Ajker Patrika

চকলেট পাহাড় আছে ফিলিপাইনে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১৬: ৪২
Thumbnail image

ফিলিপাইনের বহোল প্রদেশের প্রধান দ্বীপ বহোল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য জায়গাটি বিখ্যাত। উপকূলজুড়ে সাদা বালুর সৈকত টানে পর্যটকদের। তেমনি উপসাগরের স্বচ্ছ জল ডুবুরিদের প্রিয় জায়গা। তবে এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নিঃসন্দেহে চকলেট পাহাড়। না সত্যি সত্যি চকলেটের পাহাড় নয় এগুলো, তবে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা একের পর এক ছোট ছোট পাহাড়কে দেখলে মনে হবে যেন চকলেটের তৈরি এগুলো!

এগুলো আসলে ঘাসে ঢাকা মোচাকৃতি ছোট ছোট পাহাড়। ৫০ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে এমন ১ হাজার ২৬০টির বেশি পাহাড় আছে। সাধারণত ১০০ থেকে ১৬০ ফুট উচ্চতা হয় পাহাড় বা টিলাগুলোর। তবে সর্বোচ্চ ৪০০ ফুট উঁচু পাহাড়ও চোখে পড়ে। এমনিতে পাহাড়গুলো ঢাকা থাকে সবুজ ঘাসে। তবে শুকনো মৌসুমে এই সবুজ-বাদামি রূপ নেয়। তখনই একে মূলত চকলেটের পাহাড় বলে মনে হয়। তার মানে এর সত্যিকারের রূপ দেখতে আপনাকে যেতে হবে গ্রীষ্মে।

একেক সময় পাহাড়ের একেক রূপএ ধরনের প্রচুর পাহাড় থাকলেও কীভাবে এদের জন্ম সে সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা আছে এটি তৈরির বিষয়ে। এগুলোর মধ্যে আছে সাগরের মধ্যে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত থেকে শুরু করে নানা প্রক্রিয়ায় চুনাপাথরের রূপ পরিবর্তনও।

বেশির ভাগ তত্ত্ব অনুসারে, বৃষ্টি ও ভূত্বকের পানিতে নরম হওয়া চুনাপাথরে টেকটনিক শক্তির প্রভাবে ফাটল ধরে ও ওপরের দিকে উঠে যায়। পরে নদী এবং ঝরনার স্রোতে এগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে তৈরি হয় এ ধরনের পাহাড়ের। এ ধরনের পরিবর্তন ককপিট কার্স্ট নামে পরিচিত। এমন প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিসেবে অনেকে বিবেচনা করেন চকলেট পাহাড়কে।

অন্তত ১ হাজার ২৬০টি চকলেট পাহাড় আছে বহোলেইদানীং অবশ্য আরেকটি তত্ত্ব বেশ প্রচার পাচ্ছে। সেটি হলো প্রাচীন একটি আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরিত হওয়ার পর এর টুকরোগুলো ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। আর এই টুকরোগুলোই চকলেট পাহাড়।

ছোট পাহাড়গুলোর মাঝখানে চমৎকারভাবে বিন্যস্ত সমতল ভূমি। এ ছাড়া গোটা এলাকাটি প্রচুর গুহা আর ঝরনায় পূর্ণ।

তবে বিজ্ঞানীরা যতই তত্ত্ব দেন না কেন, তা চকলেট পাহাড় নিয়ে স্থানীয়দের মুখে মুখে নানান কিংবদন্তি আর গল্পগাথা ছড়ানো আটকাতে পারেনি। এর মধ্যে একটি তো বেশ মজার। বিশাল আকারের দানবীয় এক বুনো মোষ এলাকায় এসে বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে থাকে। এটি এই অঞ্চলের জমির বেশির ভাগ ফসল খেয়ে ফেলে, নতুবা নষ্ট করে। প্রতিশোধ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দারা কিছু ফসলের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ মিশিয়ে রাখে। মোষটার এগুলো খেয়ে পেটে সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে বিভিন্ন জায়গায় সে যে মল ত্যাগ করে; সেগুলো থেকেই জন্ম চকলেট পাহাড়ের।

কাছ থেকে দেখা পাহাড়ের ঘেসো জমিএ ধরনের আরেকটি গল্প অনুসারে বিশাল দুই দানবের মধ্যে এখানে তুমুল লড়াই বাধে। এ সময় তারা বিশাল সব পাথর, বালুর স্তূপ ছুড়ে মারে একে অপরের দিকে। কয়েক দিন স্থায়ী লড়াইয়ে দুই দানবই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ঝগড়া ভুলে বন্ধু হয়ে যায় তারা। তবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যাওয়ার সময় এখানে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গেছে, তা পরিষ্কার করতে ভুলে যায়। তবে বেশ রোমান্টিক একটি গল্পও আছে এই চকলেট পাহাড় নিয়ে। এক দানব এক তরুণীর প্রেমে পড়ে। কিন্তু যখন মেয়েটি হঠাৎ মারা যায়; সে মনের দুঃখে কাঁদতে শুরু করে। তার চোখের জলের একেকটি ফোঁটা থেকে এক একটি চকলেটের পাহাড়ের জন্ম।

সাধারণত ১০০ থেকে ১৬০ ফুট উচ্চতার পাহাড়গুলোঅনেক কিছু তো বলা হলো চকলেট পাহাড় নিয়ে, এবার বরং কীভাবে জায়গাটিতে পৌঁছানো যায় সেটা বলা যাক। ম্যানিলা, ক্লার্ক কিংবা ডাভাও থেকে উড়োজাহাজে চেপে নামবেন বহোল-পাংলাও বিমানবন্দরে। সেখান থেকে যাবেন দাও ইনটেগরেটেড বাস টার্মিনালে। তারপর বাসে চেপে কারমেন শহরে। ওখানেই চকলেট পাহাড় ভিওপয়েন্ট কমপ্লেক্সের অবস্থান। কাজেই সেখান থেকে ইচ্ছামতো ঘুরেফিরে দেখতে পারবেন চকলেটের মতো দেখতে পাহাড়ের মায়াবী রাজ্য।  

সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, অ্যামিউজিং প্ল্যানেট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত