Ajker Patrika

আঙুলের ছাপের মতো এক দ্বীপ আছে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২২ মে ২০২৩, ১১: ০৪
আঙুলের ছাপের মতো এক দ্বীপ আছে

উড়োজাহাজ থেকে দেখলে কিংবা গুগল আর্থ অথবা ড্রোন দিয়ে ছবি তুললে মনে হবে বিশাল কোনো আঙুলের ছাপ। মিলটা এতটাই যে দ্বীপটিকে এখন ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইল্যান্ড নামেই বেশি চেনে মানুষ। প্রকৃতপক্ষে দ্বীপটির নাম বাভিয়ানেজ, অবস্থান ইউরোপের দেশ ক্রোয়েশিয়ায়।

দ্বীপটি আয়তনে একেবারেই ছোট, মোটে ০.১৪ বর্গকিলোমিটার। পাখির চোখে একে এমন দেখানোর কারণ দ্বীপময় ছড়িয়ে থাকা পাথরের দেয়ালের নেটওয়ার্ক। তবে দ্বীপটি আকারে ছোট হলে কি হবে, বিস্তৃত এই দেয়ালগুলোর দৈর্ঘ্য যোগ করলে যোগফল কত হবে জানেন, ২৩ কিলোমিটার।

ছোট্ট এই দ্বীপটিতে কোনো জনবসতি নেই। কখনো মানুষের বসতি ছিল এমনটিও জানা যায়নি। তবে আদ্রিয়াতিক সাগরের এ দ্বীপটিকে পাশের দ্বীপ কাপরিজের কৃষকেরা ফল ও সবজি চাষের এলাকা হিসেবে ব্যবহার করতেন। অনুমান করা হয়, কোমর পর্যন্ত উঁচু পাথরের দেয়ালগুলো আঠারো শতকের। একটি পাথরের সঙ্গে আরেকটি জোড়া দিতে সিমেন্ট বা এ ধরনের কোনো উপাদান ব্যবহার করা হয়নি। একটার সঙ্গে আরেকটা পাথর আটকে দেওয়ার এই প্রক্রিয়া পরিচিত, ‘ড্রাই স্টোন ওয়ালিং’ নামে।

দ্বীপটির অবস্থান ইউরোপের দেশ ক্রোয়েশিয়ায়এবার বরং এই পাথুরে দেয়াল সৃষ্টির কারণটা জেনে নেওয়া যাক। ক্রোয়েশিয়ার উপকূলের অনেক এলাকাই পাথুরে। এমন পাথরময় জায়গায় চাষ করাটা একটু কঠিনই ছিল। কৃষকেরা এই পাথরগুলো তুলে জমিকে কৃষিকাজের উপযোগী করতেন। পাশাপাশি এই পাথরগুলো দিয়ে এক একটি প্লটের চারপাশে সীমানা দেয়ালের মতো বানাতেন। এই দেয়ালগুলো সীমানার কাজ করার পাশাপাশি বারা নামে পরিচিত শক্তিশালী এক ধরনের ঝোড়ো বাতাস থেকে ফলের গাছগুলোর রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করত। 

দ্বীপময় ছড়িয়ে থাকা পাথরের দেয়ালের নেটওয়ার্কই এর এমন চেহারার কারণএ ধরনের দৃষ্টিনন্দন দেয়াল শুধু ক্রোয়েশিয়ার বাভিয়ানেজেই পাবেন তা নয়, আয়ারল্যান্ড আর স্কটল্যান্ডেও দেখা মেলে কৃষি জমির সীমানা হিসেবে ব্যবহার করা এমন নিচু দেয়ালের। তবে ওই জায়গাগুলো ছোট্ট এই ক্রোয়েশিয়ান দ্বীপের চেয়ে আকারে বড়।

সিবেনিক দ্বীপপুঞ্জের ২৪৯টি দ্বীপের একটি এই বাভিয়ানেজ। মূলত আঙুরখেত ও ডুমুরগাছের জন্য বিখ্যাত ছিল জায়গাটি। তবে এখন আর দ্বীপে কোনো ফল বা সবজির গাছ নেই। সেখানে গেলে কেবল কিছু আঙুরলতা বা গুল্মের ঝাড় দেখতে পাবেন। তবে ২০১৮ সাল থেকে ইউনেসকোর ‘ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটিজ’ এলাকা হিসেবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে একে।

কোনো ধরনের সিমেন্ট ছাড়াই একটা পাথর আরেকটির সঙ্গে আটকে দেওয়া হয়েছেফিঙ্গারপ্রিন্ট দ্বীপের কাছের বড় শহর সিবেনিক। মধ্য দামাচিয়ার ঐতিহাসিক এক নগর এটি। সিবেনিক বা আশপাশের অন্য কোনো জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ থেকে নৌকায় বা লঞ্চে চেপে ঘুরে যেতে পারেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট দ্বীপ থেকে। বিশেষ করে অনেক ওপর থেকে তোলা এবং গুগল আর্থের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে দ্বীপটি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে শুরু করে সারা পৃথিবীর বৈচিত্র্যপিয়াসী মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়ে যায়। 

সিবেনিক দ্বীপপুঞ্জের ২৪৯টি দ্বীপের একটি এই বাভিয়ানেজস্থানীয় বাসিন্দারাও পর্যটকদের স্বাগত জানান, তবে একই সঙ্গে অসতর্ক মানুষদের কারণে এখানকার দেয়ালগুলোর ক্ষতি হতে পারে এমন একটি আশঙ্কাও তাঁদের মধ্যে কাজ করে। কাজেই লেখাটি পড়ে আগামী ইউরোপ ভ্রমণে দ্বীপটিতে গেলে সতর্ক থাকবেন আশা করি।
 
সূত্র: ডেইলি মেইল, ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং ডট কম, অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, অডিটি সেন্ট্রাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত