যদি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিত, তাহলে হয়তো গাড়িটি এমন ক্ষতিগ্রস্ত হতো না।’

তিনি লেখেন, ‘মজার ছিল ঠিকই, কিন্তু মনে হয় প্রশ্ন করা দরকার—আমাদের কি আদৌ এই কাজটা করতে হওয়া উচিত ছিল? এটা শুধু স্বাভাবিক কিনা তা নয়, বরং এটা কতটা সঠিক যে পুলিশ এমন একটি সংঘবদ্ধ চুরি–অভিযান, যেখানে সম্ভবত একটি ফ্ল্যাটবেড ট্রাক ব্যবহৃত হয়েছে, তার তদন্তে আগ্রহ দেখায়নি?’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, কোনো সাজা না দেওয়া হয়, তবে মানুষ এ রকম ঘটনা ঘটাতে পিছপা হবে কেন?’

মিয়া-মার্ক দম্পতি নিজেদের গাড়ি উদ্ধার করার পর মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, তারা যোগাযোগ করবে এবং এই সপ্তাহে ফরেনসিক দল পাঠানো হবে।

দ্য টাইমস-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিয়া বলেন, গাড়ি উদ্ধারের পর অনেকেই তা ছুঁয়েছে, এখন ফরেনসিক দল সঠিক তথ্য পাবে কি না সন্দেহ। তবে পুলিশ জানিয়েছে, তারা কার্পেটের নিচে ও ফিউজ বক্সে আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে দেখবে।

মিয়া আরও বলেন, ‘আমার একটাই কথা—তারা চাইলে খুব সহজেই আমাদের বলে দিতে পারত যে কিছু না ছুঁতে। এতে তেমন কোনো খরচ হতো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের হাতে পর্যাপ্ত সম্পদ নেই, এটা সত্যিই দুঃখজনক। কিন্তু যখন গাড়ি চুরি বা অন্যান্য অনেক অপরাধে কোনো ধরনের শাস্তির মুখে পড়তে হয় না, তখন মানুষকে এসব কাজ থেকে বিরত রাখার মতো কী বাধা আছে—আমি বুঝি না।’

এই ঘটনা যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের মধ্যে আবারও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, সংঘবদ্ধ অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি ঠেকাবে কে? অনেকেই বলছেন, নাগরিকদের নিজ দায়িত্বে গাড়ি খুঁজে পাওয়া একপাক্ষিক ‘সফলতা’ নয়, বরং পুলিশের ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুই ঘণ্টা আগে একই বিমানে ভ্রমণের দাবি এক ব্যক্তির, জানালেন ভয়াবহ তথ্য

উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় সবাই মরেনি, একমাত্র জীবিত ১১ নম্বর সিটের যাত্রী

ইরানের কোনো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার প্রভাব পড়েনি: আইএইএ

সাতক্ষীরায় পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, সেনা জালে ৩ সমন্বয়ক

‘উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়ার সময় আমার ছেলে হোস্টেলের দোতলা থেকে ঝাঁপ দেয়’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত