Ajker Patrika

আর নয় পরীক্ষা এবার গেল বাঁচা

ইমরান খান
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০১: ২১
আর নয় পরীক্ষা এবার গেল বাঁচা

সাল ২০৬০। নাতনি সুস্মিতাকে গল্প শোনাচ্ছেন সুনীতি কুমার–

অনেক বছর আগের কথা। এই বঙ্গদেশে পরীক্ষা নামের এক আতঙ্ক ছিল। পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ত শিক্ষার্থীদের বুকের কাঁপন। তবে শেষ রাতে ফাটিয়ে দেওয়ার মতো বীরও যে ছিল না তা নয়। ভোররাতে উঠে পড়ব বলে রাতের প্রথম প্রহরে ঘুমিয়ে যাওয়ার মতো কলিজাও ছিল কারো কারো।

পরীক্ষা আর ফল প্রকাশের আগে অনেকেই বাড়াবাড়ি রকম ধর্মকর্মে মন দিত। পরীক্ষার সেই মাহেন্দ্রক্ষণে বাধ্য হয়ে কোনোরকম পরীক্ষার হলে গেলেও ছোটবেলা থেকে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাওয়া মগজটা বিশ্বাসঘাতকতা করত। বিষয়টি এমন যে, ক্লাসে ঠিকঠাক বুঝলেও নিজে পড়ার সময় সব উল্টাপাল্টা লাগত। পরীক্ষার হলে স্মৃতি পুরাই পল্টি মারতো। তাই বলে থেমে থাকত না অকুতভয়ীরা। শুরুর এক ঘণ্টা ক্যালিগ্রাফি, দ্বিতীয় ঘণ্টা বাঁকা অক্ষরে এবং শেষ ঘণ্টা ডাক্তারের স্টাইলে কী যেন লিখত। বন্ধুরা পরীক্ষার খবর জানতে চাইলে সহজ উত্তর- প্রশ্ন কী আসছে বুঝি নাই। উত্তর কী লিখছি তাও স্যার বুঝবে না!

চাপে চ্যাপ্টা হওয়ার জোগার অনেকে আবার হন্যে হয়ে খুঁজতো পরীক্ষার আবিষ্কারককেও। কেউ আবার হঠাৎ চরমপন্থী পরিবেশবাদী হয়ে উঠতো। বলত- পরীক্ষার কাগজ, মার্জিন টানার স্কেল ও পেনসিল বানাতে প্রতি বছর অসংখ্য গাছ কাটা হয়। এ বৃক্ষনিধন পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর সে খোঁজ তো কেউ রাখে না। তা ছাড়া গাছেরও তো জীবন আছে। গাছের বিরুদ্ধে এ নিষ্ঠুরতা বন্ধ হোক!

আন্দোলন সংগ্রাম যাই হোক, এই পরীক্ষার ফলও একদিন প্রকাশিত হতো। ফল ভালো না হলেও নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ছিল দুর্দান্ত সব মোটিভেশন। শুধু পরীক্ষার ফল দিয়ে আমি আমার মেধাকে মাপতে পারি না। এ ছাড়া এক বিষয়ে ফেল করলে সব বিষয়ে ফেল ধরা হলেও এক বিষয়ে এ প্লাস পেলে সব বিষয়ে এ প্লাস কেন ধরা হয় না সে নিয়ম নিয়েও কর্তৃপক্ষকে তুলোধুনে করতো অনেকে।

অবশেষে ২০২১ সালে এসে কোমলমতিদের মনের দুঃখ বুঝল বাংলাদেশ। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব পরীক্ষা, পিএসসি, জেএসসি পরীক্ষা বাতিলের মতো শিক্ষার্থীবান্ধব ঘোষণা এল। আনন্দে আত্মহারা শিক্ষার্থীরা টের পেল ‘ছাত্রজীবন মধুর হতো, যদি না থাকিত পরীক্ষা’র আসল স্বাদ। কবিগুরুর সুরে ছন্দ এল ‘ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা; আর নয় পরীক্ষা এবার গেল বাঁচা!’ উচ্ছ্বসিত ঢল একযোগে গাইল, ‘আমাকে আমার মতো ঘুরতে দাও। আমি পড়াটা নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি। যেটা পড়িনি পড়িনি সেটা না পড়াই থাক। বইয়ের পাতায় চোখ রাখব না... না...।’ 
 
পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে কেউ কেউ আবার আফসোসও করল। আবেগতাড়িত হয়ে বললো, পরীক্ষা একদিনের জন্য হলেও আমাদের সঙ্গে বইয়ের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করত। এখন যে কী হবে জানি না। তবে বইগুলোকে বড় মিস করব। একই সঙ্গে পরীক্ষার আগের রাতে ‘অনিবার্য কারণবশত’ বাতিল হওয়ার যে মজা তাও তো আর পাওয়া যাবে না। এছাড়া বড় ভাইদের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তও বাতিল করে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারির দাবিও করে তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

৩ আগস্ট বিমানবন্দরে বাধা পান তাপস, হাসিনাকে অনুরোধ করেন অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে- অডিও ফাঁস

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

বগুড়ায় দুই মামলায় আ.লীগের ছয় নেতা-কর্মী ১০ দিনের রিমান্ডে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত