Ajker Patrika

স্কুল খোলার সিদ্ধান্তে মুষড়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা

ইমরান খান
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭: ৪০
Thumbnail image

১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পিলে চমকে উঠেছে। শিক্ষামন্ত্রীর এ ঘোষণায় তাৎক্ষণিক বেহুঁশ হয়েও পড়েছে অনেকে। হুঁশ ফিরতেই তারা পাগলের মতো ছুটে গেছে বই, খাতা, কলম আর স্কুলড্রেসের সন্ধানে। এ পর্যায়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। 

বেশির ভাগ বই-খাতাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যে কয়েকটি উদ্ধার করা গেছে, তার বেশির ভাগই সাবাড় করেছে ইঁদুর বাবাজি। বাকি যা আছে, তার পাঠোদ্ধারের উপায় নেই। ১৮ মাসে কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। বয়সের ভারে কলমের বলও ঘোরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। স্মৃতি লিখে রাখা ডায়েরিটি রীতিমতো ঝাঁজরা করে ফেলেছে উইপোকার দল। পরিবারের সবাই মিলে বহু খোঁজাখুঁজির পর আলনার নিচের তস্য চিপা থেকে গুপ্তধনের মতো উদ্ধার হলো প্রিয় স্কুল ড্রেসটা। কিন্তু হায়, সাদা জামাটা তামাটে হয়ে গেছে। পরিচ্ছন্নতার মাথা খেয়ে জামাটা গায়ে দেওয়ার চেষ্টাতেও গুঁড়ে বালি। স্বাস্থ্যগত উন্নতি যে এত হ্যাপার কারণ হবে, কে জানত। বোতাম ছয়টা আর আটকানোই গেল না। সব যেমন তেমন, নেভি-ব্লু প্যান্টটার তো হদিসই পাওয়া গেল না। 

এদিকে কারও কারও মনে মহা দ্বিধা। বহু হিসাব করেও তারা সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি যে, ‘আমি আসলে কোন ক্লাসে পড়ি?’ কয়েকজন তো স্কুলের নাম, যাওয়ার পথও ভুলে গেছে। তবে এর বিপরীত চিত্র যে নেই, এমনও নয়। কিছু সিরিয়াস শিক্ষার্থী এরই মধ্যে নতুন ড্রেস বানিয়ে ওয়্যারড্রোব সাজিয়ে রেখেছে। ক্লাসে গিয়ে আসলে কোন শ্রেণির কক্ষে বসবে, তা নিয়েও অভিভাবকদের মাধ্যমে শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। ল-র-ব-য-হ'র অনুসন্ধানী দলের হাতে এমন কিছু শিক্ষার্থীর তালিকা এসেছে, যারা সরাসরি ক্লাসে জুমের ফলপ্রসূ ব্যবহার নিয়ে নেটে ঘাঁটাঘাঁটি চালাচ্ছে। ক্লাসে ফিরে ক্লাসমেটদের চিনতে পারা সহজ করতে মেসেঞ্জার গ্রুপে সবার বর্তমান ছবি ও ক্যাপশনে নাম লিখে দেওয়ার একটি কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। 

এদিকে নতুন ড্রেস বানাতে টেইলার্সগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এতে স্কুল থেকে ইউনিফর্ম বিক্রির ব্যবসায় ধস নামলেও আনন্দে দরজিরা। নতুন ক্লাসের উদ্দেশ্যে খাতা কলমের দোকানেও লম্বা লাইন। সব মিলে দরজি ও স্টেশনারি খাতে বহু বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। 

এদিকে শিক্ষকেরা বলছেন, বই হারানোয় কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। স্কুলে পর্যাপ্ত বই আছে, আবারও বই দেওয়া হবে। এই ঘোষণায় ইঁদুরে বই খাওয়ায় মনে মনে আনন্দিত শিক্ষার্থীরা আবারও মুষড়ে পড়েছে। ‘স্কুলের সব বইও ইঁদুরে খেয়েছে’ সংবাদ শোনার আগে তারা স্বাভাবিক হতে পারবে না বলে শপথ নিয়েছে। 

বারবার মুষড়ে পড়ার খবর পেয়ে স্কুলের ক্রীড়াশিক্ষক শোনালেন আশার বাণী। বললেন, ‘আসল কাহিনি আমি ধরে ফেলেছি। এ সমস্যা সারানো কোনো ব্যাপারই না। তাদের উদ্দেশ্যে শুধু বলতে চাই—১২ তারিখ থেকেই আহো সবাই। বহুদিন পর খেলা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত